মানুষ যেমন একজন আরেকজনকে নাম ধরে ডাকাডাকি করে ডলফিনও নাকি তেমনটা করে৷ সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এটা প্রমাণিত হয়েছে৷ প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে মার্কিন এক জার্নালে৷
বিজ্ঞাপন
এর ফলে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে মানুষের পর ডলফিনই একমাত্র প্রাণী যারা একে অপরকে নাম ধরে আগে৷
স্কটল্যান্ডের পূর্ব উপকূলের প্রায় ২০০টি ডলফিনের উপর গবেষণা করেছেন স্কটল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সি ম্যামাল রিসার্চ ইউনিট'-এর স্টেফানি কিং গবেষণা দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন৷
বিশ্বের বিরলতম প্রাণী বাংলাদেশের শুশুক
ডলফিন সাধারণত লবণ পানিতে বাস করে৷ শুধুমাত্র বাংলাদেশের শুশুক আর আমাজনের ‘বোতো’ এই দুই প্রজাতির ডলফিন সারা বছরই স্বাদু পানিতে থাকে৷ সেদিক দিয়ে শুশুক বিশ্বে খুবই বিরল একটা প্রাণী৷
ছবি: picture-alliance/dpa
খুবই বিরল
ডলফিন সাধারণত লবণ পানিতে বাস করে৷ শুধুমাত্র বাংলাদেশের শুশুক আর আমাজনের ‘বোতো’ এই দুই প্রজাতির ডলফিন সারা বছরই স্বাদু পানিতে থাকে৷ সেদিক দিয়ে শুশুক বিশ্বে খুবই বিরল একটা প্রাণী৷
ছবি: Rubaiyat Mansur
বিপন্ন প্রাণী
২৫-৩০ বছর আগেও বাংলাদেশের নদীগুলোতে অনেক শুশুক বা ডলফিন দেখা যেত৷ কিন্তু এখন আর সেটা যাচ্ছে না৷ তাই ১৯৯৬ সাল থেকে বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় নাম উঠে গেছে শুশুকের৷
ছবি: Rubaiyat Mansur
মাছ ধরতে শুশুকের তেল
শুশুকের তেল মাছ ধরার জন্য বেশ কার্যকর৷ তাই জেলেরা গণহারে শুশুক ধরছে৷ এছাড়া জাটকা ধরার জন্য যে কারেন্ট জাল ব্যবহার করেন জেলেরা, তাতেও মারা পড়ছে শুশুকের দল৷ ছবিতে এমনই একটি মৃত শুশুক দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Ingrid Kvale
আবাস ও প্রজননস্থল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে
নদীতে বাঁধ দেয়া, সেতু তৈরি ইত্যাদি কারণে নদীর নাব্যতা কমে গিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে শুশুকের আবাস ও প্রজননস্থল৷ এছাড়া যেখানে সেখানে ফেলে রাখা পলিথিন নদীর পানিতে মিশে গিয়েও নষ্ট করছে শুশুকের আবাস৷ শিল্প-কারখানা দূষিত বর্জ্যও শুশুকের শত্রু৷
ছবি: Rubaiyat Mansur
অভয়ারণ্য ঘোষণা
শুশুক রক্ষায় সরকার দেড় বছর আগে সুন্দরবনের অন্তর্গত ৩১ কিলোমিটার জলজ এলাকায় অভয়ারণ্য ঘোষণা করেছে৷ তবে বাস্তবায়নের কাজ এখনো শুরু হয় নি৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
বিসিডিপি-র উদ্যোগ
বেসরকারি সংস্থা ‘বাংলাদেশ সেটাসিয়ান ডাইভারসিটি প্রজেক্ট’ বা বিসিডিপি সরকারের বন বিভাগের সহায়তায় অভয়ারণ্য পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিচ্ছে৷
ছবি: shushuk.org
শুশুক মেলা
বিসিডিপি-র উদ্যোগে সুন্দরবন এলাকায় গত চার বছর ধরে শুশুক মেলা হচ্ছে৷ এর মাধ্যমে শুশুক রক্ষায় জনসাধারণকে সচেতন করার চেষ্টা চলছে৷ গত ফেব্রুয়ারিতে মংলায় হয়ে গেলো মাসব্যাপী চতুর্থ শুশুক মেলা৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
শুশুকপ্রেমী রুবাইয়াত মনসুর
তিনি বিসিডিপি’র প্রধান গবেষক৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, জুলাই মাস থেকে অভয়ারণ্য ঘোষিত এলাকার আশেপাশের লোকজনের সঙ্গে আলোচনা শুরু হবে৷ বিশেষ করে জেলেদের বলা হবে তারা যেন মাছ ধরতে এমন জাল ব্যবহার করেন যেটা শুশুকের জন্য ক্ষতিকর হবে না৷
ছবি: Rubaiyat Mansur
বৈদেশিক মুদ্রা আয় সম্ভব
রুবাইয়াত মনসুর বলছেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ডলফিনের খেলা দেখিয়ে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে৷ বাংলাদেশও চাইলে শুশুক দিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে বলে মনে করেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
9 ছবি1 | 9
তাঁরা বলছেন ‘বটলনোজ' ডলফিনরা একে অপরকে নাম ধরে ডাকে৷ যেমন মা ডলফিন তার সন্তানকে বা এক বন্ধু তার আরেক বন্ধু ডলফিনকে নাম ধরে ডাকে৷
কিং বলছেন, তাঁরা জরিপে অংশ নেয়া ডলফিনগুলোর ভয়েস রেকর্ড করে পরবর্তীতে সেগুলো ‘প্লে' করেন৷ তখন তাঁরা দেখতে পান যে ডলফিনরা যখনই নিজের নাম শুনছে, তখনই উত্তর দিচ্ছে৷ এমনকি একবার নয় কয়েকবার করে তারা প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে বা নড়াচড়া করে বুঝিয়ে দিচ্ছে যে তারা এই শব্দের সঙ্গে পরিচিত৷ ‘‘এটা দারুণ একটা অভিজ্ঞতা, কেননা প্রতিক্রিয়াগুলো বেশ শক্তিশালী ছিল,'' বলেন তিনি৷
মার্কিন জার্নাল ‘প্রোসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স'-এ গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে৷
এর আগের গবেষণাগুলোতে এটা জানা গিয়েছিল যে ডলফিন নিজেই নিজের নাম তৈরি করে এবং সমুদ্রে সাঁতার কাটার সময় সেটা প্রচার করতে থাকে৷