1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

Käßmann Rücktritt

২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০

জার্মানির লুথেরান চার্চের প্রধান বিশপ মার্গট কেসমান মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর সময়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার ফলে দেশজুড়ে প্রবল বিতর্ক দেখা দিয়েছে৷ এই অবস্থায় বুধবার পদত্যাগের ঘোষণা করলেন কেসমান৷

জার্মানির লুথেরান চার্চের প্রধান বিশপ মার্গট কেসমানছবি: AP

বিশপ মার্গট কেসমান পদত্যাগ করলেন৷ ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক৷ তিনি নিজেকে কখনই প্রোটেস্টান্ট ধর্মের পোপ হিসেবে গণ্য করেন নি, যিনি সব ভুল-ভ্রান্তির উর্দ্ধে৷ লুথেরান চার্চের প্রথম নারী প্রধান কেসমানের জীবনে বিবাহ বিচ্ছেদ ও ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মত ঘটনা ঘটেছে৷ পরিস্থিতির সঙ্গে তিনি সংগ্রাম করেছেন, অত্যন্ত খোলামেলাভাবে তিনি সেবিষয়ে আলোচনাও করেছেন৷ ঠিক একারণেই তাঁর বিপুল জনপ্রিয়তা শুধু প্রোটেস্টান্ট সম্প্রদায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে নি – ধর্মীয় সংস্কারপন্থীদের দৃষ্টিতেও তিনি ছিলেন আশার এক আলো – সৎ, উদ্যমী এবং উদার৷ মানুষের কাছাকাছি থেকেও তারকা হয়ে উঠেছিলেন এই নারী৷

সমাজ যদি কোন ধর্মীয় নেতার ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমা করতে পারে, তাহলে কেসমানই সেই ব্যক্তিত্ব৷ গত শনিবার পুলিশ যখন তাঁর রক্তে অ্যালকোহল পরীক্ষা করতে চেয়েছে, তিনি আপত্তি করেন নি৷ নিজের আচরণেই স্তম্ভিত দেখাচ্ছিল তাঁকে৷ তিনি বলেন, তিনি মারাত্মক এক ভুল করে ফেলেছেন৷ বলেন, মদ খেয়ে গাড়ি চালানো কতটা বিপজ্জনক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন, সেবিষয়ে তিনি সচেতন৷

সাংবাদিকদের কেসমান বলেন, তিনি মারাত্মক এক ভুল করে ফেলেছেনছবি: DW-TV

যে অন্যকে জল খেতে বলে নিজে মদ খায়, সে সমালোচকদের হাতে মোক্ষম অস্ত্র তুলে দেয়৷ মার্গট কেসমানও তা বিলক্ষণ জানেন৷ তাঁর ভাবমূর্তি যে বহু বছরের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তা জানাই ছিল৷ এমনকি লুথেরান চার্চের সংগঠন তাদের নেত্রীর প্রতি সমর্থন জানানো সত্ত্বেও এবং জনসাধারণের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ তাঁর ভুল আচরণ ক্ষমা করতে প্রস্তুত হওয়া সত্ত্বেও কোন লাভ হয় নি৷ তাঁর নিজের দৃষ্টিভঙ্গীতে বিষয়টি ছিল অত্যন্ত স্পষ্ট৷ ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে থাকলে প্রকাশ্যে বার বার তাঁকে হেনস্তা করা হত৷ এমন এক পদে থেকে সেটা সহ্য করা অত্যন্ত কঠিন হত৷

বলাই বাহুল্য, কেসমানের সমালোচকের অভাব নেই৷ নিজের এবং খ্রিষ্টধর্মের অন্য সম্প্রদায়ের মধ্যে তাঁর সমালোচনা করা হয়৷ গোঁড়া রক্ষণশীলরা তাঁকে নারী হিসেবে প্রোটেস্টান্ট গির্জার শীর্ষ পদে গ্রহণ করতে চায় নি৷ ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্মিলিত প্রার্থনার প্রশ্নে পোপের কাছ থেকে কোন প্রত্যাশা নেই তাঁর, বলেছিলেন কেসমান৷ ফলে তাঁরা অসন্তুষ্ট হন৷ আফগানিস্তানে জার্মানির সামরিক অভিযানের জোরালো সমালোচনা করে তিনি রাজনীতিকদেরও চক্ষুঃশূল হয়েছিলেন৷

খ্রীষ্টধর্মের ইতিহাসে কেসমানই প্রথম ব্যক্তি নন, যিনি ভুল করেছেনছবি: AP

আজ অনেকে মজা পেলেও কেসমানের পদত্যাগ কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক ও মর্মান্তিক এক ঘটনা – বিশেষ করে জার্মানির প্রোটেস্টান্ট সম্প্রদায়ের জন্য৷ সংস্কারপন্থী হিসেবে মার্গট কেসমান সমাজে প্রোটেস্টান্ট ধর্মকে নতুন এক গুরুত্ব দিয়েছিলেন৷ যখন তিনি দেশে শিক্ষার ক্ষেত্রে আরও ন্যায্য বণ্টন, উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য আরও উদ্যোগের দাবি জানিয়েছেন, তখন তার মধ্যে যথেষ্ট সততা ও আন্তরিকতার ছাপ পাওয়া গেছে৷

নেতৃস্থানীয় নারী হিসেবে সমাজে নিজের ভূমিকাকে খাটো করে দেখালেও মার্গট কেসমান দেখিয়ে দিয়েছেন, যে পুরুষদের একচেটিয়া ক্ষেত্রের মধ্যেও এক নারী শীর্ষে ওঠার ক্ষমতা রাখেন – এমনকি বিবাহ-বিচ্ছেদ সত্ত্বেও৷ তিনি গির্জার আধুনিক ও উন্মুক্ত রূপের প্রতিনিধিত্ব করেছেন৷

আমি চেয়েছিলাম, মার্গট কেসমান যেন পদত্যাগ না করেন৷ কারণ এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমেও তিনি ধর্মীয় প্রতিনিধি হয়েও নিজের ভুল মেনে নেওয়ার দৃষ্টান্ত তৈরি করে আদর্শ হয়ে উঠতে পারতেন৷ মনে রাখতে হবে, খ্রীষ্টধর্মের ইতিহাসে তিনিই প্রথম ব্যক্তি নন, যিনি ভুল করেছেন৷ ওল্ড ও নিউ টেস্টামেন্টের অনেক আদর্শ ব্যক্তিত্ব নাটকীয় ভুল করেও ধর্মের বিকাশের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে গেছেন৷

লেখক: সাবিনে ডামাশকে, অনুবাদ: সঞ্জীব বর্মন

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ