দুর্নীতি রুখতে, সংখ্যালঘুদের নিরাপদ ও সম্মানজনক জীবন নিশ্চিত করতে, কিংবা শিক্ষক, শিক্ষার্থীর অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে একের পর এক মামলায় লড়ে চলেছেন বামপন্থি রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য।
বিজ্ঞাপন
৭০ বছর বয়সেও সিপিএমের রাজ্যসভা সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যরাজনীতিতে সদা সক্রিয়। রাজ্যে পরিষদীয় সচিবের পদ বিলোপ থেকে শুরু করে সিএএ-এনআরসি পর্যন্ত অনেক জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলায় লড়েছেন তিনি। কলকাতার সাবেক মেয়র এক সময় ত্রিপুরার অ্যাডভোকেট জেনারেলের দায়িত্বও সামলেছেন। ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে চলমান বর্তমান ও সুদূর অতীতের নানা বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি৷
ডয়চে ভেলে: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তদন্ত বেশ দ্রুত এগোচ্ছে। মাঝপথে আবার গতি শ্লথ হয়ে যাবে না তো?
বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য: আমাদের দেশে বিচার প্রলম্বিত প্রক্রিয়া। তার বিশদ কারণে আমি যাচ্ছি না। তবে এসএসসি মামলায় তদন্ত দ্রুত এগোনোর নেপথ্যে রয়েছে বিচারপতিদের তৎপরতা। শিক্ষকরা জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতিহলে সমাজ পিছিয়ে পড়বে। এই দার্শনিক তত্ত্বের সঙ্গে আমরা আইনি ব্যাখ্যা পেশ করায় বিচারপতিরা কড়া হাতে বিষয়টিকে ধরেছেন। তদন্ত এই গতিতে চললে নিয়োগ দুর্নীতিতে যে বিশাল একটি চক্র কাজ করেছে, তা দ্রুত সামনে আসবে।
সারদা, নারদ কেলেঙ্কারির ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি তদন্ত গতি হারিয়েছে। কেন এই মামলাগুলির ক্ষেত্রেও একই ছবি দেখা গেল না?
সারদা ও নারদ কেলেঙ্কারির তদন্তে নিযুক্ত সংস্থাগুলি ঠিকঠাক তদন্ত করছিল না। বিষয়টি আমরা আদালতের নজরে আনি। সারদা মামলায় আদালত একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিয়েছে। সেটি হলো, বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা থেকে যারা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন, তাদেরও খুঁজে বার করতে হবে। এটা সর্বোচ্চ আদালতের অনন্য নির্দেশ। তবু আমরা দেখেছি, কেন্দ্রীয় সংস্থা তদন্তে ঢিলেমি করছে। রাজ্যের শাসক দলের নেতারা সরাসরি এই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। আমার মতে, মুখ্যমন্ত্রীও যুক্ত। এই নেতাদের বাঁচাতে এখানকার শাসকরা কেন্দ্রের সঙ্গে আঁতাত করে তদন্ত পিছিয়ে দিতে চাইছে। এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা এসএসসি মামলার ক্ষেত্রে আদালতের নজরদারিতে তদন্ত চেয়েছি। এই উদ্যোগ সফল হয়েছে। আমরা আশা করি, সারদা ও নারদ তদন্ত রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হলে অনেক অপরাধী ধরা পড়বে।
শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি হলে সমাজ পিছিয়ে পড়বে
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ক্ষেত্রে তদন্ত কেন হচ্ছে না, এই প্রশ্ন শাসক দল তুলছে। আপনি কী ব্যাখ্যা দেবেন?
তদন্তকারী সংস্থা রাজনৈতিক প্রভাবে কাজ করলে এটাই হবে। নারদ টেপে যাকে টাকা নিতে দেখা গেল, তিনি দলবদল করায় তদন্ত আটকে যাচ্ছে। এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত যারা নেন, তাঁরা অসৎ। আইনের চোখে সকলে সমান। অন্যায় করলে সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত, এটা বিচার্য নয়।
রাজনীতির প্রভাবমুক্ত সংস্থা গড়তে হলে কী ধরনের সংস্কার প্রয়োজন?
তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকরা আইনের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন, এটাই কাম্য। কিন্তু তারা রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে দায়বদ্ধ হয়ে পড়েন। এটা ব্যক্তিবিশেষের ত্রুটি। এ ছাড়া তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে স্বয়ংশাসিত করে তুলতে হবে। সরকারের কাছে নয়, আইনসভার কাছে আধিকারিকরা দায়বদ্ধ থাকবেন। অর্থাৎ, কাজকর্মের জন্য তাদের জবাবদিহি করতে হবে সংসদ বা বিধানসভার জনপ্রতিনিধিদের কাছে। এ জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের নিজেদের মেরুদণ্ড সোজা রাখা দরকার।
বিচার প্রক্রিয়ায় দেরি হতে থাকলে মানুষের ভরসা কি আর থাকবে?
বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতায় এই ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা কিছুটা তো নষ্ট হবেই। এর ফলে তৈরি হবে নৈরাজ্য। এই নৈরাজ্যের জন্য দায়ী হবে প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা। দেখা যায়, অন্যায়ভাবে কাউকে দিনের পর দিন বন্দি রাখা হচ্ছে। আবার সঠিক কারণে কেউ গ্রেপ্তার হলে হইচই হয়। প্রশাসন বা বিচার বিভাগের সংশ্লিষ্ট মানুষজনকে দায়বদ্ধ থাকতে হবে।
সিবিআই-জালে পশ্চিমবঙ্গের দুই মন্ত্রী
রাজ্যের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও বর্তমান শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী দুজনেই মুখোমুখি সিবিআইয়ের। হাইকোর্টের কড়া নির্দেশে বিপাকে রাজ্য প্রশাসন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
হাইকোর্টের নির্দেশ
দুর্নীতি করে মেয়েকে স্কুলের চাকরি পাইয়ে দেয়ার অভিযোগ শিক্ষা-প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর বিরুদ্ধে। এবিষয়ে তাকে সিবিআইয়ের মুখোমুখি হওয়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। পরেশ যদিও উত্তরবঙ্গে চলে যান। বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, বিকেলের মধ্যে পরেশকে সিবিআই দপ্তরে যেতে হবে। এবিষয়ে কড়া মন্তব্য করেন বিচারপতি। অন্যদিকে হাইকোর্টের নির্দেশের জেরেই সিবিআইয়ের মুখোমুখি হতে হয়েছিল আরেক মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পরেশের দিনপঞ্জি
সিবিআইয়ের মুখোমুখি হতে হবে শুনেই কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গে চলে গেছিলেন পরেশ। বৃহস্পতিবার এ নিয়ে কড়া নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। বাধ্য হয়ে বিকেলের বিমানে বাগডোগরা থেকে কলকাতায় আসেন পরেশ। বিমানবন্দরে পুলিশ মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। সেখান থেকে সরাসরি সিবিআই দপ্তর নিজাম প্যালেসে রওনা হন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পরেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ
নম্বর কম পাওয়া সত্ত্বেও স্কুল সার্ভিস কমিশনের তালিকায় এক নম্বরে ছিল পরেশের মেয়ে অঙ্কিতার নাম। ওই তালিকাতেই ছিলেন ববিতা, লিখিত পরীক্ষায় অঙ্কিতার থেকে বেশি নম্বর পাওয়া সত্ত্বেও তার নাম নীচে ছিল। তার অভিযোগের ভিত্তিতেই হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত করছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
এসএসকেএমে অনুব্রত
গরুপাচার মামলায় দীর্ঘদিন ধরে বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলকে জেরা করার চেষ্টা করছে সিবিআই। এর আগে কলকাতায় এসে সিবিআই দপ্তরে না গিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন অনুব্রত। বৃহস্পতিবার সিবিআই দপ্তরে যান অনুব্রত। কিন্তু শরীর খারাপ লাগছে বলে তিনি বেশিক্ষণ থাকেননি। আবার হাসপাতাল চলে যান। পরে তিনি নিজের বাড়ি ফিরে যান।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সিবিআইয়ের বক্তব্য
সিবিআই জানিয়েছে, আগামী বুধবার অনুব্রতকে সিবিআই দপ্তরে হাজির থাকতে হবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সুপ্রিম কোর্টে পার্থ
এসএসসি দুর্নীতি মামলায় তাকে 'পক্ষ' হিসাবে ঘোষণা করা হয়নি, অথচ, এখন তাকে সিবিআই ডেকে পাঠাচ্ছে। তাই রক্ষাকবচ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে গেলেন রাজ্যের সাবেক শিক্ষা ও বর্তমানে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার সেই মামলার শুনানি হতে পারে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সিবিআইয়ের জেরা
কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ বুধবার সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে পার্থকে সিবিআই দপ্তরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়। এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে পার্থ ডিভিশন বেঞ্চে গেলেও লাভ হয়নি। বুধবার সন্ধ্যায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রীকে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা জেরা করে সিবিআই। পার্থের আশঙ্কা, ফের তাকে ডাকা হতে পারে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
এসএসসি দপ্তরের চেহারা
আদালতের নির্দেশে এসএসসি দপ্তর কার্যত ঘিরে রেখেছে পুলিশ। তারই মধ্যে দপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তাকে এদিন ভিতরে ঢুকতে দেয়া হয়। বুধবার এসএসসির চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার ইস্তফা দেয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার জানা যায়, তার পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়নি। এসএসসি মামলায় সিদ্ধার্থের বয়ান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
8 ছবি1 | 8
আইন কি এর প্রতিকার করতে পারে না?
আইন সবটা পারে না। মানুষকে সচেতন হতে হবে। আমরা যদি অসৎ রাজনীতিকদের ভোট না দিই, তা হলেই হয়। যদিও নির্বাচনে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করা হয়। তবুও সমষ্টিগতভাবে সেই বাধা অতিক্রম করতে হবে।
নিয়োগ মামলা নিয়ে এখন রাজনীতি সরগরম। সেই কথায় ফিরি। মোট কতগুলি মামলা, কত টাকার দুর্নীতি?
নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কয়টি মামলা হয়েছে, সেটা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। তবে মেধার ভিত্তিতে যেখানে নিয়োগ হওয়া দরকার, সেই নিয়োগের জন্য চাকরিপ্রার্থীদের আদালতে আসতে হচ্ছে। এটা সবচেয়ে বড় প্রশাসনিক ত্রুটি। এই ত্রুটি অতিক্রম করার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার।
নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত তো হচ্ছে। কিন্তু স্কুলে নিয়োগের কী হবে?
আইনের মাধ্যমে নিয়োগ সম্ভব। সম্প্রতি মন্ত্রীর কন্যাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে মামলাকারীকে আদালত নিয়োগ দিতে বাধ্য করেছে। তবে এক্ষেত্রে পদ্ধতিগত কিছু সমস্যা থাকায় দেরি হয়।
কলকাতায় পথের ধারে ৫০০ দিন ধরে অবস্থান করছেন চাকরিপ্রার্থীরা। চাকরির ক্ষেত্রে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা পার হয়ে গেলে তাদের কী হবে?
বয়সসীমা পার হয়ে গেলে চাকরি দেওয়া যাবে কিনা, সেটা বলা মুশকিল। ক্ষতিপূরণের কথা ভাবা যেতেই পারে। তবে এক্ষেত্রে যেহেতু দীর্ঘদিন মামলা চলছে, তাই বয়সসীমার বিষয়টা রায় দেওয়ার সময় বিচারপতিরা বিবেচনা করবেন বলে মনে হয়।
জনস্বার্থের অনেক মামলা আপনি লড়েছেন। মনে পড়ার মতো উল্লেখযোগ্য মামলা কোনগুলি যদি বলেন...
তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই পরিষদীয় সচিব নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। এর উদ্দেশ্য ছিল মন্ত্রিসভায় জায়গা দিতে না পারলে অন্য উপায়ে পদের ব্যবস্থা করা। এর বিরুদ্ধে মামলা করায় আদালত একে অসাংবিধানিক বলে বাতিল করেছে। মুখ্যমন্ত্রী কর্মরত এক চিকিৎসককে সাসপেন্ড করেছিলেন। তিনি মামলা করে বকেয়া প্রাপ্য পেয়ে গেছেন। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে সরকারি তহবিল থেকে প্রাপ্য টাকা মেটানো হয়। যারা কুকর্ম করছেন, তাদের পকেট থেকে টাকা দিতে হলে এ ধরনের কাজ কমে যেতো বলে আমার ধারণা।
আপনি তো এখন দেউচা পাচামি নিয়ে ব্যস্ত…
শুধু দেউচা পাচামি নয়, সোমবার মুর্শিদাবাদের ফারাক্কা গিয়েছিলাম। সেখানে আদানিরা গরিব মানুষকে বোকা বানিয়ে তাদের ফলের বাগান দখল করছে। মানুষ যেখানে নিপীড়িত, সেখানেই যেতে হবে।
বামেদের রাজনৈতিক ক্ষমতা এ রাজ্যে তলানিতে ঠেকেছে। অনেকে বলছেন, আপনি আইনি লড়াইয়ে বামেদের টিকিয়ে রেখেছেন!
সাম্প্রতিক কালে বামেরা দুর্বল হয়েছে এটা অস্বীকার করা যায় না। প্রশাসনিক চাপ ও গুন্ডামিতে বামপন্থিদের মধ্যে একটা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। সেটা ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে। ফারাক্কাতে বামপন্থিদের নাম উচ্চারণ করা যেতো না একটা সময়। এখন সেখানে হাজার হাজার মানুষ পথে নেমেছেন। একই জিনিস দেখছি দেউচায়। অর্থাৎ, ভয় কেটে যাচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, আপনার জন্য ১৭ হাজার শূন্যপদে নিয়োগ আটকে গিয়েছে। আপনার প্রতিক্রিয়া?
মুখ্যমন্ত্রী নিয়ম মেনে নিয়োগ করলে আমি আটকানোর কে? আমি বেআইনি নিয়োগ আটকানোর চেষ্টা করেছি। আসলে মুখ্যমন্ত্রী চান দুর্নীতির মধ্যে দিয়ে নিয়োগ হোক, আদালত সেটায় বাধা দিচ্ছে।
লড়াইয়ের মঞ্চে ক্যান্সার আক্রান্ত নারী, সন্তান হারানো বাবা
তারা রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ের তোয়াক্কা করেন না। ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত নারী প্রতিদিন বিক্ষোভ দেখান। বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে নিজের সন্তানকে বাঁচাতে পারেননি এক বাবা। এসএসসি-দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন প্রতিদিন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
তিন দফায় আন্দোলন
মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসবাণীতে ২০১৯ সালের প্রথম দফার আন্দোলন ২৯দিনের মাথায় তুলে নেন আন্দোলনকারীরা। আশ্বাস ফলপ্রসূ না হওয়ায় দ্বিতীয়বার আন্দোলনে বসেন চাকরিপ্রার্থীরা। আন্দোলন চলে ১৮৭ দিন। বর্ষণমুখর রাতের অন্ধকারে দ্বিতীয় দফার সেই আন্দোলন ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। অবস্থান মঞ্চ থেকে আন্দোলনকারীদের সমস্ত জিনিসপত্র সমেত তুলে দেয়া হয়। এখন চলছে তৃতীয় দফার আন্দোলন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সব বাধা উপেক্ষা করে
তৃতীয় দফায় বিগত সাতমাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে এই আন্দোলন। রোদ-বৃষ্টি-ঝড় উপেক্ষা করে এই শামিয়ানার নীচে আন্দোলনরত কয়েকশত চাকরিপ্রার্থী নারী পুরুষ। প্রথমদিকে শামিয়ানা টাঙানোর অনুমতিও ছিল না। গ্রীষ্মের দাবদাহ উপেক্ষা করে খোলা আকাশের নীচে তীব্র রোদেই অবস্থান করে আসছিলেন একঝাঁক তরুণ তরুণী। পরবর্তীকালে লালবাজার থেকে বিশেষ অনুমতি নিয়ে শামিয়ানা টাঙানো হয়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ
নেই পানীয় জলের ব্যবস্থা, বাসটার্মিনাসের শৌচাগার পয়সা দিয়ে ব্যবহার করতে হয়। নারী-পুরুষের জন্য পৃথক কোনো ব্যবস্থা নেই, এমনই অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মাথা গোঁজার ঠাঁই
রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এই অবস্থানে প্রতিদিন সামিল হন চাকরিপ্রার্থীরা। কেউ কেউ প্রতিদিন যাতায়াত করেন আবার অনেকে এই আন্দোলনের স্বার্থে বাড়িঘর ছেড়ে দিনের পর দিন এখানেই পড়ে আছেন। কোনোদিন আত্নীয়-স্বজন, কোনোদিন বন্ধুর বাড়িতে রাতটুকু থাকেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েও
একসঙ্গে দুইটি লড়াই লড়ছেন বীরভূমের সোমা দাস। এসএসসি দুর্নীতির পাশাপাশি ব্লাড ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও তার লড়াই। দ্বিতীয় দফার কেমোথেরাপি সম্পূর্ণ হলেও তৃতীয় দফার কেমো নিতে হতে পারে। এই আন্দোলন চলাকালীন তার চিকিৎসাও চলেছে। সোমবার তাকে সহকারী শিক্ষিকার চাকরি দেয়ার নির্দেশ দেয় শিক্ষা দফতর, কিন্তু তিনি তার প্রাপ্য সরকারি চাকরিটি নেবেন ঠিকই, সঙ্গে আন্দোলনও চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সন্তান হারানো মইদুল
যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চের প্রেসিডেণ্ট মইদুল ইসলাম। আন্দোলন চলাকালীন সন্তান হারিয়েছেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তিনি পুত্রসন্তান লাভ করেন। আন্দোলনের ব্যস্ততায় সদ্যোজাতের শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা করাতে পারেননি। আট দিনের মাথায় মারা যায় শিশুপুত্রটি। মইদুল এখনো বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
হারাতে হলো টিউশন
পিয়ালী সরকারের সামান্য যে কয়টা প্রাইভেট টিউশন ছিল, এই আন্দোলনের ফলে সে সব যেতে বসেছে। বিক্ষোভ দেখানোর জন্য কামাই হয়ে যায় টিউশন। ছাত্রছাত্রীর বাবা-মা রুষ্ট হন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
জুলেখার লড়াই
জুলেখা মণ্ডলের বাড়ি নদিয়ার তেহট্টে। সেখান থেকে প্রতিদিন যাতায়াত করা সম্ভব হয় না। পরিচিত কারো বাড়িতে রাতটুকু কাটিয়ে আবার ধরণামঞ্চে ফেরেন। বাবা দর্জির কাজ করতেন, পায়ের অবস্থা খারাপ হওয়ায় সে কাজও বন্ধ হয়েছে। জুলেখার একার কাঁধে সংসারের দায়িত্ব। রোটেশন পদ্ধতিতে যখন বাড়ি যান, তখন পড়ান। ছাত্র সংখ্যা কমে গেছে আগের থেকে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সাতঘণ্টা ধরে যাতায়াত
অর্পিতা হাজরা। পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলায় বাড়ি। ধরণামঞ্চে উপস্থিত থাকার জন্য প্রতিদিন সাতঘণ্টা ধরে যাতায়াত করতে হয়। ভোর পাঁচটায় উঠে রান্না করে তারপর আসেন, আবার বাড়ি ফিরে ১০ বছরের মেয়েকে নিয়ে পড়তে বসেন। শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে লড়াই করে পড়াশুনো চালিয়েছেন। সারাদিনের কাজকর্ম সেরে সারারাত পড়ে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছেন। এখন প্রতিবেশীদের কটাক্ষ শুনতে হয়, সত্যি যদি পাশ করতো নিশ্চয়ই চাকরি পেত”
ছবি: Subrata Goswami/DW
পড়ানো সেরে বিক্ষোভে
হাবড়ার জয়া খাঁ। বাবা মা আর মেয়ে এই তিনজনের পরিবার। বাবা মা দুইজনেই অসুস্থ। সকালে ছাত্র পড়িয়ে বিক্ষোভে যোগ দেন। পাঁচটা পর্যন্ত থাকেন, আবার বাড়ি ফিরে টিউশনি করাতে চলে যান। একটু ভালো খবরের অপেক্ষায় বসে থাকেন বাবা মা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
স্বামী-সন্তান নিয়ে
নাজমুন নাহার প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা। উত্তর চব্বিশ পরগণায় বাড়ি হলেও স্কুল বাঁকুড়ায়। ইনিও এসএসসির মেধাতালিকায় রয়েছেন। গরমের ছুটিতে বাড়ি এসেছেন তাই প্রতিদিন বিক্ষোভে যোগ দেন। স্বামী মাহসুজার রহমান চাকরিপ্রার্থী না হলেও স্ত্রীর লড়াইতে তিনিও সামিল। সন্তান নিয়ে অবস্থান বিক্ষোভে উপস্থিত থাকছেন প্রতিদিন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
চাষ অবহেলা করে
তপন কুমার মাহাতো জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত গ্রাম সিমলাপাল থেকে ধরণায় এসেছেন। প্রতিদিন যাতায়াত সম্ভব নয় বলে বারুইপুরে অনেকের সঙ্গে থাকেন। গ্রামের বাড়িতে সামান্য কিছু জমি রয়েছে, তাতে চাষবাস চললেও এই আন্দোলনের ফলে তাতে ব্যাঘাত ঘটেছে। বন্ধুদের থেকে আর্থিক সাহায্য নিয়ে আন্দোলনে সামিল হয়েছেন তপন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
আয়ুষির ক্ষোভ
দক্ষিণেশ্বরের বাসিন্দা আয়ুষি দাসের ক্ষোভ, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছের মানুষ হয়ে ফেল করা প্রার্থীরা, এমনকি পরীক্ষা না দেওয়া লোকজনও চাকরি করছে, আর তারা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন”
ছবি: Subrata Goswami/DW
অভিযোগ ও বিক্ষোভ
ইংরাজি বিষয়ের চাকরিপ্রার্থী পলাশ মণ্ডল। বললেন, যারা ওয়েটিং লিস্টে থাকল আর যারা এমপ্যানেলড হলো, কেউ জানেনা আসল রহস্যটা কী। পুরোটাই ধোঁয়াশা। যারা পাশ করেছে তারাও জানেনা কত নম্বর পেয়েছে আর যারা ফেল করেও চাকরি করছে তারা জানেনা কত তাদের নম্বর”