নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে প্রতিবছর পাঁচ দিনের এক উৎসবের মাধ্যমে মৃত্যু ও বিচারের দেবতা যমরাজের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়৷হিন্দুদের সেই উৎসবের অংশ হিসেবে সোমবার ললিতপুরে পালিত হয় ‘কুকুর তিহার’৷ বিশ্বের সকল প্রাণির প্রতি ভক্তি, ভালোবাসা প্রকাশের উৎসবে পথকুকুরদের কপালে তিলক এঁকে গলায় ফুলের মালা পরিয়ে দেন প্রাণিপ্রেমীরা৷

হিমালয়ের দেশ নেপালের সব জায়গায় অসংখ্য কুকুরকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়৷ পোখারায় কুকুর এত বেড়েছে যে পর্যবেক্ষনে রাখতে কুকুরের গায়ে মাইক্রোচিপ লাগিয়েছে নগরকর্তৃপক্ষ৷ রাজধানী কাঠমান্ডুর রাস্তায় রয়েছে অন্তত ২০ হাজার কুকুর৷ পথকুকুরদের জন্ম নিয়ন্ত্রণ করতে ইতিমধ্যে বিশেষ কুকুর ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণয়ন করে প্রচার শুরু করা হয়েছে৷ ছবিতে কাঠমান্ডুর রাস্তায় কুকুরের পিঠে এক মানবশিশুর বিশ্রাম নেয়ার দৃশ্য৷

কাঠমান্ডুর কাছের ললিতপুর শহরে সোমবার মূলত পক্ষাঘাতগ্রস্ত কুকুরদের কপালে তিলক এঁকে গলায় মালা পরানোর মাধ্যমে ‘কুকুর তিহার’ পালন করা হয়৷ সেখানে ললিতপুরের মেয়র চিরি বাবু মহারাজন কুকুরদের প্রতি নিষ্ঠুরতার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘‘প্রতিটি মানুষের উচিত কুকুরদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করা, তাদের ভালোবাসা এবং তাদের সাধ্য অনুযায়ী ভরণপোষন করা৷’’ ছবিতে আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগে এক পক্ষাঘাতগ্রস্ত কুকুরের গোসল৷

‘কুকুর তিহার’-এ স্নেহা কেয়ার নামের এক প্রাণী আশ্রয় কেন্দ্রের পক্ষাঘাতগ্রস্ত কুকুরদের পূজার আনুষ্ঠানিকতায় সম্মানিত করা হয়৷ স্নেহা কেয়ারে মোট ১৭০টি কুকুরকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে৷ আশ্রয় কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা স্নেহা শ্রেষ্ঠা নেপালে কুকুরের প্রতি মানুষের দ্বিমুখী আচরণের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘‘আজ তাদের (কুকুর) পূজা করা হচ্ছে, কিন্তু কালই তাদের ফেলে দেয়া হবে৷অসুস্থ হলেই তাদের রাস্তায় ছেড়ে দেয়া হয়৷’’

‘কুকুর তিহার’ পালন করতে আসা তীর্থ বাহাদুর খত্রী বলেন, ‘‘ কুকুর উৎসবের সময় আমরা যে মালা বানিয়ে ওদের পরিয়ে দেই, ওদের খাওয়াই- এটা খুবই মজার৷’’ পাঁচ দিনের এই উৎসব চলার সময় কোনো প্রাণীকে কষ্ট দিলে পাপ হবে বলে হিন্দুরা বিশ্বাস করেন৷

কুকুর তিহারে সব কুকুরকে এভাবে খাওয়ানো হয়৷

কুকুর তিহারে কুকুরদের নানা ধরনের কসরত দেখানোর ব্যবস্থাও থাকে৷ ওপরের ছবিতে কাঠমান্ডু পুলিশের এক প্রশিক্ষিত কুকুর তার দক্ষতা দেখানোয় ব্যস্ত৷

কুকুর তিহারে পুলিশের কুকুরদেরও সম্মান জানানো হয়৷ ওপরের ছবিতে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষে নিজেদের প্রশিক্ষিত এক কুকুরকে কোলে নিয়ে ফিরছেন এক পুলিশ কর্মী৷

সহজ করে বললে ব্রাইটনের কাছের উৎসবটি আসলে কুকুর এবং মানুষদের সুইমিং পুলের পানিতে দাপাদাপির উৎসব৷ পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়া, পানি ছিঁটানো, সাঁতার- মোটামুটি সবই চলে সেখানে৷

খোলা আকাশের নীচে সল্টডিন সুইমিং পুলের এই উৎসব চলে সেপ্টেম্বরের চার সপ্তাহ জুড়ে৷ উৎসবে যোগ দিতে আসা সবার সবচেয়ে বেশি পছন্দ পানিতে বল ছোঁড়া এবং সাঁতরে গিয়ে সেই বল কুড়িয়ে আনা৷ মানুষ আনন্দ পায় বল ছুঁড়ে আর কুকুরেরা মহাখুশি হয় বল কুড়িয়ে এনে মানুষের মুখে হাসি দেখে৷

জেন ওয়াইস ইস্টবোর্ন থেকে সল্টডিন সুইমিং পুলে এসেছেন ডগটেম্বর উৎসবের আনন্দ নিতে৷ এত দূর থেকে আসার কারণ জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আজ আমার কুকুরের প্রথম জন্মদিন৷ এমন দিনে পার্টি তো হবেই!‘‘ জেন ওয়াইজের এক বছরের প্রিয় চারপেয়ে নিজে তো পানিতে দাপাদাপি করেছেই, ১৫০টি কুকুরের গোল্ড রাশ দেখেও দারুণ মজা পেয়েছে৷ গোল্ড রাশ হলো সাঁতরে দূর থেকে বল নিয়ে আসায় সবচেয়ে দক্ষ কুকুরদের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই৷

এ বছর ডগটেম্বরে অংশ নিচ্ছে প্রায় ৮০০০ কুকুর৷ অনেকের মতে, ব্রিটেনে কুকুরদের আনন্দ করার সবচেয়ে বড় আয়োজন এটি৷

সেপ্টেম্বরের এই আয়োজন শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালে৷ সেই বছর এই মাসে কুকুরদে শুধু সাঁতার শেখানো হয়েছিল৷ সাঁতারের কোর্স ছিল মাত্র দুটি৷ ২০২৩ সালে কোর্স বেড়ে হয়েছে ৪০টি৷ এর বাইরে সব মিলিয়ে আট হাজারের মতো কুকুরের অংশগ্রহণের বিষয়টি মনে করলেই বুঝবেন ডগটেম্বর এখন কত বড় উৎসব৷

সল্টডিন লিডো সুইমিং পুলের অপারেটর ডেরেক চেস্টার জানান, চলতি ডগটেম্বরে ৬০ হাজার পাউন্ডেরও বেশি আয় আশা করছেন তারা৷ এই টাকা দিয়ে মানুষেরই বেশি উপকার হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি, কারণ, এ মাসের বাড়তি আয় বছরের বাকি মাসগুলোয় সুইমিং পুল চালানোয় খরচ হবে এবং তখন সুইমিং পুল থাকবে শুধু মানুষের জন্য৷

সেপ্টেম্বরের এই আয়োজন শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালে৷ সেই বছর এই মাসে কুকুরদে শুধু সাঁতার শেখানো হয়েছিল৷ সাঁতারের কোর্স ছিল মাত্র দুটি৷ ২০২৩ সালে কোর্স বেড়ে হয়েছে ৪০টি৷ এর বাইরে সব মিলিয়ে আট হাজারের মতো কুকুরের অংশগ্রহণের বিষয়টি মনে করলেই বুঝবেন ডগটেম্বর এখন কত বড় উৎসব৷