1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় ঢাকায় কড়া প্রতিক্রিয়া

১১ ডিসেম্বর ২০২১

বাংলাদেশের ব়্যাব ও এর সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার উপর যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র তা তথ্যভিত্তিক নয় বলে দাবি করেছে ঢাকা৷ মানবাধিকার কর্মীরা অবশ্য বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে ‘ক্রসফায়ার’ দীর্ঘদিন ধরেই চলছে৷

বাংলাদেশের ব়্যাব ও এর সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার উপর যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র তা তথ্যভিত্তিক নয় বলে দাবি করেছে ঢাকা৷ মানবাধিকার কর্মীরা অবশ্য বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে ‘ক্রসফায়ার’ দীর্ঘদিন ধরেই চলছে৷
ফাইল ছবিছবি: Getty Images/AFP

এদিকে, নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷

শনিবার এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘‘ব়্যাব ও ব়্যাবের সাবেক-বর্তমান প্রধানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ব্যাখ্যা জানতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারকে তলব করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷’’

তার মতে, এতে দুই দেশের সম্পর্কে প্রভাব পড়বে কিনা তা নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর৷ ব়্যাব সম্পর্কে পশ্চিমা দেশটির মন্তব্য ও নিষেধাজ্ঞা তথ্যভিত্তিক নয় বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী৷ 

তিনি বলেন, ‘‘ব়্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দুঃখজনক৷ ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে৷ তিনি নিজেও বিষ্মিত৷’’

অন্যদিকে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল৷  শনিবার এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘‘প্রতিটি ঘটনা ম্যাজিষ্ট্রেট দিয়ে তদন্ত করা হয়ে থাকে৷ কোনো সংস্থার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠলে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়৷’’

তিনি বলেন, ‘‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বস্তুনিষ্ঠভাবে নিষেধাজ্ঞা দেয়নি৷ তারা অতিরঞ্জিত সংবাদের ওপর ভিত্তি করে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে৷ আমাদের কোনো সংস্থা মানবাধিকার লঙ্ঘন করে না৷ করলে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়৷’’

অভিযোগ নিয়ে ব়্যাব যা বলছে

বাংলাদেশে ‘মাদকবিরোধী যুদ্ধে’ মানবাধিকারের চূড়ান্ত লঙ্ঘন করেছে ব়্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (ব়্যাব)৷ এমন অভিযোগে শুক্রবার সংস্থাটিসহ এর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে ব়্যাব ও বাহিনীটির সাবেক ও বর্তমান ছয় কর্মকর্তার সম্পত্তি, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির রাজস্ব বিভাগ৷ এই তালিকায় আছেন ব়্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বর্তমান পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদও৷ পৃথক আরেক ঘোষণায় মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বেনজীর আহমেদ এবং ব়্যাব ৭ ইউনিটের সাবেক কমান্ডিং অফিসার মিফতাহ উদ্দিন আহমেদের উপর যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছে৷ কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এই দুইজন ২০১৮ সালের মে মাসে টেকনাফে কাউন্সিলর একরামুল হককে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যাসহ বড় ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে সম্পৃক্ত৷

তবে, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও মানবাধিকারের অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে ব়্যাব৷ এই প্রসঙ্গে বাহিনীটির লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেন তারা সব ধরনের আইন মেনেই অভিযান পরিচালনা করে আসছেন৷ অভিযান পরবর্তীতে মামলার তদন্ত করে পুলিশ এবং আদালতের মাধ্যমে তার নিষ্পত্তি হয়৷

‘ব়্যাব মানবাধিকার লুণ্ঠন করে না, মানবাধিকার রক্ষা করে’

This browser does not support the audio element.

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘‘আমরা যে কাজটি করছি সেটা সঠিক না ভুল, সেটার তদন্ত কিন্তু হয় পুলিশ করছে না হয় বিজ্ঞ আদালত করছে৷ বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে নয় হাজার বাহিনীর এই ফোর্সটির ২৮ জনকে জীবন দিতে হয়েছে৷ এর মধ্যে লে. কর্ণেল আজাদের মতো কর্মকর্তাও আছেন৷ আমাদের এক হাজার সদস্যের জখম হয়ে অঙ্গহানি হয়েছে৷ দুই হাজারের বেশি সদস্য আহত হয়েছেন৷ আমাদের মতো ক্যাজুয়ালিটি কিন্তু কম বাহিনীরই রয়েছে৷ আমাদের কাজ অনেক দেশের জন্যই রোল মডেল হিসেবে কাজ করছে৷ আমরা বাংলাদেশে জঙ্গিদের অবস্থান প্রায় জিরোর কাছাকাছি নিয়ে এসেছি৷’’

তিনি বলেন, ‘‘ব়্যাব মানবাধিকার লুণ্ঠন করে না, মানবাধিকার রক্ষা করে৷ বিষয়টি অফিসিয়ালি জানতে পারলে আমরা স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব৷”

পুলিশ সদর দফতরের মুখপাত্র সহকারী মহাপরিদর্শক কামরুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আইনের বাইরে গিয়ে পুলিশের কাজ করার কোন সুযোগ নেই৷ যদি কোথাও গোলাগুলি হয় সেখানে একজন ম্যাজিষ্ট্রেটের মাধ্যমে তদন্ত হয়৷ তদন্তে যদি কোন ব্যক্তি দায়িত্বে অবহেলা বা অন্য কোন অভিযোগ পাওয়া যায় সে অনুযায়ী কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হয়৷ ফলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সঠিক নয়৷’’

কী বলছেন মানবাধিকার কর্মীরা?

মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলমান রয়েছে৷ সাধারণ মানুষের অনেক দিনের দাবি ছিল যে, এই ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা গুমের সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে৷ আমরা স্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করে আসছি৷ কিন্তু রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কখনও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি৷ ফলে আজকে আমরা এই জিনিসটা দেখলাম৷ এখন তো তারা ব্যক্তিকে চিহ্নিত করছে, পরে হয়ত তারা রাষ্ট্রকে চিহ্নিত করতে পারে৷ তাই তার আগেই আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে৷ গুম-খুনের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনতে হবে৷’’

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এ কে এমন শহীদুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পুলিশ বা ব়্যাব তো নিজের সিদ্ধান্তে কাজ করে না৷ এখানে তো কোন কর্মকর্তার লাভ-লসের বিষয় নেই৷ সরকারের একটা সিস্টেম আছে৷ সে অনুযায়ী তারা কাজ করে৷ এখন মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই ধরনের নিষেধাজ্ঞার ফলে তো আর আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ বন্ধ হয়ে যাবে না৷ তাদের কাজ করতে হবে৷ ১৭ কোটি মানুষের এই দেশে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ৷ তবে হ্যাঁ, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর যেখানে উন্নতি করার সুযোগ আছে, সে চেষ্টা তাদের অব্যহত রাখতে হবে৷ এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা যাতে প্রত্যাহার হয়, সে ব্যাপারে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চেষ্টা করবে বলে আমি বিশ্বাস করি৷’’

নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশে কী প্রভাব পড়বে?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন এম হুমায়ুন কবীর৷ মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে বাংলাদেশ বড় ধরনের কোন সংকটে পড়বে এমনটা তিনি মনে করেন না৷ ডয়চে ভেলেকে এই কূটনীতিক বলেন, ‘‘তবে বাইডেন প্রশাসন এটাকে অগ্রাধিকারের মধ্যে নিয়ে গেছেন৷ বাইডেনতো ক্ষমতায় আসার এক-দেড় বছর আগে থেকেই লেখালেখি করেছে, বলাবলি করেছে৷ গত দুই দিন ধরে ১১০টা দেশ নিয়ে তিনি যে গণতন্ত্র সম্মেলন করলেন তাতে বোঝা যাচ্ছে তার কাছে এই বিষয়টা প্রাধান্য পাচ্ছে৷ ফলে এখানে তার মনোযোগ একটু বাড়বে৷ তবে আমি মনে করি না যে, আমরা কোন সংকটের মধ্যে পড়েছি৷ 

তিনি বলেন, ‘‘তবে আমাদের সংবিধানেও আছে, প্রচুর আন্দোলনও হয়েছে এ কারণে যেখানে সুযোগ আছে সেখানে মনোযোগ দিলেই হয়৷ এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা কেন দিল সেটার তথ্য উপাত্ত আমাদের কাছে নেই৷ তবে এটা আমাদের জন্য ভালো কোন খবর না৷ সাবধান হওয়ার সুযোগ থাকলে সেটা করা প্রয়োজন৷’’

ভূরাজনীতি সেই আগের অবস্থায় নেই: ড. ইমতিয়াজ আহমেদ

This browser does not support the audio element.

শুক্রবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে নেয়া ব্যবস্থায় মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ছাড়াও উগান্ডা, চীন, বেলারুশ, শ্রীলঙ্কা ও মেক্সিকোর ১০ জন বর্তমান ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তার ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে৷ অন্যদিকে রাজস্ব মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ, মিয়ানমার, চীন এবং উত্তর কোরিয়ার বেশ কিছু সংস্থা ও ব্যক্তির বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা জারি করে৷

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ এই ঘোষণাকে ব্যাখ্যা করেছেন ভূরাজনৈতিক দিক থেকে৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘তারা তো অনেক দেশের সঙ্গেই এটা করেছে৷ কিন্তু কোন তথ্যের ভিত্তিতে তারা এটা করল? যে কোন বিচার বর্হিভূত হত্যাই খারাপ৷ অনেক দেশেই এই ধরনের বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড হচ্ছে৷ আমি যদি পাকিস্তান বা কাশ্মীরের কথা বলি সেখানে হচ্ছে৷ সেখানে তো তারা এই ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে না৷ সাহসও পাবে না হয়ত৷ আমি মনে করি এর মধ্যে আরো কিছু আছে, সেটা হয়ত আমাদের জানা নেই৷ তবে এটা নিয়ে আমি বিস্মিত৷ বিচারবর্হিভূত হত্যা তো তাদের হিসাবেই বাংলাদেশের চেয়ে আমেরিকায় আরও বেশি হয়৷ অ্যামেরিকা তো তার নিজের উপরে এই ধরনের পদক্ষেপ নেয় না৷ ভূরাজনীতি সেই আগের অবস্থায় নেই৷ বাংলাদেশের যত বেশি উন্নয়ন হবে তত বেশি ঝামেলা আছে৷ আমি আশা করি, বাংলাদেশের যারা নিরাপত্তা দেখেন তারাও সচেতন হবেন৷ বিচার বর্হিভূত হত্যা একটাও গ্রহণযোগ্য না৷ তবে এটা অ্যামেরিকার মাধ্যমে জানতে হবে, আমি মনে করি না এটা ঠিক৷ অ্যামেরিকার এই ধরনের পদক্ষেপে বাংলাদেশ চিন্তিত হবে, এখন আর সেই অবস্থায় আমরা নেই৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ