কৃষ্ণসাগর এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে। দুই দেশই একে অপরের দিকে আঙুল তুলেছে।
ছবি: Aamir Qureshi/AFP via Getty Images
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার কৃষ্ণসাগরের উপর অ্যামেরিকার একটি ড্রোনে আক্রমণ চালিয়েছে রাশিয়ার যুদ্ধবিমান। রাশিয়ার দাবি, ড্রোনটি কৃষ্ণসাগর থেকে আচমকা মুখ ঘুরিয়ে রাশিয়ার আকাশসীমার মধ্যে ঢোকার চেষ্টা করছিল। তখনই রাশিয়া যুদ্ধবিমান নিয়ে ড্রোনটির পাশে যায়। ড্রোনটিকে সরানোর চেষ্টা করে এবং শেষ পর্যন্ত ড্রোনটির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। রাশিয়ার অভিযোগ, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে অ্যামেরিকার এই কাজ উস্কানিমূলক।
অ্যামেরিকা অবশ্য রাশিয়ার অভিযোগ মানতে নারাজ। তাদের বক্তব্য, তাদের ড্রোনটি আন্তর্জাতিক আকাশসীমায় রুটিন পরিক্রমা করছিল। আচমকাই রাশিয়ার দুইটি যুদ্ধবিমান তার পাশে আসে এবং ড্রোনটিকে ধ্বংস করা হয়। ড্রোন ধ্বংসের আগে তার উপর বিপুল পরিমাণ তেল ঢালা হয় বলে অভিযোগ। অ্যামেরিকার দাবি, মাঝ আকাশে এভাবে তেল ঢেলে পরিবেশরও বিপুল ক্ষতি করেছে রাশিয়া। অ্যামেরিকার বক্তব্য, উস্কানি বা প্ররোচনার কোনো জায়গাই নেই, রুটিন টহল দিচ্ছিল ড্রোনটি।
রাশিয়ায় ইউক্রেনের ড্রোন হামলা যুদ্ধের গতিপথ বদলাবে?
৫ ডিসেম্বর রাশিয়ার দুটি বিমানঘাঁটিতে প্রথমবারের মতো ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন৷ এই হামলা কি যুদ্ধের গতিপথ বদলাবে?
ছবি: MAXAR TECHNOLOGIES/REUTERS
রাশিয়ার বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেনের ড্রোন হামলা
৫ ডিসেম্বর রাশিয়ার এঙ্গেলস ও ডিয়াগিলেভো বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেন ড্রোন হামলা চালিয়েছে৷ দূরবর্তী এলাকায় হামলা চালাতে এই দুটি বিমানঘাঁটি ব্যবহার করে রাশিয়া৷
ছবি: MAXAR TECHNOLOGIES/REUTERS
বিশ্লেষকরা বিস্মিত
দুটি বিমানঘাঁটিরই অবস্থান ক্রেমলিন থেকে দূরে৷ তাই সেখানে ইউক্রেনের হামলা চালানোর ক্ষমতা বিশ্লেষকদের বিস্মিত করেছে৷ জার্মানির বুন্ডেসভেয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রাঙ্ক সাউয়ার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিক্রিয়া না দেখানোর বিষয়টি বিস্ময়কর - এটা হতে পারে যে, রাশিয়ার এত ভেতরে এমন হামলা হতে পারে, সেটা রাশিয়া ভাবেনি৷’’
ছবি: MAXAR/REUTERS
হামলা সম্পর্কে রাশিয়ার বক্তব্য
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, ইউক্রেনের ড্রোনগুলো ভূপতিত করা হয়েছে৷ এবং তাদের টুকরোর আঘাতে দুটি রুশ যুদ্ধবিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ তবে অনলাইনে প্রকাশিত ব্যক্তিগত সার্ভিলেন্স ক্যামেরায় তোলা ভিডিওতে দেখা গেছে, আকাশে কোনো বিস্ফোরণ হয়নি, বরং ভূমিতে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে৷
ছবি: MAXAR TECHNOLOGIES/REUTERS
কোন ড্রোন?
রাশিয়া বলছে, হামলার কাজে ১৯৭০-এর দশকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি পর্যবেক্ষণকারী ড্রোন টিইউ-১৪১ (ছবিতে ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ দেখা যাচ্ছে) ব্যবহার করা হয়েছে৷ তবে কিয়েভের নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্রের বরাতে নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, পাবলিক-প্রাইভেট যৌথ অংশীদারিত্বের আওতায় ইউক্রেনের তৈরি নতুন ড্রোন দিয়ে ঐ হামলা করা হয়েছে৷
ছবি: Zeljko Hladika/PIXSELL/picture alliance
ইউক্রেনের বক্তব্য
ড্রোন তৈরির কর্মসূচি বিষয়ে ইউক্রেন নীরবতা অনুসরণ করছে৷ তবে ৮ ডিসেম্বর ফেসবুক পোস্টে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ জানান, ‘‘অতীতে আমাদের সামরিক বাহিনীর জন্য বছরে এক-দুটি ড্রোন টাইপের অনুমোদন দেয়া হত৷ তবে গত ৩০ দিনে সাতটি নতুন ড্রোন টাইপের অনুমোদন দেয়া হয়েছে৷’’
ছবি: Kai Pfaffenbach/REUTERS
‘প্রতীকী গুরুত্বের চেয়েও বেশি’
রাশিয়ার এত ভেতরে ইউক্রেনের হামলা চালানোর সক্ষমতার বিষয়টি শুধু প্রতীকী অর্থে নয়, তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷ ইউক্রেনের সামরিক বিশেষজ্ঞ ওলেগ কাটকভ বলেন, ‘‘রাশিয়ার এখন তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুনরায় মোতায়েন করতে হবে, কিংবা তাদের যুদ্ধবিমানগুলো আরও দূরে নিয়ে যেতে হবে৷ সেক্ষেত্রে আরও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করতে হবে, যা খরচ বাড়াবে৷’’
ছবি: Sergei Savostyanov/ITAR/TASS/imago
পশ্চিমা বিশ্বের জন্য সংকেত?
ইউক্রেন অনেকদিন ধরে পশ্চিমের কাছে দূরে হামলা করার অস্ত্র চাইছে৷ যুক্তরাষ্ট্র দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে সক্ষম ‘হাইমার্স’ ব্যবস্থা দিলেও রাশিয়ার ভয়ে সেটির সীমা কমিয়ে দিয়েছে৷ ফলে শুধু রাশিয়া অধিৃকত এলাকায় সেটি ব্যবহার করা যাবে৷ ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেসন্সের উলরিকে ফ্রাঙ্কে মনে করছেন, রাশিয়ায় হামলা চালিয়ে ইউক্রেন পশ্চিমা বিশ্বকে এই সংকেত দিয়েছে যে, তাদের ছাড়াও তারা হামলা করতে সক্ষম৷
ছবি: Roman Koksarov/AP/picture alliance
7 ছবি1 | 7
রাশিয়ার পাল্টা প্রশ্ন, রুটিন টহল হলে ড্রোনের ট্রান্সপনডার বন্ধ করা ছিল কেন? ট্রান্সপনডার বন্ধ থাকলে তা ট্র্যাক করা যায় না। যোগাযোগও করা সম্ভব হয় না।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ইউক্রেন যুদ্ধের পরিস্থিতে অ্যামেরিকা-রাশিয়ার এই সরাসরি সংঘাত পরিস্থিতি আরো জটিল করতে পারে। বস্তুত, ঘটনার পর রুশ রাষ্ট্রদূতকে তলব করে অ্যামেরিকা।