প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলের পাশাপাশি ৩৩ জন সেনেটরের ভাগ্য নির্ধারিত হচ্ছে অ্যামেরিকায়। প্রথম রূপান্তরকামী সদস্য নির্বাচিত হলেন সারাহ ম্যাকব্রাইড।
বিজ্ঞাপন
গোটা পৃথিবীর চোখ এখন অ্যামেরিকার দিকে। কে হবে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট, ডনাল্ড ট্রাম্প, না কি কমলা হ্যারিস? লড়াই চলছে হাড্ডাহাড্ডি। তবে যিনিই নির্বাচিত হবেন, তার ক্ষমতা নির্ধারিত হবে সেনেট এবং কংগ্রেসে তাদের পক্ষে কত ভোট আছে তার উপরে। অনেক সময়েই দেখা যায়, প্রেসিডেন্ট যে সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন, সেনেট এবং কংগ্রেস তা আটকে দিচ্ছে। ফলে সেনেট এবং কংগ্রেসের নির্বাচন প্রক্রিয়াও গুরুত্বপূর্ণ।
বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের নির্বাচনের পাশাপাশি ভাগ্য নির্ধারিত হচ্ছে হাউস অফ রিপ্রেসেনটেটিভের ৩৩ জন সেনেটরের। এই ৩৩ জন সেনেটরের উপর নির্ভর করবে হাউসে রিপাবলিকানদের পাল্লা ভারী হবে, না কি ডেমোক্র্যাটদের।
প্রাথমিক ভোট গণনার পর একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে। সেনেট এবং কংগ্রেস দুই জায়গাতেই রিপাবলিকানরা ডেমোক্র্যাটদের থেকে অনেকটা এগিয়ে আছে। সেনেটে ডেমোক্র্যাটদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪২। রিপাবলিকানদের সংখ্যা সেখানে ৫১। হাউসে ডেমোক্র্যাটদের সংখ্যা ১৬৩। রিপাবলিকান ১৮৭।
তবে ডেলাওয়্যার রাজ্য থেকে বিপুল ভোট জয়ী হয়ে কংগ্রেসের সদস্য হচ্ছেন প্রথম রূপান্তরকামী ব্যক্তি সারাহ। রাজ্যবাসীকে তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বস্তুত, ডনাল্ড ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারে রূপান্তরকামীদের সরাসরি আক্রমণ করেছিলেন। তারপরেও তার এই জয় নিঃসন্দেহে অ্যামেরিকার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
সেনেটে নির্বাচনের পদ্ধতি
প্রতি দু'বছরে হাউসের মেম্বাররা নির্বাচিত হন। ২০২২ সালে শেষ মধ্যবর্তী নির্বাচন হয়েছিল। সে সময় হাউসে ডেমোক্র্যাটেরা রিপাবলিকানদের থেকে সংখ্যায় সামান্য বেশি ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: যে রাজ্যগুলোর ফলাফল পার্থক্য গড়ে দেবে
কমলা হ্যারিস না ডনাল্ড ট্রাম্প কে হবেন পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট তা নির্ধারিত হতে পারে মুষ্টিমেয় কয়েকটি রাজ্যর ফলাফলে৷ এই রাজ্যগুলো পরিচিত ‘সুইং স্টেট’ নামে৷
ছবি: Mario Tama/Getty Images
সুইং স্টেট কেন গুরুত্বপূর্ণ
যুক্তরাষ্ট্রে মোট ৫০টি রাজ্য৷ প্রতিটির রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যক ইলেক্টোরাল ভোট৷ কোন একটি রাজ্যে যেই প্রার্থী জয়ী হবেন তিনি সবকটি ইলক্টোরাল ভোট পাাবেন৷ ব্যতিক্রম শুধু মেইন ও নেব্রাস্কা৷ বেশিরভাগ রাজ্যেই কে এগিয়ে সেটি সমর্থনের ভিত্তিতে ও জরিপের মাধ্যমে আগেভাবে ধারণা করা যায়৷ কিন্তু কয়েকটি রাজ্য আছে যেগুলোতে অনুমান করা কঠিন৷ ‘সুইং স্টেট’ নামে পরিচিত এই রাজ্যগুলোতেই মনযোগ এখন দুই প্রার্থীর শিবিরের৷
ছবি: Nathan Posner/Anadolu/picture alliance
কোন রাজ্যগুলো
সময়ের সাথে সাথে সুইং স্টেটের পরিবর্তন হয়েছে৷ জনসংখ্যা বা ইস্যুর কারণে ভিন্ন ভিন্ন রাজ্য এমন সুইং স্টেটের তালিকায় ঢুকেছে৷ চলতি বছর গর্ভপাতের অধিকারের মতো অভিন্ন ইস্যুর পাশাপাশি রাজ্যগুলোর নিজস্ব ইস্যুও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে৷ দেখে নিন কোন রাজ্যগুলো এবার ‘সুইং স্টেট’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে৷
ছবি: Paul Sancya/AP/picture alliance
অ্যারিজোনা
মেক্সিকো সীমান্তবর্তী অ্যারিজোনা রাজ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু অনিয়মিত অভিবাসন৷ বাইডেন প্রশাসনে এই সীমান্তের অভিবাসন সংকট সমাধানের দায়িত্ব ছিল ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের কাঁধে৷ অনেকে মনে করেন তিনি তাতে ব্যর্থ হয়েছেন৷ ট্রাম্প এই ব্যাপারে হ্যারিসকে আক্রমণ করার সুযোগ কোনোভাবেই হাতছাড়া করছেন না৷ অ্যারিজোনার ভোটারদের এক তৃতীয়াংশ হিস্পানিক৷ এই রাজ্যে ইলেক্টোরাল ভোট ১১টি৷ গতবার জিতেছিলেন বাইডেন৷
ছবি: Go Nakamura/REUTERS
জর্জিয়া
১৯৯২ সালের পর গত নির্বাচনেই প্রথমবারের মতো কোন ডেমোক্রেট প্রার্থী হিসেবে জর্জিয়ায় জয় পেয়েছিলেন বাইডেন৷ কিন্তু ভোটের ব্যবধান ছিল মাত্র দশমিক দুই শতাংশ৷ এই রাজ্যের ৩৩ শতাংশ ভোটার কৃষ্ণাঙ্গ, যা কমলা হ্যারিসের পক্ষে যেতে পারে৷ ২০২০ সালের নির্বাচনের সময় এই রাজ্যের নির্বাচনের ফল পাল্টানোর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছিল ট্রাম্পের বিরুদ্ধে, যার বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত রয়েছে৷ রাজ্যের ইলেক্টোরাল ভোট ১৬টি৷
ছবি: John Moore/Getty Images
মিশিগান
ফোর্ড, জেনারেল মোটর্স, ক্রাইসলারের মতো গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা মিশিগান৷ গত বছর বাইডেন এই রাজ্যে জিতে অ্যামেরিকার বাজারে চীনের ইলেক্ট্রিক গাড়ি রুখতে বিশাল অঙ্কের করারোপ করেন৷ রাজ্যের ভোটারদের উল্লেখযোগ্য অংশ আরব-অ্যামেরিকান৷ এবার গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষিতে নতুন করে তাদের সমর্থন আদায়ের চ্যালেঞ্জ ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সামনে৷ রাজ্যটির ইলক্টোরাল ভোট ১৫টি৷
ছবি: Scott Olson/Getty Images
নেভাদা
দক্ষিণ সীমান্তবর্তী রাজ্য নেভাদার জন্যেও অভিবাসন গুরুত্বপূর্ণ এক ইস্যু৷ এখানকার জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ হিস্পানিক৷ রাজ্যটি অতিমাত্রায় পর্যটননির্ভর৷ বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার পর অন্য সুইং রাজ্যগুলোর মধ্যে নেভাদার অর্থনীতিই সবচেয়ে বেশি এগিয়েছে৷ একইসাথে সব রাজ্যের মধ্যে নেভাদাতে বেকারত্বের হারও শীর্ষে৷ ২০২০ সালের নির্বাচনে নেভাদায় জয় পেয়েছিলেন বাইডেন৷ ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা ছয়টি৷
সুইং স্টেটের তালিকায় নবীনতম রাজ্য নর্থ ক্যারোলিনা৷ জুলাইতে বাইডেন সরে দাঁড়ানোর আগ পর্যন্ত ট্রাম্প এখানে এগিয়ে ছিলেন৷ হ্যারিস সেই ব্যবধান কমিয়ে আনতে সক্ষম হন৷ গত ১১টি নির্বাচনে এখান থেকে মাত্র একবার জিতেছেন ডেমোক্রেটরা৷ গত তিন দশকে এখানকার জনসংখ্যায় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে৷ শ্বেতাঙ্গদের হার ৭৫ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৬০ শতাংশে৷ ২০২০ সালের নির্বাচনে ১৬ ইলোক্টোরাল ভোটের রাজ্যটিতে জয়ী হয়েছেন ট্রাম্প৷
ছবি: Evan Vucci/AP/dpa/picture alliance
পেনসিলভেনিয়া
অন্য রাজ্যের তুলনায় পেনসিলভেনিয়ায় জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির চাপ বেশি৷ প্রাকৃতিক গ্যাস নিষ্কাশনে ফ্র্যাকিং পদ্ধতি ব্যবহারের পরে টেক্সাসের পর এটি সবচেয়ে বড় উৎপাদনকারী রাজ্যে পরিণত হয়েছে৷ ট্রাম্পের অবস্থান ফ্র্যাকিংয়ের পক্ষে৷ হ্যারিস শুরুতে বিপক্ষে থাকলেও এখন বিকল্প খোলা রাখার পক্ষে৷ ১০ সেপ্টেম্বর এই রাজ্যে বিতর্কে মুখোমুখি হন ট্রাম্প-হ্যারিস৷ ১৯ ইলেক্টোরাল ভোটের রাজ্যটিতে ২০২০ সালে জিতেছেন বাইডেন৷
ছবি: Win McNamee/Getty Images
উইসকনসিন
গত দুইটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়া রাজ্যের মধ্যে অন্যতম ছিল উইসকনসিন৷ প্রতিবারই মাত্র ২৫ হাজারের কম ভোটের ব্যবধানে প্রেসিডেন্ট বেছে নিয়েছেন এখানকার ভোটাররা৷ এখানকার প্রতিটি ভোটই তাই পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷ এই রাজ্যের ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা ১০৷ দশমিক ছয়-তিন শতাংশ ভোটের ব্যবধানে ২০২০ সালের নির্বাচনে জিতেছেন ট্রাম্প৷
ছবি: Kevin Lamarque/REUTERS
9 ছবি1 | 9
মার্কিন সেনেটে প্রতিটি রাজ্য থেকে দুই জন করে প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। রাজ্যের আয়তন যত বড় বা ছোটই হোক না কেন! ১০০ জন সেনেটর ছয় বছরের জন্য নির্বাচিত হন। তবে এই সেনেটরদের মধ্যে আবার তিন রকমের ভাগ থাকে। এক-তৃতীয়াংশ সেনেটরকে দুই বছর পর পর নির্বাচনে লড়তে হয়। এবছর যারা ভোটে লড়ছেন, তারা প্রথম শ্রেণির সেনেটর। ২০১৮ সালে ট্রাম্পের রাজত্বে তারা নির্বাচিত হয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে এই ৩৩ জন সেনেটরেরও নির্বাচন হচ্ছে। এবং তাদের উপর নির্ভর করবে সেনেটে কোন দল শক্তিশালী হবে। ফলাফলের ট্রেন্ড বলছে, সেনেটে রিপাবলিকানদেরই সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকবে।
মার্কিন সংবিধানে সেনেট এবং হাউসের নির্বাচনে এই বৈচিত্র রাখা হয়েছে একটাই কারণে, ক্ষমতা যাতে কেন্দ্রিভূত না হয়। বিরোধীদের শক্তিও যাতে অটুট থাকে হাউসে। বিভিন্ন সময় ছোট ছোট করে এই নির্বাচনগুলি হওয়ার ফলে প্রেসিডেন্ট একচেটিয়া ক্ষমতা ভোগ করতে পারেন না। অনেক সময়েই দেখা যায়, যে দলের প্রেসিডেন্ট তার বিপক্ষ দলের প্রতিনিধিদের সংখ্যা কংগ্রেসে বেশি। আবার সেনেট এবং কংগ্রেসের মধ্যেও এই বৈচিত্র দেখা যায়। ফলে কোনো সিদ্ধান্তই এক তরফা নেওয়া যায় না।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গত চার বছরে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একাধিকবার অস্ত্র আইন সংস্কারের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু হাউসের বিরোধিতায় শেষ পর্যন্ত তা তিনি করতে পারেননি। খেয়াল রাখতে হবে, হাউসে রিপাবলিকানদের প্রতিনিধিত্ব বেশি থাকার কারণেই এই সিদ্ধান্ত পাশ হয়নি। অতীতে এমন আরো অসংখ্য উদাহরণ আছে।
এদিন যে ৩৩টি আসনের ফলাফল জানা যাবে, তার মধ্যে ১৯টি আসন ছিল ডেমোক্র্যাটদের দখলে। চারটি আসন ছিল নির্দল প্রার্থীদের কাছে। এই নির্দল প্রার্থীরা অধিকাংশ সিদ্ধান্তেই ডেমোক্র্যাটদের পাশে ছিলেন। অনেকেই মনে করছেন, এই ১৯টি আসন ডেমোক্র্যাটেরা ধরে নাও রাখতে পারেন। আসন কমতে পারে নির্দল প্রার্থীদেরও। সে ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে পারে রিপাবলিকানরা।