1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
ব্যবসা-বাণিজ্যবাংলাদেশ

মার্কিন শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত চায় বাংলাদেশ

৭ এপ্রিল ২০২৫

বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপ করা নতুন শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিতের আবেদন জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

Kombobild Muhammad Yunus und Donald Trump
ছবি: Nancy Kaszerman/Evan Vucci/picture alliance

এ পর্যন্ত অন্তত ৫০টি দেশ শুল্কের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেন-দরবার করতে চেয়েছে৷

রবিবার লেখা এ চিঠিতে তিনি মার্কিন পণ্য আমদানি বাড়ানো এবং তাদের শীর্ষ পণ্যের ওপর শুল্ক ৫০ শতাংশ কমিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রতি দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে বাংলাদেশ এটা কার্যকর করবে। এই সময়ে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন করে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ স্থগিত রাখার আহবান জানানো হয়েছে চিঠিতে। ৯ এপ্রিল থেকে নতুন এই শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা। আগের ১৫ শতাংশ শুল্ক ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে এখন শুল্ক হবে ৫২ শতাংশ।

বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের ৫০টি দেশ নতুন শুল্কের ব্যাপারে দেন-দরবার করতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এরই মধ্যে যোগাযোগ করেছে। ভিয়েতনাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যে শুন্য শুল্কের প্রস্তাব করেছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা নতুন শুল্ক কার্যকর করার সময় পিছিয়ে দেয়ার আবেদনও করেছে তারা। কম্বোডিয়া বলেছে, মার্কিন পন্যের ওপর শুল্ক কমিয়ে তারা পাঁচ শতাংশ করবে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্কের উন্নয়ন ও পারস্পরিক শুল্ক আরোপের বিষয় পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে চিঠিতে বলেছেন, ট্রাম্পের প্রশাসনের বাণিজ্যনীতি সমর্থনে বাংলাদেশ পূর্ণ সহযোগিতা করবে। ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের পরপরই বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল ওয়াশিংটন ডিসি সফর করে মার্কিন রপ্তানি বাড়ানোর আগ্রহ প্রকাশ করে, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকে প্রথম দেশের মর্যাদা দেয়।

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য বহু বছরের চুক্তি করেছে এবং আরো সহযোগিতার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের ১৭ কোটি জনসংখ্যার বাজারে মার্কিন কৃষিপণ্য- যেমন তুলা, গম, ভুট্টা ও সয়াবিন আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকদের আয়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। মার্কিন তুলার জন্য বাংলাদেশে একটি ডিউটি-ফ্রি বন্ডেড ওয়্যারহাউজ চালুর কাজও প্রায় শেষ।

আমার মনে হয় দেখেশুনে এগোনোই ভালো: খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম

This browser does not support the audio element.

দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর সর্বনিম্ন শুল্ক আরোপকারী দেশ বাংলাদেশ- এমন দাবি করে বলা হয়, মার্কিন কৃষি পণ্যের ওপর শুন্য শুল্কের পরিকল্পনা আছে বাংলাদেশের। উল্লেখযোগ্য কিছু মার্কিন রপ্তানি পণ্যের শুল্ক ৫০% পর্যন্ত কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে গ্যাস টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর ও চিকিৎসা সরঞ্জাম।

বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন অ-শুল্ক বাধাও দূর করছে বলে জানানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা, প্যাকেজিং ও লেবেলিংয়ের নিয়ম সরলীকরণ এবং কাস্টমস পদ্ধতি সহজীকরণ।

চিঠিতে বাংলাদেশে স্টারলিংক চালুর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সম্পন্ন হয়েছে বলেও জানানো হয়।

সবশেষে, প্রধানমন্ত্রী ট্রাম্পকে তিন মাসের জন্য বাংলাদেশি পণ্যের ওপর প্রস্তাবিত পারস্পরিক শুল্ক আরোপ স্থগিত রাখতে অনুরোধ করা হয়, যাতে চলমান উদ্যোগগুলো নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করা যায়।

তবে এরই মধ্যে বাংলাদেশের পোশাক ও চামড়া শিল্পে মার্কিন শুল্কের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮৪ ভাগই আসে তৈরি পোশাক থেকে। আর একক দেশ হিসবে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। গত বছরে মোট রপ্তানি পোশাকের ১৮ শতাংশ ছিল যুক্তরাষ্ট্রে। গত বছর বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ৭৩৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে।

মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৮৩৬ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২২১ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এই হিসাবে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য-ঘাটতির পরিমাণ ৬১৫ কোটি ডলার।

তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ'র সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, "এরই মধ্যে ক্রয় আদেশ স্থগিত করা শুরু করেছেন ক্রেতারা। তারা কী প্রক্রিয়ায় নতুন শুল্ক কার্যকর হয় তা দেখার অপেক্ষায় আছেন।”

তিনি বলেন, " আমাদের যেসব পণ্য শিপমেন্ট হয়ে গেছে, সেগুলো নিয়ে আরো বিপদ। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের বন্দরে গিয়ে শুল্কায়ন হবে। আমরা যেসব পোশাক এরই মধ্যে শিপমেন্ট করেছি, তার দাম তো আগের শুল্কের হিসাবে প্রাইস ট্যাগ লাগানো হয়েছে। এখন বন্দরে গিয়ে নতুন আরোপ করা শুল্ক যোগ হলে ওই পোশাকের দাম তো বেড়ে যাবে। ওই শুল্ক কে বহন করবে? সেটা যদি আমাদের বহন করতে হয়, তাহলে আমাদের জন্য তা হবে নির্মম।”

তার কথা, " আসলে এখন এই আলোচনাটা জরুরি ছিল। আমাদের পণ্য উৎপাদন ও ডেলিভারি মিলে তিনমাস লাগে। তাই তিন মাসের জন্য প্রক্রিয়াটা স্থগিত হলে প্রাথমিক ধাক্কা আমরা সামলাতে পারতাম। তারপর নুতন পোশাকে কী হবে তা পরে বিবেচনা করা যেতো। কারণ, এটা তো এখন পুরো দুনিয়ার সমস্যা।”

" আর যদি তিন মাসের জন্য স্থগিত না হয়, তাহলে আমাদের বিপুল ক্ষতি হবে,” বলেন তিনি।

বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমও পণ্যের অর্ডার স্থগিতের তথ্য দিয়ে বলেন, " যদি এই শুল্কই বহাল থাকে, তাহলে এটা ভাগ করে দেয়ার একটি প্রক্রিয়া বের করতে হবে। এটা উৎপাদক, ব্র্যান্ড ও বায়ারের মধ্যে ভাগ করে দিতে হবে।”

তিন মাসের জন্য বাড়তি শুল্ক স্থগিত না হলে আমাদের বিপুল ক্ষতি হবে: মহিউদ্দিন রুবেল

This browser does not support the audio element.

তার কথা, " প্রধান উপদেষ্টা তিন মাসের জন্য নতুন শুল্ক স্থগিত করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানি বাড়ানো, ওই পণ্যে শুল্ক কমানোর প্রস্তাব দিয়েছেন তার চিঠিতে। কিন্তু বাণিজ্য উপদেষ্টা তো এরই মধ্যে এখানে মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কথা বলার পর তো তিনি নিজেই জানিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র নতুন শুল্ক কার্যকর করা স্থগিত করবে না। আর তারা শুধু বাংলাদেশের জন্য তারা এটা কেন করবে?”

"প্রধান উপদেষ্টা চিঠি লিখেছেন ভালো। তবে তিনি যদি মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন, তাহলে আরো ভালো হতো,” বলেন তিনি।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিস)-এর গবেষণা পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির বলেন, " মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল উেদ্দেশ্য বাণিজ্য ঘাটতি কমানো। আমরা যতই বলি না কেন, আমরা কম শুল্ক আরোপ করছি, কিন্তু বাস্তবে অনেক নন-ট্যারিফ ব্যারিয়ার আছে। তারা বলছে, আমরা ৭২ শতাংশ শুল্ক আরোপ করি। আমরা অ্যালকোহলের মতো কিছু পণ্যে অনেক বেশি শুল্ক ধরি। কিন্তু মূল যে চারটি পণ্য আমরা আমদানি করি, তার মধ্যে শীর্ষে আছে স্ক্র্যাপ আয়রন৷ সেটা দিয়ে আমরা রড তৈরি করি। এরপর ফুয়েল। এই দুইটি পণ্য মিলিয়ে ৫০ শতাংশ। এরপর আছে এডিবল অয়েল ও কটন।  এইসবে শুল্ক কম, কিন্তু অল্প আমদানি হয়, এরকম পণ্যে ৭০০ শতাংশ শুল্কও আছে। আমাদের এই শুল্ক কমিয়ে আমদানি বাড়াতে হবে।”

"আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই বানিজ্য নিয়ে কথা বলার জন্য আমাদের টিকফা (ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট) আছে। সেটাকে আমরা এখন কাজে লাগাতে পারি। খুব অল্প কিছু দেশের সঙ্গেই যুক্তরাষ্ট্রের এই চুক্তি আছে,” বলেন তিনি।

তার কথা, " প্রধান উপদেষ্টা চিঠিতে যা লিখেছেন, তা ভালো। কিন্তু এটা নিয়ে এখন কাজ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রকে কনভিন্স করতে হবে।”

সিপিডির গবেষণা পরিাচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, "শুধু যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানি বাড়ানো ও তাদের পণ্যের ওপর শুল্ক কমানোর প্রস্তাবই যথেষ্ট নয়। তাদের নতুন শুল্কের কারণে এখানে বিনিয়োগ, উৎপাদন, রপ্তানি ও কর্মসংস্থানে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, তা-ও তাদের বুঝাতে হবে। আর আমাদের মতো দেশগুলোর বাণিজ্য স্বার্থ দেখার জন্য বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সাথেও আলাপ-আলোচনা শুরু জরুরি।”তার কথা, " এখন একটা ইঁদুর দৌড় শুরু হয়েছে। ৫০টির মতো দেশ এরই মধ্যে আবেদন করেছে। ভিয়েতনাম মার্কিন পণ্যের ওপরে শূন্য এবং কম্বোডিয়া পাঁচ শতাংশ শুল্কের কথা বলছে। তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়ানোর কথাও বলছে। কিন্তু আমার মনে হয় দেখেশুনে এগোনোই ভালো। এখন আমরা কিছু উদ্যোগ নিলাম তাতে যদি কোনো ফল না আসে? আসলে প্রক্রিয়াটা কী হয়, বাস্তবায়ন কিভাবে হয়, যুক্তরাষ্ট্র আসলে কী চায় তা আগে বোঝা দরকার।”

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ