ইউনূসকে চুবান আর খালেদাকে ডুবান৷ শেখ হাসিনা একথা বলেছেন৷ অনেকে বলছেন ঠিকই বলেছেন, প্রথম জন বাধা দিয়েছেন, দ্বিতীয়জন সন্দেহ প্রকাশ করেছেন৷ আবার অনেকে বলছেন, মজা বোঝেন না? মাননীয়া মজা করেছেন!
বিজ্ঞাপন
আসুন হাসিনার কথা আবার শুনি৷ তিনি বলেছেন, ‘‘একটি এমডি পদের জন্য পদ্মা সেতুর মতো সেতুর টাকা বন্ধ করেছে, তাকে পদ্মা নদীতে দুইটা চুবানি দিয়ে তোলা উচিত৷ মরে যাতে না যায়, পদ্মা নদীতে একটু চুবানি দিয়ে সেতুতে তুলে দেওয়া উচিত৷''
খালেদা প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘খালেদা জিয়া বলেছিল, জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানাচ্ছে৷ সেতুতে যে স্প্যানগুলো বসাচ্ছে, এগুলো তার কাছে ছিল জোড়াতালি দেওয়া৷ বলেছিল, জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানাচ্ছে, ওখানে চড়া যাবে না৷ চড়লে ভেঙে পড়বে৷ আবার তার সঙ্গে কিছু দোসরেরাও…তাদেরকে এখন কী করা উচিত? পদ্মা সেতুতে নিয়ে গিয়ে ওখান থেকে টুস করে নদীতে ফেলে দেওয়া উচিত৷''
আসুন আক্ষরিকভাবে তার বক্তব্য বিশ্লেষণ করি৷ ইউনূসকে চুবানি দিয়ে তিনি তুলে আনতে বলেছেন৷ স্পেসিফিক করে বলেছেন, মরে যাতে না যায়, নদীতে চুবানি দিয়ে সেতুতে তুলে দেওয়া উচিত৷ খালেদা প্রসঙ্গে কিন্তু তিনি তা বলেননি, বলেছেন ওখানে নিয়ে গিয়ে তাকে টুস করে ফেলে দিতে৷ তুলে আনতে আর বলেননি৷ পাঠক, আপনার কী মনে হয়? হাসিনা না বুঝে এই দুটো বিষয়ের মধ্যে ফারাক রেখেছেন? আমার তা মনে হয় না৷ আমার মনে হয় ইউনূস এবং অন্য বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে এরকমই ভাবেন তিনি, চুবাবেন আবার তুলেও আনবেন৷ কারণ তারা তার প্রতিপক্ষ নন৷ অন্যদিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে টুপ করে সেতুর নিচের পানিতে ফেলে দেবেন৷ অল্প কথায় জীবন দর্শনের অসাধারণ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী৷
এখন অনেকেই আছেন, যারা শেখ হাসিনার কথাকে পালনীয় বাণী মনে করেন! তাদের কেউ যদি শেখ হাসিনার এই কথাকে বাস্তব রূপ দিতে চান তবে কী হবে? সরকার কি তাদের সাহায্য করবে? কে জানে আগামীকালই হয়ত আওয়ামী লীগে ইউনূস চুবানি কমিটি বা খালেদা ডুবানি কমিটি গঠিত হবে৷ পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি নিশ্চয়ই ভাবগম্ভীর পরিবেশে উদ্বোধনী বক্তব্য নিয়ে ভাবছেন৷ অনেকগুলো মিডিয়া থাকে ইদানীং, তাই কোন ঘড়ির সাথে কোন মাফলার পরবেন, এত গুরুত্বপূর্ণ কথার সঙ্গে কোন রবীন্দ্র সংগীত ভাল যায় তাও নিশ্চয়ই ভেবে রাখছেন৷
সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই সাবাশি দিচ্ছেন৷ পদ্মা সেতু করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর বাহবা পুরান হয়ে গেছে, এখন সাবাশ আসছে ডুবানি আর চুবানির জন্য৷ ভাল করেছেন, ভাল বলেছেন৷ আমার মনে পড়ছে আমার নানার কথা৷ আমার কাজে-কর্মে-কথায় প্রায়ই তিনি বলতেন, মানুষ আন্দাজে ভালই করেছ বা বলেছ!
খালেদার বিরুদ্ধে হাসিনার যত কথা
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিভিন্ন সময় তীর্ষক মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা৷ চরম রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিয়ে কী কী বলেছেন বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, দেখুন গ্যালারিতে৷
ছবি: Getty Images/AFP/FARJANA K. GODHULY
পাগল-ছাগল
পদ্মা সেতু নিয়ে খালেদা জিয়ার বক্তব্য প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘সেতু তো বিভিন্ন পার্ট (অংশ) তৈরি করে করে নির্মাণ হয়৷ এক্ষেত্রে তো জোড়া দিয়েই সেতু করা হয়৷ জোড়া না দিলে তো সেতু হয় না৷ কিন্তু উনি জোড়াতালি দিয়ে কী বোঝাতে চেয়েছেন, তা আমার বোধগম্য নয়৷ বাংলাদেশে তো একটা প্রচলিত কথা রয়েছে পাগলে কি না কয়, ছাগলে কি না খায়৷’’
ছবি: AP/DW
ছোটলোক
এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়াকে নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আর যাই হোক আমি প্রধানমন্ত্রী৷ তার ছেলে যখন মারা গেল, আমি তার বাড়িতে গেলাম৷ কিন্তু আমাকে ঢুকতে দেওয়া হল না৷ এই ধরনের ছোটলোকিপনা যারা করে; তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন কোন মুখে?” বিস্তারিত জানতে প্লাস চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Mustafiz Mamun
ঘিলু নেই
পদ্মা সেতু নিয়ে খালেদা জিয়ার মন্তব্যের জের ধরে হাসিনা বলেন, একটা জিনিস তৈরি করতে হলে কিভাবে কোন পদ্ধতিতে করা হয়, যার মাখায় ওইটুকু ঘিলু নেই, তিনি কি করে এটি বুঝবেন? তার মাথায় শুধু ঘিলু আছে চুরি করার, টাকা বানানোর আর এতিমের টাকা মেরে খাওয়ার, মানুষ পোড়ানোর, মানুষ হত্যার৷
ছবি: Bdnews24.com
জঘন্য মনোবৃত্তি
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, উনি (খালেদা) বলেছেন, ওখানে (ভোটকেন্দ্রে) নাকি পুলিশ ছিল আর কুকুর ছিল৷... এটা কোন ধরনের কথা যে ভোটারদের উনি কুকুর বললেন৷ এই যে ৪৩ ভাগ মানুষ ভোট দিল৷ ওনার দৃষ্টিতে সবাই কুকুর?... কত বড় জঘন্য মনোবৃত্তি৷ মানবসন্তান ও ভোটারদের উনি কুকুর হিসেবে ডাকলেন৷ এই জাতীয় নোংরা কথা, এই জাতীয় গালি এটা তাঁর মুখে সাজে৷
ছবি: PID
দুপুর পর্যন্ত ঘুম!
বিএনপির সাংসদ রুমিন ফারহানার এক প্রশ্নের জবাবে সংসদে শেখ হাসিনা পাল্টা প্রশ্ন রাখেন, তার নেত্রী খালেদা জিয়ার মতো বেলা ১২টা পর্যন্ত ঘুমিয়ে কাটালেই তিনি খুশি হতেন কি না? রাত ১০টার পর শুরু হওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকের খবর জানতে মধ্যরাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় গণমাধ্যমকর্মীদের৷ বিস্তারিত জানতে প্লাস চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Mustafiz Mamun
বরণডালা নয়
২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপিকে আনতে খালদো জিয়াকে বরণডালা পাঠাতে হবে কি না সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন শেখ হাসিনা৷ তিনি বলেছিলেন, কার সঙ্গে আলোচনা? কিসের প্রস্তাব! একবার প্রস্তাব দিয়ে যে ঝাড়িটা খেলাম… তাকে আর প্রস্তাব দেওয়ার দরকার আছে বলে মনে করি না৷ বিস্তারিত জানতে প্লাস চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: government's press department
শোক বার্তাও তৈরি ছিল
২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় মৃত্যু হলে শোক জানানোর জন্য খালেদা জিয়া বার্তাও তৈরি করে রেখেছিলেন বলে ভয়াবহ ওই হামলার ১৫ বছর পূর্তিতে গত ২১ আগস্ট এক আলোচনা সভায় দাবি করেন শেখ হাসিনা৷ বিস্তারিত জানতে প্লাস চিহ্নে ক্লিক করুন৷