বিশ্ব সেরা ক্রীড়া সাংবাদিকরা এখনো তাঁর ইন্টারভিউ নেন স্বপ্নে৷ দিয়েগো মারাদোনাকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ ক'জনের হয় যে বাস্তবে ইন্টারভিউ নেবেন! আমার হয়েছিল সেই সৌভাগ্য৷ সুযোগটা এনে দিয়েছিল '৯৪ বিশ্বকাপ৷
বিজ্ঞাপন
বস্টনের ব্যাবসন কলেজ মাঠ জুড়ে কাটা তারের বেষ্টনি৷ প্রধান গেটের কাছে সশস্ত্র নিরাপত্তা কর্মীরা টহল দিচ্ছে৷ ওদের ফাঁকি দিয়ে ভেতরে যাবার কোনো সুযোগ নেই৷ প্রায় ঘণ্টা কাল দাঁড়িয়ে গাছের ছায়ায়৷ অপেক্ষায় কখন ভেতরে যাবার অনুমতি মেলে৷ আমি একা নই, আমার মতো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাজারো সাংবাদিক আর ফটো সাংবাদিকও সেই অপেক্ষায়৷
হঠাৎ নিরাপত্তা কর্মীদের একজন বলে উঠলেন, ‘‘আর্জেন্টিনা টিম ম্যানেজমেন্ট তোমাদের ভেতরে আমন্ত্রণ জানিয়েছে৷ তোমরা একটা কিউতে দাঁড়িয়ে যাও৷একজন একজন করে ভিতরে যেতে পারবে৷তবে সবার প্রেস কার্ড থাকতে হবে৷ যাদের প্রেস কার্ড আছে শুধু তারা ভিতরে যেতে পারবে৷''
সব সাংবাদিকের মাঝে একটা অলিখিত প্রতিদ্বন্দিতা৷ লাইনের আগে থাকতে হবে৷ তাহলে আগে ঢোকা যাবে৷ আর প্র্যাকটিসে মারাদোনাকে অন্যদের চেয়ে আগে দেখা যাবে৷ আর প্র্যাকটিসের পর মারাদোনা আর তাঁর দেশ আর্জেন্টিনাকে নিয়ে রিপোর্ট ফাইল করতে হবে৷ সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে গেলাম৷ চোখের পলকে অনেক বড়সড় লাইন হয়ে গেল৷ আমি আর কোলকাতার আনন্দ বাজারের রুপক সাহা লাইনের শুরুর ভাগটায়৷ আমরা গেটের কাছে ওয়েট করছি এই সময়টার জন্য৷ নিরাপত্তা বেষ্টনি পার হয়ে পাশাপাশি হাঁটছি৷ ভেতরে এসেই মন জুড়িয়ে গেল৷ পরপর তিন-চারটি মাঠ৷ যেন সবুজ ঘাসের কার্পেট বিছিয়ে রাখা৷ মাঠগুলো উঁচু জায়গায়৷ একটু নীচুতে বাংলো বাড়ির সারি৷ পাশে জিমনেশিয়াম৷ সুইমিংপুল৷ গোটা কলেজ ক্যাম্পাস যেন সুনসান সাজানো গোছানো৷ এতটুকু ময়লা নেই৷ আবর্জনা নেই৷ মাঠের চারপাশ ফিতে দিয়ে ঘেরা৷
পরের ম্যাচের জন্য নিউইয়র্ক যাওয়া বাদ দিয়ে বস্টন থেকে গেছি মারাদোনাকে কাছ থেকে দেখবো বলে৷ মারাদোনার অনুশীলন দেখবো৷ মারাদোনার অটোগ্রাফ নেবো৷ মারাদোনার সাথে কথা বলবো৷আর বিশ্বকাপে এসেছি মারাদোনাকে দেখবো বলে৷
মারাদোনার খেলা দেখার অভিলাষে৷ তাই ফুটবল ইশ্বরকে না দেখে মনটা বেশ খারাপ৷ এমন সময় আর্জেন্টাইন ক্রীড়া সাংবাদিক সার্জেই লেভনস্কির সাথে দেখা হয়ে গেল৷ বুয়েনস আইরেসের মানুষ আর মারাদোনার কাছের জন সার্জেইয়ের কথা শুনে মনটা ভালো হয়ে গেল৷ সার্জেই বললেন, ‘‘দিয়েগো এখনও আসেনি৷ তবে আসবে৷ তুমি আমার সাথে থেকো৷''
মাঠের একপাশে আর্জেন্টাইন এক টিভি চ্যানেলের কর্মীরা প্রস্তুত৷ ওরা , প্র্যাকটিস মাঠ থেকে দিয়েগোর ইন্টারভিউ সরাসরি প্রচার করবে৷
একটা সময় মাঠের একপাশে ছুটোছুটি লেগে গেল৷আমরা যে জায়গায় দাঁড়িয়ে, তার কাছেই৷ ফটো সাংবাদিকরা ছুটলেন সেদিকে৷
কে একজন জানালো– দিয়েগো আসছেন! ‘ফুটবল ইশ্বর' দিয়েগো, সর্বকালের সেরা ফুটবলার দিয়েগো মারাদোনা আসছেন!
সত্যি সত্যিই দিয়েগো মারাদোনা আসছেন৷ আর্জেন্টাইন জাতীয় দলের বিখ্যাত ‘১০ নম্বর' জার্সি গায়ে৷ শত শত ছবি উঠছে৷ ফটো সাংবাদিকদের ক্যামেরার শাটার চলছে৷ ফ্ল্যাশ জ্বলছে৷ মারাদোনার এক হাতে টেনিস বল, অন্য হাতে লেমনেডের বোতল৷
‘‘ওলে, ওলে'' বলে মারাদোনা আমার সামনে দিয়ে হেঁটে হেঁটে সোজা গিয়ে দাঁড়ালেন টিভি ক্যামেরার সামনে৷ যে সাংবাদিকরা ক্যানিজিয়া, ‘বাতিগোল'দের অনুশীলনের ছবি তুলছিলেন, সবাই ছুটে এলেন,মারাদোনার দিকে৷ পুরো মাঠের সব আকর্ষণ মারাদোনাকে ঘিরে৷ মুহুর্তের মাঝে মারাদোনাকে ঘিরে ভীড়, জটলা তৈরি হয়ে গেল৷ টিভি রিপোর্টার প্রশ্ন করছিলেন,মারাদোনা উত্তর দিচ্ছিলেন৷ প্রায় আধঘন্টা চললো ইন্টারভিউ৷
আমি তন্ময় হয়ে তাকিয়ে৷ মারাদোনার দিকে৷ ফুটবল ইশ্বর , সর্বকালের সেরা ফুটবলার আমার নাগালের মধ্যে! আমার চোখের সামনে!
হঠাৎ টেলিভিশন ইন্টারভিউ শেষ করে সরাসরি প্র্যাকটিসে ভিড়ে গেলেন মারাদোনা৷ মার্কার দিয়ে ছোট গোল পোস্ট বানিয়ে একদিকে ক্যানিজিয়া বাতিস্তুতাকে রেখে, গয়কোচিয়াকে পাশে নিয়ে খেলায় মন দিলেন৷ এক দলে পাঁচ-ছয় জন করে মাঠ ছোট করে ছোট গোল পোস্টে ম্যাচ৷ নিজে গোল করলেন আবার ক্যানিজিয়াদের করা গোল নিয়ে তর্ক জুড়ে দিলেন৷ ছোট ছেলেদের ফুটবল ম্যাচে গোল নিয়ে যেমন বাদানুবাদ হয়, তেমনিন৷ হাসি ঠাট্টায় হালকা মেজাজে গড়িয়ে চললো অনুশীলন৷
বিশ্ব ফুটবলের সর্বকালের সেরা একাদশ
এই একাদশ বাছাই নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই৷ কয়েকবছর আগে বিশ্লেষক ও সাংবাদিকদের ভোটে নির্বাচিত এই একাদশ প্রকাশ করেছিল বিশ্বখ্যাত ফুটবল ম্যাগাজিন ওয়ার্ল্ড সকার৷ দেখুন কারা ছিলে ৪-৪-২ ফর্মেশন মাথায় রেখে গড়া সেই দলে৷
ছবি: AP
গোলরক্ষক: লেভ ইয়াসিন
ফুটবলে গোলরক্ষকের নাম নেয়া হবে আর লেভ ইয়াসিনের নাম আসবে না তা হতে পারে না৷ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের এই গোলরক্ষক খেলেছেন ১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৬৬ বিশ্বকাপ৷ ১৯৫৬ সিডনি অলিম্পিকে জিতিয়েছিলেন দেশকে৷ ভোটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েই একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/empics
লেফট ব্যাক: পাওলো মালদিনি
বিশ্ব ফুটবলের সেরা ডিফেন্ডার কে? অবলীলায় এই নামটি চলে আসবে৷ ভোটেও তাই হয়েছে৷ নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর দ্বিগুণ ভোট পেয়েছেন তিনি৷ ১৯৯০, ১৯৯৪ ও ১৯৯৮-র বিশ্বকাপে খেলেছেন এই ইটালিয়ান ডিফেন্ডার৷ ১৯৯৪-এর বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বিপক্ষে ইটালির টাইব্রেকার হার একটুর জন্য তাঁকে শিরোপার নাগাল পেতে দেয়নি৷
ছবি: picture-alliance/AP-Photo/B. Luca
রাইট ব্যাক: কাফু
টানা তিন বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছেন তিনি৷ জিতেছেন ১৯৯৪ ও ২০০২ বিশ্বকাপ৷ এর মধ্যে ২০০২-এ ব্রাজিল দলের নেতৃত্বে ছিলেন৷ ভোটে ডিফেন্ডারদের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানটি ছিল কাফু’র৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার: ফ্রানৎস বেকেনবাওয়ার
ফুটবলের ইতিহাসে বেকেনবাওয়ারই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি কোচ, খেলোয়াড় বা অধিনায়ক থাকাকালে দেশকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন৷ এই কিংবদন্তীর নেতৃত্বে জার্মানি বিশ্বকাপ জেতে ১৯৭৪ সালে৷ আর কোচ হিসেবে ডয়েচলান্ডকে আবারো শিরোপার স্বাদ দেন ১৯৯০-এ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার: ববি মুর
ইংল্যান্ডের একমাত্র বিশ্বকাপটি (১৯৬৬) জয়ে নেতৃত্ব দেন এই কিংবদন্তী ডিফেন্ডার৷ তাঁর পায়ের দক্ষতা আর রক্ষণভাগে দেয়াল তৈরি করে প্রতিপক্ষকে কঠিন সময় উপহার দেয়ার কৌশল তাঁকে জায়গা করে দিয়েছে একাদশে৷ তবে ভোটের মাঠে এর জন্য তাঁকে ইটালির ফ্র্যাঙ্কো বারেৎসি’র সঙ্গে কঠিন লড়াই করতে হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মিডফিল্ডার: আলফ্রেডো ডি স্টেফানো
যে চারজন মিডফিল্ডার একাদশে জায়গা পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আলফ্রেডো ডি স্টেফানো সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছেন৷ এই প্রতিভাবান ফুটবলারের বিশেষ দিক হলো তিনি যে কোনো পজিশনে খেলতে পারতেন৷ অসম্ভব স্ট্যামিনার অধিকারী ছিলেন৷ আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তিনি আর্জেন্টিনা ও স্পেনের হয়ে খেলেছেন৷ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে খেললেও মূল পর্বে খেলা হয়নি তাঁর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মিডফিল্ডার: জিনেদিন জিদান
জিদানের পায়ের জাদু’র প্রশংসা করেন না এমন ফুটবলপ্রেমী পাওয়া মুশকিল৷ স্কিলের দিক থেকে অনেকেই তাঁকে মারাদোনা আর পেলের সঙ্গেই তুলনা করেন৷ ১৯৯৮-এর বিশ্বকাপ জয়ে ফ্রান্সের নায়ক ছিলেন তিনিই৷ এমনকি ২০০৬ বিশ্বকাপেও সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিলেন৷ তবে সেবার ইটালির মাতেরাৎসিকে মাথা দিয়ে গুঁতো মেরে অনেক সমালোচনার ভাগীদারও হন৷
ছবি: picture-alliance/DPPI
মিডফিল্ডার: ইয়োহান ক্রুইফ
হল্যান্ডের এই কীর্তিমান ফুটবলার যে একাদশে থাকবেন তা জানাই ছিল৷ টোটাল ফুটবলের একরকম জনকই তিনি৷ তাঁর কৌশলের কাছে প্রতিপক্ষরা যেন দাঁড়াতেই পারতেন না৷ তাঁর নৈপূণ্যে ১৯৭৪ বিশ্বকাপে পূর্ব জার্মানি, আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলকে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছায় হল্যান্ড৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে পশ্চিম জার্মানির কাছে ধরাশায়ী হয়৷
ছবি: Getty Images/Keystone
মিডফিল্ডার: ডিয়েগো মারাদোনা
ফুটবলের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিতর্ক হলো, সর্বকালের সেরা কে? পেলে, না মারাদোনা? এই ফুটবল জাদুকরের জাদু অবশ্য ১৯৮২-তেই দেখেছিল বিশ্ব৷ কিন্তু সেবার তেমন একটা সুবিধা করতে পারেননি৷ এরপর প্রায় একক নৈপূণ্যেই আর্জেন্টিনাকে জিতিয়েছিলেন ১৯৮৬-র বিশ্বকাপ৷ ১৯৯০ সালেও ফাইনালে খেলেছে তাঁর দল৷ তাঁর ‘ঈশ্বরের হাত’-এর গল্প কার না জানা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
স্ট্রাইকার: পেলে
সর্বকালের সেরা বিতর্কের আরেক নায়ক পেলে৷ ‘কালোমানিক’ নামেও পরিচিত৷৷ ব্রাজিল ও ফুটবল উভয়কেই মহিমান্বিত করেছেন এই কিংবদন্তী৷ ১৯৬২ বিশ্বকাপে তিনি দ্বিতীয় ম্যাচে ইনজুরির শিকার হয়ে আর খেলতে পারেননি৷ তবে সেই বিশ্বকাপ জেতে ব্রাজিল৷ পরের বিশ্বকাপে ব্রাজিল অবশ্য আগেই বাদ পড়ে যায়৷ প্রচুর ফাউলের শিকার হন পেলে৷ তবে ১৯৭০-এর বিশ্বকাপে চরম নৈপূণ্য দেখিয়ে জিতে নেন শিরোপা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
স্ট্রাইকার: লিওনেল মেসি
একাদশে এ সময়ের একমাত্র প্রতিনিধি হলেন লিওনেল মেসি৷ যদিও এখনো বিশ্বকাপে মেসির জাদুর প্রতিফলন তেমন একটা ঘটেনি, তারপরও তাঁর নৈপুণ্য তাঁকে সেরা একাদশে জায়গা করে দিয়েছে৷ শুধু তাই নয়, পেলে ও মেসির মাঝে ব্যবধান গড়েছে মাত্র ১০টি ভোট৷
ছবি: Reuters/A. Raggio
11 ছবি1 | 11
দূরে দাঁড়িয়ে তন্ময় হয়ে দেখছি৷ জগৎসেরা ফুটবলারদের অনুশীলন৷ বেশ ক'মিনিট অনুশীলনের পর গয়কোচিয়াকে গোল পোস্টের নীচে রেখে চললো স্পট কিক, কর্নার কিক অনুশীলন৷ পেনাল্টি এবং পেনাল্টি সীমানার বাইরে থেকে ডেড বল বা সেট পিস থেকে মারাদোনা অবলীলায় বল রেখে গেলেন জালে৷ আবার মাঠের দু'পাশ থেকে একের পর এক বল ভাসালেন গোলমুখে৷ গোলের জন্য ভাসিয়ে দেয়া সে বলে নিজেকে শূন্যে ছুড়ে দিয়ে নিপুন হেডে বল জালে রেখে গেলেন বাতিগোল ,ক্যানিজিয়ারা৷
মাথার উপরে সূর্য৷ প্রায় দু' ঘন্টা রোদে পুড়ছি, তা নিয়ে ভাবনা নেই৷ মন জুড়ে শুধুই মারাদোনা আর মারাদোনা৷ হালকা মেজাজের অনুশীলন শেষে মারাদোনা এলেন সাংবাদিকদের সামনে, ঠিক আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে তার পাশে৷ সবাই ডাকছে, ‘‘দিয়েগো , দিয়েগো৷''
‘‘ওলে, ওলে'' বলে এক আর্জেন্টাইন প্রমীলা সাংবাদিককে গলায় জড়িয়ে নিলেন মারাদোনা এবং ওর গায়ে জড়ানো আর্জেন্টাইন টি শার্টে অটোগ্রাফ দিলেন৷ দু'তিন জন সাংবাদিকের সাথে কথা বলে সর্বকালের সেরা ফুটবলার দিয়েগো আরমান্দো মারাদোনা আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন৷
আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ়! হতবাক!
আমার দিকে তাকিয়ে মারাদোনা৷ জগৎ সেরা ফুটবলার আমাকে দেখছেন৷ আমি যেন অন্য জগতে৷ স্বপ্নের জগতে৷ বিলাসী স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি৷ আমি বাকরুদ্ধ৷ আমার সামনে দাড়িয়ে ফুটবল কিংবদন্তী, যাঁর হাত ধরে আর্জেটিনা ছিয়াশির বিশ্বকাপ জয় করেছে! কোনো একজন ফুটবলারের কাঁধে ভর করে গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ বা বিশ্বকাপ জয়ের নজীর ফুটবল দুনিয়ায় দ্বিতীয়টি নেই৷ তাঁর হাত ধরে রেলিগেশন জোনে থাকা বা তলানির দল নাপোলিও তো ইতালিয়ান লিগ শিরোপা জয় করেছে৷ মারাদোনা যেদিন নাপোলির প্রথম প্র্যাকটিস সেশনে যোগ দিয়েছিলেন, সেদিন নাপোলি স্টেডিয়ামের রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম হয়েছিল৷ হাজার হাজার ফুটবল অনুরাগী ফুটবলের বিস্ময় প্রতিভা মারাদোনাকে স্বাগত জানাতে এসেছিল৷ এসব যখন ভাবছি, তখনই পাশ থেকে সার্জেই বললো ,‘‘ ইসলাম, বলো কিছু৷'' ভাবনায় চ্ছেদ পড়লো৷ আমি কী বলব? আমি তো পুরোপুরি মজে আছি মারাদোনায়৷ আমার হাতে একটা আর্জেন্টাইন সুভেনির, যা প্র্যাকটিসে আসার সময় নিয়ে এসেছি, মারাদোনার অটোগ্রাফ নেবো, এমন ভেবে৷ আর কোনো কিছু না ভেবে আমার হাতে ধরা আর্জেন্টাইন সুভেনির বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, ‘‘অটোগ্রাফ, প্লিজ৷''
আমার হাত থেকে কলম আর সুভেনিরটা নিজের হাতে তুলে নিলেন ফুটবল ইশ্বর৷ অটোগ্রাফ দিচ্ছিলেন মারাদোনা৷ মারাদোনা সুভেনিরের উপর অটোগ্রাফ দিচ্ছেন আর আমি তাঁর হাতের মাংশপেশি দেখছি৷ আর আলতো ছোঁয়া রেখেছি দিয়েগোর হাতে৷
পাশে দাড়ানো নিরাপত্তাকর্মী বলে উঠলো, ‘‘ডোন্ট টাচ!''
সার্জেই বললো, ‘‘এটা তোমার বিষয় নয়৷''
আমি একটু ভরসা পেলাম৷
আমি মারাদোনার হাতে চাপ দিচ্ছি৷ মারাদোনা হাতের পেশি শক্ত করলেন৷ টেনিস বলের মতো হয়ে ফুলে উঠলো মারাদোনার মাংশপেশি৷ যেমন পেশি দেখেছি মিস্টার ওয়ার্ল্ড আরনল্ড শোয়ার্ৎসেনেগার বা সিলভেস্টার স্ট্যালনের, ঠিক তেমন সুগঠিত পেশি মারাদোনার৷
আমি আরো জোরে চেপে ধরলাম৷ দু হাতে চাপ দিলাম৷ কিন্তু এতটুকু দাবাতে পারলাম না, যেন লোহার মতো শক্ত মারাদোনার শরীর৷
মারাদোনা তাকিয়ে আমার দিকে৷ অটোগ্রাফ দেয়ার ফাঁকে আবার জানতে চাইলাম, ‘‘অ্যামেরিকা বিশ্বকাপে শুরুটা দারুন হলো৷ এই দল কতটা পথ পাড়ি দেবে?'' মারাদোনা বললেন, ‘‘আমরা একটা ভালো দল নিয়ে এসেছি৷ আর এই দলটা অনেকটা পথ দৌড়ুাবে৷ প্রথম ম্যাচের পারফরম্যান্স আমাদের প্রেরণা জোগাবে৷ ভালো কিছু করা সম্ভব৷''
আমি তন্ময় হয়ে চেয়ে আছি ফুটবল জাদুকরের দিকে৷ মারাদোনা হেসে চলে গেলেন অন্য এক সাংবাদিকের কাছে৷ তাঁর কাছ থেকে আর একজনের কাছে৷ চারপাশ থেকে সাংবাদিকরা আহবান জানাচ্ছেন, ‘‘দিয়েগো, দিয়েগো৷''
মারাদোনার, ক্লান্তি নেই৷ বিরক্তি নেই৷
আমি নির্বাক৷ মুগ্ধ হয়ে মারাদোনার কথা ভাবছি৷ আর দেখছি মারাদোনাকে৷ আরো বেশ কিছুটা সময় অটোগ্রাফ দিয়ে মারাদোনা ফিরে গেলেন তার বাংলোর দিকে৷
আমি আর রুপক সাহা ফক্সবোরো স্টেডিয়ামের মিডিয়া সেন্টারে যাবার জন্য পা বাড়ালাম৷ পাশ থেকে এক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করলো, ‘‘তোমরা মিডিয়া সেন্টারে যাচ্ছো? আমি যাচ্ছি৷ তোমাদের লিফট দিতে পারি৷'' আমি ভদ্রতা করে বললাম, ‘‘তোমার কোনো অসুবিধে না হলে যেতে পারি৷'' ঐ সাংবাদিক বললো, ‘‘না না, আমার কোনো প্রবলেম হবে না৷ আমি একা যাচ্ছি৷ তোমাদের সাথে গল্প করে যাওয়া যাবে৷ তোমরা যেতে পারো৷''
আমি আর রুপক আর আপত্তি করিনি৷
ঐ সাংবাদিক একটু পরে জানালো, তার নাম জানুস মাত্তা৷ ব্রাজিলিয়ান৷ রি ও'র স্পোর্টস ডেইলি'র হয়ে কাজ করছে৷ ১৬ জন রিপোর্টার কভার করছে অ্যামেরিকা বিশ্বকাপ৷ মাত্তার দায়িত্ব আর্জেন্টিনাকে ফলো করা৷
মাত্তা ড্রাইভ করছে৷ আমি পাশে৷ পেছনে রুপক৷ গাড়ি এসে পড়ল রাস্তায়৷ মাত্তা আমাদের অবাক করে দিয়ে বললো, ‘‘এবারের বিশ্বকাপের প্রধান আকর্ষণ এই ছোট-খাটো মানুষটা৷ দিয়েগো মারাদোনা৷ অসাধারন এক প্লেয়ার৷ অন্যদের সাথে ওর তুলনা হয় না৷ মারাদোনার হাত ধরে আর্জেন্টিনা আর একবার বিশ্বকাপ জয় করতে পারে৷'' আমরা অবাক হয়ে শুনছি, পেলের দেশের এক সাংবাদিক কী অবলিলায় মারাদোনায় মজেছেন৷ মারাদোনার খেলার প্রশংসা করছেন৷ এটা চিন্তা করা যায় না৷ এটা ভাবাই যায় না৷
ব্রাজিলিয়ান সাংবাদিকের অবাক করার কথা শুনছি আর চোখের সামনে ভেসে বেড়াচ্ছে মারাদোনার মুখ৷ আগের দিন গ্রিসের বিরুদ্ধে ফুটবল ইশ্বরের করা গোলটির রিপ্লে যেন ভেসে উঠল চোখের সামনে৷ চোখে ভাসছে মারাদোনার প্র্যাকটিস, ক্যানিজিয়াদের সাথে মারাদোনার দুষ্টুমি, মারাদোনার অটোগ্রাফ নেয়া৷ মারাদোনার সাথে কথা বলার মাহেন্দ্রক্ষণটি৷ ক্রীড়া সাংবাদিকতার জীবনের অন্যতম সেরা এক স্মৃতি৷ স্বপ্নীল এক অনুভূতি৷
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের তারকাদের প্রিয় দল
মাশরাফি, সাকিব, তামিম, জেসি, আকরাম বা ক্রিকেটের বর্তমান ও সাবেক অন্য তারকাদের প্রিয় দল কোনটি? ফুটবল, দাবা, টেবিল টেনিসসহ অন্যান্য খেলার তারকারাই বা কোন দলের হাতে বিশ্বকাপ ট্রফি দেখতে চান? ছবিঘরে থাকছে তারই বিস্তারিত...
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
মাশরাফি বিন মুর্তজা
মারাদোনাকে দেখে আর্জেন্টিনার সমর্থক হয়েছেন৷ কিন্তু গতবার আর্জেন্টিনা ফাইনালে হেরে যাওয়ার পর ফুটবল দেখাই বন্ধ করে দিয়েছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক, ‘‘২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালের পর টিভিতে আর কোনো ফুটবল দেখিনি৷ চার বছর পর সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল দেখলাম একটু৷’’ বিশ্বকাপ অবশ্য দেখবেন, তবে সেটি কোনো প্রত্যাশা নিয়ে নয়, ‘‘তারপর যদি মেসি জিতিয়ে দেয়, তো ভালো৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/I.S. Kodikara
সৈয়দ রুম্মন বিন ওয়ালি সাব্বির
তাঁর আদুরে নাম ছিল ‘বাংলার ম্যারাডোনা’৷ অথচ সৈয়দ রুম্মন বিন ওয়ালি সাব্বিরের প্রিয় দল ব্রাজিল! সে দল এবার ২০১৪ সালের মতো হতাশ করবে না বলেই সাবেক এই বলপ্লেয়ারের বিশ্বাস, ‘‘গত বিশ্বকাপে ইনজুরির কারণে নেইমার খেলতে না পারায় জার্মানির কাছে ওভাবে হারতে হয়েছে৷ এবার সেই নেইমার ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ জেতাবে বলে আমার বিশ্বাস৷’’
ছবি: Noman Mohammad
সাথিরা জাকির জেসি
২০০২ বিশ্বকাপের সময় বিকেএসপিতে পড়তেন৷ প্রথম রাউন্ডে আর্জেন্টিনার বিদায়ের পর যা করেছিলেন তা মনে করে এখনো হাসেন সাথিরা জাকির জেসি, ‘‘তখন ক্লাস সিক্স বা সেভেনে পড়তাম৷ আর্জেন্টিনা বাদ পড়ার পর হাত কেটে-টেটে খুব বাজে অবস্থা করেছিলাম৷’’ বিশ্বকাপে এখন আরেকটি দলও সমর্থন করছেন এই নারী ক্রিকেটার, ‘‘আর্জেন্টিনার পর আমি জার্মানি৷ গত তিন বিশ্বকাপেই জার্মানির কাছে হেরেছে আর্জেন্টিনা৷ আমার তাই বেশি দুঃখ নেই৷’’
ছবি: Mir Farid
শেখ মোহাম্মদ আসলাম
বাংলাদেশ ফুটবলের স্বর্ণসময়ের প্রতিনিধি তিনি৷ আর বিশ্ব ফুটবলের সুবর্ণ সময়ের দলটির সমর্থক শেখ মোহাম্মদ আসলাম, ‘‘পেলের ব্রাজিলকেই সমর্থন করেছি সব সময়৷’’ এখন না হয় পেলে নেই, তবে উত্তরসূরিদের কাছে প্রত্যাশা কমেনি বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক এই স্ট্রাইকারের, ‘‘ফুটবল গোলের খেলা৷ আর সেই গোল করার মতো অনেক ফুটবলার রয়েছেন এখনকার ব্রাজিল দলে৷ আমার তাই মনে হয়, তাঁদের বিশ্বকাপ জয়ের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে৷’’
ছবি: Noman Mohammad
সাকিব আল হাসান
মেসি আর আর্জেন্টিনার পাগলপারা ভক্ত তিনি৷ বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সতীর্থদের সঙ্গে এ নিয়ে সাকিব আল হাসানের তর্কযুদ্ধ চলে নিয়মিত৷ বছরজুড়ে তা মেসির দল বার্সেলোনাকে নিয়ে, বিশ্বকাপে হবে আর্জেন্টিনার পক্ষ নিয়ে৷ বিশ্বকাপে প্রিয় দল হতাশ করেছে বারবার; কিন্তু আবারও আশায় বুক বাঁধেন সাকিব৷ এবার মেসির হাতে উঠবে বিশ্বকাপ– এ আশায় জাতীয় দলের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের সময়ও টিভিতে খেলা দেখবেন চ্যাম্পিয়ন অলরাউন্ডার৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
মাবিয়া আক্তার সীমান্ত
১৪ জনের এক দল আছে তাঁদের– কাজিন ও বন্ধু মিলিয়ে৷ বিশ্বকাপের সময় তাঁরা তিন ভাগ– ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, পর্তুগাল৷ মাবিয়া আক্তার সীমান্ত ব্রাজিলের পক্ষে৷ কিন্তু বিশ্বকাপের সময় তাঁদের এই গ্রুপের কী যে হবে, এ নিয়ে কপট দুশ্চিন্তায় এসএ গেমসে স্বর্ণপদকজয়ী এই ভারোত্তলক, ‘‘আমরা বলেছি, বিশ্বকাপের সময় ব্রাজিলের ম্যাচ সবাই মিলে দেখতে হবে৷’’ প্রিয় দল ব্রাজিলের শিরোপা জয়ের ব্যাপারে খুব আশাবাদী সীমান্ত৷
ছবি: Khandakar Tarek
কায়সার হামিদ
১৯৮২-র বিশ্বকাপ জিততে পারেনি ব্রাজিল, কিন্তু হৃদয় জিতে নিয়েছিল বিশ্বজোড়া অনেক ভক্তের৷ কায়সার হামিদেরও৷ বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক এই ডিফেন্ডারের চোখে এখনো ভাসে জিকো-সক্রেতিসের খেলা৷ এখনকার ব্রাজিল দল নিয়েও আশাবাদী৷ প্রিয় দল ফাইনালে গেলে ইচ্ছে আছে রাশিয়া যাবার, ‘‘২০০২-র ফাইনাল গ্যালারিতে বসে দেখেছি৷ জার্মানিকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ব্রাজিল৷ এবারও সেমিফাইনাল, ফাইনালের টিকেটের জন্য চেষ্টা করছি৷ ’’
ছবি: Noman Mohammad
ইমতিয়াজ সুলতান জনি
বাংলাদেশে সমর্থকদের মূল বিভক্তি ব্রাজিল-আর্জেন্টিনায়৷ জাতীয় দলের সাবেক ডিফেন্ডার ইমতিয়াজ সুলতান জনি সেখানে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম৷ জার্মানির কট্টর সমর্থক তিনি৷ কেন? ‘‘জার্মানরা ম্যাচ শেষ হবার আগে কখনো হাল ছাড়ে না৷ আর লড়াই করে সবাই মিলে,’’ কারণটা জানান এভাবে৷ এই বিশ্বকাপে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে যাচ্ছে প্রিয় দল৷ শিরোপা ধরে রাখায় আশাবাদী তিনি, ‘‘অবশ্য ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা-স্পেনকে গোনায় ধরতে হবে৷’’
ছবি: Noman Mohammad
তামিম ইকবাল
বন্ধু সাকিব আল হাসানের সঙ্গে প্রিয় দল, প্রিয় খেলোয়াড় কিছুই মেলে না তামিম ইকবালের! বার্সেলোনা ও আর্জেন্টিনার ভক্ত সাকিব; রিয়াল মাদ্রিদ ও ব্রাজিলের ভক্ত তামিম৷ ব্রাজিলের সমর্থক হয়েছেন তিনি চট্টগ্রামের বিখ্যাত খান পরিবারের আবহের কারণে৷ বাবা-চাচা সবাই যে ওই দলের সমর্থক! এবারের টুর্নামেন্টে নেইমারের হাতে ট্রফিটা খুব করে দেখতে চান তামিম৷ প্রিয় বন্ধু সাকিবকে তাহলে খোঁচানো যাবে খুব!
ছবি: Getty Images/J. Mansfield
সাবিনা খাতুন
নতুন প্রজন্মের অনেকেই আর্জেন্টিনাকে ভালোবেসেছেন মেসিকে দেখে৷ যেমন, সাবিনা খাতুন৷ বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক বলছিলেন, ‘‘ফুটবল যখন থেকে বুঝি, তখন থেকে তো মেসিকেই কেবল দেখছি৷ মেসির কারণেই আমি আর্জেন্টিনার সমর্থক৷’’ এ বছর ইন্ডিয়ান উইমেন্স লিগে খেলে আসা সাবিনা জানালেন, ‘‘প্রতি বিশ্বকাপই আশা নিয়ে দেখতে বসি৷ এবারও আশায় থাকবো, মেসি যেন আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতাতে পারেন৷’’
ছবি: Mir Farid
আলফাজ আহমেদ
কিশোর লিগ খেলা ছোট্ট ছেলেটি প্রথম বিশ্বকাপ দেখে ১৯৮৬ সালে৷ আর দিয়েগো মারাদোনাকে দেখার পর মনে হয়, ফুটবলার তাঁকে হতেই হবে৷ তা হয়েছেন আলফাজ আহমেদ৷ প্রিয় দল আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন মারাদোনা৷ বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক এই স্ট্রাইকারের এবারের প্রত্যাশা লিওনেল মেসির কাছে, ‘‘ও তো ফুটবলে সব শিরোপাই পেয়েছে৷ আশা করি এবার বিশ্বকাপটাও পাবে৷’’
ছবি: Noman Mohammad
শফিকুল ইসলাম মানিক
১৯৯৮ সালে এক কোচিং কোর্সের জন্য ব্রাজিলে গিয়ে দেখা হয় রোমারিও, বেবেতো, কার্লোস আলবের্তো পারেইরা, মারিও জাগালোর মতো কিংবদন্তিদের সঙ্গে৷ জাতীয় দলের সাবেক কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক অবশ্য ব্রাজিলকে সমর্থন করেন আরো অনেক আগে থেকেই৷ প্রিয় দলকে নিয়ে এবারও আশাবাদী তিনি, ‘‘আগে গ্রুপ পর্ব পেরোতে হবে৷ এরপর তো নকআউট পর্বের প্রতিটি ম্যাচই ফাইনাল৷ তবে এবারের ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী৷’’
ছবি: Noman Mohammad
জোবেরা রহমান লিনু
ছিলেন ব্রাজিলের সমর্থক৷ কিন্তু ১৯৮৬ বিশ্বকাপে মারাদোনার খেলা দেখে সমর্থন পাল্টে যায় জোবেরা রহমান লিনুর, ‘‘মারাদোনার খেলা দেখার পর থেকে আমি আর্জেন্টিনার ভক্ত৷’’ টেবিল টেনিসে জাতীয় পর্যায়ে সর্বাধিক শিরোপায় গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লেখানো এই খেলোয়াড় বিশ্বকাপ ফুটবল দেখেন নিয়মিত৷ বাবার অসুস্থতার কারণে এবার সেদিকে মনোযোগ নেই খুব একটা৷ ‘‘তবে আর্জেন্টিনা শিরোপা জিতলে ভালো লাগবে’’–বলেছেন লিনু৷
ছবি: Khandakar Tarek
আমিনুল হক
তাঁর কাজ ছিল গোল ঠেকানো৷ কিন্তু আমিনুল হক ব্রাজিলের ভক্ত হয়ে যান দলটির গোল করার ক্ষমতা দেখে৷ ‘‘ছোটবেলা থেকেই বিশ্বকাপ দেখি নিয়মিত৷ আর সব সময়ই দেখেছি, ব্রাজিলের গোল করতে সমস্যা হয় না কোনো৷ ডিফেন্সে সমস্যা থাকে৷ কিন্তু এবারের দলটির ডিফেন্সও ভালো৷ আমার তাই মনে হয়, এই ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিততে পারবে৷’’
ছবি: Noman Mohammad
জাহিদ হাসান এমিলি
মারাদোনার শেষ বিশ্বকাপেই তাঁকে প্রথম দেখেন জাহিদ হাসান এমিলি; ১৯৯৪ সালে৷ তাঁর নিজের বয়স তখন সাত বছর৷ কান্নাভেজা ওই আর্জেন্টাইনকে দেখে আর্জেন্টিনার ভক্ত হয়ে যান বাংলাদেশ জাতীয় দলের এই ফরোয়ার্ড৷ তবে প্রিয় দলকে বিশ্বকাপ জিততে দেখেননি কখনো৷ এবারও সে সম্ভাবনা বেশি দেখেন না এমিলি, ‘‘আবেগ একপাশে রেখে বললে, আর্জেন্টিনার জন্য বিশ্বকাপ জয় কঠিন৷ ব্রাজিল, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেনকেই বরং আমি এগিয়ে রাখবো৷’’
ছবি: Noman Mohammad
আকরাম খান
শুধু বিশ্বকাপ নয়, ইউরোপিয়ান ফুটবলের বিভিন্ন লিগের খেলাও নিয়মিত দেখেন আকরাম খান৷ বিশ্বকাপে প্রিয় দল ব্রাজিল৷ ২০১২ অলিম্পিকে ব্রাজিলের ম্যাচ দেখেছেন গ্যালারি থেকে৷ এবারও যাবেন বিশ্বকাপে৷ সেখানে প্রিয় দলের হাতে ট্রফি দেখতে চান আইসিসি ট্রফিজয়ী বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক, ‘‘আমি জুলাইয়ের ১০ তারিখ রাশিয়া যাবো৷ একটি সেমিফাইনাল ও ফাইনাল দেখবো৷ আশা করি, নেইমারের হাতে ট্রফি দেখেই ফিরতে পারবো দেশে৷’’
ছবি: Noman Mohammad
রানী হামিদ
বাংলাদেশে ‘দাবার রানী’ তিনি৷ ছেলে কায়সার হামিদ আবার ফুটবলের কিংবদন্তি৷ রানী হামিদের তাই ফুটবলও প্রিয়৷ আর বিশ্বকাপের প্রিয় দল? ‘‘বাসার সবাই ব্রাজিল সমর্থন করতো বলে আমাকেও তা করতে হতো৷ আমার কিন্তু মনে মনে ইংল্যান্ডকে ভালো লাগতো৷ কারণ, আমাদের সিলেটিদের জন্য ইংল্যান্ড দ্বিতীয় বাড়ির মতো৷ এবারের বিশ্বকাপে এ দুটো দলের একটি চ্যাম্পিয়ন হলে ভালো লাগবে৷’’
ছবি: Khandakar Tarek
মিনহাজুল আবেদীন নান্নু
৮৬ বিশ্বকাপের সময় মাইনর কাউন্টি খেলার জন্য ইংল্যান্ডে ছিলেন৷ আর্জেন্টিনা-ইংল্যান্ড ম্যাচের কথা মনে আছে স্পষ্ট, ‘‘আমি আর নোবেল একটি পাবে খেলা দেখছিলাম৷ মারাদোনা হাত দিয়ে গোল করার পর চিত্কার করে উঠেছিল নোবেল৷ বাকি সবাই চোখ ঘুরিয়ে দেখছিলো ওকে৷’’ ভাইয়ের মতো বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়কের প্রিয় দল অবশ্য আর্জেন্টিনা নয়, ‘‘আমার পছন্দ ইংল্যান্ড৷ ওরা বাদ পড়ে গেলে জার্মানিকে সমর্থন করবো৷’’
ছবি: Noman Mohammad
হাবিবুল বাশার সুমন
১৯৮২ বিশ্বকাপ তাঁর মনে আছে আবছা৷ ১৯৮৬ বিশ্বকাপ পুরোপুরি৷ এ দুটো আসর ব্রাজিলের জন্য হতাশার হলেও হাবিবুল বাশার সুমনের ভালোবাসার বদল হয়নি৷ এবারও প্রিয় দলের বিশ্বকাপ জয়ের আশায় টিভির সামনে থাকবেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক, ‘‘আর্জেন্টিনার ব্যক্তিবিশেষের খেলা হয়তো ভালো লাগে৷ আগে যেমন ছিলেন মারাদোনা, এখন মেসি৷ কিন্তু ব্রাজিল দল হিসেবে খেলে চমত্কার৷ আশা করছি এবার বিশ্বকাপ জিতে সে হতাশা কাটাবো৷’’
ছবি: Noman Mohammad
আবদুল্লাহ হেল বাকি
কমনওয়েলথ গেমসে রৌপ্যপদকজয়ী শুটার আবদুল্লাহ-হেল বাকি আর্জেন্টিনার পাঁড় সমর্থক৷ কেন? উত্তরটাও ওই পাঁড় সমর্থকের মতো, ‘‘খেলা যাঁরা বোঝেন, তাঁরা সবাই আর্জেন্টিনাই সমর্থন করেন৷’’ কিন্তু সেই ‘খেলা বুঝেই’ প্রিয় দলকে নিয়ে এবার খুব একটা আশাবাদী হতে পারছেন না বাকী, ‘‘সত্যি বলতে কী, খুব একটা আশা আমি দেখছি না৷ তবে একজন মেসি যখন রয়েছে আর্জেন্টিনার, তখন কিছুই অসম্ভব না৷’’
ছবি: Noman Mohammad
20 ছবি1 | 20
মারাদোনাকে কেউ কেউ বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় বলেন৷ আপনার কী মত? লিখুন মন্তব্যের ঘরে৷