অ্যামেরিকা আক্রমণ করলে তার জবাব দেওয়া হবে। ইরানের রেভোলিউশনারি গার্ডের প্রধান এ কথা জানিয়ে দিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
রেভোলিউশনারি গার্ডের প্রধান হোসেইন সালামি বলেছেন, ''অ্যামেরিকার হুমকি আমরা শুনেছি। এমন নয় যে অ্যামেরিকা প্রথম এমন হুমকি দিচ্ছে। এখন আমরা দুই পক্ষই দুই পক্ষকে চিনি। ফলে অ্যামেরিকা যেন মনে রাখে, তারা আক্রমণ করলে আমরা চুপ করে বসে থাকব না। প্রত্যুত্তর দেওয়া হবে।''
ইরানের সরকারি সংবাদসংস্থা আইআরএনএ জানিয়েছে, দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পার্লামেন্টে জানিয়েছেন, ''ইরানের উপর আক্রমণ হলে সঙ্গে সঙ্গে তার জবাব দেওয়া হবে।'' তার বক্তব্য, অ্যামেরিকা এইভাবে সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। আগেও ইরানের উপর শক্তি প্রয়োগ করেছে অ্যামেরিকা। তাতে লাভ হয়নি। একমাত্র সমাধানসূত্র রাজনৈতিক আলোচনায়।
অ্যামেরিকার বক্তব্য
মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, জর্ডানে মার্কিন সেনাঘাঁটিতে যে আক্রমণ হয়েছিল, তার জন্য দায়ী ইরানের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর। এর জবাব দেওয়া হবে। তবে নানা স্তরে সেই জবাব দেওয়া হবে। একইসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যে আরো একটি যুদ্ধ তিনি চান না। কৌশলী আক্রমণ চালানো হবে অপরাধীদের উপর। কিন্তু সরাসরি যুদ্ধে নামবে না অ্যামেরিকা।
অ্যামেরিকার বড় শত্রু কারা?
ইরানের সঙ্গে অনেকটা যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে অ্যামেরিকার৷ আর চীনের সঙ্গে চলছে বাণিজ্য যুদ্ধ৷ মার্কিনিদের বিবেচনায় তাঁদের শত্রুদের চিনে নিন ছবিঘরে৷
ছবি: Imago/UPI//Imago/Russian Look
উত্তর কোরিয়া
জরিপের মাধ্যমে অ্যামেরিকার শত্রুদের তালিকা প্রকাশ করে থাকে গ্যালাপ৷ প্রতিষ্ঠানের ২০১৮ সালের জরিপে দেখা যায়, গত কয়েক বছরের মতো এবারও অ্যামেরিকার শত্রু তালিকার শীর্ষ দেশ হিসেবে উত্তর কোরিয়ার নাম আছে৷ ২০১৬ সালে ১৬ ভাগ মানুষ উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক শক্তিকে হুমকি হিসাবে বিবেচনায় নিয়েছিলেন৷ ২০১৮ সালে এসে হুমকি বিশ্বাসকারীদের সংখ্যা ৫১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রাশিয়া
অ্যামেরিকার সঙ্গে রাশিয়ার শত্রুতার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের৷ এর মধ্যে উত্থান-পতনও দেখা গেছে বিভিন্ন সময়ে৷ ২০১৬ সালে ১৫ শতাংশ অ্যামেরিকান বলেছেন, রাশিয়া তাঁদের সবচেয়ে বড় শত্রু৷ ২০১৮ সালে গিয়ে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ শতাংশে৷
চীনের সঙ্গে অ্যামেরিকার বাণিজ্য যুদ্ধ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বিশ্বের অন্যান্য দেশের অর্থনীতিকেও৷ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অর্থনৈতিক পরাশক্তি হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে চীন৷ দুই দেশের সাম্প্রতিক কিছু সিদ্ধান্ত উভয়ের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করছে৷ ২০১৬ সালে অ্যামেরিকার ১২ শতাংশ মানুষের বিবেচনায় চীন ছিল দেশটির সবচেয়ে বড় শত্রু৷ তবে, ২০১৮ সালে দেশটিকে বড় শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করেছেন ১১ শতাংশ অ্যামেরিকান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইরান
২০০৬ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত অ্যামেরিকানদের কাছে তাঁদের শত্রু তালিকায় শীর্ষে ছিল ইরান৷ পরের কয়েক বছর পরিস্থিতি ভালো হয় কিছুটা৷ তবে, ২০১৫ সালে ইরানকে নিজেদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করেছেন ৯ শতাংশ অ্যামেরিকান৷ ২০১৮ সালে এমন চিন্তার মানুষের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭ শতাংশে৷
ছবি: Imago/UPI//Imago/Russian Look
সিরিয়া
গ্যালাপের পাশাপাশি অ্যামেরিকার শত্রুদের তালিকা প্রকাশ করে থাকে ক্যানাডাভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অন গ্লোবালাইজেশন বা সিআরজি৷ তাদের বিবেচনায় ইরান, রাশিয়া ও ফিলিস্তিনের সঙ্গে সিরিয়ায় ক্ষমতাসীনদের সখ্যের কারণে সিরিয়ার সঙ্গে অ্যামেরিকার বিরোধ হয়েছে৷ আবার অ্যামেরিকা-ইসরায়েল মৈত্রীর ক্ষেত্রে বিপরীত অবস্থানে আছে সিরিয়া৷ ভূ-রাজনৈতিক কারণে সিরিয়ার উপর আধিপত্য রাখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Elfiqi
ভেনেজুয়েলা
সিআরজি বলছে, ভেনেজুয়েলার তেলের মজুদ ও সামাজিক-রাজনৈতিক কারণে অ্যামেরিকার সঙ্গে তাঁদের বিরোধ দীর্ঘদিনের৷ যদিও বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ভেনেজুয়েলা, তবুও সেই বিরোধ কমেনি মোটেও৷ দেশটির ক্ষমতাসীন মাদুরো সরকারকে হটাতে তৎপর অ্যামেরিকা৷ সম্প্রতি অ্যামেরিকার সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে দক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Miraflores
6 ছবি1 | 6
হোয়াইট হাউসে মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা মুখপাত্র জন কিরবি বলেছিলেন, বহু স্তরীয় আক্রমণ চালানো হবে। সমস্ত কৌশল বাইডেনের উপস্থিতিতে তৈরি করা হচ্ছে। বুধবার হোয়াইট হাউস আবার জানিয়েছে, ৪৮ ঘণ্টা হয়ে যাওয়ার পরেও আক্রমণ হচ্ছে না মানে এই নয় যে, আক্রমণ হবে না। দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে। অতি শীঘ্রই দেওয়া হবে। বস্তুত, এদিন আক্রমণকারীদের বিষয়ে আরো স্পষ্ট তথ্য দিয়েছে হোয়াইট হাউস। তাদের বক্তব্য, ইরানের মদতে একাধিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। একই ছাতার তলায় তারা অবস্থান করছে। তারাই জর্ডানে মার্কিন ঘাঁটিতে আক্রমণের সঙ্গে যুক্ত। তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইরান এই গোষ্ঠীগুলিকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে বলে অভিযোগ।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলি ইসরায়েল গাজা অভিযান শুরু করার পর সিরিয়া এবং ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিগুলিকে টার্গেট করেছে। ওই জায়গাগুলিতে বার বার আক্রমণ চালানো হচ্ছে। এমনকী তারা জর্ডানেও আক্রমণ চালিয়েছে। এদিকে অ্যামেরিকা বুধবার জানিয়েছে, হুতি যোদ্ধাদের একটি রকেট তারা ধ্বংস করেছে। অভিযোগ, ওই মিসাইলটি লঞ্চিং প্যাডে বসানো হচ্ছিল। আগাম খবর পেয়ে অ্যামেরিকা সেখানেই মিসাইলটি ধ্বংস করেছে।
এদিকে বুধবার রাতে সিরিয়ায় আক্রমণ চালিয়েছে ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান। সিরিয়ার সেনার বেশ কিছু সামরিক কাঠামো তারা ধ্বংস করেছে বলে ইসরায়েল জানিয়েছে। সিরিয়া থেকে ইসরায়েলে আক্রমণ চালানো হচ্ছিল বলে তাদের অভিযোগ।