জঙ্গিগোষ্ঠী তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমর যুক্তরাষ্ট্রের সেনাঘাঁটির কাছেই থাকতেন বলে সম্প্রতি প্রকাশিত এক বইয়ে দাবি করেছেন ডাচ সাংবাদিক বেটে ডাম৷
বিজ্ঞাপন
নিজের লেখা ‘সার্চিং ফর দা এনেমি' বইয়ে তিনি লিখেছেন, আফগানিস্তানের জাবুল অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সেনাঘাঁটির অদূরেই বাস করতেন মোল্লা ওমর৷
দীর্ঘ আট বছরের গবেষণার ফল এই বইয়ে বেটে বলেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রসহ সবাই ভুল ভেবেছিলেন৷ ২০০১ সালের পর থেকে ওমর কখনো পাকিস্তানে যাননি৷ তিনি আট বছর ধরে নিজের দেশ আফগানিস্তানেই ছিলেন, মার্কিন সেনাঘাঁটি থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরে৷''
বেটে আরো জানান, মার্কিন ও আফগান সরকারি সূত্র ও ওমরের ব্যক্তিগত দেহরক্ষীর বয়ানেও তিনি এই তথ্য পেয়েছেন৷
সত্যি, না মিথ্যা এই দাবি?
ডাচ সাংবাদিক বেটে ডামের বই প্রকাশ হবার পর থেকেই আফগান ও মার্কিন মহলে শুরু হয়েছে আলোচনা৷ ডামের দাবিকে গ্রাহ্য করছে না মার্কিন-আফগান কোনো পক্ষই৷
আফগান কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র হারুন চাখানসুরি একটি টুইটে জানান, ‘‘আমরা দৃঢ়ভাবে এই বিভ্রান্তিকর দাবিকে প্রত্যাখ্যান করি৷ এই দাবি আসলে তালেবানকে একটি নির্দিষ্ট পরিচয় দেবার প্রচেষ্টা৷ মোল্লা ওমর যে পাকিস্তানেই থাকত ও সেখানেই মারা গেছে, সেবিষয়ে আমাদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে৷''
মার্কিন ইন্টেলিজেন্স সংস্থা সিআইএ'র প্রাক্তন পরিচালক ডেভিড পেট্রাইউস এক সময় আফগানিস্তানে কর্মরত ছিলেন৷ বেটের এই নতুন দাবি প্রসঙ্গে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হয়না মোল্লা ওমর এত বড় ঝুঁকি কখনো নিত৷''
উল্লেখ্য, বেটে ডাম এই বইতে লিখেছেন যে, দুইবার মার্কিন সেনারা মোল্লা ওমরের খুব কাছে এসেও তাঁকে ধরতে ব্যর্থ হয়৷
এসএস/জেডএইচ (এএফপি, ডিপিএ)
তালেবান: যাদের কারণে চাপের মুখে পাকিস্তান
ট্রাম্পের টুইটের পর হোয়াইট হাউস স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, পাকিস্তানকে সামরিক সহায়তা বন্ধ করার অন্যতম কারণ, পাকিস্তান তালেবান জঙ্গিদের সাহায্য করছে৷ কিন্তু কেন? পাকিস্তানের রাজনীতির সঙ্গে তালেবানের সম্পর্কই বা কী?
ছবি: Majid Saeedi
গোড়ার কথা
১৯৭৮ থেকে ’৯২ সালের মধ্যবর্তী সময়ে আফগানিস্তানে ব্যাপক অভিযান চালিয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন৷ পাশতুন জনজাতির যোদ্ধারা সে সময় রাশিযার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল৷ পরবর্তীকালে তারাই তালেবান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে৷ রাশিয়াকে ঠেকাতে সেই সময় পাকিস্তান এবং অ্যামেরিকা তালেবানকে সাহায্য করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP/A. Khan
গৃহযুদ্ধ এবং তালেবান
১৯৯২ থেকে ’৯৬ সালের মধ্যবর্তী সময়ে আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হয়৷ সেই সময় তালেবান ত্রমতার কাছাকাছি পৌঁছে যায়৷ অভিযোগ, তালেবানদের সেই উত্থানেও পাকিস্তান সাহায্য করেছিল৷ বস্তুত, বিস্তীর্ণ আফগানিস্তান জুড়ে তালেবান যে সরকার গঠন করেছিল, কেবল পাকিস্তান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত তাদের স্বীকৃতি দিয়েছিল৷ বিশ্বের অন্য কোনও দেশ তালেবান সরকারকে সমর্থন দেয়নি৷
ছবি: Majid Saeedi
৯/১১ এবং মার্কিন সৈন্য
নিউ ইয়র্কের টুইন টাওয়ারে আল কায়দা হামলা চালানোর পর অ্যামেরিকা আল কায়দা এবং তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে৷ আফগানিস্তানে পৌঁছায় মার্কিন সৈন্য৷ আফগানিস্তানের হামিদ কারজাই সরকারকে সমর্থন জানায় অ্যামেরিকা এবং ন্যাটো বাহিনী৷ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সৈন্যরাও ন্যাটোর ছত্রছায়ায় তালেবানবিরোধী লড়াইয়ে শামিল হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পাকিস্তানের লাভ
বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের প্রথম এবং প্রধান শত্রু আফগান তালেবান নয়, ভারত৷ এ কারণে ভারতের বিরুদ্ধে ‘প্রক্সি’ যুদ্ধ চালানোর জন্য তালেবান জঙ্গিদের পাকিস্তানের প্রয়োজন৷ ভারত বহুবার অভিযোগ করেছে যে, সীমান্তে আটক করা জঙ্গিদের সঙ্গে তালিবান যোগ আছে৷ তালিবান পাকিস্তানেই প্রশিক্ষণ নেয় বলেও অভিযোগ করে আসছে ভারত৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Shirzad
অন্য কূটনীতি
কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের মতে, মার্কিন সৈন্য আফগানিস্তান ছাড়লে আফগানিস্তানের মৌলবাদী সংগঠনগুলির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলে পাকিস্তানকে পশ্চিমের সীমান্ত নিয়ে ভুগতে হতে পারে৷ তাই তালেবান প্রশ্নে ‘কৌশলগত’ অবস্থান নিতে হয় পাকিস্তানকে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Naveed
পাকিস্তানেও তালেবান হামলা
গত এক দশকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা নষ্ট করতে একের পর এক আক্রমণ চালিয়েছে জঙ্গিরা৷ পাঁচ তারা হোটেল থেকে ভলিবল স্টেডিয়াম, বাজার থেকে সামরিক ঘাঁটি সর্বত্রই হামলা হয়েছে৷ বারবারই আঙুল উঠেছে তালেবানের দিকে৷ অভিযোগ, এতৎসত্ত্বেও পাকিস্তান তালিবানের প্রতি নরম থেকেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Ali
মার্কিন হুমকি
ভারতসহ বেশ কিছু দেশ বার বার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলেছে৷ এতদিনে অ্যামেরিকা সে অভিযোগে শিলমোহর দিল৷ ডোনাল্ড ট্রাম্পের টুইটের পর হোয়াইট হাউস জানিয়ে দিলো যে, পাকিস্তানকে তারা আর কোনও সামরিক সহায়তা দেবে না, কারণ, সন্ত্রাস প্রশ্নে পাকিস্তানের ভূমিকা স্পষ্ট নয়৷