1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মারামারি, রক্তপাত আজ হচ্ছে না, কাল হতেই পারে

১৬ ডিসেম্বর ২০২২

আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল ঘিরে পশ্চিমবঙ্গে পাগলামি বাড়ছে৷ রেষারেষিও৷ মারামারি ও রক্তপাত এখনো হচ্ছে না, তবে হতে কতক্ষণ?

 কলকাতার ফুটবল সমর্থকেরা
কলকাতার ফুটবল সমর্থকেরাছবি: DW

খুবই মুশকিলে পড়ে গেছেন পশ্চিমবঙ্গের ব্রাজিলের সমর্থকদের একাংশ৷ শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু এই নীতিতে তো বিশ্বকাপের ফাইনালে তাদের ফ্রান্সকে সমর্থন করার কথা৷ করছেনও৷ কিন্তু ব্রাজিল সমর্থকের একাংশ আবার মেসিরও ভক্ত৷ তারা ব্রাজিলের কট্টর সমর্থক হলেও মেসির খেলা খুবই পছন্দ করেন৷ বিপদটা হয়েছে তাদের৷ এরকমই এক মেসিভক্ত কট্টর ব্রাজিল সমর্থক একটা মধ্যপন্থা বের করেছেন, ফাইনালে আর্জেন্টিনা হারুক, কিন্তু মেসি ভালো খেলুক৷

সৌদি আরবের সঙ্গে আর্জেন্টিনার হারের পর সামাজিক মাধ্যমে ব্রাজিল সমর্থকরা মেসির দেশের নাম দিয়েছিলেন, আর জিতেন না৷ ব্রাজিলের বিদায়ের পর তারা বেশ কিছুটা ম্রিয়মান৷ তারা এখন মনেপ্রাণে চাইছেন, ফ্রান্স জিতুক৷ অর্জেন্টিনা ফাইনালে হারলে, তাদেরও হারের জ্বালাএকটু কমে আর কী৷ আমরা পারিনি, ঠিকই শত্রুরাও তো পারেনি৷ ইস্টবেঙ্গল অন্য দলের কাছে হারলে মোহনবাগানের সমর্থকদের আনন্দ হয়, ঠিক সেরকমই মোহনবাগান হারলে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদেরও কিছুটা মনের জ্বালা জুড়ায়৷ এও সেরকমই৷ এখন আর্জেন্টিনার সমর্থকরা আবার ব্রাজিলের সমর্থকদের নিয়মিত বিদ্রুপ করছে৷ সামাজিক মাধ্যম দুই পক্ষের পোস্টে ভরে গেছে৷

তবে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতে, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা নিয়ে সমর্থকদের এই লড়াই এখনো পর্যন্ত কটাক্ষ, ট্রোলিং, ব্যাঙ্গের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে৷ সেটা খুব একটা হাতাহাতি, মারামারি, রক্তপাত, মৃত্যু পর্যন্ত গড়ায় না৷ এমনিতেই পশ্চিমবঙ্গে এখন রাজনীতি ও সহিংসতা প্রায় সমার্থক হয়ে উঠেছে৷ আমরা-ওরার দুনিয়ায় অসহিষ্ণুতা এখন জীবনাপনের অঙ্গ৷ কিন্তু ফুটবল নিয়ে পরিস্থিতিটা অতটা ভয়ঙ্কর জায়গায় যায়নি৷ ফুটবলে ভিন্ন দেশের সমর্থক হওয়া য়ায়, তাদের জার্সি পরা যায়, সেই দেশের জাতীয় পতাকা হাতে তুলে নেয়া যায়, গোটা পাড়া রাঙানো যায় সাদা-নীল বা হলুদ রঙে (রোনাল্ডোর কারণে এবার পর্তুগালও ঢুকে পড়েছিল কলকাতায়), কিঞ্চিত রঙ্গব্যাঙ্গের কষাঘাত করা যায় প্রতিপক্ষকে, কিন্তু মারামারি, হত্যা পর্যন্ত বিষয়টা গড়ায় না৷

তবে এখনও গড়ায়নি বলে তার মানে এই নয় যে, ভবিষ্যতেও গড়াবে না৷ গড়াতেই পারে৷ টিভি-র কল্যাণে যেভাবে জার্সি, পতাকা, গলি ও দেওয়াল রাঙানোর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে, যেভাবে সামাজিক মাধ্যমে একে অন্যের বিরুদ্ধে কটাক্ষ করা চলছে, তারপর মারামারি হতে আর কতক্ষণ৷ এবার না হলে পরের বিশ্বকাপের সময় হতে পারে৷

আর্জেন্টিনাতেই তো তৈরি হয়েছিল বারা ব্রাভা নামক মারকুটে সমর্থকদের দল৷ ইংল্যান্ডের কট্টর ফুটবল সমর্থকদের সঙ্গে যাদের তুলনা টানা হয়৷ বারা ব্রাভার মতো সংগঠন পরে ল্যাটিন অ্যামোরিকার দেশগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে৷ আর্জেন্টিনা হারলে প্লেয়ারদের বাড়িতে হামলা, ক্লাব ফুটবলে বিপক্ষ সমর্থকদের উপর হামলার মতো কাজ করার জন্য তারা কুখ্যাত৷ ফলে উদাহরণ তো আছেই৷ উদাহরণ তো তৈরি হয়েছে ঘরের পাশে বাংলাদেশেও৷ সেই ছোঁয়াচ এপারে এসে পড়তে কতক্ষণ লাগে!

বিশ্বের ফুটবল খেলা দেশগুলির তালিকায় ভারত এখন ১০৬তম৷ একসময় ভারতীয় ফুটবলে বাঙালি ফুটবলারদেরই দাপট ছিল৷ এখন দিন বদলেছে৷ এখন ফুটবলে উত্তর-পূর্ব ভারত ও দক্ষিণ ভারতের প্লায়ারদের রমরমা৷ বাঙালি ফুটবলার খুঁজতে দূরবীন লাগে৷ বাংলার তিন প্রধান ক্লাব ইস্টবেঙ্গল, মহামেডান, মোহনবাগানের অবস্থা বেশ খারাপ৷ মহামেডান আই লিগ খেলে৷ বাকি দুই দল আইএসএলে খেললেও ইস্টবেঙ্গল শেষের দিকে থাকে৷ মোহনবাগান ওপরের দিকে থাকে ঠিকই, কিন্তু তারা এখন এটিকে-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে এটিকে মোহনবাগান হয়ে গেছে৷ ফলে মোহনবাগানের কৃতিত্ব কতটা, আর এটিকে-ক কৃতিত্ব কতটা তানিয়ে সমর্থকদের মধ্যেই তর্ক আছে৷ তাছাড়াএই ক্লাবগুলিতে বাঙালি ফুটবলার খুঁজে পাওয়াই যায় না৷ হয় বিদেশি অথবা উত্তর পূর্ব ভারত, দক্ষিণ বা পশ্চিম ভারতের ফুটবলার৷

গৌতম হোড়, ডয়চে ভেলে, নতুন দিল্লিছবি: privat

অথচ, বাঙালিদের একজন ফুটবল আইকন দরকার৷ ম্যারাডোনা নামক আইকনের হাত ধরেই বাঙালিদের অর্জেন্টিনার সমর্থক হয়ে ওঠার কাহিনি শুরু৷ তার আগে পেলে সহ ব্রাজিলের একগুচ্ছ অসাধারণ ফুটবলারের জন্য বাঙালিদের ব্রাজিল প্রীতির জন্ম৷ তারপর জিকো, সক্রেটিস সহ অন্যদের কারণে সেই ভালোবাসা বেড়েছে বই কমেনি৷ ম্যারাডোনার পর মেসির জন্যও আর্জেন্টিনা প্রীতি বেড়েছে৷ এই ফুটবল আইকনরা বাঙালিদের মন ছুঁয়েছেন৷ তাদের সঙ্গে ঢুকে পড়েছে তাদের দেশ৷ ফলে বাঙালি ওই দেশের পতাকাও হাতে তুলে নিয়েছে৷ ফলে বীরপুজো করতে করতে বাহালিদের এই হুজুগ সমানে বাড়ছে৷

সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রেষারেষি৷ একে অন্যকে বিদ্রুপ করা৷ একটা ছোট তথ্য দিয়ে রাখি৷ সংবাদসংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, কাতার বিশ্বকাপে গ্রুপ লিগ থেকে কোয়ার্টার ফাইনালের খেলা দেখতে কলকাতা ও তার আশপাশের এলাকা থেকে কাতার গেছেন নয় হাজারেরও বেশি মানুষ৷ সেমিফাইনাল ও ফাইনাল দেখতে যাবেন ও গিয়েছেন আরো দেড় হাজার ফুটবলপ্রেমী৷ ব্রাজিল সেমিফাইনাল ও ফাইনালে উঠলে সংখ্যাটা আরো বাড়ত৷

এই পাগলামির পারদ যত চড়বে, ততই আবেগের বিস্ফোরণ হবে৷ ততই বাড়বে সহিংসতার সম্ভাবনা৷ ফলে সিঁদুরে মেঘ দেখে ঘরপোড়াদের আশঙ্কা হওয়া তো স্বাভাবিক৷

কলকাতার এক মেসি-ভক্তের কাহিনি

04:31

This browser does not support the video element.

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ