রাশিয়া জানিয়েছে, ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছিল। তার মধ্যে পাঁচটিকেই তারা মাঝপথে ধ্বংস করে দেয়। একটি ক্ষেপণাস্ত্র সামরিক ঘাঁটিতে আছড়ে পড়ে। তার ফলে আগুন লাগে। তবে দ্রুত তা নিভিয়ে দেয়া হয়েছে। কেউ মারা যাননি। কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
ইউক্রেন জানিয়েছে, তারা রাশিয়ার ১১০ কিলোমিটার গভীরে আঘাত হেনেছে। এর ফলে অস্ত্র ঘাঁটিতে বিস্ফোরণ হয়েছে। তারা কী অস্ত্র ব্যবহার করেছিল তা জানায়নি। তবে ইউক্রেন সরকারের সূত্র উল্লেখ করে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, তারা মার্কিন এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্রই ব্যবহার করেছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সূত্রও রয়টার্সকে এই খবর সমর্থন করেছে। সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে পেরেছে। অস্ত্র ও গোলাবারুদের সরবরাহ লাইন বন্ধ করতেই এই হামলা করা হয়েছে।
রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে পশ্চিমা দেশগুলি স্পষ্ট ইঙ্গিত দিলো, তারা এই সংঘাত বাড়াতে চায়।
মস্কো জানিয়েছে, ইউক্রেন থেকে ছোড়া মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ব্রায়ানস্ক অঞ্চলে এসে পড়ে। তাদের দাবি, এই ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্র সক্রিয়ভাবে সাহায্য করেছে। এর ফলে ওয়াশিংটন এই সংঘাতে সরাসরি যুক্ত হয়ে পড়লো। রাশিয়াও এই আক্রমণের উপযুক্ত জবাব দেবে।
ইউক্রেন এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে মঙ্গলবার যুদ্ধের এক হাজার-তম দিনে, যখন তাদের এক পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড রাশিয়া অধিকার করে রেখেছে। ডনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট হওয়ার পর ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে কতটা সাহায্য করবে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম মঙ্গলবার ইউক্রেন থেকে আসা ৪২টি ড্রোন ধ্বংস করেছে। স্থানীয় সময় রাত নয়টা থেকে ১১টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত এই ড্রোন হামলার চেষ্টা চলে। এর মধ্যে ৩২টি ড্রোন ব্রায়ানস্ক অঞ্চলে এসেছিল।
রাশিয়ার কুরস্কে ঢুকে ৭৪টি বসতি তারা দখল করে নিয়েছে বলে দাবি ইউক্রেনের। কী বলছেন কুরস্কের সাধারণ মানুষ?
ছবি: Roman Pilipey/AFP/Getty Images
রাশিয়ার ভূখণ্ডে ইউক্রেনের সেনা
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তারা যুদ্ধটা এবার রাশিয়ার ভূখণ্ডে নিয়ে গেছেন। ইউক্রেন জানিয়েছে, তাদের সেনা ১৩ কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে পড়েছে। ৭৪টি বসতি তাদের অধিকারে আছে। এক সপ্তাহ হলো ইউক্রেনের সেনা কুরস্কে ঢুকেছে। রাশিয়ার দাবি, ইউক্রেনের সেনার অগ্রগতি তারা থামাতে পেরেছে।
ছবি: ROMAN PILIPEY/AFP
'প্রথমে সবাই শান্ত ছিলেন'
কুরস্কের বাসিন্দা মার্গারিটা(আসল নাম জানাতে চাননি) ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''গত শুক্রবার যখন সাইরেন বাজলো, তখন মানুষ শান্ত ছিলেন। তারা নিজেদের কাজ করেছেন, বাজার করেছেন, সবই স্বাভাবিক ছিল। রাস্তায়, পার্কে মানুষ স্বাভাবিকভাবে হাঁটছিলেন। পরে সীমা্ন্ত থেকে খবর এলো, ইউক্রেনের সেনা আক্রমণ করেছে।''
ছবি: AP Photo/picture alliance
টিভি বললো, 'সাময়িক সমস্যা'
গোটা এলাকার জন্য সতর্কবার্তা জারি করা হয়। মার্গারিটা জানিয়েছেন, ''গোটা অঞ্চলকে সতর্ক করা হয়েছিল। আর আমরা এখন সাইরেনে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তাই সাইরেন সত্ত্বেও আমরা খুব একটা চিন্তিত হইনি। পরে আত্মীয়রা জানান, সীমান্তে তীব্র লড়াই চলছে। মানুষ ওই এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।''
ছবি: Ilya Pitalev/Sputnik/IMAGO
'পালাবার জন্য হুড়োহুড়ি'
অ্যান্টোনিনা কুরস্কে থাকেন, আর তার বোন থাকতেন সুদঝাতে। অ্যান্টোনিনা জানিয়েছেন, ''সুদঝা এখন ইউক্রেনের দখলে। তার বোন জুলিয়া বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছেন। ইউক্রেনের আক্রমণের পর মানুষ যেভাবে পেরেছে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।''
ছবি: AP Photo/picture alliance
'সবকিছু ফেলে আসতে হয়েছে'
অ্যান্টোনিনা জানিয়েছেন, তার বোন জুলিয়া এখন আত্মীয়দের কাছে দূরে চলে যেতে পেরেছেন। কিন্তু তিনি ব্যাংক কার্ড-সহ সব ডকুমেন্ট ফেলে এসেছেন। তবে তার সবচেয়ে বেশি চিন্তা পালিত হাঁস, মুরগি ও অন্য পশুদের নিয়ে।
ছবি: AP Photo/picture alliance
অর্থ ও রেশনের প্রতীক্ষায়
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, যাদের বাড়ি থেকে চলে আসতে হয়েছে, তাদের রেশন দেয়া হবে এবং ১০ হাজার রুবল দেয়া হবে। কিছু অসুবিধার জন্য জুলিয়ারা এখনো রেশন পাননি। তারা অপেক্ষা করছেন। অনেকে বলছেন, এই অর্থ দিয়ে এক বা দুই দিনের জন্য খাবার ও ওষুধ কেনা যেতে পারে। ফলে তা যথেষ্ট নয়।
ছবি: AP Photo/picture alliance
প্রতিবেশী এলাকাতেও আশংকা
কুরস্কের প্রতিবেশী বেলগোরোদের নিনা ডিডাব্লিওউকে বলেছেন, তারাও সমানে এয়ার রেইড সাইরেন শুনতে পাচ্ছেন। ডিডাব্লিউর সঙ্গে কথা বলার সময়ও সাইরেন বাজার শব্দ পাওয়া গেলো। নিনা জানিয়েছেন, তারা এখন সাইরেনে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। ইউক্রেন কুরস্কে ঢুকে পড়ার পর এখানে প্রচুর রাশিয়ার সেনা এসেছে।
সুদঝা অঞ্চলে নিখোঁজ মানুষদের নিয়ে সামাজিক মাধ্যম সরগরম। বলা হচ্ছে, ৪০ জন নিখোঁজ। অনেকে আত্মীয়দের নিয়ে আসার জন্য গেছিলেন। তাদের খোঁজ নেই। সামাজিক মাধ্যমে একজন লিখেছেন, ইউক্রেনের সেনা যাতে বিপাকে পড়ে, সেজন্য রাশিয়া গ্রামগুলিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক জায়গায় ফোনে যোগাযোগও করা যাচ্ছে না।
ছবি: Evgeniy Maloletka/AP Photo/picture alliance
'আগাম সতর্কতা ছিল না'
সামাজিক মাধ্যমে মানুষ প্রশ্ন তুলছেন, কেন গোয়েন্দারা ইউক্রেনের আক্রমণের খবর দেয়নি বা দিতে পারেনি? জুলিয়ানা বলেছেন, ''মানুষের আশংকা ছিল, কিন্তু কর্তৃপক্ষ আগাম কোনো সতর্কতা জারি করেনি।'' শ্বেতলানা বলেছেন, ''কোথায় গেল সিক্রেট সার্ভিস? তারা তো মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে?'' স্থানীয় প্রশাসন মানুষকে শান্ত থাকতে বলেছেন।
ছবি: Anatoliy Zhdanov/REUTERS
9 ছবি1 | 9
ইউক্রেন বেশ কিছুদিন ধরেই ড্রোন ব্যবহার করে রাশিয়ার ভিতরে বিশেষ করে সামরিক বিমানঘাঁটি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলিতে আঘাত হানার চেষ্টা করছে। কিন্তু খুব কম সময়ের মধ্যে এতগুলি ড্রোন পাঠানোর ঘটনা সচরাচর ঘটে না।
জেলেনস্কির প্রতিক্রিয়া
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মঙ্গলবারের সাংবাদিক সম্মেলনে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার কথা স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটাই করেননি। তিনি বলেছেন, ''ইউক্রেনের কাছে দূরপাল্লায় গিয়ে আঘাত করার মতো অস্ত্র আছে। ইউক্রেন দূরপাল্লার ড্রোনের উৎপাদনও করছে। আমাদের হাতে নেপচুন ক্ষেপণাস্ত্র আছে। আমাদের হাতে এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্রও আছে। আমরা এই সবগুলিই ব্যবহার করব।''