মার্কিন বিচার বিভাগ আদালতের নির্দেশের মাধ্যমে টেক কোম্পানিদের তাদের গ্রাহকদের তথ্য হস্তান্তর করতে বাধ্য করে, অনেক ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের না জানিয়ে৷ এই বিষয়টির বিরুদ্ধে মামলা করল মাইক্রোসফট৷
বিজ্ঞাপন
দুনিয়ার মানুষ যখন অনলাইন, তখন সরকারি কর্তৃপক্ষ যে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে মজুত করা বার্তা, ছবি, আর্থিক হিসাবনিকাশ ইত্যাদি দেখতে আগ্রহী হবেন, সেটা স্বাভাবিক৷ কিন্তু মাইক্রোসফট, অ্যাপল, গুগল, ফেসবুক, ইয়াহু গোত্রীয় কোম্পানি, যাদের কাছে সেই তথ্য জমা আছে, তারা তাদের গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য অতো সহজে হাতছাড়া করতে রাজি হবে কেন? বিশেষ করে তার ফলে যদি গ্রাহকদের আস্থা কমে যায়?
ওদিকে শুধু নাইন-ইলেভেন নয়, প্রাক্তন এনএসএ কর্মী এডোয়ার্ড স্নোডেন গোপন তথ্য ফাঁস করার পর সরকারের ব্যক্তিগত তথ্যের দিকে হাত বাড়ানোর প্রবণতা বেড়েছে বৈ কমেনি৷ ওয়াশিংটন-ভিত্তিক একটি সংস্থা জানাচ্ছে যে, মার্কিন কর্তৃপক্ষ গত দেড় বছরে কোম্পানিগুলির কাছে ৫,৬০০ বারের বেশি গ্রাহকদের তথ্য দাবি করেছে৷ অর্ধেক ক্ষেত্রেই আদালতের নির্দেশে বলা ছিল যে, এই তথ্য হস্তান্তর সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের কাছ থেকে গোপন রাখতে হবে - এমনকি ১,৭৫০টি ক্ষেত্রে অনির্দিষ্টকালের জন্য গোপন রাখতে হবে৷ এই পটভূমিতে মাইক্রোসফটের মামলা করাটা বোধগম্য হয়ে ওঠে৷
এর আগে এই ধরনের একটি হাই প্রোফাইল, অর্থাৎ ব্যাপক প্রচারণা পাওয়া মামলা চলেছে অ্যাপল ও এফবিআই গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে৷ এফবিআই অ্যাপল-এর সাহায্য চেয়েছিল এনক্রিপ্ট করা একটি আইফোন আনলক করার, অর্থাৎ খুলে দেওয়ার জন্য; অ্যাপল সে সাহায্য দিতে অস্বীকার করে৷ পরে এফবিআই জানায়, তারা নিজেরাই মোবাইল ফোনটির তথ্য উদ্ধার করতে সমর্থ হয়েছে৷
মাইক্রোসফট এবার মামলা করেছে ঐ ‘‘নন-ডিজ্ক্লোজার'', মানে তথ্য হস্তান্তরের ব্যাপারটা সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে না জানানোর নির্দেশটিকে নিয়ে৷ সেটা যেমন বাকস্বাধীনতার সাংবিধানিক অধিকারের বিরোধী, তেমনই অবান্তর খোঁজখবরের বিরুদ্ধে গ্রাহক সুরক্ষার বিরোধী - এই হল মাইক্রোসফটের যুক্তি৷
মাইক্রোসফটের সঙ্গে মার্কিন সরকারের আরেকটি মামলা চলছে নিউ ইয়র্কে, যার উপজীব্য হল: আয়ারল্যান্ডে মাইক্রোসফটের একটি ডাটা সেন্টারে মার্কিন নাগরিক নন, এমন এক গ্রাহকের বিভিন্ন ইমেল রাখা রয়েছে৷ সরকার সেগুলি দেখতে চায়৷ এ সবই ১৯৮৬ সালের ‘ইলেকট্রনিক কমিউনিকেশনস প্রাইভেসি অ্যাক্ট'-এর বলে, যে আইনের বিভিন্ন সূত্রের সংস্কার দাবি করে আসছে টেক ইন্ডাস্ট্রি ও যুক্তরাষ্ট্রের সিভিল লিবার্টি গোষ্ঠীগুলি৷
কাজেই অ্যামেরিকান ‘সিভিল লিবার্টিজ আসোসিয়েশন' বা এসিএলইউ-এর ডেপুটি লিগাল ডাইরেক্টর জামিল জাফর টুইট করেছেন, ‘‘সিভিল লিবার্টিজ গোষ্ঠীগুলি টেকনোলজিস্টদের নিয়োগ করছে; আর টেক কোম্পানিগুলি সিভিল লিবার্টি সংক্রান্ত মামলা দায়ের করছে৷ এ এক নতুন জগত৷''
‘সিইও-র দেশ ভারত’
বিশ্বের সেরা কিছু প্রতিষ্ঠানের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) যদি একই দেশের হয়, সেই দেশকে কি ‘সিইও-র দেশ’ বলা যায় না? যায় তো! ভারতও তাহলে ‘সিইও-র দেশ’৷ জেনে নিন বিশ্বের কোন কোন প্রতিষ্ঠানের সিইও এখন ভারতীয়...৷
ছবি: Reuters/R. Galbraith
মাইক্রোসফটে সত্য নাদেলা
হায়দ্রাবাদের ছেলে সত্য নারায়ণ নাদেলা৷ ২০১৪ সাল থেকে তিনি মাইক্রোসফটের সিইও৷ নাদেলা ভারতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর সত্য যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন কম্পিউটার সায়েন্সে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করতে৷ লেখাপড়া শেষ করে প্রথমেই সান মাইক্রোসিস্টেম-এ চাকরি পেয়ে যান৷ তবে বেশি দিন সেখানে থাকতে হয়নি৷ মাইক্রোসফট-এ চাকরি হয়ে যায় ১৯৯২ সালে৷ ১২ বছর পর প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদের জন্য তাঁকেই বেছে নিয়েছে মাইক্রোসফট৷
ছবি: Reuters
গুগলে আছেন সুন্দর পিচাই
সুন্দর পিচাইয়ের জন্ম চেন্নাইয়ে৷ ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি (আইআইটি) থেকে লেখাপড়া শেষ করা এই তরুণ গুগলে যোগ দেন ২০০৪ সালে৷ গত ১০ আগস্ট পরবর্তী সিইও হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করার পর গুগল-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ একটি ব্লগ লিখেছেন৷ সেখানে সুন্দর পিচাই সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, ‘‘ওর মতো একজন প্রতিভাবানকে গুগল পরিচালানার দায়িত্বে পাওয়ায়টা খুবই সৌভাগ্যের৷’’
ছবি: picture alliance/dpa/J. Chiu
পেপসিতে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাবান নারীদের একজন...
বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর নারী ভারতের ইন্দ্রা কৃষ্ণমূর্তি নুয়ী৷ সত্য নাদেলার মতো তিনিও যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন লেখাপড়া করতে৷ লেখাপড়া শেষে চাকরি করছেন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাদ্য ও পানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান পেপসি-তে৷ ২০০৬ সাল থেকে পেপসি-র সিইও তিনি৷ এ দায়িত্ব এতটাই সাফল্যের সঙ্গে পালন করছেন যে, ২০১৪ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় ১৩তম স্থানটি দিয়েছে তাঁকে৷
ছবি: AP
অ্যাডোব সিস্টেম সামলাচ্ছেন শান্তনু নারায়ণ
মাইক্রোসফট-এর সিইও নাদেলার মতো শান্তনু নারায়ণও স্কুল পর্বে লেখাপড়া করেছেন হায়দ্রাবাদে৷ হায়দ্রাবাদ পাবলিক স্কুলের ছাত্র ছিলেন দু’জনই৷ শান্তনুর প্রথম চাকরি অ্যাপল-এ৷ সেখান থেকে তিনি হয়েছেন অ্যাডোব সিস্টেমের সিইও৷
ছবি: Getty Images/J. Sullivan
নোকিয়ার ‘সর্বেসর্বা’ রাজীব সুরি
নোকিয়ার সিইও রাজীব সুরি মনিপাল আইআইটি-র ছাত্র ছিলেন৷ নোকিয়ায় ঢুকেছিলেন ১৯৯৫ সালে৷ এমন একটি প্রতিষ্ঠানের সিইও হয়ে এখন তিনি মনিপুর তো বটেই, ভারতেরও গর্ব৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Rekomaa
মাস্টারকার্ড-এর সিইও অজয়পাল সিং বাঙ্গা
২০১০ সাল থেকে মাস্টারকার্ড-এর সিইও-র দায়িত্বে আছেন অজয়পাল সিং বাঙ্গা৷ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করা অজয়পাল এই প্রতিষ্ঠানে ‘অজেয়’ হওয়ার আগে আহমেদাবাদের ইন্সটিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট থেকে এমবিএ-ও করেছেন৷