রাশিয়ার আক্রমণের পর এই প্রথম দেশ ছেড়ে কোথাও গেলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। ট্রিলিয়ন ডলার সাহায্যের আশ্বাস অ্যামেরিকার।
বিজ্ঞাপন
বুধবার ওয়াশিংটন গিয়ে পৌঁছান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। মার্কিন কংগ্রেসকে তিনি একটি ইউক্রেনের পতাকা উপহার দিয়েছেন। যেখানে ফ্রন্টলাইনের সেনাদের সই আছে। মার্কিন কংগ্রেস উঠে দাঁড়িয়ে জেলেনস্কিকে স্বাগত জানিয়েছেন।
বক্তৃতায় একাধিকবার অ্যামেরিকাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জেলেনস্কি। পাশাপাশি বলেছেন, ইউক্রেনকে হারানো সম্ভব নয়। ইউক্রেন সে কথা প্রমাণ করে দিয়েছে। জেলেনস্কির ভাষায়, ''ইউক্রেন কখনো আত্মসমর্পণ করবে না। ইউক্রেন জেগে আছে এবং লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।'' তিনি জানিয়েছেন, মার্কিন কংগ্রেসে বক্তৃতা করতে পেরে তিনি সম্মানিত বোধ করছেন। প্রেসিডেন্টের দাবি, মানসিকভাবে রাশিয়াকে পরাজিত করেছে ইউক্রেন। রাশিয়া পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছে।
ইউক্রেনে যৌন সন্ত্রাসের অভিযোগ তদন্ত
রাশিয়ার দখলমুক্ত করা খেরসনে রুশ সৈন্যদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তদন্ত শুরু হয়েছে৷ ধর্ষণ, গণহত্যা ইত্যাদির মতো সব অভিযোগই অবশ্য ‘বানোয়াট’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে রাশিয়া৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: Anna Voitenko/REUTERS
তদন্তে দেশি-বিদেশি আইনজীবী
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরুর কিছুদিনের মধ্যেই খেরসন দখল করে রাশিয়া৷ নভেম্বরের শুরুর দিকে শহরটি পুনরুদ্ধার করে ইউক্রেন৷রুশ সৈন্যরা চলে যেতেই খেরসনবাসীদের কাছ থেকে আসতে থাকে যৌন সন্ত্রাসসহ নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ৷সম্প্রতি সেসব অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছেন ইউক্রেনের আইনজীবীরা৷ হেগভিত্তিক আন্তর্জাতিক আইনি সংস্থা গ্লোবাল রাইটস কমপ্লায়েন্সের একটি দল এ কাজে সহায়তা করছে তাদের৷
ছবি: Anna Voitenko/REUTERS
অভিযোগের পাহাড়
ইউক্রেনের প্রসিকিউটর জেনারেলের কার্যালয় বলছে, খেরসনের বাসিন্দারা রুশ সৈন্যদের বিরুদ্ধে ৫০ হাজারেরও বেশি অভিযোগ করেছেন৷অভিযোগগুলোর মধ্যে গণহত্যা এবং নানা ধরনের আগ্রাসী আচরণের অভিযোগ অসংখ্য৷ সেরকম অভিযোগগুলোর বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধা আদালত আইসিসি-তেও হতে পারে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের প্রসিকিউটর জেনারেলের কার্যালয়৷ ওপরের ছবিতে খেরসনের একটি ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ঘুরে দেখছেন এক তদন্তকারী৷
ছবি: Anna Voitenko/REUTERS
যেখানে রুশ সৈন্য সেখানেই নিপীড়ন, নির্যাতন!
ইউক্রেনের যৌন সন্ত্রাস সংক্রান্ত অপরাধ বিচারের ইউনিটের সহকারি প্রধান আনা সোসোনস্কার দাবি- রুশ সৈন্যরা খেরসন ছেড়ে না যাওয়া ইউক্রেনীয়দের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন চালিয়েছে৷ রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘‘রাশিয়ার সৈন্যরা যেখানে গিয়েছে সেখানেই যৌন সন্ত্রাস, নির্যাতন, এমনকি হত্যাকাণ্ডও চালিয়েছে৷’’
ছবি: Anna Voitenko/REUTERS
প্রথম শুনানি
সম্প্রতি এক রুশ সৈন্যের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তোলেন এক ইউক্রেনীয় নারী৷ গত জুনে সেই মামলার প্রথম প্রাথমিক শুনানি অনুষ্ঠিত হয়৷ অভিযুক্ত রুশ সৈন্যের অনুপস্থিতিতেই অনুষ্ঠিত হয় শুনানি৷
ছবি: Artur Widak/AA/picture alliance
৭০ জনের জবানবন্দি
ক্রাইমিয়া এবং সেভাস্তোপোল পুলিশের তদন্ত বিভাগের সহকারি প্রধান সেরহি ডোরোশিন জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত ৭০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে৷তাদের অনেকেই বলেছেন, রুশ সৈন্যরা খেরসনে ১০টির মতো ডিটেনশন সেন্টার গড়ে তুলেছিল৷ সেখানে আটকে রেখেই তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়৷
ছবি: Anna Voitenko/REUTERS
রাশিয়ার দাবি
রাশিয়া সব অভিযোগই অস্বীকার করেছে৷ সে দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা (ওপরের ছবি) সব অভিযোগকে ‘বানোয়াট’ বলে উড়িয়েই দিয়েছেন৷ জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে রাশিয়ার সৈন্যদের বিরুদ্ধে সাধারণ নাগরিকদের ওপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগের কথা উঠে এসেছে৷ সে বিষয়ে রয়টার্সকে মারিয়া জাখারোভা বলেন, ‘‘এসব অভিযোগ পুরোপুরি গুজব এবং গুঞ্জননির্ভর৷’’
ছবি: Russian Foreign Ministry/REUTERS
6 ছবি1 | 6
অন্যদিকে, মার্কিন কংগ্রেস জানিয়েছে, ইউক্রেনকে এক দশমিক সাত ট্রিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ দেওয়া হবে। যার মধ্যে ৪৫ বলিয়ন ডলার মূল্যের সামরিক সাহায্য করা হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আগেই জানিয়েছিলেন যে, ইউক্রেনকে প্যাট্রিয়ট মিসাইল দেওয়া হবে। এদিন তিনি ফের একবার সে কথা বলেছেন। এক দশমিক আট পাঁচ বিলিয়ন ডলার খরচ করা হবে প্যাট্রিয়ট দেওয়ার জন্য।
অত্যাধুনিক এই মিসাইল একদিকে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের কাজ করে, অন্যদিকে শত্রুর ঘাঁটিতে আঘাতও করতে পারে। দীর্ঘদিন ধরেই ইউক্রেন এই মিসাইল চাইছিল। জার্মানি এই মিসাইল পোল্যান্ডকে দিতে চাইলেও ইউক্রেনকে দিতে রাজি হয়নি। পরে অবশ্য ন্যাটোর বৈঠকে ইউক্রেনকে এই মিসাইল দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
রাশিয়ায় ইউক্রেনের ড্রোন হামলা যুদ্ধের গতিপথ বদলাবে?
৫ ডিসেম্বর রাশিয়ার দুটি বিমানঘাঁটিতে প্রথমবারের মতো ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন৷ এই হামলা কি যুদ্ধের গতিপথ বদলাবে?
ছবি: MAXAR TECHNOLOGIES/REUTERS
রাশিয়ার বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেনের ড্রোন হামলা
৫ ডিসেম্বর রাশিয়ার এঙ্গেলস ও ডিয়াগিলেভো বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেন ড্রোন হামলা চালিয়েছে৷ দূরবর্তী এলাকায় হামলা চালাতে এই দুটি বিমানঘাঁটি ব্যবহার করে রাশিয়া৷
ছবি: MAXAR TECHNOLOGIES/REUTERS
বিশ্লেষকরা বিস্মিত
দুটি বিমানঘাঁটিরই অবস্থান ক্রেমলিন থেকে দূরে৷ তাই সেখানে ইউক্রেনের হামলা চালানোর ক্ষমতা বিশ্লেষকদের বিস্মিত করেছে৷ জার্মানির বুন্ডেসভেয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রাঙ্ক সাউয়ার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিক্রিয়া না দেখানোর বিষয়টি বিস্ময়কর - এটা হতে পারে যে, রাশিয়ার এত ভেতরে এমন হামলা হতে পারে, সেটা রাশিয়া ভাবেনি৷’’
ছবি: MAXAR/REUTERS
হামলা সম্পর্কে রাশিয়ার বক্তব্য
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, ইউক্রেনের ড্রোনগুলো ভূপতিত করা হয়েছে৷ এবং তাদের টুকরোর আঘাতে দুটি রুশ যুদ্ধবিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ তবে অনলাইনে প্রকাশিত ব্যক্তিগত সার্ভিলেন্স ক্যামেরায় তোলা ভিডিওতে দেখা গেছে, আকাশে কোনো বিস্ফোরণ হয়নি, বরং ভূমিতে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে৷
ছবি: MAXAR TECHNOLOGIES/REUTERS
কোন ড্রোন?
রাশিয়া বলছে, হামলার কাজে ১৯৭০-এর দশকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি পর্যবেক্ষণকারী ড্রোন টিইউ-১৪১ (ছবিতে ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ দেখা যাচ্ছে) ব্যবহার করা হয়েছে৷ তবে কিয়েভের নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্রের বরাতে নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, পাবলিক-প্রাইভেট যৌথ অংশীদারিত্বের আওতায় ইউক্রেনের তৈরি নতুন ড্রোন দিয়ে ঐ হামলা করা হয়েছে৷
ছবি: Zeljko Hladika/PIXSELL/picture alliance
ইউক্রেনের বক্তব্য
ড্রোন তৈরির কর্মসূচি বিষয়ে ইউক্রেন নীরবতা অনুসরণ করছে৷ তবে ৮ ডিসেম্বর ফেসবুক পোস্টে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ জানান, ‘‘অতীতে আমাদের সামরিক বাহিনীর জন্য বছরে এক-দুটি ড্রোন টাইপের অনুমোদন দেয়া হত৷ তবে গত ৩০ দিনে সাতটি নতুন ড্রোন টাইপের অনুমোদন দেয়া হয়েছে৷’’
ছবি: Kai Pfaffenbach/REUTERS
‘প্রতীকী গুরুত্বের চেয়েও বেশি’
রাশিয়ার এত ভেতরে ইউক্রেনের হামলা চালানোর সক্ষমতার বিষয়টি শুধু প্রতীকী অর্থে নয়, তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷ ইউক্রেনের সামরিক বিশেষজ্ঞ ওলেগ কাটকভ বলেন, ‘‘রাশিয়ার এখন তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুনরায় মোতায়েন করতে হবে, কিংবা তাদের যুদ্ধবিমানগুলো আরও দূরে নিয়ে যেতে হবে৷ সেক্ষেত্রে আরও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে হবে, যা খরচ বাড়াবে৷’’
ছবি: Sergei Savostyanov/ITAR/TASS/imago
পশ্চিমা বিশ্বের জন্য সংকেত?
ইউক্রেন অনেকদিন ধরে পশ্চিমের কাছে দূরে হামলা করার অস্ত্র চাইছে৷ যুক্তরাষ্ট্র দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে সক্ষম ‘হাইমার্স’ ব্যবস্থা দিলেও রাশিয়ার ভয়ে সেটির সীমা কমিয়ে দিয়েছে৷ ফলে শুধু রাশিয়া অধিৃকত এলাকায় সেটি ব্যবহার করা যাবে৷ ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেসন্সের উলরিকে ফ্রাঙ্কে মনে করছেন, রাশিয়ায় হামলা চালিয়ে ইউক্রেন পশ্চিমা বিশ্বকে এই সংকেত দিয়েছে যে, তাদের ছাড়াও তারা হামলা করতে সক্ষম৷
ছবি: Roman Koksarov/AP/picture alliance
7 ছবি1 | 7
পূর্ব ইউক্রেনের বাখমুটে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চলছে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার সেনার। সেখানে ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধ করা সেনাদের সই করা একটি জাতীয় পতাকা মার্কিন কংগ্রেসকে এদিন উপহার দিয়েছেন জেলেনস্কি। তিনি বলেছেন, আগামী বছর অ্যামেরিকার সাহায্যে ইউক্রেনের মানুষকে স্বাধীনতা উপহার দেবেন ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট। তার বক্তব্য, ''আমরা এবছরে ক্রিসমাস পালন করবো। হয়তো সব জায়গায় বিদ্যুৎ নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও ক্রিসমাসের আনন্দ থেকে আমাদের কেউ বঞ্চিত করতে পারবে না।''
এদিন জেলেনস্কিকে পাশে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। জেলেনস্কিকে তিনি একটি ১০ পয়েন্টের শান্তি প্রস্তাব দিয়েছেন। কীভাবে ইউক্রেন ঘুরে দাঁড়াবে, সে কথাই বলা আছে সেখানে। বাইডেন বলেছেন, ইউক্রনকে কখনো একা লড়তে হবে না। অ্যামেরিকা সবসময় তার পাশে থাকবে। ভ্লাদিমির পুটিন এই যুদ্ধ টেনে নিয়ে যাচ্ছেন বলে এদিন অভিযোগ করেছেন বাইডেন।
দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অনেকটাই উন্নত হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন জেলেনস্কি। কিন্তু তা কীভাবে সম্ভব হয়েছে, সে কথা বলতে চাননি তিনি।