আমাদের জীবনের অনেক ক্ষেত্রেই আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে৷ সাংবাদিকতাও এর বাইরে নয়৷ কম্পিউটার এখন প্রতিবেদন তৈরি করে দিচ্ছে৷ ভবিষ্যতে কি তাহলে আর রিপোর্টারের প্রয়োজন হবে না? বিষয়টি নিয়ে এখন বিতর্ক চলছে৷
বিজ্ঞাপন
উত্তেজিত দর্শক৷ হাজার হাজার অ্যামেরিকানদের জন্য বাস্কেটবল খেলা দেখা যেন অবশ্যই করণীয় একটা বিষয়৷ সবাই এর সঙ্গে জড়িত হতে চায় – কি স্টেডিয়ামে কিংবা খেলার পর ইন্টারনেটে৷
এই টেক্সটের বিশেষত্ব হলো, এর লেখক কোনো মানুষ নয় বরং একটা কম্পিউটার৷ এ সম্পর্কিত সফটওয়্যার ডেভেলপ করেছে মার্কিন কোম্পানি অটোমেটেড ইনসাইটস, যাদের রোবট সাংবাদিকতার পথপ্রদর্শক বলা হয়৷
সংগঠনটির প্রধান স্কট ফ্রেডেরিক-এর কথায়, ‘‘এখন আমরা অনেক পরামর্শের জন্যই মেশিনের সাহায্য নেই৷ আমি নিশ্চিত নয় যে, অনেক ব্যবহারকারী আসলেই জানেন কিনা, তাঁদের কোন কাজটা মেশিন দিয়ে হচ্ছে, আর কোনটা নয়৷ যদি অনেক ডাটা বিশ্লেষণ করতে হয়, তাহলে মেশিন সেটা করতে পারে সহজেই৷ আর যদি আস্থার কথা বলেন, তাহলে আপনি চাইবেন নির্ভুল বিশ্লেষণ৷''
সাংবাদিকদের জন্য দুঃসময়
একটি সমীক্ষা অনুযায়ী গত দশ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পরিস্থিতি এতো খারাপ দেখা যায়নি৷ বিশ্ব জনসংখ্যার ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষ বাস করেন যে সব দেশে, সে সব দেশে সাংবাদিকদের কাজে হস্তক্ষেপ করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
মধ্য এশিয়ার পরিস্থিতি
ফ্রিডম হাউস নামে একটি প্রতিষ্ঠান ১৯৯৭টি দেশের ওপর একটি সমীক্ষা চালিয়েছে, যার ফলাফলে দেখা গেছে, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান এবং বেলারুশের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সবচেয়ে কম৷ অন্যদিকে সাংবাদিকদের সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা রয়েছে নেদারল্যান্ডস, সুইডেন এবং নরওয়েতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সাংবাদিকদের ওপর হামলা
তুরস্কে অনেক সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হয়েছে৷ সাংবাদিক গ্যোকহান বিচিচি-কে প্রেপ্তার করা হয় গেজি পার্কে বিক্ষোভ চলাকালীন সময়ে৷ সাংবাদিকদের স্বার্থরক্ষা কমিটির মতে গত ডিসেম্বরের শুরুতে তুরস্কে ৪০জন সাংবাদিকদের আটক করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
অপ্রিয় রিপোর্ট
ইউক্রেনেও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো হয়৷ বিশেষ করে কিয়েভের ময়দান স্কোয়ারে প্রতিবাদ বিক্ষোভের সময়৷ সরকারের সমালোচক সাংবাদিক টেটিয়ানা চর্নোভোল ঐ হামলার শিকার হন৷ তিনি পদচ্যুত প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ বিলাসী জীবনযাত্রার ওপর একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিলেন৷ হাজারো মানুষ এই সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেন৷
ছবি: Genya Savilov/AFP/Getty Images
মিথ্যা বলা বন্ধ করুন!
চীন এবং রাশিয়াতেও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সমালোচনার মুখে৷ দুই দেশের সরকারই মিডিয়ার ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে এবং সরকারের মতামত মিডিয়াকে জানানোর জন্য একটি আইনও প্রণয়ন করে৷ এমনকি রাশিয়ায় সংবাদ সংস্থা ‘রিয়া নভোস্তি’ বন্ধ করে সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত্ব করা হয়৷ অনেক রুশ নাগরিকের তা পছন্দ না হওয়ায় তারা ‘মিথ্যা বলা বন্ধ করুন’ প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মার্কিন সরকারের আড়িপাতা
অ্যামেরিকায় সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রয়েছে৷ কিন্তু মার্কিন তথ্যনীতি ক্রমঃশই প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে৷ সমীক্ষা অনুযায়ী, সরকার সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে গেছে৷ শুধু তাই নয়, এমনকি সরকার সাংবাদিকদের কাছে তথ্য সূত্রও জানতে চায়৷ এছাড়া, মার্কিন সরকার সংবাদ সংস্থা এপি-র সাংবাদিকদের টেলিফোনেও আড়ি পেতেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
মুবারক জমানায় প্রত্যাবর্তন
মিশরে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে৷ প্রেসিডেন্ট মুরসির পতনের পর সেখানকার পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে৷ সমীক্ষা প্রতিষ্ঠান ফ্রিডম হাউস-এর মতে, ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে সামরিক অভ্যুথ্যানের পর থেকে বেশ কিছু সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয় হয় এবং পাঁচজন মারা যান৷
ছবি: AFP/Getty Images
মালিতে পরিস্থিতির উন্নতি
মালিতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ইতিবাচক উন্নতি হয়েছে৷ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ইসলামি বিদ্রোহীদের দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিতাড়নের পর মালির আইন ও শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়৷ ২০১২ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর বেশ কিছু মিডিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো৷ সেগুলো এখন আবার কাজ করছে৷
ছবি: AFP/Getty Images
কিরগিজিস্তান ও নেপালে ইতিবাচক প্রবণতা
যে সব দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বাড়ছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে কিরগিজিস্তান৷ সেখানকার সাংবাদিকরা ২০১৩ সালে খুব কম আক্রমণের শিকার হয়েছেন৷ নেপালেও মিডিয়ার ওপর রাজনৈতিক প্রভাব কমেছে, যদিও সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়া বন্ধ হয় নি৷ সমীক্ষা অনুযায়ী ইসরায়েলেও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উন্নতি হয়েছে এবং এখন তাঁরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন৷
ছবি: AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
বিশেষ কোড ব্যবহার করে ডাটাগুলোকে বার্তায় পরিণত করে এই কোম্পানি৷ একটি কম্পিউটার এক সেকেন্ডে প্রায় দুই হাজারের মতো রিপোর্ট নির্ভুল ও সাশ্রয়ীভাবে তৈরি করতে পারে তারা৷
অপর এর সংস্থা সিএটিও ফাউন্ডেশনের জিম হারপার জানান, ‘‘রোবট সাংবাদিকতা তার জায়গা করে নেবে৷ কেননা গণমাধ্যম কোম্পানিগুলো বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্থ সাশ্রয়ের পথ খুঁজছে৷ ভবিষ্যতে আপনি দেখবেন কোম্পানিগুলো যতটা সম্ভব স্বয়ংক্রিয়ভাবে রিপোর্ট তৈরির দিকে ঝুঁকবে৷ তবে এটা রিপোর্টারদের দিয়ে মানবিক বোধ সম্পন্ন প্রতিবেদন লেখার বিকল্প নয়৷''
এ ধরনের রিপোর্টিং-এর বিষয়ে হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতার অধ্যাপক ইয়ানিক ল্যাম্ব-এর মনে মিশ্র অনুভূতি কাজ করে৷ তিনি জানেন, এটা মেশিনের বিকল্প হতে পারে, রিপোর্টারের নয়৷ তবে ভবিষ্যতের নিউজমেকারদের এই নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে৷
ইয়ানিক ল্যাম্বের বক্তব্য: ‘‘আমরা আমাদের কম্পিউটার বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও চারুকলা বিভাগের সঙ্গে মিলে তথ্য পরিবেশনের নতুন উপায় নিয়ে কাজ করছি, যেন আমরা এক্ষেত্রে অগ্রসর থাকতে পারি৷ আর আমাদের শিক্ষার্থীরাও যেন নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে প্রস্তুত হয়ে থাকতে পারে৷''
এই যেমন লিউক রোসিয়াক৷ এই রিপোর্টার কম্পিউটার কোর্সে পড়ার সময় একটি প্রোগ্রাম ডেভেলপ করেন, যেটা সংসদীয় বক্তৃতা বিশ্লেষণ করতে পারে৷ তিনি ‘ওয়াশিংটন এক্সামিনার'-এ কাজ করেন৷ লিউক রোসিয়াক বলেন, ‘‘এটা সাংবাদিকদের আগের চেয়ে বেশি মেটেরিয়াল দিচ্ছে৷ এটা কোনোকিছুর স্থলাভিষিক্ত হচ্ছে না৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে মনে হয়, এখন আগের চেয়েও বেশি সাংবাদিক প্রয়োজন, কারণ এখন আমাদের কাছে সব তথ্য আছে, যেখান থেকে আমরা রিপোর্ট পেতে পারি৷ তাই আমি মনে করি ভবিষ্যতে আপনি এমন সব প্রতিবেদন পড়বেন, যা আগে কখনো লেখা হয়নি৷''
কম্পিউটার আসলেই তথ্য সংগ্রহ করতে পারে৷ তবে মানুষই অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে৷ ভবিষ্যতেও এর পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই৷