জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা নিয়ে জাতিসংঘের প্রস্তাবে ভেটো দিল অ্যামেরিকা। তাদের মতে, এখানে আইএসের বিদেশি যোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের কোনো উল্লেখ নেই।
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘের প্রস্তাবে অ্যামেরিকার ভেটো। প্রস্তাবটি ছিল সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িতদের পুনর্বাসন, শাস্তি ও সমাজের মূল স্রোতে নিয়ে আসার ব্যবস্থা। অ্যামেরিকার মত হলো, এর মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ বাদ চলে গেছে। সেটা হলো আইএস গোষ্ঠীর বিদেশি যোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের পুনর্বাসনের বিষয়টি।
জাতিসংঘে মার্কিন দূত কেলি ক্রাফট বলেছেন, ''ইন্দোনেশিয়া সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা চালু করা নিয়ে যে প্রস্তাব এনেছে, সেটা খুবই খারাপ। এটা কোনো প্রস্তাবই নয়।''
ইন্দোনেশিয়ার এই প্রস্তাবের পক্ষে নিরাপত্তা পরিষদে ১৪টি ভোট পড়েছিল, আর বিপক্ষে শুধু অ্যামেরিকা। যেহেতু অ্যামেরিকার ভেটো দেয়ার ক্ষমতা আছে, তাই একমাত্র তারা বিরোধিতা করার ফলে প্রস্তাবটি খারিজ হয়ে গেল।
ক্রাফট বলেছেন, ''এই প্রস্তাবে প্রথম ধাপের উল্লেখই নেই। সেটা হলো নিজেদের দেশে তাঁদের পুনর্বাসনের বিষয়টি।'' অ্যামেরিকার দাবি, আইএসের বিদেশি যোদ্ধাদের তাঁদের দেশে শাস্তি দিতে হবে এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স সহ ইউরোপের দেশগুলি অ্যামেরিকার এই মত সমর্থন করেনি। তারা বরং মনে করছে নিজের দেশে ওই সব জঙ্গিদের ওপর লোকের ক্ষোভ আছড়ে পড়তে পারে। তাঁরা আক্রান্ত হতে পারেন। তাছাড়া ইরাক বা সিরিয়ায় তাঁরা যে অপরাধ করেছেন, তার প্রমাণ জোগাড় করাও মুশকিল।
সিরিয়ায় আইএস জঙ্গিদের বন্দিজীবন
যুদ্ধে হেরে যাওয়ায় আইএস জঙ্গিরা এখন সিরিয়ায় বন্দি৷ ১০ হাজারের বেশি জঙ্গি এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের রাখা হয়েছে সিরিয়ার হাসাকা শহরে৷ ছবিঘরে দেখুন সেখানে কেমন আছেন তারা৷
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
জঙ্গিদের বন্দিজীবন
২০১৪ সালে ইসলামি খেলাফত কায়েম করার কথা বলে সিরিয়ায় যুদ্ধ শুরু করে তথাকথিত জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)৷ যুদ্ধের সময় অনেক মানুষ হত্যা করেছে তারা৷ কিন্তু গত বছর যুদ্ধে নিজেদের শেষ ঘাঁটিটিও হারানোর পর থেকে তারা বন্দি৷ সিরিয়ার উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের হাসাকা শহরে বন্দি আছে দশ হাজারেরও বেশি জঙ্গি এবং জঙ্গিদের স্ত্রী, সন্তান৷
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
কুর্দিদের কাছে বন্দি
যুদ্ধের সময় এই এলাকাটি ছিল কুর্দি যোদ্ধাদের দখলে৷ পরাজিত আইএস যোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের কারাগারে পুরেছে কুর্দিরাই৷
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
জায়গার অভাব
কোয়ামিশি শহরের কাছের এই এলাকাটিতে একটি কারাগার রয়েছে৷ সেখানে সব জঙ্গির জায়গা হয়নি৷ তাই স্থানীয় স্কুলেও রাখা হয়েছে আইএস যোদ্ধা এবং তাদের সহায়তাকারীদের৷
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
দুই হাজার বিদেশি
যুদ্ধের সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক মানুষ আইএস-এ যোগ দিয়েছিলেন৷ তারাও এখন বন্দি৷ হাসাকার দশ হাজারের মধ্যে অন্তত দুই হাজার জঙ্গিই বিদেশি৷
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
বিদেশিদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
কুর্দি যোদ্ধারা জানিয়েছেন, এত বন্দি এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের কঠোর নিরাপত্তায় রাখতে তারা হিমসিম খাচ্ছেন৷ বিদেশি বন্দিদের অনেকেই এসেছেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে৷কিন্তু কোনো দেশই তাদের ফেরত নিতে চায় না৷
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
‘আমাদের কী শাস্তি হবে?’
সিরীয় আইএস যোদ্ধা মাহমুদ মোহাম্মদ রয়টার্সকে বলেন, ‘‘আমাদের কী হবে জানতে চাই৷ আমরা আমাদের পরিবার সম্পর্কে কিছু জানি না৷ তারা বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে, সিরিয়ায় আছে নাকি বাইরে, কিছুই জানি না৷ তাছাড়া কী শাস্তি হবে তা-ও আমরা জানি না৷’’
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
হাসপাতালে শতাধিক জঙ্গি
হাসাকার ৫০ শয্যার হাসপাতালে রয়েছে শতাধিক অসুস্থ এবং যুদ্ধাহত জঙ্গি৷
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
নারী, শিশু বাইরে
জঙ্গিদের স্ত্রী এবং সন্তানদের কারাগারের বাইরে রাখা হয়েছে৷ নারীরা ঘোরাফেরা করতে পারেন, শিশুরা খেলতে পারে মাঠে৷
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
‘দেশে ফিরতে চাই না’
কুর্দি যোদ্ধাদের অনুমতি নিয়ে নয়জন আইএস জঙ্গির সঙ্গে কথা বলেছে রয়টার্স৷ তবে জঙ্গিদের স্ত্রীরা কথা বলতে রাজি হননি৷ হংকং থেকে আসা এক নারী কথা বললেও নাম প্রকাশ করতে চাননি৷ রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘‘আমার একটা সন্তান৷ স্বামী মারা গেছে৷ আমি জানি এখানে পরিস্থিতি ভালো নয়৷ এটা কোনো ঘর নয়, স্রেফ একটা তাঁবু৷ তবু আমি দেশে ফিরবো না৷ সবাইকে আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হয়৷ আল্লাহ চাইলে সব ভালো হবে৷’’
ছবি: Reuters/G. Tomasevic
9 ছবি1 | 9
জঙ্গিদের পরিবার সম্পর্কে প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, তাঁদের বাচ্চারা নিজেদের দেশে ফিরতে পারবেন। তবে প্রতিটি মামলা খতিয়ে দেখে তারপরই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
ঘটনা হলো সিরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে আইএস তার নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে। মূলত কুর্দদের নিয়ে গঠিত সিরিয়ান ডিফেনসিভ ফোর্স(এসডিএফ) দেশের উত্তর পূর্বের এলাকায় হাজার হাজার বিদেশি যোদ্ধাকে আটক করেছে। বড় বড় শিবিরে অভিযুক্ত জঙ্গিদের স্ত্রী ও বাচ্চাদের রাখা হয়েছে।
জাতিসংঘ ওই সব শিবিরের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, বিদেশি যোদ্ধা ও তাঁদের পরিবার নিয়ে যত তাড়াতাড়ি প্রস্তাব নেয়া যাবে তত ভালো। তা হলে জঙ্গি কার্যকলাপ বড়ার সম্ভাবনাও কমবে।
যুক্তরাজ্যের বিদেশ অফিস থেকে বলা হয়েছে, ''প্রস্তাব অনুমোদিত না হওয়ায় আমরা ক্ষুব্ধ। আমরা বিদেশি যোদ্ধাদের ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা করছিলাম।''
করোনাকালে নিজেদের ভোট ই মেল করে দিয়েছিল দেশগুলি। কিন্তু অ্যামেরিকার ভেটোর ফলে এই প্রয়াস বানচাল হয়ে গেল।