১২ বছর আগে দিয়েছিলেন ‘ইন দ্য মুড ফর লাভ’৷ সে ভালোবাসা ছড়িয়ে ছড়িয়ে এবার ওয়ং কার-ওয়াই চলে এসেছেন বার্লিনালেতে৷ এসেই বাজিমাত করে দিয়েছেন মার্শাল আর্টের জাদুকরদের গল্প শুনিয়ে৷
বিজ্ঞাপন
৭ ফেব্রুয়ারি থেকে জার্মানির বার্লিনে শুরু হয়েছে চলচ্চিত্র উৎসব বার্লিনালে৷ এবারের উৎসবে জুরি বোর্ডের সভাপতি ওয়ং কার-ওয়াই৷ চীনের এ পরিচালকের নতুন ছবি ‘গ্র্যান্ডমাস্টার' দেখানো হয়েছে প্রথম দিনে৷ মূল প্রতিযোগিতার বাইরে রাখা হলেও পুরো ১১ দিনই দেখানো হবে ছবিটি৷ প্রথম দিনেই বোঝা গেছে বাকি দিনগুলোতেও দর্শকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতেই থাকবে ‘গ্র্যান্ডমাস্টার'৷ ব্রুস লি-র অবিশ্বাস্য সব মারামারির আকর্ষণ বলে কথা!
নানা রঙে রঙিন বার্লিনালে ২০১৩
‘‘বার্লিনালে আসছে’’– বললেই অনেকে বুঝে নেন জার্মানিতে শুরু হতে চলেছে বিশাল এক চলচ্চিত্র উৎসব৷ বার্লিনালে মানে ভালুকও থাকবে সেখানে৷
ছবি: Brian Deutschmann
ভালুক আসছে...
‘‘বার্লিনালে আসছে’’– বললেই অনেকে বুঝে নেন জার্মানিতে শুরু হতে চলেছে বিশাল এক চলচ্চিত্র উৎসব৷ বার্লিনালে মানে ভালুকও থাকবে সেখানে৷ ৭ই ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে উৎসব চলবে ১৭ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত৷ ১৯ জন পরিচালকের ছবি থাকবে প্রতিযোগিতায়৷ যিনি সেরা হবেন, তাঁর হাতেই উঠবে ভালুক৷ এখানে সেরার পুরস্কারই যে ‘গোল্ডেন বিয়ার’!
ছবি: Reuters
‘প্রেসিডেন্ট’ ওয়ং কার-ওয়াই
হ্যাঁ, তিনিও ‘প্রেসিডেন্ট’, তবে কোনো দেশের নয়, বিচারকদের নেতা তিনি৷ বার্লিনালের ৬৩তম আয়োজনে যে জুরি বোর্ড তারই প্রেসিডেন্ট ওয়ং কার-ওয়াই৷ নিজে পরিচালক৷ হংকং-এর নাগরিক ওয়ং-এর সর্বশেষ ছবি,‘ দ্য গ্র্যান্ডমাস্টার’ এবারের উৎসবেরও দেখানো হবে৷ তবে মূল প্রতিযোগিতায় থাকছে না সেটা৷
ছবি: 2011 Block 2 Productions Ltd.
সেই জাফর পানাহি
দু’বছর আগে তাঁকে ছয় বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল ইরান সরকার৷ শুধু কি তাই, বলা হয়েছিল ২০ বছরের মধ্যে দেশে কোনো কাজই করতে পারবেন না জাফর পানাহি৷ হাত বেঁধে ছেড়ে দেয়ার মতো অবস্থা আর কি! তা পানাহির মতো মানুষ কি কাজ ছাড়া থাকতে পারেন? ছবি নির্মাণের কাজ চলছেই৷ তাঁর নতুন ছবি ‘পার্দে’ বার্লিনালেতে নজর কাড়বেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তারার মেলা
বার্লিনালে চলবে আর বার্লিনে তারার মেলা বসবে না তা কি হয়? হলিউড, বলিউড থেকে শুরু করে বলতে গেলে বিশ্বের মোটামুটি সব দেশ থেকেই চলচ্চিত্র তারকারা এ সময়টায় চলে আসেন জার্মানিতে৷ ম্যাট ডেমন, স্টিভেন সনডারব্যার্গরা তো থাকবেনই, আরো অনেকেই আসছেন লাল গালিচার সংবর্ধনা নিয়ে বার্লিনালের আকর্ষণ বাড়াতে৷
ছবি: Scott Green
বার্নিলানের ‘রাজা’
জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল আর বার্লিনালের ‘রাজা’ ডিটার কসলিক৷ ১০ বছর ধরে যিনি বিশ্বের এত বড় এক উৎসবের পরিচালক, যাঁর নেতৃত্বে বার্লিনের এ আয়োজন দিন দিন আরো আলো ছড়াচ্ছে, তাঁকে ‘বার্লিনালের রাজা’ বলা যেতেই পারে, কী বলেন? তা কসলিক যে সমালোচনার ঊর্ধে সেরকম মোটেই নয়৷ তারপরও সত্যি হলো, তাঁর হাত ধরে বার্লিনালে এগোচ্ছে৷
ছবি: dapd
স্বাদে ভরপুর...
বার্লিনালের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, এখানে প্রায় নাম না জানা সব দেশের অখ্যাত পরিচালকদের ছবিও পায় দর্শক নন্দিত হওয়ার সুযোগ৷ এ নিয়মের ব্যতিক্রম হচ্ছে না এবারও৷ তাই থাকবে সুইজারল্যান্ডের পাসক্যাল মারসিয়ারের উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি ছবি ‘নাইট ট্রেন টু লিসবন’ দেখার সুযোগ৷ দেশের তালিকাতেও থাকবে ‘বিশ্বায়নের যুগ’-কে তুলে ধরার প্রমাণ৷
ছবি: 2012 Concorde Filmverleih/Sam Emerson
জার্মানির প্রতিনিধিত্ব
আয়োজক দেশ জার্মানির প্রতিনিধিত্ব করবে যে ছবিগুলো তার মধ্যে সবার আগে বলতে হবে টোমাস আর্সলানের ‘গোল্ড’-এর কথা৷ অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেয়া, বার্লিনে চলচ্চিত্র নিয়ে লেখাপড়া করে পরিচালনায় নামা পিয়া মারাইসের ‘লায়লা ফোরি’-র কথাও ভুললে চলবেনা৷ যৌথ প্রযোজনার এ ছবিটি দক্ষিণ আফ্রিকার এক একক মা-কে নিয়ে তৈরি৷
ছবি: Pandora Film
অন্যরকম আকর্ষণ
আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র ফোরাম৷ ‘ফোরাম’ শুনলেই মনে হয় না কোনো বিশেষ ভাবনা নিয়ে কিছু মানুষ এক হয়েছে? হয়েছেও তাই৷ বার্লিনালেতে বাণিজ্যিক সাফল্যের লক্ষ্যকে সামনে রেখে তৈরি হয়নি এমন ছবিগুলোও দেখানো হবে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে৷ তাই সামাজিক প্রয়োজন, খেটে খাওয়া মানুষের বাঁচার লড়াইয়ের মতো বিষয়গুলোও উঠে আসবে রূপালি পর্দায়৷
ছবি: Berlinale 2013
‘এ পৃথিবী আমাদের নয়’
ছবির নাম যদি হয় ‘এ পৃথিবী আমাদের নয়’, দেখতে মন চাইবে কিনা বলুন? ছবিটির পরিচালক ডেনমার্কের মাহদি ফ্লাইফেল৷ এটা অবশ্য পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি নয়, তথ্যচিত্র৷ আরবি এবং ইংরেজি – দুই ভাষাতেই তৈরি হয়েছে ছবিটি৷ দক্ষিণ লেবাননের এক শরণার্থীর দৈনন্দিন যুদ্ধ নিয়ে তৈরি এ তথ্যচিত্রের মতো এমন অনেক তথ্যচিত্রই থাকবে সাধারণ দর্শক সচরাচর যা দেখেন না৷
ছবি: Berlinale 2013
আদিবাসিদেরও উৎসব
আদিবাসিদের নিয়ে ছবি দেখতে চান? বার্লিনালেতে সে সুযোগও থাকছে৷ ওশেনিয়া, অস্ট্রেলিয়া, উত্তর অ্যামেরিকা এবং আর্কটিক অঞ্চলের ছবিগুলোর দিকে চোখ রাখলেই বুঝতে পারবেন বাকিটা৷
ছবি: Brian Deutschmann
10 ছবি1 | 10
ছবির কাহিনিতে উঠে এসেছে মার্শাল আর্ট ‘কুং ফু'-র ইতিহাস৷ আর কুং ফু-র ইতিহাস যে ব্রুস লি না থাকলে শেষ হয়ই না তা কে না জানেন! ব্রুস লিকে কুং ফু শিখিয়েছিলেন ইপ মান৷ তাঁকেও দেখা যাবে ছবিতে৷ দু'জনই প্রয়াত৷ স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের চরিত্র রূপায়নে বাড়তি শ্রম দিতে হয়েছে, নিষ্ঠার ছাপ রাখতে হয়েছে অভিনেতাদের৷ ব্রুস লি-র চরিত্র রূপায়ণ করেছেন হংকং-এর হার্টথ্রব টনি লিউং৷
বড় এক চ্যালেঞ্জ ছিল তাঁর সামনে৷ দর্শকদের কাছে ব্রুস লি-র মতো হয়ে ওঠা তো চাট্টি খানি কথা নয়৷ বার্লিনের সংবাদ সম্মেলনে টনি লিউং জানালেন এ জন্য নাকি ৪৬ বছর বয়সে কুং ফু শেখা শুরু করতে হয়েছে তাঁকে৷ অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন চারটি বছর৷ তারপর এক বছর আট মাস ধরে চলেছে ছবির শুটিং৷ তখন কিছু ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্যে অভিনয় করতে গিয়ে হাত ভেঙে যায়৷ তারপরও থামেননি৷
ছবির মূখ্য অভিনেত্রী ঝাং জি-ও কুং ফু শিখেই দাঁড়িয়েছেন ক্যামেরার সামনে৷ ফলে রূপালি পর্দার ব্রুস লি-র পাশে তাঁকেও কখনোই বেমানান মনে হয়নি৷ টনি লিউং আর ঝাং জি তো ছবির দুটি মাত্র চরিত্র৷ বাকি যাঁরা অভিনয় করেছেন তাঁদের কাছ থেকেও সেরা কাজটিই আদায় করে নিয়েছেন পরিচালক ওয়ং কার-ওয়াই৷ ‘গ্র্যান্ডমাস্টার' তাই তো বার্লিনালের শুরু থেকেই টানতে টানতে পারছে দর্শকদের৷