জার্মানিতে ড্রোন বিতর্ক
৩ জুন ২০১৩![HANDOUT - A U.S. Air Force MQ-1 Predator unmanned aerial vehicle assigned to the California Air National Guard's 163rd Reconnaissance Wing flies near the Southern California Logistics Airport in Victorville, Calif., Jan. 7, 2012. (U.S. Air Force photo by Tech. Sgt. Effrain Lopez/Released (zu dpa Obama erlässt strenge Richtlinien für Drohnenschläge) +++(c) dpa - Bildfunk+++](https://static.dw.com/image/16833445_800.webp)
ড্রোন হামলার অনেক সুবিধা আছে: আক্রমণকারী নিজেকে পুরোপুরি নিরাপদ স্থানে রেখেই আক্রমণ পরিচালনা করতে পারেন৷ মনুষ্যবিহীন ড্রোন বিমানগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হয় অনেক দূরে বসে৷ ফলে শত্রুপক্ষ আর আক্রমণকারী সৈনিকের দূরত্ব হয় কয়েক হাজার কিলোমিটার৷ ১১ সেপ্টেম্বর পরবর্তী সময়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আফগানিস্তান এবং অন্যান্য অঞ্চলে মার্কিন বাহিনীর যুদ্ধে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখছে এই ড্রোন৷ তবে এসবের ব্যবহার নৈতিক এবং আইনি দিক থেকে বিতর্কিত৷
জার্মান টেলিভিশন অনুষ্ঠান ‘পানোরমা' এবং দৈনিক পত্রিকা ‘স্যুডডয়চে সাইটুং' এ প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, মার্কিন বাহিনী হামলা এবং পূর্বপরিকল্পতি হত্যাকাণ্ড পরিচালনায় তাদের জার্মান ঘাঁটিগুলো ব্যবহার করছে৷ বিশেষ করে স্টুটগার্টে অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আফ্রিকা কম্যান্ড (আফ্রিকম) এবং রামস্টাইনে অবস্থিত মার্কিন বিমান ঘাঁটি ড্রোন হামলা পরিচালনায় বিশেষ ভূমিকা রাখছে৷
আফ্রিকম আফ্রিকায় সব ধরনের মার্কিন মিশন জার্মানিতে বসে নিয়ন্ত্রণ করে৷ এই বিষয়টি মাথায় রেখে, জার্মান গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দাবি করছে, এটা ধারণা করা নিরাপদ যে, আফ্রিকায় ড্রোনের ব্যবহারও সমন্বয় করা হয় এখান থেকে৷ বিশেষ করে সোমালিয়ায় সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের হত্যায় ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে৷ লন্ডনভিত্তিক ‘ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম' এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ সাল থেকে এখন অবধি সোমালিয়ায় ড্রোন হামলায় প্রাণ হারিয়েছে ২৭ জনের বেশি মানুষ, যাদের মধ্যে নিরীহ কয়েকজন রয়েছেন৷
রামস্টাইন কি গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি?
আফ্রিকায় অবস্থানরত ড্রোনগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত নিয়ন্ত্রক সেনাদের যোগাযোগ মূলত রামস্টাইনে অবস্থিত স্যাটেলাইট স্থাপনার উপর নির্ভরশীল৷ গণমাধ্যমে প্রকাশিত মার্কিন বিমান বাহিনীর নথি অনুযায়ী, এই স্থাপনার সহায়তা ছাড়া আফ্রিকায় ড্রোন হামলা পরিচালনা সম্ভব নয়৷ কেন্দ্রীয় আকাশ এবং মহাকাশ অপারেশন সেন্টার বা এওসি'র অবস্থানও রামস্টাইনে৷
মার্কিন ড্রোনগুলো অবশ্য জার্মানিতে অবস্থান করছে না৷ আফ্রিকা মিশনের জন্য এসব ড্রোনের অবস্থান জিবুতি, নাইজার, ইথিওপিয়া এবং সেশেলস৷ তবে এসব ড্রোন নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি এবং ব্যক্তির অবস্থান জার্মানিতে বলেই দাবি গণমাধ্যমের৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপিয়ান কমান্ডের মুখপাত্র মেজর রায়ান ডোনাল্ড ডয়চে ভেলের এক প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছেন, এওসি উড়ালের তত্ত্বাবধানে থাকে, কিন্তু কোন বায়ুবাহিত বস্তু সরাসরি পরিচালনা করে না৷
আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন
অধিকাংশ বিশেষজ্ঞই মনে করেন, সোমালিয়াসহ যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে ড্রোনের ব্যবহার আন্তর্জাতিক আইনে গ্রহণযোগ্য নয়৷ পানোরমার প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক আইন অ্যাক্টিভিস্ট টিলো মারাউন বলেছেন, যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে ড্রোন হামলার মাধ্যমে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীকে হত্যার বিষয়ে জার্মান সরকার জেনেও প্রতিবাদ না করে থাকলে সেটি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হতে পারে৷
জার্মানির বিরোধী দল সরকারের কাছে এই বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা চেয়েছে৷ বাম দলের সংসদীয় প্রতিরক্ষা কমিটির সদস্য পাউল শেফার এই বিষয়ে বলেন, ‘‘জার্মান সরকারকে এই বিষয়টির সুরাহা করতে হবে৷ অন্যথায় জার্মান সরকার আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অংশ হওয়ার যে সন্দেহ তৈরি হয়েছে, তা থেকে যাবে৷ ফলে বিষয়টি এভাবে ফেলে রাখা যায়না৷''
সেনা সংবিধির দিকেও তাকাতে হবে
অবশ্য জার্মানিতে মার্কিন সেনাদের উপস্থিতি এবং তাদের কর্মকাণ্ড বিষয়ে এই মুহূর্তে খুব বেশি কিছু করাও সম্ভবত সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়৷ কেননা, একটি সংবিধি অনুযায়ী মার্কিন সেনারা এই দেশে অবস্থান করছে৷ শেফার বলেন, ‘‘সেনা সংবিধি নিয়ে আমাদের নতুন করে সমঝোতা প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে৷ আমি আশঙ্কা করছি, বর্তমানে এই বিষয়ে (ড্রোন) জার্মানির হস্তক্ষেপের ক্ষমতা সীমিত৷ আইনে দিক থেকে আমাদের ঘাটতি রয়েছে৷''
জার্মান সরকারের মুখপাত্র স্টেফেন সাইবার্ট মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক সংলাপের বরাতে বার্লিনে জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের কোন আলামত তারা পাননি৷
‘‘জার্মান সরকারের পক্ষ থেকে আমি গণমাধ্যমের দাবি নিশ্চিত করতে পারছি না'', বলেন সাইবার্ট৷
লঙ্ঘন দেখছেন না কেরি
সম্প্রতি ওয়াশিংটনে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডো ভেস্টারভেলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময়ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করতে রাজি হননি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি অপারশেনের বিষয়ে বিস্তারিত এখানে জানাতে চাই না৷ আমাদের কর্মকাণ্ড বৈধ৷ আমরা ১১ সেপ্টেম্বর আক্রান্ত হয়েছিলাম৷ তাই চূড়ান্ত বিবেচনায়, এটা আত্মরক্ষা৷''
জার্মান সরকার সম্ভবত জার্মানিতে অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে উন্মুক্ত আলোচনায় আগ্রহী নয়৷ স্টু্টগার্টে যখন আফ্রোকমের ঘাঁটি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তখন জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কিন সরকারকে - পানোরমায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী - লিখেছিলেন, আফ্রোকমের নতুন ঠিকানা হিসেবে জার্মানির নাম যেন প্রকাশ্যে নেওয়া না হয়, কেননা এর ফলে ‘অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক' সৃষ্টি হবে৷