প্রস্রাব করার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে ইউরোপে৷ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সম্মানিত সদস্যরাই অংশ নিচ্ছেন এ প্রতিযোগিতায়৷ এমন অভিনব প্রতিযোগিতার মূল উদ্দেশ্য মানুষ বাঁচানো৷
বিজ্ঞাপন
প্রতিযোগিতাটির আহ্বায়ক, আয়োজক, প্রচারক সবই আসলে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের গ্রিন পার্টির সদস্যরা৷ গত কয়েকদিন ধরে তাঁরা প্রস্রাব করে টেস্ট টিউবে ভরছেন, অন্যদেরও উদ্বুদ্ধ করছেন এবং টেস্ট টিউব প্রস্রাবে পূর্ণ হলেই তা পাঠিয়ে দিচ্ছেন পরীক্ষাগারে৷ ইউরোপীয় পার্লামেন্টে গ্রিন পার্টির ১৪০ জন সদস্যের প্রত্যেকেই বিপুল উৎসাহে অংশ নিচ্ছেন প্রতিযোগিতায়৷
কারণ গ্লাইফসেট
হ্যাঁ, গ্লাইফসেট নামের একটি ওষুধের কারণেই প্রস্রাব করে সেই প্রস্রাবের নমুনা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরীক্ষাগারে পাঠানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছেন গ্রিন পার্টির সংসদ সদস্যরা৷ গ্লাইফসেট মূলত আগাছা মারার ওষুধ৷ বিশ্বের অনেক দেশের কৃষকই ফসলকে আগাছামুক্ত করতে এই ওষুধ ব্যবহার করেন৷
কিন্তু এ ওষুধ শুধু আগাছা মারে না, মানুষকেও ঠেলে দেয় মৃত্যুর দিকে৷ সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডাব্লিউএইচও-র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্লাইফসেট কোনোভাবে মানুষের দেহে গেলে ক্যানসারও হতে পারে৷
প্রস্রাব করে গ্লাইফসেট ঠেকাও
ইউরোপীয় পার্লামেন্টে গ্রিন পার্টির সদস্যরা ঠিক এই কথা বলছেন না৷ তবে গ্লাইফসেট ঠেকানোর জন্য যে উদ্যোগটা নিয়েছেন তার ভেতরের কথা এটাই৷ প্রস্রাবের নমুনা পরীক্ষাগারে পাঠিয়ে তাঁরা দেখতে চান, তাঁদের শরীরে কী পরিমাণ গ্লাইফসেট আছে৷ পরীক্ষাগার রিপোর্ট এলে সে তথ্য ইউরোপের অধিবাসীদেরও জানিয়ে সবার প্রতি গ্লাইফসেট বর্জনের আহ্বান জানাতে চান তাঁরা৷
নির্বাচন
ইউরোপে ইতিমধ্যে গ্লাইফসেট বর্জনের দাবি উঠেছে৷ তবে আগামী জুনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অঞ্চলে গ্লাইফসেট ব্যবহার আরো ১৫ বছর রাখার প্রস্তাব নিয়ে ভোট হবে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে৷ ‘না’ ভোট বেশি পড়লে বিষাক্ত ওষুধটির ব্যবহার বন্ধ করার পথ কিছুটা সুগম হবে৷ ভোটের আগে জনমত গড়ার জন্যই প্রস্রাবের নমুনায় গ্লাইফসেটের মাত্রা জানতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন গ্রিন পার্টির সাংসদরা৷
প্রস্রাব দিয়ে জ্বলবে বাতি!
হ্যাঁ, জ্বালানি তৈরির এরকম আরো অনেক বিকল্প এবং টেকসই উৎস নিয়ে গবেষণা চলছে দীর্ঘদিন ধরে৷ চলুন জেনে নিই, সাত বিকল্প উৎসের কথা যা ভবিষ্যতে আমাদের জন্য জ্বালানি হতে পারে৷
ছবি: Wattway/COLAS/Joachim Bertrand
মলমূত্র
আমরা প্রতিদিন যা বিসর্জন করছি তা থেকে বিকল্প জ্বালানি তৈরির পথে বিজ্ঞানীরা বেশ খানিকটা এগিয়েছেন৷ তাদের চেষ্টা সফল হলে শীঘ্রই হয়ত শরণার্থী শিবিরগুলোতে মলমূত্র দিয়ে তৈরি বিদ্যুৎ দিয়ে জ্বালানো হবে বিজলি বাতি৷ আর এভাবে একসময় আমাদের দৈহিক বর্জ্য আমাদের সবচেয়ে প্রিয় মিত্রে পরিণত হতে পারে৷
ছবি: Imago
শ্যাওলা খামার
শ্যাওলা দিয়ে জ্বালানি উৎপাদনের ধারণাটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে৷ বিজ্ঞানীদের চেষ্টা হচ্ছে ভবিষ্যতে এ সব জলীয় উদ্ভিদ দিয়ে বায়োফুয়েল তৈরি৷ তবে এখন পর্যন্ত গবেষণা থেকে যা জানা যাচ্ছে, তাতে এভাবে খুব বেশি জ্বালানি উৎপাদন সম্ভব হবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/MAXPPP
মৃদু বাতাস থেকে জ্বালানি উৎপাদন
দক্ষিণ আফ্রিকার এক উদ্ভাবক তৈরি করেছেন এই পন্থা৷ ট্রেন স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের মতো জায়গায়, যেখানে ট্রেন এসে থামে কিংবা পাশ থেকে দ্রুত চলে যায়, সেখানে পাতলা এক ধরনের পাত বসিয়ে দিলেই হলো৷ এরপর ট্রেনের চলাচল থেকে পাওয়া মৃদু বাতাসকে কাজে লাগিয়ে সেগুলো তৈরি করবে জ্বালানি৷
ছবি: Charlotte Slingsby
কয়লার বদলে নারিকেল
বিশ্বের একটা বড় অংশে এখনো জ্বালানির মূল উৎস হিসেবে কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে৷ আর এর ফলে বন উজাড় অব্যাহত রয়েছে৷ নারিকেলের খোলস এবং শাঁস এক্ষেত্রে বিকল্প হতে পারে৷ সাধারণ কাঠকয়লার চেয়ে নারিকেলের খোলস বেশিক্ষণ জ্বলে৷ বিশেষ করে কেনিয়া এবং কম্বোডিয়ায় জ্বালানি হিসেবে নারিকেলের ভবিষ্যত উৎস৷
ছবি: Imago/fotoimedia
মাছের আঁশ এবং কাঁটা
মাছ ফ্যাক্টরির ফেলে দেয়া মাছের আঁশ এবং কাঁটা হতে পারে বিকল্প জ্বালানির উৎস৷ এটা পরিবেশের জন্যও সহায়ক, কেননা আবর্জনা হিসেবে এগুলো ফেলে দেয়া হয়৷ হন্ডুরাস, ব্রাজিল এবং ভিয়েতনামে আঁশ এবং কাঁটা দিয়ে জ্বালানি তৈরির গবেষণা কিছুটা আগালেও পর্যাপ্ত অর্থাভাবে তা গতি পাচ্ছে না৷
ছবি: AP
ডেস্কো থেকে জ্বালানি
ডান্স ফ্লোরের নীচে একটা বিশেষ সারফেস বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব৷ ইতোমধ্যে এই নিয়ে গবেষণা বেশ খানিকটা এগিয়েছে৷ শুধু ডান্স ফ্লোর নয়, ফুটবল স্টেডিয়াম, মেট্রো স্টেশনের মতো যেসব স্থানে মানুষের চলাচল অনেক বেশি, সেসব স্থানে এই সারফেস বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে, যা দিয়ে কম-ভোল্টেজের বাতি জ্বালানো যাবে৷
ছবি: Daan Roosegaarde
রাস্তায় সোলার প্যানেল
হ্যাঁ, শুধু বাড়ির ছাদেই নয়, রাস্তার উপরও এভাবে ফটোভোল্টেইক সোলার প্যানেল বসানো সম্ভব৷ নেদারল্যান্ডসে ইতোমধ্যে সত্তর মিটার সোলার বাইক পথ তৈরি করা হয়েছে৷ আর ফ্রান্স এক হাজার কিলোমিটার রাস্তায় আগামী কয়েকবছরে সোলার প্যানেল বসানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে৷
ছবি: Wattway/COLAS/Joachim Bertrand
7 ছবি1 | 7
দ্বিধাবিভক্ত ইউরোপ
সমালোচকরা বলছেন, স্রেফ প্রচারমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই বিচিত্র এই কর্মসূচি পালন করছে গ্রিন পার্টি৷ তবে গ্লাইফসেটের বিরুদ্ধে জনমত গড়ার যে প্রয়োজন রয়েছে, তা অস্বীকার করছেন না তাঁরা৷
গ্লাইফসেট ব্যবহার রোধের প্রশ্নে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো এখন দ্বিধাবিভক্ত৷ ফ্রান্স আর ইটালি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এ ওষুধের প্রয়োগ বন্ধ করার পক্ষে৷ জার্মানি এখনো দ্বিধাগ্রস্থ৷ বিশ্লেষকরা মনে করেন, গ্লাইফসেট প্রয়োগ বন্ধে সম্মত নয় বলেই এখনো এ বিষয়ে পরিষ্কার কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি জার্মানি৷
এমন প্রতিযোগিতার কথা কি আগে কখনও শুনেছেন? প্রতিবেদনটি কেমন লাগলো জানান আমাদের৷
মূত্র যা জানান দেয়
প্রস্রাব করার পর আপনি যদি মূত্রের দিকে লক্ষ্য রাখেন সেটা দোষের কিছু না৷ কেননা মূত্রের রঙ, গন্ধ এবং ঘনত্ব আপনাকে জানান দিবে আপনার শরীরে কি ঘটছে৷
ছবি: Fotolia/Mikael Damkier
মিষ্টি গন্ধ
আপনার মিষ্টি খাওয়ার অভ্যাসের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই৷ প্রস্রাবের মিষ্টি গন্ধ জানান দেয় আপনার ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ আছে কিনা৷ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ হোলি ফিলিপস বলেন, এই মিষ্টি গন্ধ থেকে বোঝা যায় আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নেই৷
ছবি: Elena Schweitzer - Fotolia.com
ঘোলা রঙ
প্রস্রাব যদি ঘোলা হয় তাহলে বুঝতে হবে মূত্রনালী সংক্রমিত হয়েছে, যাকে বলা হয় ‘ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন’ বা ইউটিআই৷ মূত্রনালীর দেয়ালে ব্যাকটিরিয়া এবং লিউকোসাইটের কারণে প্রস্রাব ঘোলা হয়৷
ছবি: AP
গোলাপি রঙ
অতিরিক্ত তরমুজ বা লাল রঙের ফল খাওয়ার জন্য প্রস্রাবের এমন রঙ হতে পারে৷ তবে প্রস্রাবের এই রঙ নির্দেশ করে আপনার মূত্রে রক্তের উপস্থিতি৷ এটা ইউটিআই, কিডনিতে পাথর অথবা ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে৷
ছবি: Fotolia/ag visuell
বাজে গন্ধ
এটা সত্যি যে প্রস্রাবের গন্ধ গোলাপের মত হবে না৷ কিন্তু গন্ধটা যদি তীব্র হয়, যেমন পঁচা খাবার, তাহলে বুঝতে হবে মূত্রে সংক্রমণ হয়েছে৷
ছবি: Jörg Beuge/Fotolia
জ্বালা-পোড়া
যৌন সংক্রমিত রোগ যেমন সিফিলিস ও গনোরিয়া রোগের লক্ষণ হলো প্রস্রাবে জ্বালা-পোড়া৷
ছবি: picture alliance / Frank Rumpenhorst
বারবার টয়লেটে যাওয়া
এর অর্থ হতে পারে আপনি গর্ভবতী৷ এটা প্রাথমিক লক্ষণ, যা হরমোন পরিবর্তনের কারণে হয়৷ ফলে আপনার কিডনিতে রক্তপ্রবাহ বেড়ে যায়৷
ছবি: AP Graphics
ক্যাফিন গ্রহণ
বেশি মদ্যপান করলে বা ক্যাফিন গ্রহণ করলেও প্রস্রাবের হার বেড়ে যায়৷ যদি এটা অব্যাহত থাকে, তবে আপনার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন৷ কারণ এটা ডায়াবেটিস বা টিউমারের লক্ষণ হতে পারে৷