মারাদোনার বিদায় আর বার্সেলোনা, ভারত, জার্মানির লজ্জার বছর
২৬ ডিসেম্বর ২০২০
২০২০ সালের প্রায় পুরোটাই গেল করোনার গ্রাসে৷ এ বছর মারাদোনাসহ বেশ কয়েকজন কিংবদন্তিকে হারিয়েছে ক্রীড়াঙ্গন৷
বিজ্ঞাপন
সাফল্য-ব্যর্থতার হিসেবে যত নামই আসুক, বার্সেলোনা, ভারত আর জার্মানি এবং বায়ার্ন আর লেভান্ডোস্কির নাম আসবে সবার আগে৷
এমন নয় যে ফুটবলে বার্সেলোনা বা জার্মানি, কিংবা ক্রিকেটে ভারত এ বছর সবচেয়ে ব্যর্থ৷ বরং উল্টোটা৷ সাফল্যের মানদণ্ড যদি শুধু ট্রফি জেতা বা কোনো দলকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে দেয়া না হয়, তাহলে বার্সা, জার্মানি এবং ভারত এই করোনার বছরেও সফলদের তালিকায় ওপরের দিকে থাকবে অবশ্যই৷ কিন্তু কিছু ব্যর্থতার লজ্জা নতুন পাতলুনের পেছনে বড় একটা ফুটোর মতো৷ ফুটোর কারণে পাতলুনটা যেন চোখেই পড়ে না!
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বায়ার্নের কাছে বার্সেলোনার আট গোল আর নেশন্স লিগে স্পেনের কাছে জার্মানির ছয় গোল হজম, কিংবা অ্যাডিলেডে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারতের মাত্র ৩৬ রানে (নয় উইকেটে) গুটিয়ে যাওয়ার লজ্জাটাও ঠিক সেরকম৷ যত ঢাকতে যাবেন, লজ্জা ততই বাড়বে৷ হ্যাঁ, বার্সা বা জার্মানির ভক্তরা বলতেই পারেন, ক্লাব ফুটবলে বড় ব্যবধানের হার আরো আছে৷ মনে করিয়ে দিতেই পারেন জার্মানির কাছে ব্রাজিলের ৮-১ হারের কথা৷ কিন্তু তাতে কি নিজেদের লজ্জা একটুও লাঘব হবে? ভারত-সমর্থকরাও যদি বলেন, গোটা সাতেক ক্যাচ না ফেললে ফলাফল অন্যরকম হতে পারতো, বা যদি মনে করিয়ে দেন টেস্ট ক্রিকেটের সর্বনিম্ন স্কোর (২৬) এখনো নিউজিল্যান্ডের, তাতেও কি এক ইনিংসে এক জনেরও দু অঙ্কের স্কোর না পাওয়ার ট্র্যাজেডি কিংবা কমেডি কেউ ভুলতে পারবে কোনোদিন?
তবে করোনার দাপটে ক্রীড়াঙ্গন যত নিষ্ক্রিয়ই থাকুক, হান্সি ফ্লিক, বায়ার্ন মিউনিখ আর লিভারপুলের জন্য সাফল্যের স্মৃতি হয়েই থাকবে বছরটা৷ কোচ হিসেবে বায়ার্নে প্রথম বছরেই এক মৌসুমে পাঁচটা ট্রফি জিতেছেন ফ্লিক৷ লিভারপুল শুধু প্রিমিয়ার লিগ জিতেই মহাখুশি, কারণ এ সাফল্য এসেছে ত্রিশ বছর পরে !
২০২০ সালে সাফল্যে স্মরণীয় বায়ার্ন
২০২০ সালে বায়ার্ন মিউনিখ পাঁচটি শিরোপা জিতেছে, পাশাপাশি গড়েছে কিছু রেকর্ড৷ কোচ হানসি ফ্লিকের অধীনে প্রথম বছরে বায়ার্নের হাইলাইটস থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Wittek
মাইনৎসে থিয়াগোর মাস্টার ক্লাস
ফেব্রুয়ারির ১ তারিখে হানসি ফ্লিকের তত্ত্বাবধানে প্রথমবারের মতো খেলতে নামে বায়ার্ন৷ মাইনৎসের বিপক্ষে ৩-১ গোলে জয় পায় দলটি৷ থিয়াগো আলকানতারা’র অসাধারণ গোল দীর্ঘদিন মনে রাখবেন ফুটবল ভক্তরা৷
ছবি: Getty Images/Bongarts/A. Grimm
ডিটমার হপের প্রতিবাদ...
২৯ ফেব্রুয়ারি হফেনহাইমের বিরুদ্ধে ম্যাচে বায়ার্ন তাদের অসাধারণ নৈপুন্য দেখায়৷ এই ম্যাচে হফেনহাইম হারে ৬-০ গোলে৷ তবে এই ম্যাচটি আলোচিত অন্য কারণে৷ খেলার সময় হফেনহাইমের কোচ ডিটমান হপের উদ্দেশে বায়ার্নের খেলোয়াড়দের কট্টরপন্থি মন্তব্যের প্রতিবাদে এক পর্যায়ে হফেনহাইম মাঠ ছেড়ে চলে যায়৷
ছবি: Imago Images/Hartenfelser
টানা ৮
১৬ জুন ভের্ডার ব্রেমেনকে ১-০ গোলে হারিয়ে বাভারিয়ান ক্লাবটি বুন্ডেসলিগা জয় নিশ্চিত করে৷ রবার্ট লেভান্ডোস্কির গোলে ৩০তম জার্মান শিরোপা এবং টানা ৮ বার বুন্ডেসলিগার শিরোপা জয়ী হয় দলটি৷
ছবি: picture-alliance/GES/POOL/M. Ibo GüngürL
ডাবল ডিলাইট
বুন্ডেসলিগা জেতার তিন সপ্তাহের মধ্যে জার্মান কাপের শিরোপা জেতে বায়ার্ন৷ ফাইনালে বায়ার লেভারকুজেনকে ৪-২ গোলে হারিয়ে মৌসুমে দ্বিতীয় শিরোপার স্বাদ পায় দলটি৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Wittek
বার্সাকে নাকানিচুবানি
পর্তুগালে চ্যাম্পিয়ন্সলিগের কোয়ার্টার ফাইনালে বায়ার্নের কাছে লজ্জাজনকভাবে হেরে যায় স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনা৷ ৮-২ গোলে তাদের উড়িয়ে দেয় জার্মান ক্লাবটি৷ ১৯৪৬ সালের পর এই প্রথম বার্সা ৮ গোল খেলো৷
ছবি: picture-alliance/SVEN SIMON/F. Hoermann
ইউরোপের রাজা
ঘরোয়া লিগ, ঘরোয়া কাপ এবং চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা এক মৌসুমে জিতলেই ধরা হয় ইউরোপিয়ান ট্রেবল৷ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে আগস্টের ২৩ তারিখে পিএসজির মুখোমুখি হয়েছিল বায়ার্ন৷ ১-০ গোলে পিএসজি হেরে যায় বায়ার্ন মিউনিখের কাছে৷ ট্রেবল জেতে বায়ার্ন মিউনিখ৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Fernandez
কোয়াড্রাপল
বায়ার্নের জন্য ট্রেবলও যথেষ্ট ছিল না৷ ২৪ সেপ্টেম্বর ইউয়েফা সুপারকাপে বুদাপেস্টে সেভিয়ার মুখোমুখি হয় বায়ার্ন৷ সেভিয়াকে অতিরিক্ত সময়ের গোলে ২-১ ব্যবধানে হারিয়েছে বাভারিয়ানরা৷ ফলে এক মৌসুমে ‘কোয়াড্রাপল’ বা চার শিরোপা নিশ্চিত করে দলটি৷ সুপার কাপ ফাইনালে বায়ার্নকে জয় এনে দেন স্প্যানিশ ডিফেন্ডার জাভি মার্তিনেজ৷ অতিরিক্ত সময়ে হেড থেকে জয়সূচক গোলটি করেন তিনি৷
ছবি: Bernadett Szabo/Pool/dpa/picture-alliance
ম্যাজিক নাম্বার
বুদাপেস্টে বায়ার্নের জয় ছিল ২৩তম টানা জয়৷ ইউরোপীয় ফুটবলের ইতিহাসে যা রেকর্ড৷ ২০১৪ সাল পর্যন্ত রেয়াল মাদ্রিদের ছিল রেকর্ডটি৷ তবে ২৪তম ম্যাচে আশ্চর্যজনকভাবে হফেনহাইমের কাছে ৪-১ গোলে হেরে যায় বায়ার্ন৷
রবার্ট লেভানডোভস্কি ২০১৯-২০ মৌসুমে ৩৪টি গোল করেছেন৷ ইউরোপের বড় পাঁচটি লিগে এটাই সর্বোচ্চ গোল৷ চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১৫, নতুন বুন্ডেসলিগা মৌসুমে ১০ গোল এবং তা-ও প্রথম পাঁচ ম্যাচে৷ এটাও একটা রেকর্ড৷ ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারও হয়েছেন এ কারণে৷
ছবি: Marco Donato/FC Bayern/Getty Images/picture alliance
ফ্লিক এফেক্ট
এ বছর বায়ার্নের সাফল্যের জন্য বড় প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য কোচ হানসি ফ্লিক৷ কোচ হিসেবে যোগ দেয়ার এক বছরেরও কম সময়ে পাঁচটি শিরোপার সাফল্য এলো তার হাত ধরে৷ ফুটবলের ইতিহাসে কোচ হিসেবে যোগ দেয়ার পর এত কম সময়ে এত বড় সাফল্যের ঘটনা আর নেই৷ চলতি বছরে সুপার কাপ, বুন্ডেসলিগা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, জার্মান কাপ এবং ইউরোপিয়ান সুপার কাপ জিতেছে বায়ার্ন মিউনিখ৷
ছবি: Imago Images/SvenSimon
11 ছবি1 | 11
রবার্ট লেভান্ডোস্কির সাফল্য আরো বেশি তাৎপর্যপূর্ণ, আরো গৌরবের৷ এবার পোল্যান্ডের প্রথম ফুটবলার হিসেবে ফিফা বর্ষসেরা হয়েছেন বায়ার্ন মিউনিখের এই ফরোয়ার্ড৷ মেসি, রোনালডোকে ম্লান করে বর্ষসেরা হতে বায়ার্নকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতিয়েছেন আসর-সর্বোচ্চ ১৫ গোল করে৷ বায়ার্নের বুন্ডেসলিগা ও জার্মান কাপ জয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তার ৷ গত মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলে ৪৭ ম্যাচে ৫৫ গোলই বলে দেয় মৌসুমটা কী অসাধারণ কেটেছে তার৷
এ বছর অনেক তারকা হারিয়েছে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গন৷ ২৬ জানুয়ারি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মারা যান বাস্কেটবল কিংবদন্তি কোবি ব্রায়ান্ট৷ গত ২৫ নভেম্বর ফুটবল বিশ্বকে মেনে নিতে হয় দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনার আকস্মিক চিরবিদায়৷
এ বছর রাগে-দুঃখে বার্সেলোনা ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন লিওনেল মেসি৷ পরে অবশ্য চুক্তির শর্ত মেনে আশৈশব খেলে আসা ক্লাবে থেকে যেতে হয় তাকে৷ তবে আপাতত বাধ্য হয়ে থেকে গেলেও ২০২১-এ আর্জেন্টাইন সুপারস্টার বার্সেলোনা ছাড়তে পারেন৷
এসিবি/কেএম
মারাদোনা, তোমারে সেলাম
চলে গেলেন ফুটবলের মহারাজা ও জাদুকর দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা। মাত্র ৬০ বছর বয়সে। রেখে গেলেন অসংখ্য ভক্ত। আর ভিডিওতে ধরা রইল ফুটবল মাঠে কিংবদন্তী হয়ে যাওয়া তাঁর ড্রিবল, পাস, গোল।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/C. Fumagalli
গরিব পরিবারের হীরে
আর্জেন্টিনায় ১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর জন্ম মারাদোনার। চার মেয়ের পর বাবা-মায়ের প্রথম ছেলে। পরে তাঁর আরো দুই ভাই হয়েছিল। তাঁর পরিবার ছিল গরিব। কষ্টের মধ্যে বড় হতে হয়েছে মারাদোনাকে।
ছবি: Empics Peter Robinson/dpa/picture-alliance
আট বছর বয়সে
তাঁর ফুটবল প্রতিভা চেনা গিয়েছিল মাত্র আট বছর বয়সে। সেই সময় একটি ক্লাবের খেলায় মারাদোনাকে দেখে একজন ট্যালেন্ট স্কাউট তাঁকে চিহ্নিত করেন। তারপর বুয়েনস আইরেসের আর্জেন্টিনা জুনিয়ার্স দলের ছোটদের টিমে নিয়মিত সদস্য হন তিনি। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি মারাদোনাকে।
ছবি: picture-alliance/dpa
তখনও ১৬ হয়নি
মারাদোনার বয়স তখনো ১৬ হয়নি। দশ দিন বাকি। ১৯৭৬ সালে তিনি প্রবেশ করলেন পেশাদার ফুটবলের জগতে। আর্জেন্টিনা জুনিয়ার্স-এর হয়ে মাঠে নামলেন ১৬ নম্বর জার্সি গায়ে। আর্জেন্টিনার প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে সব চেয়ে কম বয়সী ফুটবলার হিসাবে। পরে মারাদোনা বলেছিলেন, ''সেদিন মনে হয়েছিল, যেন আকাশ ছুঁয়ে ফেলেছি।''
ছবি: picture-alliance/AFP
পাঁচ বছর পর বোকা জুনিয়ার্স
আর্জেন্টিনা জুনিয়ার্সে পাঁচ বছর ছিলেন মারাদোনা। ১৯৭৬ থেকে ১৯৮১। ১৬৭ ম্যাচ খেলে ১১৫ গোল করেছিলেন। তারপর ৪০ লাখ ডলার নিয়ে বোকা জুনিয়ার্সে। এখানে খেলবেন বলে রিভার প্লেটের অফার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। যোগ দেয়ার দুই দিনের মধ্যে ম্যাচে নেমে দুই গোল করেন। রিভার প্লেটের বিরুদ্ধে সুপার ক্ল্যাসিকোয় এক গোল দেন।
ছবি: AP
এ বার বার্সেলোনা
এক বছর পর ১৯৮২-র বিশ্বকাপ শেষ হলে মারাদোনা যোগ দেন স্পেনের বার্সেলোনায়। রেকর্ড ফি নিয়ে। মাঠে ফুটে উঠলো ফুটবলের জাদুকর মারাদোনার শিল্প। বার্সেলোনা তখন অপ্রতিরোধ্য। রিয়েল মাদ্রিদের বিরুদ্ধে সুপার ক্ল্যাসিকোতে স্কিল দেখালেন মারাদোনা। মাদ্রিদের কোচ মারাদোনার প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছিলেন গণমাধ্যম।
ছবি: imago images
অসুখ, আঘাত ও সংঘাত
বার্সেলোনায় থাকার সময় প্রথমে তাঁর হেপাটাইটিস হয়। তারপর লা লিগার ম্যাচে গোলকিপারের সঙ্গে সংঘর্ষে পা ভাঙে। আর ১৯৮৩-৮৪ সিজনের শেষদিকে হলো তাঁর বিখ্যাত ঢুঁ। বিলবাও-এর সঙ্গে ম্যাচ। মারাদোনাকে বারবার মারা হচ্ছিল। জাতিগত গালাগালি দেয়া হচ্ছিল। এক সময় মেজাজ হারিয়ে তিনি একজন প্লেয়ারকে ঢুঁ মেরেছিলেন, একজনকে কনুই দিয়ে আঘাত করেছিলেন। সেটাই ছিল বার্সেলোনার জার্সিতে তাঁর শেষ ম্যাচ।
ছবি: imago/Werek
নাপোলিতে দক্ষতার শীর্ষে
বার্সেলোনা থেকে নাপোলি। সেখানেই পেশাদার ফুটবলে দক্ষতার শীর্ষে উঠলেন মারাদোনা। ক্যাপ্টেন হলেন। বহু প্রতিযোগিতায় নাপোলিকে জেতালেন।
ছবি: picture alliance / Mark Leech / Offside
৮৬-র বিশ্বকাপ ও হ্যান্ড অফ গড
৮৬-র বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ান হয়েছিল ক্যাপ্টেন মারাদোনার জন্যই। গোটা বিশ্বকাপ জুড়ে ছড়িয়ে ছিল মারাদোনার অসাধারণ ফুটবল। তবে যুক্তরাজ্যের বিরুদ্ধে ম্যাচে প্রথম গোল তিনি হাত দিয়ে করেছিলেন। মারাদোনা হেড করতে উঠেছিলেন। মাথায়. বল না পেয়ে দ্রুত হাত দিয়ে বল গোলে পাঠিয়েছিলেন। প্রথমে বলেছিলেন হ্যান্ড অফ গড। পরে ২০০৫ সালে তিনি বলেন, ইচ্ছে করেই হাত দিয়ে গোল করেছিলেন তিনি।
ছবি: Diego González/DW
আর্জেন্টিনার হয়ে
নিজের দেশের জাতীয় দলের হয়ে ৯১টি ম্যাচ খেলে ৩৪টি গোল করেছেন মারাদোনা। ১৯৭৭ সালে ১৬ বছর বয়সে হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে তাঁর দেশের হয়ে খেলা শুরু। কিন্তু বয়স কম বলে কোচ তাঁকে ১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপ দলে রাখেননি। ১৮ বছর বয়সে ফিফা ওয়ার্ল্ড ইয়ং চ্যাম্পিয়ানশিপে খেললেন।
ছবি: Allsport/Getty Images
বিশ্বকাপে মারাদোনা
১৯৮২-র বিশ্বকাপে প্রথম খেললেন মারাদোনা। পাঁচটি ম্যাচ খেলেছেন। প্রতিটি ম্যাচে বিপক্ষ দলের মার হজম করতে হয়েছে তাঁকে। সারা জীবন ধরে এই দুর্ভাগ্য সঙ্গী হয়েছে তাঁর। বিপক্ষ ফুটবলাররা তাঁর প্রতিভার ধারেকাছে ছিলেন না। তাই মেরেধরে তাঁকে থামাবার চেষ্টা করা হয়েছে। সে বার অর্জেন্টিনার খেলার ফল ভালো হয়নি। বেশ কয়েকটি ম্যাচে হারতে হয়েছিল মারাদোনার দেশকে।
ছবি: picture-alliance/Sven Simon
গোল অফ দ্য সেঞ্চুরি
হ্যান্ড অফ গড-কে ভুলিয়ে দিয়েছিল গোল অফ দ্য সেঞ্চুরি। যুক্তরাজ্যের ম্যাচে নিজেদের হাফে বল পেয়ে পাঁচজন যুক্তরাজ্যের প্লেয়ারকে কাটিয়ে এক দৌড়ে ১১টি টাচের পর গোলে বল ঠেলে দেন মারাদোনা। ২০০২ সালে এটাই গোল অফ দ্য সেঞ্চুরি বলে চিহ্নিত হয়। ওই বিশ্বকাপে মারাদোনাকে ৫৩ বার ফাউল করা হয়েছিল। আর তিনি ৯০ বার ড্রিবল করে বিপক্ষ প্লেয়ারকে কাটিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। ১৪টি গোলের মধ্যে ১০টি হয় তিনি করেছেন, বা করিয়েছেন।
ছবি: AP
মাদক বিতর্ক
মাদক বিতর্ক জীবনভর জড়িয়ে ছিল মারাদোনার। ৯৪ এর বিশ্বকাপে দুইটি ম্যাচের পর ডোপ টেস্টে পজিটিভ হওয়ায় তিনি আর খেলতে পারেননি। ক্লাব ফুটবল খেলার সময়েও কোকেন বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। মাদক ও মদের প্রতি আসক্তির জন্য বার বার সমস্যায় পড়েছেন তিনি।
ছবি: Martin Rickett/PA/picture alliance
পেলে না মারাদোনা
বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ফুটবলার কে? পেলে না মারাদোনা? দীর্ঘদিন ধরে এই বিতর্ক হয়েছে। ফুটবল দুনিয়া দুই ভাগ হয়ে গিয়েছে এই প্রশ্নে। তবে দুজনেই মহান ফুটবলার। দুজনেই ফুটবল সম্রাট। দুই সময়ের দুই ফুটবলার মাঠে ছড়িয়ে গিয়েছেন শিল্পের নমুনা। মন্ত্রমুগ্ধ করেছেন ভক্তদের। মারাদোনার চলে যাওয়ার খবরে পেলে বলেছেন, প্রিয় বন্ধুকে হারালাম। এরপর দুই জনে আকাশে ফুটবল খেলব।
ছবি: picture alliance/dpa
ফুটবল-বিশ্ব শোকস্তব্ধ
অকালে বিদায় নিলেন মারাদোনা। অসম্ভব প্রতিভাধর, মেজাজি, বিতর্কিত মানুষ। কিন্তু ফুটবলের মাঠে তিনি রাজা। তাঁর বিদায়ে তাই শোকস্তব্ধ ফুটবল দুনিয়া। মেসি বলেছেন, ''দিয়েগো অবিনশ্বর।'' ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর মতে, ''বিস্ময়কর প্রতিভা বিদায় নিলেন।'' কোচ মেনোত্তি জানিয়েছেন, তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।