এশীয় হাতিদের রক্ষায় কাজ করে ‘সেভ এলিফেন্ট ফাউন্ডেশন' নামে থাইল্যান্ডের একটি বেসরকারি সংস্থা৷ তাদের একটি ভিডিওতে পানিতে ভেসে যেতে থাকা বন্ধুকে বাঁচাতে একটি হাতির চেষ্টা দেখানো হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
এশীয় হাতিদের রক্ষায় কাজ করে ‘সেভ এলিফেন্ট ফাউন্ডেশন' নামে থাইল্যান্ডের একটি বেসরকারি সংস্থা৷ তাদের একটি ভিডিওতে পানিতে ভেসে যেতে থাকা বন্ধুকে বাঁচাতে একটি হাতির চেষ্টা দেখানো হয়েছে৷
থাইল্যান্ডের এলিফেন্ট নেচার পার্কে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ডেরিক নামের এক ব্যক্তি স্রোতের তোড়ে ভেসে যাচ্ছে কিংবা ভেসে যাওয়ার অভিনয় করছে, আর তা দেখে খাম লা নামের একটি হাতি তাকে উদ্ধার করছে৷ কারণ হাতিটি ভেবেছে বন্ধু ডেরিক হয়ত বিপদে পড়েছে বা তার জীবন সংকটের মুখে৷
বন্ধুর প্রতি হাতির এই ভালবাসার ভিডিওটি ইউটিউবে দেখে সবাই মুগ্ধ৷ অনলাইনে পরিবেশ বিষয়ক সংবাদ প্রকাশকারী সংস্থা ‘এলিফেন্ট নিউজ' ১২ অক্টোবর ইউটিউবে ভিডিওটি আপলোড করে লিখেছে, ‘‘এই ভিডিও আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছে যে, আমরা যদি কোনো প্রাণীকে ভালবাসা দিই, তাহলে প্রাণীরাও সবসময় সেই ভালবাসা ফেরত দেয়৷''
গত এক সপ্তাহে ভিডিওটি ৫৫ লাখেরও বেশিবার দেখা হয়েছে৷
ইউটিউবে ভিডিওটির নীচে মন্তব্যের ঘরে একজন লিখেছেন, ‘‘এখন আমরা কি দয়া করে হাতিদের সার্কাসে উপস্থাপন করা এবং দাঁতের জন্য তাদের হত্যা করা বন্ধ করতে পারি?'' আরেকজন লিখেছেন, ‘‘হাতিরা যে গড়পড়তা মানুষের চেয়ে ভালো এই ভিডিওতে তাই দেখানো হয়েছে৷''
ডাইনোসর বিলুপ্ত, এবার হাতিও কি ধীরে ধীরে যাবে?
অতিকায় ডাইনোসর আর নেই৷ এখনো টিকে থাকা স্থলচরদের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রাণী হাতিও কি এবার বিলুপ্ত হয়ে যাবে? আন্তর্জাতিক হাতি দিবসে প্রশ্নটা খুব বড় হয়ে উঠেছে৷ ছবিঘরে দেখুন কেন এবং কীভাবে খুব দ্রুত কমে যাচ্ছে হাতি৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/M. Hicken
আর মাত্র ১০ বছর?
হাতি যে হারে কমছে, তাতে ১০ বছর পর চিড়িয়াখানা ছাড়া আর সব জায়গা থেকে এই প্রাণীটির চিহ্ন মুছে গেলে নাকি অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না৷ আশঙ্কাটা যে মোটেই বাড়াবাড়ি নয়, তা দুটো তথ্য দিলেই বুঝতে পারবেন৷ একশ’ বছর আগে আফ্রিকায় মোট এক কোটি হাতি ছিল৷ এখন সেখানে মাত্র সাড়ে চার থেকে সাত লাখের মতো হাতি টিকে আছে৷ এশিয়ায় আছে মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ হাজার হাতি৷ গত দশ বছরে নাকি সারা বিশ্ব থেকে ৬২ ভাগ হাতি কমেছে!
ছবি: picture-alliance/R. Harding
দাঁতের জন্য মরছে হাতি
কথায় আছে, মরা হাতির দাম লাখ টাকা৷ সত্যিই তাই৷ বিশেষ করে হাতির দাঁত তো হীরা-মুক্তা-জহরতের মতোই মূল্যবান৷ সেই দাঁতের লোভে আফ্রিকার জঙ্গল থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে একশ’টি হাতি মারা হয়৷ হাতির দাঁত সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় চীনে৷ গত জুলাই মাসে জুরিখ বিমানবন্দরে ২৬২ কিলোগ্রাম ওজনের হাতির দাঁতসহ ধরা পড়ে এক চীনা নাগরিক৷
ছবি: Reuters/R. Sprich
জঙ্গিদের টাকার উৎসও হাতি!
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অবৈধ ব্যবসা এই হাতির দাঁতের কেনাবেচা৷ মাদক এবং মানবপাচারের পরই এর স্থান৷ অনেক যু্দ্ধ-দাঙ্গা-হাঙ্গামার পেছনেও ভূমিকার রাখে হাতির দাঁত৷ আফ্রিকা অঞ্চলের দুই ইসলামি জঙ্গি সংগঠন বোকো হারাম এবং আল-শাবাব বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অস্ত্র কেনে হাতির দাঁতের বিনিময়ে!
ছবি: picture-alliance/AP Photo/African Parks
জঙ্গল কমছে, কমছে হাতি
জনসংখ্যা বাড়ছে৷ আর জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপ পড়ছে জঙ্গলের ওপর৷ মানুষ জঙ্গল কেটে সেখানে গড়ছে বাসস্থান, কলকারখানা৷ ফলে জঙ্গলের প্রাণীরা পড়ছে বিপদে৷ হাতির জন্যও জঙ্গল ক্রমশই কমছে, বাড়ছে বিপদ৷ গত এক শতকে আফ্রিকার জনসংখ্যা চারগুণ বেড়েছে৷ হাতির সংখ্যা সেখানে এক কোটি থেকে কমে সাত লাখ বা তারও কম হওয়াই তো স্বাভাবিক, তাই না?
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Gambarini
হাতিরক্ষায় তৎপর ওবামা
চীনের পর হাতির দাঁত সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় যুক্তরাষ্ট্রে৷ তবে ধীরে ধীরে হয়ত সেখানে অবৈধ এ ব্যবসাটা কমবে৷ গত জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এই ব্যবসা একেবারে বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷