‘মানুষ বেশি হলে ঝুঁকিও বেশি হবে এমন কোনো কথা নেই’
সমীর কুমার দে ঢাকা
১৩ মার্চ ২০২০
করোনা এখন বড় এক আতঙ্কের নাম৷ ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ায় বাংলাদেশ কি একটু বেশি ঝুঁকিতে? যারা চিকিৎসা দিচ্ছেন বা দিতে প্রস্তুত আছেন, তাদের কি পর্যাপ্ত প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা রয়েছে?
ছবি: Privat
বিজ্ঞাপন
মিডিয়া কতটুকু দায়িত্বশীল? ডয়চে ভেলের সঙ্গে এসব নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন, রোগ তত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনষ্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা৷
ডয়চে ভেলে : আপনারা দু'টি হাসপাতালকে নির্ধারিত রেখেছেন, পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য তা কি যথেষ্ট?
অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা : আসলে আমরা দু'টি হাসপাতাল নির্ধারিত রাখিনি৷ আগে থেকেই আমরা প্রতিটি হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিট করেছিলাম৷ প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ৫টি করে বেড আমরা সব জায়গায় রেখেছিলাম৷ এখন আমরা খুঁজছি, এমন হাসপাতাল ৫০ বেড বা ১০০ বেড হাসপাতাল, যেখানে এখনও কার্যক্রম শুরু হয়নি৷ পৃথক আইসোলেশন ইউনিট করার চেষ্টা করছি৷ এর মধ্যে ঢাকায় একটাকে পৃথক করে রেখেছি৷ যেখানে অন্য কোনো রোগী ভর্তি হয় না৷ আরো কয়েকটি হাসপাতালে পৃথক বেড রাখা হয়েছে৷ আরো দুই তিনটি হাসপাতাল পৃথক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে৷
রোর্গ নির্ণয়ের স্থান কতগুলো?
এটা শুধুমাত্র আমাদের অফিসেই রেখেছি৷ এটা না হলে ঝামেলা হয়ে যাবে৷
রোগ নির্ণয়ের সরঞ্জাম কি শুধু আপনাদের এখানেই আছে, নাকি অন্য জায়গাতেও আছে?
এটা শুধুমাত্র আমাদের এখানেই রেখেছি৷ কারণ, একটা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর সেটাকে ফলোআপ করতে হয়৷ এই কারণে অন্য কোথাও দেইনি৷ যেহেতু এখানে রোগীর সংখ্যাও কম, তাই আমাদের নেটওয়ার্ক করা আছে, স্যামপল আমাদের এখানে চলে আসে৷ আমাদের প্ল্যান অনুযায়ী আমরা এক জায়গায় রেখেছি৷
তাহলে জেলা শহরে করোনা ভাইরাস নির্ধারণে কী কী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে?
করোনা: গুজব ও বাস্তবতা
করোনা ভাইরাস নিয়ে ভয় পাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়৷ কিন্তু এই ভয়কে কাজে লাগিয়ে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ছে ভুয়া তথ্য, মিথ্যা সংবাদ৷ ডয়চে ভেলে চেষ্টা করছে বিশেষজ্ঞদের মত অনুসারে আপনাদের সঠিক তথ্য জানানোর৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot/Xiao Yijiu
শিশুদের আশঙ্কা কি বেশি?
শিশুদের নিয়ে আলাদা করে কোনো আশঙ্কা নাই৷ যে কোনো বয়সের মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন৷ আক্রান্তদের পাঁচ জনের চারজনের ওপর এই ভাইরাস সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের মতোই প্রভাব ফেলবে৷ এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হওয়া রোগীদের বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে শিশু ও তরুণ বয়সিরা স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়েই সংক্রমণ কাটিয়ে উঠতে পারেন৷ মধ্যবয়সিরা এতে আক্রান্ত হলেও পর্যাপ্ত সেবা ও চিকিৎসায় তাদেরও সেরে ওঠার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ৷
ছবি: Reuters/A. Jalal
কী খেলে ঠেকানো যাবে করোনা?
কোনো কিছু খেয়েই করোনা ঠেকানো যাবে না৷ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখার জন্য সুষম খাবার এমনিতেই প্রয়োজন৷ অনলাইনে গুজব ছড়াচ্ছে৷ কেউ রসুন খাওয়ার কথা বলছেন, কেউ ব্লিচিং বা অন্য রাসায়নিক দ্রব্যের কথা বলছেন৷ রসুনে নানা উপাদান রয়েছে যা শরীরের জন্য ভালো৷ রসুন খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ বাড়াতে তা ভূমিকা রাখতে পারে৷ তবে ব্লিচিং বা অন্য রাসায়নিক শরীরে গেলে তা করোনা ভাইরাসের চেয়েও মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে৷
ছবি: AFP/C. De Souza
গরম বা ঠান্ডা পানি পান করা উচিত?
নিয়মিত পানি পান করলে শরীরের জন্য ভালো৷ কিন্তু ১৫ মিনিট পর পর গরম পানি পান করলে ভাইরাস মারা যাবে, এমন তথ্য সঠিক নয়৷ মুখে বা শরীরে একবার ভাইরাস প্রবেশ করলে কোনো খাবার বা পানীয় দিয়েই তা আটকানো যাবে না৷ শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজেই এই ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে সক্ষম৷
ছবি: Colourbox/Haivoronska_Y
অ্যান্টিবায়োটিক বা কোনো ওষুধে কাজ হবে?
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের জন্য কার্যকর, ভাইরাসের জন্য নয়৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে অসুস্থ শরীরে ভাইরাসের পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণও হতে পারে৷ সেসব ক্ষেত্রে চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পরামর্শ দিতে পারেন৷ এখনো নভেল করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি৷ বিভিন্ন সংস্থা প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ শিগগিরই হয়তো আসবে সুখবর৷
ছবি: imago/Science Photo Library
আবহাওয়া ও তাপমাত্রার কোনো প্রভাব রয়েছে?
এ বিষয়ে এখনো বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত নন৷ পরীক্ষাগারে দেখা গেছে ৬০ থেকে ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভাইরাস মারা যায়৷ কিন্তু এত উচ্চ তাপমাত্রা কোনো দেশেই থাকে না৷ অনেকে মনে করছেন গরম পানি দিয়ে স্নান করলে ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে৷ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা সবসময় জরুরি৷ কিন্তু প্রচণ্ড গরম পানি দিয়ে স্নান করলেই তা করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচাবে, এমন তথ্য সঠিক নয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Lipinski
থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে কি করোনা ভাইরাস শনাক্ত সম্ভব?
থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে শরীরে তাপমাত্রা বোঝা সম্ভব, ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চত করা সম্ভব না৷ সেক্ষেত্রে কারো শরীরে জ্বর বা অন্য উপসর্গ দেখা দেয়ার আগ পর্যন্ত তার শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি বোঝা যাবে না৷ সাধারণত ভাইরাস শরীরে ঢোকার ১ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৫ দিনের মধ্যেই তা টের পাওয়া যায়৷ তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১৪ দিনের পরও ভাইরাস শরীরে কর্মক্ষম থাকতে পারে৷
ছবি: Reuters/P. Mikheyev
টাকার মাধ্যমে কী করোনা ছড়ায়?
শরীরের বাইরে করোনা ভাইরাস কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টা বেঁচে থাকতে পারে৷ ফলে আমদানি করা কোনো পণ্য বা চিঠির মাধ্যমে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা নেই বললেই চলে৷ ময়লা টাকা থেকে যেকোনো জীবাণুই ছড়াতে পারে৷ ফলে টাকা লেনদেনের পর ভালো করে হাত ধুয়ে নেয়া উচিত৷ যত বেশি সম্ভব হাত-মুখ-নাক-কানে হাত নেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে৷
ছবি: DW
মশা বা অন্য পশুর মাধ্যমে ছড়াতে পারে?
সার্স ভাইরাস ছড়িয়েছিল এক ধরনের বেড়াল থেকে৷ মার্স ছড়িয়েছিল উট থেকে৷ নভেল করোনা ভাইরাস কিভাবে ছড়ালো বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত নন৷ ধারণা করা হচ্ছে, বাদুড় থেকে অন্য কোনো মাধ্যম হয়ে মানুষের মধ্যে এটি ছড়িয়েছে৷ তবে মশা বা অন্য কোনো প্রাণীর মাধ্যমে এটি আপনার মধ্যে ছড়াবে না৷ সতর্কতা হিসেবে মাছ-মাংস খাওয়ার আগে ভালোভাবে রান্না করতে হবে৷ অর্ধেক সিদ্ধ মাছ-মাংস বা পোচ করা ডিম থেকে যেকোনো জীবাণুই ছড়াতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/A. Rose
কিভাবে থাকবো নিরাপদ?
সবচেয়ে জরুরি হাত পরিষ্কার রাখা৷ সাবান দিয়ে হাত ভালো করে ২০ সেকেন্ড পরিষ্কার করতে হবে৷ যদি সাবান না থাকে, ব্যবহার করতে পারেন অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার৷ হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় টিস্যু ব্যবহার করে তা ডাস্টবিনে ফেলুন, হাত ধুয়ে নিন৷ অথবা হাতের কনুইয়ে মুখ ঢাকুন৷ হাতের তালুতে হাঁচি-কাশি দিলে সেখান থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে আক্রান্ত হতে পারেন অন্য়রা৷ হ্যান্ডশেক বা হাত মেলানো ও কোলাকুলি থেকেও বিরত থাকুন৷
ছবি: AFP/N. Almeida
আমি কী মারা যাবো?
করোনায় আক্রান্ত হলেই আপনি মারা যাবেন, এমন আশঙ্কা একেবারেই কম৷ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করুন৷ চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে চলুন৷ অনলাইনে যা দেখবেন, সব বিশ্বাস না করে নির্ভরযোগ্য তথ্যের সন্ধান করুন৷ সাবান, স্যানিটাইজার নিজে কিনে জমিয়ে রাখবেন না৷ আপনি নিরাপদ থাকলেও আপনার আশেপাশের মানুষ নিরাপদ না থাকলে সহজেই তার কাছ থেকে ছড়াবে ভাইরাস৷ ফলে নিজে নিরাপদ থাকুন, অন্যদেরও থাকার সুযোগ দিন৷
ছবি: AFP/Getty Images/J. Moore
10 ছবি1 | 10
জেলা শহরে যদি কেউ ‘সাসপেকটেড' হয়, আমাদের সার্ভিলেন্স টিম সেখানে গিয়ে স্যামপল কালেক্ট করে৷ প্রথম হটলাইনে কল করে৷ তারপর আমরা সাজেষ্ট করি, সে কোথায় যাবে৷ কাছের হাসপাতালে যেতে বলি আমরা৷ আমাদের টিম স্যামপল কালেক্ট করে ঢাকায় পাঠানোর পর আমরা পরীক্ষা করে তারপরই সিদ্ধান্ত দেই৷
আমরা দেখছি, কিছু হাসপাতালে সর্দি-কাশি নিয়ে গেলেও চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিচ্ছেন না৷ আইইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দিচ্ছেন৷ এর থেকে পরিত্রাণের পথ কী?
আমরা সবার সঙ্গে কথা বলছি৷ হঠাৎ করেই তো ধরা পড়েছে৷ অনেকে মনে করছেন, রোগী হয়ত আরো বেশি আছে৷ অনেকেই কনফিউশনে আছেন, মনে করছেন টেষ্ট করলে ভালো হয়৷ এখন পর্যন্ত আমাদের তিনটি রোগী৷ এটা সবাইকে বোঝাতে চেষ্টা করছি৷ তবে সার্ভিলেন্স হিসেবে আমরা কিছু মানুষের স্যামপল টেস্ট করে দেখছি, তাদের মধ্যে পজেটিভ হয় কিনা৷ যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তাদের থেকেই আমরা এগুলো টেষ্ট করছি৷
বিদেশ থেকে আসা মানুষদের কোয়ারেন্টাইনে রাখার কথা বলেছেন৷ কেউ যদি না থাকে, সেগুলো মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা আছে?
জেলা শহর বা উপজেলা লেভেলে ইউনিয়ন পরিষদ অফিস বা স্বাস্থ্য সহকারীদের দিয়ে আমরা তাদের মনিটরিং করছি৷ আমাদের উপজেলা ও জেলা দুই লেভেলেই আমাদের পৃথক কমিটি করা আছে৷ ওই কমিটি এগুলো মনিটরিং করছে৷ প্রতিটি জেলা শহরেই কো-অর্ডিনেশন কমিটি আছে৷ তারা এগুলো মনিটরিং করছে৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা মোবাইলে ফোন করে মনিটরিং করি৷ যদিও এটা পারফেক্ট না৷ সেক্ষেত্রে আমাদের স্থানীয় যারা আছেন, তাদের মাধ্যমে মনিটরিং করি৷
চিকিৎসক ও নার্স যারা সেবা দিচ্ছেন বা দেবেন তাদের কি পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে?
করোনার ক্ষেত্রে পৃথক প্রশিক্ষণের কিছু নেই৷ এটা সাধারণ সর্দি-জ্বরের মতো৷ এখানে প্রিভেনশনই প্রধান৷ সেই বিষয়ে আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছি এবং দিয়ে যাচ্ছি৷
জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আপনারা কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
মূলত আমরা পোষ্টার লিফলেট তৈরি করেছি, সেগুলো বিলি হচ্ছে৷ পত্রিকায়, টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন যাচ্ছে৷ স্থানীয় যেসব প্রতিনিধি আছেন, তারা সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছেন৷ আমরা প্রতিদিন প্রেস বিফিং করছি৷ এটা সরাসরি গণমাধ্যমে যাচ্ছে৷ সোশাল মিডিয়া মনিটরিং করছি৷ ওয়েবসাইট সবসময় আপডেট করা হচ্ছে৷ আসলে গণমাধ্যমের সহযোগিতা আমরা অনেকখানি নিচ্ছি৷ গণমাধ্যম আমাদের অনেকখানি সহযোগিতা করছে৷
ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা
This browser does not support the audio element.
সংবাদ প্রকাশে মিডিয়া কী ধরনের ভূমিকা পালন করছে? আরো কী কী করা যেতে পারে?
মিডিয়া যথেষ্ট সহযোগিতা করছে৷ আমরা তাদের সহযোগিতা পুরো মাত্রায় পাচ্ছি৷ অনেক তথ্য আমরা মিডিয়া থেকে পাচ্ছি, যা মনিটরিংয়ের জন্য কাজে লাগছে৷ তারা আমাদের সহযোগী যোদ্ধা হিসেবে কাজ করছে৷ তবে মিডিয়ার একটা চ্যালেঞ্জের জায়গা আছে, সেটা ঢালাওভাবে না৷ দু'একটি মিডিয়ায় রোগীর ব্যক্তিগত তথ্য চলে যাচ্ছে৷ ছোট্ট দেশ, সবাই তথ্য পেয়ে যান৷ কিন্তু সব তথ্য প্রকাশ করা যাবে না৷ আমরা প্রত্যাশা করি, ব্যক্তিগত তথ্যের ব্যাপারে তারা শ্রদ্ধাশীল হবেন৷
বাসায় পরিবারের সদস্যদের ঝুঁকি থেকে যায় কিনা...
কিছুটা ঝুঁকি তো থেকেই যায়৷ তবে আমরা বাসায় কোয়ারেন্টাইন বলতে যা বলেছি, তাকে পৃথক রুমে রাখতে হবে৷ পরিবারের সদস্যরাও তার সঙ্গে মিশবেন না৷ যদি এক্ষেত্রে বাসায় একটি রুম থাকে, তাহলে তাকে আমাদের যে কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা আছে, সেখানে এসে থাকতে হবে৷ যাদের সেই ব্যবস্থা নেই, তাদের কিন্তু আমরা এনে রাখছি৷
ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ায় অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ঝুঁকি কি বেশি?
আমি সেটা মনে করি না৷ ঘনবসতি একটা চ্যালেঞ্জ৷ কিন্তু ঘনবসতি যদি না-ও হয় আর যদি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেয়া হয়, তাহলে যে কোনো দেশেই এটা ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ মূল বিষয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা মেনে চলা৷
মাস্ক নিয়ে দেশে হৈ চৈ হচ্ছে৷ করোনা প্রতিরোধে মাস্কের ভূমিকা কতটা ?
মাস্ক সাধারণ মানুষের জন্য আদৌ প্রয়োজন নেই৷ আমরা সবসময় বলছি, মাস্কের চেয়ে হাঁচি-কাশি, শিষ্টাচার, ঘনঘন হাত ধোয়া, হ্যান্ডশেক না করা, কোলাকুলি না করা, রোগীর থেকে দূরত্ব বজায় রাখা, এগুলো মেনে চললেই হবে৷
প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷
করোনায় বাংলাদেশের উদ্যোগ
করোনা ভাইরাসকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া মহামারি হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ গত ৮ মার্চ বাংলাদেশেও প্রথম এই ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে৷ করোনা ভাইরাসের প্রভাব এবং পদক্ষেপগুলো দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS/A. I. Damanik
উহান ফেরত
করোনা ভাইরাসের সূত্রপাত হয় চীনের উহান নগরীতে৷ একটা পর্যায়ে শহরটিকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে ফেলে দেশটির সরকার৷ সেখানে আটকা পড়ে কয়েকশো বাংলাদেশি৷ তার মধ্যে পয়লা ফেব্রুয়ারি বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে ৩১২ জনকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনে সরকার৷
ছবি: A. Goni
কোয়ারেন্টাইনে ১৪ দিন
উহান ফেরতদের বিমানবন্দর থেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় নিয়ে যাওয়া হয় উত্তরা আশকোনা হজ ক্যাম্পে৷ সেখানে তারা কোয়ারেন্টাইনে থাকেন৷ ১৪ দিন পর সবাই সুস্থ অবস্থায়ই বাড়ি ফিরে যান৷ তাদেরকে আরো দশদিন নজরদারিতে রাখে সরকার৷
ছবি: Privat
প্রথম করোনা শনাক্ত
চীনের উহান থেকে বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার পর থেকে নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিং করতে থাকে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-আইইডিসিআর৷ এর মধ্যেই আট মার্চ বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো তিনজনকে কোভিড ১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করার ঘোষণা দেন পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা৷
ছবি: Privat
ইটালি থেকে বাংলাদেশে
চীনের বাইরে কোরোনার প্রাদুর্ভাবে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে ইটালি৷ বাংলাদেশে আক্রান্ত তিনজনের দুজনই এসেছেন এই দেশটি থেকে৷ তাদের একজনের সংস্পর্শে এসে পরিবারের আরেক নারী সদস্য আক্রান্ত হন৷ তবে তাদের একজন এরইমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন৷ আরেকজনও করোনামুক্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর৷
ছবি: picture-alliance/S. Gombert
মুজিববর্ষের আয়োজনে কাটছাঁট
করোনা আক্রান্ত তিনজনকে যেদিন শনাক্ত করা হল সেদিনই প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন৷ রাতে আসে মুজিববর্ষের ১৭ মার্চের উদ্বোধনী আয়োজন সীমিত আকারে করার ঘোষণা৷ আসছেন না ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীসহ বিদেশি অতিথিরাও, জানান মুজিববর্ষ উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী৷
ছবি: bdnews24.com/PID
বাজারে প্রভাব
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস শণাক্তের পর বাজারে রাতারাতি তার প্রভাব পড়ে৷ মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের অভাব দেখা দেয়৷ বেড়ে যায় দাম৷ পরবর্তীতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাজারে অভিযান শুরু করে৷ সরকার থেকে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের দাম বেঁধে দেয়া হয়৷
ছবি: DW/S. Hossain
ক্রিকেটে প্রভাব
বাংলাদেশে করোনা শনাক্তের একদিন পরই ছিল জিম্বাবোয়ের বিপক্ষে টি টোয়েন্টি ক্রিকেট ম্যাচ৷ এই ম্যাচে একজন দর্শকের জন্য শুধু একটি টিকেট কেনার সুযোগ দেয় বিসিবি৷ মাঠে দর্শকের উপস্থিতিও ছিল কম৷ পরে বিসিবি মুবিজববর্ষ উপলক্ষে বিশ্ব একাদশ বনাম এশিয়া একাদশের মধ্যে দুইটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ ও কনসার্টের আয়োজনও স্থগিত করে৷
ছবি: DW/S. Hossain
প্রবাসীদের পরিস্থিতি
সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত, ইটালি ছাড়া অন্য কোন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশিরা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হননি৷ দিল্লিতে উহান থেকে আগত ২৩ জন বাংলাদেশি দিল্লি শহর থেকে ৪০ মাইল দূরে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন৷ তাদের বিষয়ে যোগাযোগ রাখছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷
ছবি: A. Goni
যাত্রীদের পরীক্ষা
দেশির তিনটি বিমান বন্দর, দুটি সমুদ্র বন্দর, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট ও বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশন দিয়ে আগত যাত্রীদের স্ক্রিনিং বা শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সরকার৷ কোভিড ১৯ আক্রান্ত সন্দেহে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে ভাইরোলজি ল্যাবরেটরিতে৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS/A. I. Damanik
কী করবেন
যেসব দেশে করোনা সংক্রমণ ঘটেছে সেখান থেকে বাংলাদেশে ফেরত আসা যাত্রীদের স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দিয়েছে আইইডিসিআর৷ কারো করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা দিলে প্রতিষ্ঠানের হটলাইনে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Belga Mag
হটলাইন নাম্বার
মোট ১৩ টি হটলাইন চালু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর৷ নাম্বার: ০১৪০১১৮৪৫৫১, ০১৪০১১৮৪৫৫৪, ০১৪০১১৮৪৫৫৫, ০১৪০১১৮৪৫৫৬, ০১৪০১১৮৪৫৫৯, ০১৪০১১৮৪৫৬০, ০১৪০১১৮৪৫৬৩, ০১৪০১১৮৪৫৬৮, ০১৯২৭৭১১৭৮৪, ০১৯২৭৭১১৭৮৫, ০১৯৩৭০০০০১১, ০১৯৩৭১১০০১১৷