গত ২৪ ঘণ্টায় পূর্ব ইউক্রেনের শহর মারিউপল কার্যত দখল করে নিয়েছে রাশিয়া। ডনবাস অঞ্চলে প্রতিরোধের মুখে রাশিয়ার সেনা।
বিজ্ঞাপন
এই সপ্তাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পূর্ব ইউক্রেনে এই সপ্তাহে রাশিয়া সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপাবে বলে দাবি করলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদোমির জেলেনস্কি। গোটা ইউক্রেন জুড়ে যুদ্ধের সাইরেন বাজিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিয়েভ, লিভিভের মতো শহরেও সাইরেন বাজানো হয়েছে। মার্কিন গবেষণা সংস্থা তথা থিংক ট্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অফ ওয়ার জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় মারিউপল শহরটি কার্যত দখল করে নিয়েছে রাশিয়ার সেনা।
বুচার চেয়ে বোরোদিয়াংকা শহরে পরিস্থিতি আরো মারাত্মক: জেলেনস্কি
বুচা শহর ছেড়ে রুশ বাহিনী সরে যাওয়ার পর সেখানে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যাকাণ্ডের চিত্র উঠে এসেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে৷ এবার দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দাবি করলেন বুচার পাশের শহর বোরোদিয়াংকায় পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ৷
ছবি: Jamie Wiseman/dmg media Licensing/picture alliance
কোথায় এই বোরোদিয়াংকা?
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার উত্তরপশ্চিমে অবস্থিত বোরোদিয়াংকা৷ বুচা থেকে এর দূরত্ব মাত্র ২৫ কিলোমিটার৷ ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ আগ্রাসন শুরুর কয়েকদিনের মধ্যেই শহরটি দখল করে রুশ বাহিনী৷ গত সপ্তাহে সেখান থেকে সরে যায় তারা৷
ছবি: Gleb Garanich/REUTERS
ধ্বংসস্তূপ
রুশ সৈন্যরা চলে যাওয়ার পর পালিয়ে যাওয়া বাসিন্দারা ধীরে ধীরে শহরটিতে ফিরতে শুরু করেছেন৷ বিমান হামলা ও মর্টার শেলের আঘাতে শহরটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে৷ প্রায় কোনো ভবনই এখন আর আস্ত নেই৷
ছবি: Gleb Garanich/REUTERS
নিখোঁজদের সন্ধান
বোরোদিয়াংকার বাসিন্দারা ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের ধ্বংসাবশেষে মরদেহ ও জিনিসপত্রের সন্ধান করছেন৷ শহর কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, বুচা শহরে বেসামরিক নাগরিকদের রাস্তায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে৷ অন্যদিকে বোরোদিয়াংকায় বেসামরিক নাগরিকদের বাসাবাড়ি বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷
ছবি: Vadim Ghirda/AP Photo/picture alliance
তখনও বাসিন্দারা ছিলেন
বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বোরোদিয়াংকা শহরের বাসিন্দা ভাদিম জেগ্রেবেলনি জানিয়েছেন, তার মা, ভাই এবং অন্য স্বজনেরা একটি ভবনের বেসমেন্টে আশ্রয় নেয়ায় বেঁচে গেছেন৷ কিন্তু ভবনটির ওপরের তলাগুলোতেও বোমাবর্ষণের সময় মানুষ ছিলেন৷ এবং তারা আর বের হতে পারেননি৷
ছবি: Aleksey Filippov /AFP
জেলেনস্কির বক্তব্য
টেলিগ্রামে পোস্ট করা এক ভিডিওতে জেলেনস্কি বুচার চেয়ে বোরোদিয়াংকার পরিস্থিতি আরো খারাপ বলে দাবি করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এখানে পরিস্থিতি আরো খারাপ৷ রুশ দখলদাররা আরো বেশি মানুষকে হতাহত করেছে এখানে৷’’ তবে হতাহতের কোনো সংখ্যা বা সুনির্দিষ্ট প্রমাণ তিনি দাখিল করেননি৷
ছবি: Gleb Garanich/REUTERS
ট্রাইব্যুনালে বিচারের দাবি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ইউক্রেনে রাশিয়ান সেনাদের ভয়ংকর নৃশংসতার জন্য অভিযুক্ত করেছেন৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচারে স্থাপন করা নুরেমবার্গে ট্রাইব্যুনালের মতো একটি ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷
ছবি: Jamie Wiseman/dmg media Licensing/picture alliance
6 ছবি1 | 6
দীর্ঘদিন ধরে এই শহরে লড়াই চলছিল। কার্যত গোটা শহরটিই ধ্বংস হয়ে গেছে রাশিয়ার বোমায়। রোববার সেই শহর প্রায় দখল করে ফেলেছে রাশিয়ার সেনা। কিন্তু ডনবাস অঞ্চলে সেনার সংখ্যা বাড়ালেও তা দখল করা যায়নি বলে জানিয়েছে মার্কিন থিংক ট্যাঙ্ক। জেলেনস্কিও দাবি করেছেন, পূর্ব ইউক্রেনে সর্বশক্তি নিয়ে লড়াই শুরু করেছে রাশিয়া। কিন্তু ডনবাস অঞ্চলে রাশিয়ার সেনা খুব বেশি অগ্রসর হতে পারেনি।
জেলেনস্কির দাবি, রাশিয়া এখন ইউক্রেনে একটি পুতুল সরকার তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। রাশিয়ার কথায় যারা সবকিছু করবে। কিন্তু ইউক্রেনের মানুষ তা হতে দেবে না। বস্তুত, রোববার জার্মান চ্যান্সেলর ওলফ শলৎসের সঙ্গে কথা হয়েছে জেলেনস্কির। রাশিয়া যুদ্ধাপরাধ ঢাকার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন তিনি। এই সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টে ভার্চুয়াল বক্তৃতা দেওয়ার কথা তার। অন্যদিকে অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলরের সোমবার কথা হতে পারে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে।
ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের বক্তব্য
ওয়ার্ল্ড ব্যাংক জানিয়েছে, রাশিয়ার আগ্রাসনের পরে ইউক্রেনের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কার্যত অর্ধেকে পৌঁছে গেছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের হিসেব গত এক মাসে ইউক্রেন ৪৫ শতাংশ অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে। সমস্ত ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। লড়াইয়ের কারণে জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। সব মিলিয়ে এক ভয়াবহ আর্থিক পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ইউক্রেন। মলডোভা, বেলারুশেও এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। এই দেশগুলি ৩০ শতাংশ পর্যন্ত অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের আশঙ্কা।