অ্যামেরিকা এবং ডেনমার্কের কাছে জবাব চাইলেন জার্মানি এবং ফ্রান্সের রাষ্ট্রপ্রধানরা। সরব স্ক্যানডেনেভিয়ার নেতারাও।
বিজ্ঞাপন
মার্কিন চরবৃত্তি নিয়ে এবার সরব হলেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল এবং এমানুয়েল মাক্রোঁ। সোমবার জার্মান চ্যান্সেলরের সঙ্গে কথা হয়েছে ফরাসি প্রেসিডেন্টের। তারপরেই গোটা ঘটনার জন্য অ্যামেরিকা এবং ডেনমার্কের কাছে উত্তর চেয়েছেন মাঁক্রো। ম্যার্কেল জানিয়েছেন, তিনি ফরাসি প্রেসিডেন্টের বক্তব্যকে সমর্থন করেন। তবে, কূটনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, ম্যার্কেলের প্রতিক্রিয়া খানিকটা নরম।
কে কার উপর গোয়েন্দাগিরি চালাচ্ছে?
চ্যান্সেলর ম্যার্কেল-এর ফোনে এনএসএ-র আড়ি পাতার অভিযোগ নিয়ে জার্মানি উত্তাল হয়ে উঠেছিল৷ এবারের অভিযোগ, জার্মান গোয়েন্দা সংস্থা নাকি এনএসএ-র অনুরোধে ফ্রান্স, ইইউ সহ ইউরোপীয় নেতাদের উপর নজরদারি চালিয়েছে৷ এর পরিণাম কী হবে?
ছবি: imago
সর্বগ্রাসী ক্ষুধা
নাইন-ইলেভেনের পর থেকে এনএসএ সহ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা নিয়ে দেশে-বিদেশে বিতর্কের শেষ নেই৷ অভিযোগ উঠছে, খোদ অ্যামেরিকার আইনও তোয়াক্কা করে না এনএসএ৷ তাদের বিদেশি সহযোগীরাও আইন ও নিয়ন্ত্রণের ঊর্ধ্বে উঠে বে-আইনি কার্যকলাপ চালাচ্ছে বলে বার বার শোনা যাচ্ছে৷ ব্যক্তি, রাজনীতিক, কোম্পানি সংক্রান্ত সব তথ্যের রাক্ষুসে ক্ষুধার যেন শেষ নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘বন্ধুদের মধ্যে এ সব চলে না’
মোবাইল-কেলেঙ্কারির জের ধরে ক্ষুব্ধ ম্যার্কেল এমন মন্তব্য করেছিলেন৷ ফলে অ্যামেরিকার উপর আস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল৷ এখন যদি প্রমাণিত হয় যে, খোদ জার্মানির বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএনডি ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদ-এর উপর নজরদারি চালিয়েছে – তাও আবার সেই অ্যামেরিকার এনএসএ-র অনুরোধে, তখন ম্যার্কেল কীভাবে মুখ দেখাবেন?
ছবি: Reuters/Y. Herman
শুধুই রাজনীতি, নাকি ব্যবসা?
শিল্প প্রতিষ্ঠানের উপর নজরদারির কী কারণ থাকতে পারে? তাদের সাফল্যের ফর্মুলা চুরি করা? এয়ারবাস প্রস্তুতকারক সংস্থা ইএডিএস এই সন্দেহের বশে পুলিশের কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানিয়েছে – তবে সরাসরি এনএসএ-র বিরুদ্ধে নয়৷ মনে রাখতে হবে, শুধু যাত্রীবাহী বিমান নয়, প্রতিরক্ষা সরঞ্জামও তৈরি করে ফ্রান্স ও জার্মানির এই কোম্পানি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
ক্ষুব্ধ ইউরোপ
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লোদ ইয়ুংকার তাঁর দপ্তরের উপর এনএসএ ও বিএনডি-র গোয়েন্দাগিরির অভিযোগে অত্যন্ত বিচলিত৷ তবে কূটনৈতিক শিষ্টাচারের কাঠামোর মধ্যে থেকে তিনি বলেছেন, জার্মান কর্তৃপক্ষ ও সংসদকে এর তদন্ত করে সত্য ঘটনা প্রকাশ্যে আনতে হবে৷
ছবি: Reuters/E. Vidal
কেঁচো খুঁড়তে সাপ
এনএসএ কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আনতে মূল ভূমিকা রেখেছিলেন এডওয়ার্ড স্নোডেন৷ রাশিয়ায় নির্বাসিত এই ‘হুইসেলব্লোয়ার’-কে জার্মানিতে এনে সংসদ সদস্যদের প্রশ্নের জবাব পাবার চেষ্টা করেছিলেন সবুজ দলের সদস্য হান্স ক্লিস্টিয়ান স্ট্র্যোবেলে৷ সে যাত্রায় ফল হয়নি৷ ওয়াশিংটন-কে চটাতে সাহস পায়নি অনেক মহল৷ এবারের কেলেঙ্কারির পর সেই আপত্তি ধোপে টিকবে কিনা, বলা কঠিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কোণঠাসা ম্যার্কেল প্রশাসন
এনএসএ-বিএনডি কেলেঙ্কারির ক্ষেত্রে আঙ্গেলা ম্যার্কেল-এর আস্থার পাত্র বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টোমাস দেমেজিয়ের-এর ভূমিকা নিয়ে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উঠছে৷ চ্যান্সেলর-এর দপ্তরের প্রধান হিসেবে তিনি এ বিষয়ে কতটা জানতেন, কোন তথ্য গোপন করেছেন এবং সংসদে প্রশ্নের মুখে মিথ্যা কথা বলেছেন কিনা, তা জানতে চাপ বেড়েই চলেছে৷ শেষ পর্যন্ত তিনি সহ অনেকেরই গদি নিয়ে টানাটানি হতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Hase
6 ছবি1 | 6
রোববার বিস্ফোরক তথ্য সামনে এনেছিল ইউরোপের একাধিক গণমাধ্যম। বলা হয়েছিল, ২০১২ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এনএসএ জার্মানি সহ একাধিক ইউরোপীয় নেতার উপর চরবৃত্তি করেছিল। এ কাজে তারা সাহায্যে নিয়েছিল ডেনমার্কের গুপ্তচর সংস্থা এফই-র। গুপ্তচর সংস্থার এক সূত্রই গোটা বিষয়টির তথ্য ইউরোপের কয়েকটি গণমাধ্যমের হাতে তুলে দেয়। এরপর অনুসন্ধান করে বিস্ফোরক তথ্য সামনে নিয়ে আসে গণমাধ্যমগুলি।
তথ্য সামনে আসতেই রীতিমতো আলোড়ন পড়ে যায়। সোমবার সকাল পর্যন্ত মন্তব্য করেননি জার্মান চ্যান্সেলর। পরে মাঁক্রোর সঙ্গে কথা হওয়ার পরে তিনি মুখ খোলেন। দ্রুত এর উত্তর চেয়েছেন তিনি। মাঁক্রোর বক্তব্য, অ্যামেরিকার সঙ্গে ইউরোপের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ। তা সত্ত্বেও অ্যামেরিকা এ কাজ কেন করল, তার জবাব দিতে হবে। অন্যদিকে, ডেনমার্ক ইউরোপের রাষ্ট্র। বন্ধু প্রতিবেশী। ফলে তাদেরকেও উত্তর দিতে হবে, কেন অ্যামেরিকাকে গুপ্তচরবৃত্তিতে সাহায্য করা হলো। যদিও বিষয়টি নিয়ে আগেই পদক্ষেপ নিয়েছিল ডেনমার্ক। ২০২০ সালে তৎকালীন গুপ্তচর সংস্থার কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু কেন সরানো হচ্ছে, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
স্নোডেনও টুইট করে জানিয়েছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউরোপে গেলেই তাঁকে এই প্রশ্নের সামনে দাঁড়াতে হবে। গোটা ঘটনার সঙ্গে বাইডেনও যুক্ত ছিলেন বলে তার অভিযোগ।
শুধু জার্মানি এবং ফ্রান্স নয়, স্ক্যানডেনেভিয়ার দেশগুলিও বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সুইডেন এবং নরওয়ের রাষ্ট্রপ্রধানরাও বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে। ডেনমার্কের কাছে জবাব চেয়েছে তারাও। সকলেরই বক্তব্য, প্রতিবেশী রাষ্ট্র হয়ে ডেনমার্ক কীভাবে এ কাজ করল? ডেনমার্ক অবশ্য এ বিষয়ে মুখ খোলেনি।