মিয়ানমার-অ্যামেরিকা
১৩ জুলাই ২০১২তেল এবং গ্যাসসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের জন্য মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোকে বুধবার সবুজ সংকেত দিয়েছে ওয়াশিংটন৷ মিয়ানমারের উপর মার্কিনিদের আরোপিত বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরো শিথিল করে সেদেশে বিনিয়োগের এই পথ খুলে দেওয়া হয়েছে৷ চলতি সপ্তাহে দুই দেশের মধ্যকার উচ্চ পর্যায়ের আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷
মিয়ানমারের গণতন্ত্রের মানসকন্যা নোবেল জয়ী অং সান সু চি মার্কিন এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে সতর্ক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন৷ সু চি বলেছেন, ‘মার্কিন এই উদ্যোগে বিশেষ অর্থপূর্ণ কোন ব্যাপার নেই৷'
বলাবাহুল্য, মিয়ানমারের সরকার নিয়ন্ত্রিত তেল এবং গ্যাস সংস্থা এমওজিএইচ'এর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে উদ্বিগ্ন সু চি৷ তিনি এমওজিএইচ'এর উপর চাপ প্রয়োগ করতে বারংবার আন্তর্জাতিক সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷ এই সংস্থাটির সঙ্গে গতবছর ক্ষমতাত্যাগী সেদেশের জান্তা সরকারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ তিনি বলেন, ‘আমি তাদের (পশ্চিমা সমাজ) কাছে আশা করেছিলাম তারা এমওজিএইচ'এর কাছে আরো স্বচ্ছতা দাবি করবে৷ কিন্তু আমি জানিনা তারা সেটা করেছে কিনা৷' সু চি চাচ্ছেন, সরকারের মালিকানাধীন এই সংস্থাটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল'এর আচরণবিধি মনে চলুক৷
মিয়ানমারের অর্থনীতির স্বার্থে সেদেশের উপর থেকে পশ্চিমা সমাজের কড়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পক্ষে সু চি'র দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি, এনএলডি৷ নিষেধাজ্ঞা শিথিলের মার্কিন সিদ্ধান্ত তাই সেদলের নীতির সঙ্গে বিরোধপূর্ণ নয়৷ এনএলডি মুখপাত্র নিয়ান উইন এই বিষয়ে বলেছেন, ‘এক্ষেত্রে হতাশ হওয়ার কিছু নেই৷' বরং ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যা করা উচিত, সেদেশ তাই করেছে', এমনটাই মনে করেন উইন৷
মার্কিন এই সিদ্ধান্ত অবশ্য আরো একটি ইঙ্গিত দিচ্ছে৷ সেটি হচ্ছে মিয়ানমারের বর্তমান সংস্কারপন্থী প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনকে আরো উৎসাহ দিতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র৷ সাবেক এই জান্তা জেনারেল প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তাঁর দেশে বেশকিছু নাটকীয় পরিবর্তন এনেছেন, যা পশ্চিমাদেরকে বিস্মিত করেছে৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট এক বিবৃতিতে বুধবার জানিয়েছেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন, অং সান সু চি এবং বার্মার সাধারণ জনগণ গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যেতে ধারবাহিকভাবে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করছে৷ এবং সরকারও গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে৷''
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টন আজ শুক্রবার কম্বোডিয়ায় একটি বাণিজ্যিক সম্মেলনের ফাঁকে থেইন সেইন'এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন৷ মিয়ানমারের উপর থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা শিথিলের বিষয়ে আলোচনা করবেন দুই নেতা৷ মার্কিন পররাষ্ট্রদপ্তরের এক ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা জানিয়েছে এই তথ্য৷
প্রেসিডেন্ট সেইন বৃহস্পতিবার তাঁর দেশের উপর থেকে সকল ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে পশ্চিমাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘আর্থিক এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি প্রত্যাহার অত্যন্ত জরুরি৷ বর্তমানে মিয়ানমারে যে ধরনের বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ প্রয়োজন তা পেতে চাইলে নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি প্রত্যাহারের বিকল্প নেই৷'
এআই/জেএইচ (এএফপি)