মারিউপল থেকে সাধারণ মানুষদের পালানোর জন্য 'সেফ করিডোর' তৈরি করে দিল রাশিয়া। থাকতে হবে জাতিসংঘকে।
বিজ্ঞাপন
কার্যত ধ্বংসপ্রাপ্ত মারিউপলে এখনো কয়েক লাখ সাধারণ মানুষ আটকে আছেন। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে তাদের জন্য যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে রাশিয়া। তাদের জন্য একটি সেফ করিডোর তৈরি করা হয়েছে। তবে সেই করিডোর রাশিয়ার দখলে থাকা অঞ্চলে গিয়ে শেষ হচ্ছে। রাশিয়া জানিয়েছে, জাতিসংঘের শরণার্থী সংক্রান্ত গোষ্ঠী এবং আন্তর্জাতিক রেডক্রস সোসাইটির প্রতিনিধিদের সেখানে উপস্থিত থাকতে হবে। তাদের ওই করিডোর দিয়ে সাধারণ মানুষকে এসকর্ট করে নিয়ে যেতে হবে।
অভিনব উপায়ে ইউক্রেন রক্ষার যুদ্ধে সাধারণ মানুষদের সহায়তা
ইউক্রেনীয়দের কাছে যুদ্ধটা যেন রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে জনযুদ্ধ৷ তাই নানা পেশার মানুষ এগিয়ে এসেছেন সৈনিকদের সহায়তায়৷ অস্ত্র না ধরেও যুদ্ধের ময়দানে থাকছেন তারা৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Pavlo Palamarchuk/REUTERS
শিল্পীর তৈরি ‘চেক হেজহগ’
হাঙ্গেরি সীমান্তের কাছের শহর উঝোরোদ-এ নিজের ওয়ার্কশপে কাজ করছেন ভলোদোমির কোলেসনিকভ৷ যুদ্ধের আগে নানা ধরনের ধাতু দিয়ে ভাস্কর্য তৈরি করতেন৷ এখন নিজের যাবতীয় দক্ষতা কাজে লাগাচ্ছেন ‘চেক হেজহগ’ তৈরির কাজে৷ চেক হেজহগ ধাতু দিয়ে তৈরি টি বা এল আকৃতির এমন এক কাঠামো, যা অল্প বা মাঝারি শক্তির ট্যাঙ্কের পথরোধে ভূমিকা রাখে৷
ছবি: Hudak/Ukrinform/abaca/picture alliance
ওয়েল্ডার বানাচ্ছেন চুলা
ওয়েল্ডার ইয়ান পোত্রোহোশ এবং তার সহকর্মীরা এমন ধাতব পাত দিয়ে তৈরি করছেন সহজে বহণ করা যায় এমন সব ছোট ছোট স্টোভ বা চুলা৷ সব চুলা যায় ইউক্রেনের নানা প্রান্তে যুদ্ধরত সৈনিকদের কাছে৷
এক মাস আগেও সাশো হোরোন্দি সারাদিন শুধু ব্যাকপ্যাক বা ব্যাকপ্যাকের সরঞ্জাম বানাতেন৷ এখন পিঠে ঝোলানোর ব্যাগ না বানিয়ে ইউক্রেনের সৈনিকদের প্রাণ বাঁচানোর জন্য বানাচ্ছেন বুলেটপ্রুফ ভেস্ট৷
ছবি: Pavlo Palamarchuk/REUTERS
ওডেসা নগর রক্ষায় জনতা
কৃষ্ণসাগরের তীরের ওডেসা ইউক্রেনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বন্দরনগরী৷ রাশিয়ার হামলায় এ শহর যাতে ধংস না হয় তার ব্যবস্থা করতে মরিয়া নগরবাসী৷ ওপরের ছবিতে ভিক্টর যেমন বালুর বস্তা কাঁধে নিয়ে যাচ্ছেন সেভাবেই কাঁধে করে শত শত বস্তা নিয়ে সমুদ্রসৈকতে সারি সারি করে রাখছেন তারা৷ এভাবে প্রতিরোধ-প্রাচীর গড়েও যদি প্রিয় নগরকে রক্ষা করা যায়!
ছবি: /Nacho Doce/REUTERS
গির্জায় বসে ক্যামোফ্লেজ তৈরি
ইউক্রেনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ইভানো-ফ্রাঙ্কিভস্কের এক গির্জায় কিছু মানুষ জড়ো হন প্রতিদিন৷ সবাই মিলে ক্যামোফ্লেজ নেট, অর্থাৎ রুশ সেনাদের চোখে ধুলা দেয়ার জন্য বিশেষ ধরনের জাল তৈরি করেন তারা৷ ছবিতে জাল তৈরিতে ব্যস্ত এক নারী৷
ছবি: Yuriy Rylchuk/REUTERS
বিশ্ববিদ্যালয়ও এখন জাল তৈরির কারখানা
ইউক্রেনের অন্যতম প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লভিভ পলিটেকনিক ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি৷ সেখানেও সৈনিকদের জন্য ক্যামোফ্লেজ নেট বোনা হয় প্রতিদিন৷
ছবি: Pavlo Palamarchuk/REUTERS
6 ছবি1 | 6
রাশিয়ার বক্তব্য, কোনোভাবেই যাতে সাধারণ মানুষের উপর আক্রমণ না হয়, তা নিশ্চিত করতে করিডোরে যাওয়ার আগে রাশিয়ার সেনাকে তা জানিয়ে দিতে হবে। মারিউপল থেকে জাপোরিঝঝিয়া হয়ে বারডিয়ানস্ক পৌঁছেছে ওই রাস্তা। বারডিয়ানস্ক এখন রাশিয়ার সেনার দখলে।
তুরস্কে রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের বৈঠকে মারিউপলের কথা বার বার উঠে এসেছে। সেখানে সাধারণ মানুষের আটকে পড়ার কথা বলা হয়েছে। ইউক্রেন মোট চারটি রাস্তায় সেফ করিডোর তৈরির কথা বলেছিল। রাশিয়া জানিয়েছে, বাকিগুলিও তারা ভেবে দেখবে।
সমস্যা হলো, এর আগেও মারিউপলে সেফ করিডোর তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু দুই পক্ষেরই অভিযোগ, যুদ্ধবিরতির শর্ত না মেনে সেনাবাহিনী সেই প্যাসেজেও হামলা চালিয়েছে। হামলা হয়েছে রেডক্রসের উপর। চিকিৎসকদের মৃত্যু হয়েছে। রাশিয়ার দাবি, সে কারণেই এবার আগাম খবর দিয়ে করিডোর ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।
ইউক্রেন ছেড়ে আসা মানুষের জন্য ইইউ-র নীতি
রাশিয়ার হামলার পর ইউক্রেন ছেড়ে প্রতিবেশী দেশগুলিতে চলে এসেছেন প্রায় ৬০ লাখ মানুষ। শেষপর্যন্ত কোথায় আশ্রয় পাবেন তারা?
ছবি: Fabrizio Bensch/REUTERS
প্রথমে প্রতিদিন এক লাখ করে
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত শুরু হওয়ার পর প্রথমদিকে দিনে এক লাখ করে মানুষ ইউক্রেন ছেড়েছেন। প্রাণ বাঁচাতে তারা চলে গেছেন প্রতিবেশী দেশগুলিতে। উপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, পোল্যান্ডের একটি স্টেশনে ইউক্রেন থেকে আসা মানুষদের সাময়িকভাবে রাখা হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের কমিশনার ফর হোম অ্যাফেয়ার্স জানিয়েছে, এখন দিনে ৪০ হাজার মানুষ ইউক্রেন ছেড়ে ইউরোপের দেশগুলিতে আসছে।
ছবি: Fanny Facsar/DW
অর্ধেক বাচ্চা
যারা ইউক্রেন ছেড়ে ইউরোপের দেশগুলিতে আশ্রয় নিচ্ছেন, তাদের অর্ধেকই বাচ্চা। আসলে বহু পুরুষ ও নারী হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছেন। তারা বয়স্ক ও বাচ্চাদের পাঠিয়ে দিয়েছেন নিরাপদ আশ্রয়ে। উপরের ছবিটি স্লোভানিয়ায় ইউক্রেন থেকে আসা বাচ্চাদের।
ছবি: Robert Nemeti/AA/picture alliance
সবচেয়ে বেশি মানুষ পোল্যান্ডে
পোল্যান্ডেই ২২ লাখের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। পোল্যান্ড জানিয়েছে, এত কম সময়ের মধ্যে এত মানুষ আশ্রয় নেয়ায় তাদের অভিবাসন নীতি ভেঙে পড়ার মুখে।
ছবি: Sergei Grits/AP/picture alliance
জার্মানিতে তিন লাখ
জার্মান চ্যান্সেলর ওলফ শলৎস জানিয়েছেন, ইউক্রেন থেকে তিন লাখ মানুষ জার্মানিতে এসেছেন। উপরের ছবিতে বার্লিনের সেন্ট্রাল স্টেশনের সামনে ইউক্রেন থেকে আসা মানুষরা।
ছবি: Michael Kuenne/PRESSCOV/Zuma/picture alliance
জার্মানির প্রস্তাব
জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফ্রেজার চিঠি লিখে পোল্যান্ডের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, ইউক্রেন ছেড়ে আসা প্রত্যেকের জন্য ইইউ-র সদস্য দেশগুলি এক হাজার ইউরো করে দিক। ছবিতে পোল্যান্ডের একটি স্টেডিয়ামে ইউক্রেন থেকে আসা মানুষদের প্রবেশের জন্য লম্বা লাইন।
ছবি: Beata Zawrzel/NurPhoto/picture alliance
ইইউ-র সিদ্ধান্ত
ইইউ-র মন্ত্রীরা সোমবার বৈঠকে বসে ১০ দফা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, ইউক্রেন থেকে আসা মানুষদের রেজিস্ট্রেশনের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হবে। তাদের যাতায়াত ও পরিবহণের জন্য একটি হাব তৈরি করা হবে। ইইউ কমিশন সেফ হোম নীতি নেবে। তার ফলে যেখানে সবচেয়ে বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন, সেখান থেকে অন্য দেশে কিছু মানুষকে নিয়ে যাওয়া হবে।
ছবি: Hannibal Hanschke/Getty Images
সহযোগিতার সিদ্ধান্ত
ইইউ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিভিন্ন দেশে ইউক্রেন থেকে আসা মানুষদের পুনর্বাসনের জন্য সাহায্য করা হবে। এই মানুষদের পাশে দাঁড়াবে সব দেশ। প্রতিটি দেশকে সাধ্যমতো শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে বলা হয়েছে। উপরের ছবিতে ওয়ারশর একটি স্টেডিয়ামে ইউক্রেন ছেড়ে আসা মানুষদের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। অ্যামেরিকাও ইউক্রেন ছেড়ে আসা মানুষদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়াবে বলে জানিয়েছে।
ছবি: Evan Vucci/AP/picture alliance
কোটায় আপত্তি
কোটা ব্যবস্থায় আপত্তি আছে জার্মানির। তারা চায়, ইউক্রেন থেকে আসা মানুদের বিভিন্ন দেশে ভাগ করে রাখা হোক। সব দেশ যেন ইউক্রেন থেকে আসা মানুষদের প্রতি সমর্থন জানায়।
ছবি: Hannibal Hanschke/Getty Images
9 ছবি1 | 9
পূর্ব ইউক্রেনে লড়াই অব্যাহত
মারিউপলে খানিকটা ছাড় দিলেও পূর্ব ইউক্রেনে লড়াই এখনো চলছে। রাশিয়া এখনো গোলাবর্ষণ করে চলেছে। রাশিয়ার গোলাবর্ষণে একটি তেলের ফিল্ডে আগুন লেগে গেছে। একটি কারখানাতেও রকেট হামলা হয়েছে বলে ইউক্রেনের অভিযোগ। তবে এখনো পর্যন্ত এই দুই ঘটনায় কারও মৃত্যুর কথা জানা যায়নি।
পেন্টাগনের দাবি
পেন্টাগন জানিয়েছে, চেরনোবিলের পরমাণু কেন্দ্র থেকে ধীরে ধীরে রাশিয়ার সেনা চলে যেতে শুরু করেছে। ২৪ ফেব্রুয়ারি ওই কেন্দ্রটি দখল করেছিল রাশিয়ার সেনা। চেরনোবিল কেন্দ্র সংলগ্ন শহর থেকেও রাশিয়ার সেনা চলে যেতে শুরু করেছে বলে তারা জানিয়েছে। পেন্টাগন জানিয়েছে, লড়াইয়ের একেবারে প্রথম দফায় ওই এলাকার দখল নিয়েছিল রাশিয়ার সেনা। এখন তারা বেলারুশ দিয়ে ফিরে যাচ্ছে। তবে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের দাবি, রাশিয়া চেরনোবিল ফাঁকা করে দিয়েছে, এমন ভাবার কারণ নেই। খুব ধীরে ধীরে সেখান থেকে তারা সেনা প্রত্যাহার করা হচ্ছে।