নির্বাচন নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু আদালত কি হস্তক্ষেপ করতে পারে? রয়েছে নানা প্রশ্ন।
বিজ্ঞাপন
অ্যামেরিকার নির্বাচন ইতিহাসে সব চেয়ে বড় কারচুপির ঘটনা ঘটেছে এ বার। বুধবার এ ভাবেই ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ব্যাখ্যা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তিনটি রাজ্যে ভোট গণনা বন্ধ করার দাবি নিয়ে আদালতেও পৌঁছে গিয়েছেন তিনি। কিন্তু এ ভাবে কি মার্কিন নির্বাচনে আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারে? আদালত কি আদৌ এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে? শুধু অ্যামেরিকা নয়, গোটা বিশ্বেই সে প্রশ্ন ঘুরছে।
মার্কিন আইন বিশেষজ্ঞদের একটি বড় অংশ বলছে, আদালত এ ভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের নির্দিষ্ট কিছু বিষয় নিয়ে আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারে এবং নির্দেশ পারে। যেমন ঘটেছিল ২০০০ সালে। সে বছর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন রিপাবলিকান প্রার্থী জর্জ ডাব্লিউ বুশ এবং ডেমোক্র্যাট প্রার্থী আল গোর। সে বছর মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট বুশের নতুন করে ভোট গণনার আবেদনে সাড়া দিয়েছিল এবং পুনর্গণনার আদেশ দিয়েছিল। বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, সে বছর বুশের দাবি স্পষ্ট এবং নির্দিষ্ট ছিল। যে পরিস্থিতির মধ্যে ভোট পুনর্গণনার আবেদন জানানো হয়েছিল, তারও একটি নির্দিষ্ট ভিত্তি ছিল। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ট্রাম্পের আবেদনের কোনো ভিত্তি নেই। যে ভাবে তিনি পোস্টাল ব্যালটের বিরোধিতা করছেন, আইনের দিক থেকে তার কোনো ভিত্তি নেই। মিশিগান, পেনসিলভানিয়া নিয়ে আদালতে ট্রাম্প যে অভিযোগ করেছেন, তা স্পষ্ট নয়। ফলে শেষ পর্যন্ত আদালত তাতে হস্তক্ষেপ করবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নড়বড়ে চার বছর
২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে থেকেই নানা কারণে বিতর্কিত ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরও বিতর্ক তার পিছু ছাড়েনি৷ বরং নিত্য নতুন বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি৷
ছবি: Nicholas Kamm/AFP
প্রেসিডেন্সির প্রথম দিনেই নারীদের প্রতিবাদ
ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন ২০১৭ সালের ২১ জানুয়ারি৷ আর সেদিনই মার্কিন রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অনেক নারী ট্রাম্পের যৌন কেলেঙ্কারির ইস্যুতে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন৷ তার বিরুদ্ধে অন্তত ২৬ নারী যৌন নিগ্রহের অভিযোগ এনেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. L. Magana
সৌদি আরবে প্রথম সফর
মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রথম বিদেশ সফর ছিল সৌদি আরবে৷ ২০১৭ সালের মে মাসে রিয়াদ সামিটে অংশ নেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোয়াপারেশন (ওআইসি) এর প্রতিনিধিরা৷ সেই সামিট অবশ্য তুরষ্ক এবং ইরান বয়কট করেছিল৷
ছবি: Balkis Press/ABACA/picture alliance
পর্ন তারকার সাথে ‘সমঝোতা’
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এক প্রতিবেদনে জানায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক আগে আগে ট্রাম্পের আইনজীবী মাইকেল কোয়েন পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে এক লাখ ত্রিশহাজার মার্কিন ডলারের বিনিময়ে সমঝোতা করেছিলেন৷ সেই তারকার সঙ্গে ট্রাম্পের পরকীয়া সম্পর্ক ছিল বলে দাবি পত্রিকাটির৷
ছবি: Getty Images/E. Miller
গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবারের সদস্যরা
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে তার পরিবারের সদস্যদের নিয়োগ দেন৷ তাদের মধ্যে অন্যতম ট্রাম্প কন্যা ইভান্কা ট্রাম্প, যিনি প্রেসিডেন্টের একজন উপদেষ্টা৷
ছবি: Evan Vucci/dpa/AP
শরণার্থীদের প্রতি ‘জিরো টলারেন্স’
ট্রাম্প আশ্রয়প্রার্থীদের উপর অত্যন্ত কঠোর নীতি আরোপ করেন এবং দেশটির দক্ষিণের সীমান্ত থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের ফিরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷ শুধু তাই নয় অনেক অভিবাসী পরিবারের শিশুদেরকে জোর করে বাবামায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করেন তিনি৷ তার এই নীতির সমালোচনা করেছেন অনেকে৷
ছবি: Saul Loeb/Getty Images/AFP
রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক
মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ সবচেয়ে আলোচিত ছিল তার মধ্যে অন্যতম রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক৷ অনেকেই মনে করেন ২০১৬ সালের নির্বাচনে জিততে ট্রাম্পকে সহায়তা করেছিল রাশিয়া৷ যদিও এই অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি, তবে গত চারবছর রাশিয়ার সঙ্গে মার্কিন সম্পর্ক বেশ দোদুল্যমান ছিল৷
ছবি: Looks Film
সবচেয়ে লম্বা ‘শাটডাউন’
২০১৯ অর্থবছরের বাজেটকে কেন্দ্র করে কংগ্রেসে মতানৈক্যের কারণে মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ ‘ফেডারেল গভর্মেন্ট শাটডাউন’ দেখেছে হোয়াইট হাউস৷ ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ২৫ জানুয়ারী অবধি এই অচলাবস্থা বহাল ছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Smialowski
উত্তর কোরিয়ায় প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট
ক্ষমতায় থাকা কোন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পই প্রথম উত্তর কোরিয়ার মাটিতে পা রাখেন৷ উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে মার্কিন সম্পর্কের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এই সফর৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
তালেবানের সঙ্গে চুক্তি
দীর্ঘ চেষ্টার পর গত বছর ট্রাম্প প্রশাসন আফগানিস্তান ইস্যুতে তালেবানের সঙ্গে একটি শান্তি চুক্তি করতে সক্ষম হয়৷ এর মাধ্যমে তালেবানের সঙ্গে ১৯ বছর ধরে চলা যুদ্ধের আপাতত অবসান ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে৷ তবে এই চুক্তি আফগানদের কতটা উপকারে আসবে তা নিয়ে সন্দিহান অনেক বিশেষজ্ঞ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/H. Sayed
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে ইসরায়েলের চুক্তি
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে সক্ষম হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ ফলে উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের এখন অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে৷
ছবি: Reuters/T. Brenner
ইরান ইস্যুতে উল্টো নীতি
ওবামা প্রশাসন ইরানের সঙ্গে যে পরমাণু চুক্তি করেছিল, তা থেকে সরে এসেছে ট্রাম্প প্রশাসন৷ দেশটির উপর আরো নানা নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Martin
11 ছবি1 | 11
অ্যামেরিকার প্রতিটি রাজ্যের নিজস্ব আইন আছে। পোস্টাল ব্যালট বিষয়ে নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। বিশেষজ্ঞদের অধিকাংশেরই ধারণা, সেই নিয়ম মেনেই পোস্টাল ব্যালট গণনা করা হচ্ছে। বস্তুত সে কারণে এ বছর ভোট গণনা করতে অনেক বেশি সময় লাগছে। করোনার কারণে রেকর্ড সংখ্যক পোস্টাল ব্যালটে ভোট হয়েছে এ বার।
মার্কিন ভোট এবং আইন বিশেষজ্ঞ নেড ফলি সংবাদসংস্থা এপিকে জানিয়েছেন, ''সুপ্রিমকোর্ট দুইটি বিষয় দেখতে পারে। এক ভোটের বৈধতা এবং দুই সেই প্রশ্ন ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটাচ্ছে কি না। এই দুইটি বিষয় নিশ্চিত হলে তবেই আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারে।'' ট্রাম্পের আবেদনে এই দুইটি বিষয় নেই বলেই তিনি মনে করছেন।
ট্রাম্পের সঙ্গে অবশ্য গুরুত্বপূর্ণ আইন বিশেষজ্ঞরা আছেন। ফলে ট্রাম্পের আবেদন সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এমন মনে করার কারণ নেই। বিষয়টি যে আরো গড়াবে, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন ট্রাম্প। জো বাইডেনের আইনজ্ঞরাও কাগজপত্র তৈরি করতে শুরু করেছেন।
কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, সুপ্রিম কোর্টে ট্রাম্পের একটি বড় সুবিধা আছে। সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়ামে ছয়জন রিপাবলিকান আমলে নিযুক্ত বিচারপতি এবং তিনজন ডেমোক্র্যাটদের সময়ের বিচারপতি। এই বিষয়টি নিয়ে ট্রাম্প অনেক আগে থেকে ভেবেছিলেন বলেই নির্বাচনের একেবারে মুখে প্রথমে প্রধান বিচারপতি এবং পরে আরো এক বিচরপতিকে মনোনীত করেন। যা নিয়ে বিতর্কও হয়েছিল। সুপ্রিমকোর্টে যেহেতু রিপাবলিকানদের জোর বেশি, তা কিছুটা সুবিধা ট্রাম্প পেতে পারেন বলেও অনেকে মনে করছেন।