মৌরিতানিয়ার এক গ্রামীণ এলাকার উন্নয়নে সহায়তা করছে একটি জার্মান উন্নয়ন ব্যাংক ও একটি জার্মান উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থা৷ সেখানে বাঁধকে ব্যারেজে পরিণত করে ও ফ্লাড বেসিনের ব্যবস্থা করে ফিরিয়ে আনা হয়েছে পশুপাখি, মাছ ও গাছপালা৷
বিজ্ঞাপন
মানুষ আর প্রকৃতির বিরোধ
05:35
পানি প্রতিবছরই এগিয়ে আসছে৷ সাগরের কাছের বাড়িগুলো ধীরে ধীরে ভেঙে যাচ্ছে৷ এককালে যে জায়গাটা কীরকম ছিল, আজকের কচিকাঁচারা তা কল্পনাই করতে পারবে না৷ স্থানীয় বাসিন্দা সালু দিইয়ে দেখালেন, ‘‘সবকিছু পানিতে ডুবে যাওয়ার আগে গ্রামের অর্ধেকটা ছিল এইখানে, এমনকি আগে এই পর্যন্ত বাড়িঘর ছিল৷ সাগরের তলায় বোধহয় এখনও ভাঙা বাড়িঘর খুঁজে পাওয়া যাবে৷''
দক্ষিণ মৌরিতানিয়ার গ্রামগুলোর একদিকে অসংখ্য নদী, অন্যদিকে সাগর৷ এখানে আর বিশেষ কিছু নেই, অবকাঠামো তো নয়ই৷ তাহলে মানুষজন কী করবে আর যাবেটাই বা কোথায়, সেটাই হলো প্রশ্ন৷ জেইন এল আবিদিন কাছের দিয়াওলিং ন্যাশনাল পার্কের কর্মী, সমস্যাগুলো তাঁর জানা৷ তিনি জানালেন, ‘‘প্রবীণদের সঙ্গে কথাবার্তা বললে, তারা বলেন যে, আশির দশকে সাগর এখান থেকে আরো দুই কিলোমিটার দূরে ছিল – আর এখন দেখুন, সাগরের পানি কী অবস্থা করেছে৷ সরকার মানুষজনের নিরাপদ জায়গায় পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে বটে, কিন্তু ওরা বলে যে, ওদের পূর্বপুরুষরা চিরকাল এখানেই বাস করেছেন৷ কাজেই ওরা অন্য কোথাও যেতে চান না৷''
স্বাস্থ্য রক্ষায় প্রকৃতির প্রভাব
বন-জঙ্গল বা প্রকৃতির মাঝে হাঁটাচলা করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো৷ কিন্তু কতটা ভালো তা হয়ত অনেকে জানেন না৷ সবুজের মাঝে কিছুক্ষণ সময় কাটালে হার্ট, হাড়, গলা ও মস্তিস্কের মতো অঙ্গের কতটা উপকার হয়, তা জেনে নিন এই ছবিঘর থেকে৷
ছবি: picture-alliance/Arco Images
সবুজের বুকে হাঁটলে মনের শান্তি, দেহের উপকার
বন কিংবা কোনো সবুজ বাগানে ঘণ্টাখানেক হাঁটা বা সাইকেল চালানোর পর শরীর আর মন সত্যিকার অর্থেই শান্ত হয়ে যায়৷ প্রকৃতি আর মানুষের মধ্যে যে এক গভীর সম্পর্ক রয়েছে এবং মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর প্রকৃতি যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে তা গবেষণায়ও প্রমাণ হয়েছে৷ গবেষকরা মানুষের দেহ-মনে প্রকৃতির প্রভাবকে বলেন ‘বায়ো-এফেক্ট’৷
ছবি: Brianne Fischer
প্রকৃতি থেকে অক্সিজেন
প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে একজন জার্মান বনের বড় বড় গাছের সাড়ির ভেতর দিয়ে ঘুরতে বা বেড়াতে পছন্দ করেন৷ কেউ একা যান আবার কেউবা পরিবারের সকলকে নিয়ে হাঁটেন, সাইকেল চালান৷ বনের সবুজ গাছ-পাতার অক্সিজেন মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখে৷ বিশেষজ্ঞদের মতে মানুষের শরীর ও মনের ওপর গাছের রয়েছে এক সার্বজনীন প্রভাব৷
ছবি: Deutsche Umwelthilfe (DUH)/S. Suntken
সুস্থ হৃদপিণ্ড
ক্রীড়া বিশেষজ্ঞরা জানান, ঘাস এবং পাতার ওপর দিয়ে হাঁটার সময় পায়ের পেশি, পা, হাড়, হাঁটু , নিতম্বসহ সারা দেহে রক্ত সঞ্চালন দ্রুত হয়৷ তাঁরা জানান যে, বনের ভেতর বা গাছের নীচ দিয়ে সপ্তাহে অন্তত তিন দিন ৩০০০ পা হাঁটলে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যেতে পারে৷ তাছাড়া বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলে ফুসফুস ভালো থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/I. Wagner
শ্রবণমান শাণিত করে
গাছের পাতার শব্দ শ্রবণমানকে খানিকটা শাণিত করে৷ তাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ, বনে গিয়ে চোখ বন্ধ করে এবং খুব মনোযোগ দিয়ে প্রকৃতির শব্দ শুনুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/CTK Photo/P. Mayer
অপারেশনের রোগীরও উপকার
সবুজ গাছ-গাছালির শক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এক সমীক্ষা থেকে জানা গেছে যে, অপারেশনের পর যেসব রোগী ঘরের জানালা দিয়ে সবুজ গাছপালা দেখেছেন, তাঁদের ব্যথার ঔষধ কম নিতে হয়েছে এবং তাঁরা তাড়াতাড়ি বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি পেয়েছেন৷ বলা বাহুল্য, ক্লিনিকটি ছিল শহরের কোলাহল থেকে অনেক দূরে, সম্পূর্ণ সবুজে ঘেরা একটি জায়গায়৷ গবেষকরা জানান, প্রতিটি ঋতুর ভিন্ন ভিন্ন রূপ উপভোগ করলে শরীর ও মনকে সুস্থ রাখা অনেক সহজ৷
ছবি: picture-alliance/Arco Images
প্রকৃতির আরো অবদান
নানা অসুখের চিকিৎসায় হাজার বছর আগে থেকেই ঔষধি গাছ ব্যবহার করা হয়৷ বন-জঙ্গলে হাঁটতে গেলে সেরকম নানা গাছের সন্ধান পাওয়া যায়, যেগুলো মাথাব্যথা, পেটব্যথা, কাশি, ত্বকের ইনফেকশন, ফুলে যাওয়া, স্বাসকষ্টসহ অনেক রোগের মহৌষধ৷ প্রকৃতি থেকে উপকার পাওয়ার জন্য প্রকৃতিকে রক্ষা করাও মানুষের দায়িত্ব৷
ছবি: Colorbox
মস্তিষ্কের বিশ্রাম হয়
পাখির কলকাকলি গাছের শুকনো পাতার মর্মরধ্বনি মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দেয়৷ বিশেষজ্ঞরা জানান, তখন নাকি মানুষের মগজে অনেকটা ছুটি কাটানোর মতো অনুভূতি হয়, মানসিক চাপ কমে৷ বড় কোনো বাগান বা বনের ভেতর মাত্র ১০০ মিটার হাঁটার পর মানসিক অস্থিরতা অর্ধেক কমে যায়৷
ছবি: Bill Holsten
7 ছবি1 | 7
অথচ এখানকার মানুষদের পেশা চাষবাস, খামার বা পশুপালন, যা থেকে জীবনধারণ করা ক্রমেই আরো শক্ত হয়ে উঠছে৷ একটি আশার আলো হলো কাছের দিয়াওলিং ন্যাশনাল পার্ক৷ ঠিকমতো ব্যবস্থা নিলে যে রোজগারের নতুন পথ খুলে যেতে পারে, দিয়াওলিং তার একটা ভালো দৃষ্টান্ত৷
এখানে যে কোনোদিন আবার এত বেশি জীবজন্তু বাস করবে, কয়েক বছর আগেও তা ভাবা যায়নি৷ এখন প্রায় ৩০০ প্রজাতির পাখি এখানে বাসা বাঁধে, ছানা মানুষ করে৷ মাছের জন্য এটা ডিম পাড়ার জায়গা৷ ওয়ার্টহগ জাতীয় বুনো শুয়োররা এখানে স্বচ্ছন্দে বংশবৃদ্ধি করতে পারে, কেননা, এখানে কেউ তাদের শিকার করে না৷ ব-দ্বীপ এলাকায় নোনা জল আর মিষ্টি জল এসে মিশেছে, যা খুব বিরল৷
দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম
স্থানীয় বাসিন্দারাও প্রকৃতি সংরক্ষণের মর্ম বোঝেন, কেননা, পরিবেশ থেকে চাকুরি সৃষ্টি হয়৷ জেইন এল আবিদিন বললেন, ‘‘পরিবেশকে পুনর্জীবিত করা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম হলো ন্যাশনাল পার্কের লক্ষ্য৷ দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম কেন? এখানকার বাসিন্দারা তাঁদের প্রথাগত পেশায় কাজকর্ম করেন বলে৷ প্রকৃতি যা দেয়, তা নিয়েই ওদের দিন কাটে৷ এখানকার অর্থনীতির ভিত্তি হলো কৃষিকাজ আর মাছ ধরা৷ পানি না থাকলে, ওদের এখানে কিছু করার থাকবে না৷''
খোলা আকাশের নীচে দড়ি টাঙিয়ে তেলাপিয়া মাছ শুকানো হচ্ছে৷ এই শুঁটকি মাছ গোটা দেশে, এমনকি সেনেগাল অবধি বিক্রি হয়৷ মৎস্য সমবায়ের প্রধান শেখ আহমেদ বললেন, ‘‘আগে এখানকার মানুষজন চাষবাসও করতেন, কিন্তু মাছের চাষ করে অনেক বেশি লাভ, তা থেকে সারাবছর রোজগার হয়৷ এই বাঁধ আর বাঁধের পানি ধরার বিল থেকেও আমাদের সুবিধা হয়, কেননা, এখানে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়৷''
প্রকৃতি ও মানুষ বাঁচাতে দেলোয়ার ও তাঁর সঙ্গীদের উদ্যোগ
কুষ্টিয়ার ছেলে দেলোয়ার জাহান ও তাঁর সঙ্গীরা মিলে ‘প্রাকৃতিক কৃষি’ নামে একটি আন্দোলন শুরু করেছেন৷ সার ও কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়াই কৃষকদের কৃষিকাজে উৎসাহিত করছেন তাঁরা৷
ছবি: Delowar Jahan
বিষমুক্ত খাবারের অঙ্গীকার
বাংলাদেশে ফসলের ক্ষেতে প্রতি মিনিটে ৭২ কেজি ‘বিষ’ ছিটানো হয় বলে জানান দেলোয়ার জাহান৷ এতে মাটির যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করে যে ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে তা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর৷ এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে প্রাকৃতিক উপায়ে কৃষিকাজ পদ্ধতিকে উৎসাহিত করছেন দেলোয়ার ও তাঁর সঙ্গীরা৷
ছবি: Delowar Jahan
‘প্রাকৃতিক কৃষি’ আন্দোলন
দেলোয়ার ও তাঁর সঙ্গীরা প্রাকৃতিক উপায়ে কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত৷ এর মাধ্যমে তাঁরা আশেপাশের কৃষকদের দেখান যে, এভাবেও ফসল উৎপাদন করে লাভ করা সম্ভব৷ এছাড়া কৃষকদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনায় বসে প্রাকৃতিক উপায়ে কৃষিকাজের নতুন নতুন পদ্ধতি বের করেন তাঁরা৷ ছবিতে দেলোয়ারকে কৃষকদের সঙ্গে বৈঠক করতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Delowar Jahan
শুরুর কথা
২০১৩ সালে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার আমতলি গ্রামে জমি লিজ নিয়ে গ্রীষ্মকালীন সবজি উৎপাদন শুরু করেন দেলোয়ার ও তাঁর সঙ্গীরা৷ বর্তমানে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার হাজীপুর গ্রামে দেড় একর জমিতে প্রায় ৪০ রকমের সবজি উৎপাদিত হয় বলে জানান তিনি৷ উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত দেলোয়ার নিজে বাবার সঙ্গে কৃষিকাজে জড়িত ছিলেন৷ আর তাঁর সঙ্গীদের পরিবারও কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত৷
ছবি: Delowar Jahan
লেখাপড়ায় ভালো ছিলেন দেলোয়ার
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে অনার্সে দ্বিতীয় ও মাস্টার্সে যৌথভাবে প্রথম হয়েছিলেন দেলোয়ার৷ এরপর সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে চাকরির সুযোগ পেয়েছিলেন৷ কিন্তু মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন ভেবে সেখানে যাননি তিনি৷ ‘প্রাকৃতিক কৃষি’র পাশাপাশি ঢাকায় একটি পত্রিকায় কৃষি বিষয়ক সাংবাদিকতা করছেন দেলোয়ার৷
ছবি: Delowar Jahan
সঙ্গীদের কথা
দেলোয়ারের সঙ্গে আছেন আরও কয়েকজন তরুণ-তরুণী৷ তাঁদের প্রায় সবাই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পড়ালেখা শেষ করেছেন৷ ছবিতে দুজনকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Delowar Jahan
সাফল্যের কথা
দেলোয়ারদের যেখানে খামার আছে, সেই মানিকগঞ্জ ছাড়াও ঝিনাইদহ, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও নওগাঁ জেলার অনেক কৃষক বর্তমানে প্রাকৃতিক উপায়ে ফসল উৎপাদন করছেন৷ ছবিতে দেলোয়ারের সঙ্গীদের ফসল তুলতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Delowar Jahan
পণ্যের বাজার
বিভিন্ন জেলার কৃষকদের প্রাকৃতিক উপায়ে চাষ করা সবজি, ফল ঢাকায় কিনতে পাওয়া যায়৷ এজন্য মোহাম্মদপুরের সলিমুল্লাহ রোডে ‘প্রাকৃতিক কৃষি বিপণন কেন্দ্র’ চালু করা হয়েছে৷ ছবিটি বিপণন কেন্দ্রের সামনে তোলা৷
ছবি: Delowar Jahan
যা পাওয়া যায়
কী চান? শাক-সবজি, ফল, চাল, ডাল, হাতে ভাজা মুড়ি, মসলা, তেল, ঘি, দুধ, ডিম; বলে শেষ করা যাবে না৷ মাঝেমধ্যে বাসায় চাষের কাজে ব্যবহারের জন্য প্রাকৃতিক সারও পাওয়া যায় ঐ কেন্দ্রে৷ হালনাগাদ তথ্য পেতে ‘প্রাকৃতিক কৃষি’র ফেসবুক পাতা দেখা যেতে পারে৷ এজন্য উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Delowar Jahan
নিরাপদ ফসল
ঢাকায় প্রাকৃতিক কৃষি বিপণন কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের কিষাণীরা তাঁদের উৎপাদিত ফসল নিয়ে এসেছেন৷
ছবি: Delowar Jahan
গ্রামে যাওয়া হয়নি
দেলোয়ার কুষ্টিয়ার ছেলে৷ কিন্তু নিজের গ্রামে না গিয়ে মানিকগঞ্জে কাজ করার কারণ বলতে গিয়ে তিনি জানান, সেটি সম্ভব ছিল না৷ ‘‘যখন পড়ালেখা করতাম তখন গ্রামে গেলে সবাই জানতে চাইতো কতদিন আছি কিংবা কবে যাব? তখনই বুঝতে পারি যে, আসলে গ্রামে ফেরা সম্ভব না,’’ ডয়চে ভেলেকে বলেন দেলোয়ার৷
ছবি: Delowar Jahan
চাকরির পেছনে না ছুটে কৃষিকাজ
বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে কেউ যদি উচ্চশিক্ষার পর চাকরির পেছনে না ছুটে কৃষিকাজে জড়িত হয়ে জীবনযাপন করতে চায় তাহলে সেটি সম্ভব বলে মনে করেন দেলোয়ার৷ ‘‘কেউ যদি সমন্বিত খামার করেন, যেখানে মাছ চাষ থাকবে, গরু থাকবে, দুধের জন্য ছাগল থাকবে, হাঁস থাকবে, সবজি থাকবে- তাহলে সম্ভব৷’’
ছবি: Delowar Jahan
তবে...
দেলোয়ার বলেন, সমস্যা হচ্ছে তরুণরা মনে করে, কৃষিকাজ মানে অচ্ছুতের কাজ৷ তাই এটি কেউ করতে চায় না৷ ‘‘কারণ চারপাশে এত রং, এত প্রত্যাশা জীবনে যে, কেউ আসলে কৃষিকাজ করতে চায় না৷ প্রচুর ছেলেমেয়ে আমাদের কাছে (প্রাকৃতিক কৃষির কাজ দেখতে) আসে৷ যে পরিমাণ আগ্রহ নিয়ে আসে তার দ্বিগুণ পরিমাণ আগ্রহ নিয়ে চলে যায়’’, নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানান দেলোয়ার৷
ছবি: Delowar Jahan
12 ছবি1 | 12
বাঁধ ও ব্যারেজ
এখানে যে আজ এত বেশি মাছ পাওয়া যায়, সে ব্যাপারটা নতুন৷ ত্রিশ বছর আগেও এলাকাটা প্রায় নষ্ট হতে বসেছিল, কেননা, আশির দশকের মাঝামাঝি একটি বড় বাঁধ তৈরি করা হয়, যাতে প্রতিবেশী দেশ সেনেগাল, গাম্বিয়া আর মালিও মিষ্টিজল পায়৷ কিন্তু বাঁধ গোটা এলাকার পরিবেশ বদলে দিয়েছিল৷ কেন, তা জানালেন দিয়াওলিং ন্যাশনাল পার্কের সংরক্ষক ও জীববিজ্ঞানী জেইন এল আবিদিন, ‘‘বাঁধ তৈরির ফলে পরিবেশ প্রণালী ক্ষণভঙ্গুর হয়ে পড়ে৷ নোনাজল আর মিষ্টিজলের মধ্যে প্রকৃতিদত্ত ভারসাম্য বিনষ্ট হয়ে যায়৷ মিষ্টিজল পুরোপুরি বাঁধে আটকা পড়ার ফলে তা ন্যাশনাল পার্ক পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না৷''
এ কারণে বহু বছর পরে এই স্লুইস গেটগুলো তৈরি করা হয়৷ এ কাজে সাহায্য করে জার্মান উন্নয়ন সাহায্য ব্যাংক কেএফডাব্লিউ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জিআইজেড৷
জিআইজেড-এর সামান্তা মাপফুমো বললেন, ‘‘গেট দিয়ে পানি ছেড়ে কিছুটা জোয়ার-ভাটার নকল করার চেষ্টা করা হয়৷ এখানে নোনাজল আর মিষ্টিপানি মেশার ফলে জায়গাটা মাছেদের ডিম পাড়ার জন্য খুব ভালো৷ এছাড়া এটা সংরক্ষিত এলাকা৷ বাড়তি পানি ধরে রাখার জন্য তিন-তিনটা জলাধার থাকায় জায়গাটা শুধু মাছেদের জন্যেই নয়, পাখিদের জন্যও খুব ভালো৷''
ন্যাশনাল পার্ক প্রশাসন মাছ ধরার জন্য বিশেষ বিশেষ এলাকা ও সময় নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন৷ মাছেরা যাতে ডিম পাড়ার ও ছানাপোনা মানুষ করার সময় পায়, সেদিকে নজর রাখা হয়৷ মিষ্টিজল আর বাঁধের পানির দরুণ অন্যান্য গাছপালাও ফিরে এসেছে; আবার পদ্মফুল ফুটতে শুরু করেছে৷
ইউলিয়া হেনরিশমান/এসি
বিস্ময়কর স্টারলিং পাখি
যেন একরাশ কালো মেঘ৷ স্টারলিং পাখিগুলো এমনভাবে দলবেঁধে আকাশে উড়ে উড়ে জ্যামিতিক আকৃতি তৈরি করে যে , তা সব অ্যারোবেটিক্স দলকেই হার মানাবে৷ ক্যামেরার চোখে দেখুন ইসরায়েলের আকাশে ধরা পড়া এমন চমৎকার দৃশ্য৷
ছবি: Reuters/A. Cohen
কী অপরূপ
কখনো ঝরা পাতার মতোন, কখনো ওড়ার চেষ্টা করা ঘুঘু, কিংবা কখনো সাঁতরে বেড়ানো বিশাল তিমি মাছের আকৃতি তৈরি করে পাখির ঝাঁক৷ এই স্টারলিংগুলো ইউরোপীয় পরিযায়ী পাখি৷ ইসরায়েলে আসে রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপ থেকে৷
ছবি: Reuters/A. Cohen
ছোট পাখি! ছোট পাখি!
এই ছবিগুলো দক্ষিণ ইসরায়েলের বেইট কামা গ্রাম থেকে তোলা৷ রাতে ঘুমোতে যাবার আগে পাখিগুলো নানান আকৃতি তৈরি করে৷ শুধু যে এরা আকৃতি তৈরি করে তা-ই নয়, কিচিরমিচির শব্দে মাতিয়ে রাখে পুরো এলাকা৷
ছবি: Reuters/R. Zvulun
নিখুঁত আকার
বিজ্ঞানিরা ঠিক জানেন না, কিভাবে তারা এসব আকৃতি তৈরি করে৷ কিন্তু কেউ কেউ বলেন যে, এরা ইচ্ছে করে এমন করে না৷ বরং ঝাঁকের একটি পাখি তার নিকটবর্তী আরেকটির কাছ থেকে একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব তৈরি করে ওড়ে৷ তাতেই এমন আকৃতি তৈরি হয়৷ তা বলে এতটা নিখুঁত?
ছবি: Reuters/A. Cohen
দ্রুত প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের পাখি বিশেষজ্ঞ জাকারি স্ল্যাভিন বলেন, ‘‘ঠিক যেন মাছের মতো৷ এই ঝাঁকের কোনো নেতা নেই৷ কিন্তু তারা এমনভাবে থাকে যেন একসঙ্গে একটি গন্তব্যে পৌঁছায়৷ এদের একজন গতিপথ বদলালে এরা দ্রুত সেই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে৷’’
ছবি: Reuters/A. Cohen
পরিযায়ী স্টারলিং
সাধারণত শীত ও বর্ষায় স্টারলিংয়ের এমন ঝাঁক দেখা যায়৷ গ্রীষ্মের শেষ দিকে এই পাখিগুলোর প্রজনন প্রক্রিয়া শেষ হয়৷ এরপর বড় বড় ঝাঁকে এরা অভিযাত্রা শুরু করে৷ পরে শীতের শেষে অথবা বসন্তের শুরুতে এরা তাদের প্রজননস্থলে ফিরে আসে৷
ছবি: Reuters/A. Cohen
দশের লাঠি একের বোঝা
কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেন এরা এমন ঝাঁকে ঝাঁকে ঘুরে বেড়ায়? বিশ্লেষকদের মন্তব্য যে, পাখিগুলো দলবেঁধে ঘুরে বেড়ালে এদের হাজারো চোখে একসঙ্গে খাবার খোঁজা সহজ হয়৷ এতে একই খাবারের খোঁজে থাকা প্রাণিদের এ লড়াইয়ে পরাজিত করা সহজ হয়৷
ছবি: Reuters/A. Cohen
বাজপাখির চোখ ফাঁকি
আরো একটি কারণ, নিরাপত্তা৷ চিল, বাজপাখিদের হাত থেকে বাঁচতে এমন উপায় বেছে নিয়েছে তারা৷ বিশ্লেষকরা বলেন, তারা এমনভাবে ঘুরে যেন, বাজপাখিদের চোখে একেকটি পাখি আলাদা করে ধরা পড়া কঠিন হয়ে যায়৷
ছবি: Reuters/A. Cohen
কতদূর সমুদ্দুর
এরা যে শুধু ইউরোপেই ঘোরাঘুরি করে তা নয়৷ এই পরিযায়ী পাখিগুলোর ওড়ার সীমানা উত্তর আফ্রিকা থেকে শুরু করে দক্ষিণ ইউরোপ, এমনকি পশ্চিম এশিয়া পর্যন্ত৷