রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝে মারিউপলে একটি ইস্পাত কারখানায় অবরুদ্ধ ইউক্রেনীয়দের একটি অংশ বেরিয়ে আসতে পেরেছেন৷ মস্কো বলছে, দুপুর পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত বেসামরিক ইউক্রেনীয় আজোভস্টাল ইস্পাত কারখানা থেকে বেরিয়ে এসেছেন৷
বিজ্ঞাপন
দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় টেলিগ্রামে দেয়া বিবৃতিতে বলেছে, ‘‘যুদ্ধবিরতি ও মানবিক করিডোর বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ৩০ এপ্রিল বেসামরিক জনতার দুটি দল আজোভস্টাল ইস্পাত কারখানা সংলগ্ন আবাসিক ভবনগুলো থেকে চলে গেছেন৷''
সেখানে আরো বলা হয়, ‘‘দুপুর নাগাদ ২৫ জন স্থানীয় এলাকা ছেড়েছেন৷ সন্ধ্যা নাগাদ ২১ জনের আরেকটি দল প্রস্থান করেছে এবং তাদের বেজিয়েমেনেতে নেয়া হয়৷'' বেজিয়েমেনে মারিউপোল ও রুশ সীমান্তের মাঝামাঝি একটি গ্রাম৷ তবে প্রথম দলটিকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা বলেনি টেলিগ্রামের বিবৃতি৷
এদেরকে থাকার জায়গা, খাবার ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরবরাহ করা হয়েছে বলে রুশ কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে৷
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, গাড়ি ও বাসের একটি কনভয় প্রায় অন্ধকার পথ পাড়ি দিচ্ছে৷ গাড়িগুলোতে বড় অক্ষরের ‘জেড' লেখা৷ রুশ সেনারা যুদ্ধের সময় এই সংকেত ব্যবহার করেন৷
শনিবার আজোভস্টাল এলাকায় পাহারারত ইউক্রেনীয় সেনারা জানান, শিশুসহ ২০জন ইউক্রেনীয়কে জাপোরিঝঝিয়া শহরে সরিয়ে নেয়া হয়েছে৷ মারিউপলে শুধু এই ইস্পাত কারখানাটিই রুশ সেনাদের দখলে নেই৷ এই কারখানায় দুই হাজার ইউক্রেনীয় সেনা রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
এদিকে, রোববার রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, ওডেসা শহরের কাছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেয়া অস্ত্র ও যুদ্ধ সরঞ্জাম রাখার গুদাম ধ্বংস করে দিয়েছে তারা৷ এর জন্য তারা তাদের অনিক্স মিসাইল ব্যবহার করেছে৷
অপরদিকে, যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণা সংস্থা বলছে, ক্রেমলিন তাদের ভাড়া করা সাইবার যোদ্ধা দিয়ে ইন্টারনেটে ভুল তথ্য ও প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে৷ রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবুর্গ থেকে একটি সাইবার ফার্ম কাজটি করছে বলে তারা দাবি করছে৷
এদিকে, মার্কিন হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি কিয়েভ সফর করেছেন৷ যুদ্ধ শুরুর পর প্রথম সারির মার্কিন কোনো নেতা এই প্রথম কিয়েভ এলেন৷ তিনি সেখানে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যেভাবে সাধারণ ইউক্রেনীয় জনগণ রুখে দাঁড়িয়েছে, তার প্রশংসা করেন৷ তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিরও নেতৃত্বের প্রশংসা করেন৷
জেডএ/এআই (এএফপি, রয়টার্স)
মারিউপল-- যুদ্ধের আগে এবং পরে
দক্ষিণ ইউক্রেনের মারিউপল একসময় ছিল পর্যটকদের প্রিয় জায়গা। যুদ্ধের পর সেই বন্দর-শহর কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
ছবি: Maxar Technologies/picture alliance/AP
বন্দর এলাকা
প্রায় চার লাখ ৪০ হাজার মানুষের বাস রাশিয়া লাগোয়া এই বন্দর শহরে। এখন সেখান থেকে অধিকাংশ বেসামরিক মানুষ পালিয়েছেন। সমুদ্রের ধারে বন্দর এলাকায় একসময় মানুষ বিশ্রাম নিতে যেতেন। পর্যটকদের বিশেষ আকর্ষণ ছিল এই বন্দর এবং সমুদ্র।
ছবি: Ivanov Stanislav/Ukrinform/IMAGO
বর্তমান ছবি
সেই বন্দরের বর্তমান চেহারা। আক্ষরিক অর্থেই 'মরা বন্দর'। যুদ্ধে বিধ্বস্ত বন্দরে জলে ভাসছে ভাঙা জাহাজ। মানুষ পালাচ্ছে ওই অঞ্চল থেকে। এখনো বহু মানুষ আটকে আছেন বলে আশঙ্কা।
ছবি: Sergei Bobylev/ITAR-TASS/IMAGO
সিটি সেন্টারের ছবি
২০১৯ সালের ২০ জুন তোলা হয়েছিল এই ছবি। সিটি সেন্টার অঞ্চলে ফোয়ারের জলে স্নান করছে ছোটরা। ইউক্রেনের পরিচিত ছবি। আর তার পিছনে দেখা যাচ্ছে চার্চ।
ছবি: Thomas Imo/photothek/IMAGO
বর্তমান ছবি
ওই একই চার্চের সামনের ছবি। এ বছর ১ এপ্রিল তোলা হয়েছে ছবিটি। যুদ্ধ বিধ্বস্ত শহরের রাস্তায় ছড়িয়ে আছে বারুদ। যে রাস্তার ধারে সকলে আনন্দ করতেন, এখন সেখানে আতঙ্ক।
ছবি: Sergei Bobylev/ITAR-TASS/IMAGO
প্রাদেশিক থিয়েটার
দনেৎস্ক অ্যাকাডেমিক রিজিওনাল ড্রামা থিয়েটারের সামনের ছবি্। ২০১৪ সালে তোলা এই ছবিতে এক প্রতিবাদীকে দেখা যাচ্ছে। রাশিয়া ক্রাইমিয়া দখল করার পরে ইউক্রেনের পতাকা হাতে তিনি প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
ছবি: EST&OST/IMAGO
বর্তমান ছবি
সেই থিয়েটার এখন ধ্বংসস্তূপ। ১৬ মার্চ রাশিয়ার বোমারু বিমান এখানে বোমাবর্ষণ করে। অন্তত এক হাজার মানুষ এর ভিতরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। বহু মানুষের মৃত্যু হয়। যার মধ্যে বহু নারী ও শিশু আছে।
ছবি: Nikolai Trishin/ITAR-TASS/IMAGO
স্টিল প্লান্ট
অ্যাজোভস্টাল স্টিল প্লান্টের ছবি। ইউরোপের অন্যতম বড় স্টিল প্লান্ট এটি। ২০১৭ সালে এই ছবিটি তোলা হয়েছিল।
ছবি: Musienko Vladislav/Ukrainian News/IMAGO
বর্তমান ছবি
স্টিল প্লান্ট আর চেনা যাচ্ছে না। ভিতরে ইউক্রেনের যোদ্ধারা। বাইরে ঘিরে রেখেছে রাশিয়ার সেনা। এই অঞ্চলে প্রায় এক লাখ বেসামরিক মানুষ আটকে আছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
ছবি: Sergei Bobylev/ITAR-TASS/IMAGO
মারিউপলের রাস্তা
২০১৮ সালে তোলা মারিউপলের রাস্তা। ঝকঝকে রাস্তায় আশঙ্কার চিহ্নমাত্র নেই।
ছবি: MAXPPP/picture alliance
বর্তমান ছবি
সেই রাস্তার অবস্থা এখন এমন। রাস্তা বলে মনেই হয় না। যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।