বার্লিনে আজ মুক্ত বিশ্ব, সংহতি, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের সমর্থনে একটি জোট ঘোষিত হচ্ছে৷ অসহিষ্ণুতা, বৈরিতা ও হিংসার বিরোধী এই জোটের উদ্যোক্তাদের মধ্যে আছেন জার্মান শ্রমিক সংগঠন সমিতির সভাপতি রাইনার হফমান৷
বিজ্ঞাপন
বহু উদ্বাস্তু, শরণার্থী এবং অভিবাসীদের আগমনের ফলে জার্মানি আজ একাধিক অ-গতানুগতিক ও সুবৃহৎ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন৷ চ্যালেঞ্জগুলি গতানুগতিক নয় বলেই তাদের বিরুদ্ধে একটি অনুরূপ অ-গতানুগতিক ও অসাধারণ জোট গড়ে উঠেছে৷ এই জোট অসহিষ্ণুতা, মানুষে মানুষে বৈরিতা ও হিংসার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে৷ শ্রমিক সংগঠন থেকে শুরু করে গির্জা কিংবা খেলাধুলার জগৎ, পরিবেশ সংরক্ষণ কিংবা সাংস্কৃতিক মহল, সব কিছুর প্রতিনিধিরা এই জোটে সংশ্লিষ্ট, যা সম্ভবত আয়তনে জার্মানির সুশীল সমাজে অভূতপূর্ব৷
রাজনৈতিক বার্তা
আমরা এই আহ্বানের মাধ্যমে একটি স্পষ্ট ও জরুরি রাজনৈতিক বার্তা দিতে চাই: হ্যাঁ, চ্যালেঞ্জগুলো বড় বটে, কিন্তু আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস যে, আমরা সকলে, সুশীল সমাজ ও উদ্বাস্তুরা মিলে এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে পারব৷ যেমন আমাদের, তেমনই উদ্বাস্তু ও অভিবাসীদের তরফে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ছাড়া তা সম্ভব হবে না৷ ইস্তেহারে যে ধরনের শর্ত ও নিয়মাবলীর কথা বলা হয়েছে, তা ছাড়াও এ-কাজ সম্ভব হবে না; শিক্ষা ও অবকাঠামোয় বিনিয়োগ ও কর্মী নিয়োগ করতে হবে৷
যারা জাতিবাদ, মানববৈরিতা ও ঘৃণা দিয়ে এই সব চ্যালেঞ্জের জবাব দেবার চেষ্টা করে, তাদের প্রতি আমাদের রাজনৈতিক মনোভাব যেমন প্রয়োজনীয়, তেমনই স্পষ্ট৷ উদ্বাস্তু আবাসনের উপর ন'শোর বেশি আক্রণের ঘটনা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বহু দেশে দক্ষিণপন্থিদের লক্ষণীয়ভাবে জনসমর্থন বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে যে বিকাশধারা সূচিত হয়েছে, তা আমাদের রোধ করতে হবে৷ এটা স্পষ্ট করে দিতে হবে যে, জার্মানি এবং অপরাপর দেশে যে ধারাটি প্রতিদিন পরিলক্ষিত হচ্ছে, তা অনেক বেশি জোরদার: যারা উদ্বাস্তুদের সাহায্য করার জন্য অক্লান্তভাবে কাজ করে চলেছেন, পৌর পর্যায়ে, স্কুলে কিংবা পুলিশবাহিনীতে, তাঁদের উৎসাহ-অনুপ্রেরণার কথা তুলে ধরতে হবে৷
কাজের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তি
আমরা এই জোটের উদ্যোগ নিয়েছি, কেননা অফিস, কল-কারখানা, কনস্ট্রাকশন সাইট কিংবা সুপারমার্কেটই হলো সেই সব স্থান, যেখানে বিদেশি-বহিরাগতদের সমাজে অন্তর্ভুক্তি বাস্তবে পরিলক্ষিত হয়৷ চিরকালই এই সব স্থানে বিভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতির মানুষদের মধ্যে দেখাসাক্ষাৎ ঘটে৷ যারা একসঙ্গে কাজ করেছেন, তারা আর পরস্পরের কাছে অপরিচিত থাকেন না৷ বহিরাগতদের সমাজে অন্তর্ভুক্তির জন্য আমাদের শ্রমিক সংগঠনের সদস্যরা এবং অফিস-কলকারখানার শ্রমিক ও কর্মচারী পরিষদের কর্মকর্তারা সক্রিয় হবেন৷ জোটে আমাদের সহযোগী সংস্থারা তাদের নিজ নিজ কাঠামো অনুযায়ী এই ইস্তেহারের লক্ষ্য সাধন করার চেষ্টা করবে – আবার আমরা বিভিন্ন যৌথ প্রচেষ্টাও নেব৷
জোটের দশ সহযোগী সংস্থা এই জোটকে বাড়ানোর এবং অপরাপর সংগঠন ও জনজীবনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিত্বদের শামিল করার চেষ্টা করবে৷
উদ্বাস্তু পরিস্থিতি ও জার্মান রাজনীতি
জার্মানিতে বিপুল সংখ্যক শরণার্থীদের আগমন শুধু সরকারি ব্যবস্থাপনাকেই বিপদের মুখে ফেলেনি, অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও তার ছাপ ফেলেছে: চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল-এর জনপ্রিয়তা আজ কমতির দিকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Gebert
উদ্বাস্তু শিবিরে দাঙ্গা
হামবুর্গ শহরের ভিলহেল্মসবুর্গ এলাকায় শরণার্থীদের প্রাথমিক আশ্রয়কেন্দ্রটি ভরে যাওয়ায় আগন্তুকদের তাঁবুতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়৷ মঙ্গলবার (৬ই অক্টোবর) সেখানে আফগানিস্তান ও আলবেনিয়া থেকে আগত উদ্বাস্তুদের মধ্যে ব্যাপক দাঙ্গা বাঁধে৷ লোয়ার স্যাক্সনি-র ব্রাউনশোয়াইগ-এও অনুরূপভাবে আলজিরীয় ও সিরীয় উদ্বাস্তুদের মধ্যে দাঙ্গা বাঁধে একটি চুরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Charisius
ইসলাম বিরোধীরা আবার মাথা চাড়া দিয়েছে
ড্রেসডেনে ইসলাম বিরোধী পেগিডা গোষ্ঠীর বিক্ষোভ সমাবেশে গত সোমবার প্রায় ন’হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন৷ বিক্ষোভকারীরা মূলত চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল-কেই বর্তমান উদ্বাস্তু সংকটের জন্য দায়ী করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Settnik
ম্যার্কেল লাগাম টানলেন
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল দৃশ্যত তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টোমাস ডেমেজিয়ের-এর গুরুত্ব কিছুটা খর্ব করে চ্যান্সেলরের দপ্তরের প্রধান পেটার আল্টমায়ার-কে শরণার্থী সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড সমন্বয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন৷
ছবি: Reuters
উদ্বাস্তুর লাশ
টুরিঙ্গিয়া রাজ্যের সালফেল্ড-এ অবস্থিত একটি রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী আবাসে সোমবার একটি অগ্নিকাণ্ডের পর ২৯ বছর বয়সি এক ইরিট্রিয়ান উদ্বাস্তুর লাশ পাওয়া যায়৷ কিভাবে এই শরণার্থী প্রাণ হারিয়েছেন, তা এখনও অজ্ঞাত৷ তবে আবাসটিতে ইচ্ছাকৃতভাবে অগ্নিসংযোগের কোনো হদিশ পুলিশ এখনও পায়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যে কোনো পন্থায়
টুরিঙ্গিয়ায় এর আগেও উদ্বাস্তু আবাস হিসেবে চিহ্নিত বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে শরণার্থীদের আসা বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে৷ যেমন বিশহাগেন-এর এই বাড়িটির ছাদ পুরোপুরি পুড়ে গিয়েছে৷ গত সোমবার এখানে প্রথম উদ্বাস্তুদের আসার কথা ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gränzdörfer
ঘরে বাইরে
শরণার্থী সংকট এখন জার্মানির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও টান ধরাচ্ছে৷ চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের সিডিইউ দলের জোড়োয়া দল বাভারিয়ার সিএসইউ৷ তাদের প্রধান হর্স্ট জেহোফার সেপ্টেম্বর মাসের শেষে একটি দলীয় সম্মেলনে বক্তা হিসেব আমন্ত্রণ জানান হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অর্বান-কে, যিনি সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে উদ্বাস্তুর স্রোত আটকানোর চেষ্টা করেছেন৷
ছবি: Reuters/M. Dalder
হাওয়া যদি বদলায়
বাভারিয়ার অর্থমন্ত্রী মার্কুস জ্যোডার ইতিপূর্বেও বলেছেন: ‘‘আমরা (অর্থাৎ জার্মানি) বিশ্বকে বাঁচাতে পারি না৷’’ এমনকি তিনি অস্ট্রিয়া সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কথাও চিন্তা করেছেন৷ তবে জ্যোডার যখন সম্প্রতি রাজনৈতিক আশ্রয় প্রাপ্তির সাংবিধানিক অধিকার সীমিত করার কথা বলেন, তখন জেহোফার স্বয়ং সাথে সাথে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন৷