দলাই লামার উবাচ তাদের বিজ্ঞাপনে ব্যবহারের জন্য মার্সিডিজ বেঞ্জের তীব্র সমালোচনা শুরু করেছে চীন৷ আবারো প্রশ্নের মুখে চীনের গণতন্ত্র৷
বিজ্ঞাপন
‘যে কোনো ঘটনারই ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থাকে৷ সব দিকে নজর রাখলে মনের প্রশান্তি বৃদ্ধি পায়৷' আপাত নিরীহ এই উবাচ তিব্বতের বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর৷
কিন্তু রাজনীতিতে নিরীহ বলে কিছু হয় না৷ কূটনীতি তার নিজের নিয়মে চলে৷ আপাত সাধারণ সংলাপ থেকেও রাজনীতি খুঁজে নেয় খুঁত৷ তারপর শুরু হয় আক্রমণ৷ চীনেও ঠিক সেই ঘটনাই ঘটেছে৷ দলাই লামার বাক্যটিকে ব্যবহার করে জার্মান গাড়ি নির্মাণ সংস্থা মার্সিডিজ বেঞ্জ একটি বিজ্ঞাপনকরেছিল৷ বিজ্ঞাপনের ট্যাগ লাইনে লেখা হয়েছিল, ‘‘সপ্তাহ শুরু হোক জীবন সম্বন্ধে দলাই লামার একটি অনবদ্য উবাচ দিয়ে৷'' মার্সিডিজ ইনস্টাগ্রামে পোস্টটি করেছিল৷ চীনে অবশ্য ইনস্টাগ্রাম চলে না৷ তাদের নিজস্ব সোশ্যাল নেটওয়ার্ক আছে৷ কিন্তু কিছু কিছু চীনা দ্রুত সেই পোস্ট ইনস্টাগ্রাম থেকে কপি করে নিজেদের সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে দেয়৷ মুহূর্তের মধ্যে তা ভাইরালও হয়ে যায়৷ শুরু হয় সমালোচনার ঝড়৷ তিব্বত এবং দলাই লামা নিয়ে বাকি বিশ্ব যা-ই মনে করুক, চীনের কাছে বিষয়টি সংবেদনশীল৷ দলাই লামাকে তারা ‘গুপ্তচর' মনে করে৷ তিব্বতের স্বাধীনতার জন্য যিনি লড়ছেন৷ চীনের সরকার মনে করে, সন্ন্যাসীর পোশাকে দলাই লামা আসলে একজন ‘নেকড়ে'৷ ফলে তাঁর উবাচ ব্যবহার করে মার্সিডিজের বিজ্ঞাপন চীনারা ভালো চোখে দেখেননি৷
জার্মানরা আজও যে সব গাড়ি নিয়ে পাগল...
এই সব মডেলের গাড়ি দেখে গাড়ি প্রেমিকদের চোখে আজও জল আসে৷ ফল্কসভাগেন থেকে বিএমডাব্লিউ, ওপেল থেকে মার্সিডিজ বেঞ্জ অবধি জার্মান গাড়ি নির্মাতারা নানা ‘কাল্ট মডেল’ তৈরি করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Kneffel
ফল্কসভাগেন বিটল (১৯৩৮)
এক কথায় ‘ওল্ড ফেইথফুল’৷ সর্বসাকুল্যে দু’কোটি দশ লাখের বেশি বিটল তৈরি হয়েছে৷ ফল্কসভাগেন বিটল সম্ভবত বিশ্বের প্রখ্যাততম মোটরগাড়ি৷ ১৯৩৮ থেকে ২০০৩ সাল অবধি বিটল-এর ডিজাইন বিশেষ বদলায়নি৷ ‘হার্বি’ ফিল্মটার কথা মনে করুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফল্কসভাগেন টি-ওয়ান (১৯৫০)
...বলতে বোঝায় ফল্কসভাগেন ক্যাম্পার ভ্যান, যা হিপি আন্দোলনের সময় খুব জনপ্রিয় হয়েছিল৷ জার্মানরা এর নাম দিয়েছিলেন ‘বুলি’৷ সে-যাবৎ এক কোটির বেশি ফল্কসভাগেন বাস বিক্রি হয়েছে, যার মধ্যে টি-ওয়ান মডেলের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৮ লাখ৷
ছবি: DW/M. Reitz
মেসারস্মিট কেবিন স্কুটার (১৯৫৩)
মেসারস্মিট যে আদতে এয়ারোপ্লেন তৈরি করত, তিন চাকার এই এয়ায়োডাইনামিক গাড়িটির চেহারা দেখলেই তা বোঝা যায়৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিমান তৈরি বন্ধ হয়ে যায়, কাজেই মেসারস্মিট কিছুদিন ইঞ্জিনিয়ার ফ্রিটৎস ফেন্ড-এর সঙ্গে ‘ফ্লিটৎসার’ গাড়ির মডেলটি নিয়ে কাজ করে৷ তবে ১৯৫৬ সালের মধ্যেই মেসারস্মিট আবার বিমান উৎপাদনে ফেরে৷
ছবি: picture alliance/dpa/H. Galuschka
মার্সিডিজ ৩০০ এসএল (১৯৫৪)
গাড়িটার ডাকনাম হয়েছিল ‘গালউইং’ বা ‘গাঙচিলের পাখা’, কারণ দরজাগুলো ঠিক সেভাবেই ওপরের দিকে খুলত৷ ৩০০ এসএল সিলভার অ্যারো রেসিং কার-গুলো থেকেই মার্সিডিজ বেঞ্জ আবার মোটর রেসিং-এ ফেরে৷ লে মান্সের ২৪ ঘণ্টার মোটর দৌড় আর ক্যারেরা প্যানঅ্যামেরিকানা রেসিং ইভেন্টে জেতার পর ৩০০ এসএল গাড়ির একটি রাস্তায় চলা ও চালানোর মতো মডেল বার করা হয়৷
ছবি: Daimler AG
বিএমডাব্লিউ ইসেটা (১৯৫৫)
১৯৫৫ থেকে ১৯৬২ সাল অবধি ভালোই রোজগার করেছে বিএমডাব্লিউ এই ‘বাবল কার’ বা ‘বুদবুদ গাড়ি’-টি তৈরি করে৷ সস্তার কিন্তু কাজের এই মিনিগাড়িটিতে একটি মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন লাগানো ছিল৷ খুলতে হতো সামনে, ঠিক একটা ফ্রিজিডেয়ারের মতো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Kneffel
পোর্শে নাইন-ইলেভেন (১৯৬৩)
ভাবলেই আশ্চর্য লাগে, পোর্শে ৯১১ স্পোর্টিং মডেলটি চলে আসছে ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে! মোটরগাড়ির ইতিহাসে খুব কম মডেলই এতদিন ধরে চলে৷ তার উঁচু করা হেডলাইট আর পিছনদিকে নীচু বুট দেখলেই নাইন ইলেভেনকে চেনা যায়৷
ছবি: picture-alliance//HIP
মার্সিডিজ বেঞ্জ ৬০০ (১৯৬৪)
টেলিফোন, এয়ার কন্ডিশনিং আর ফ্রিজ লাগানো এই জার্মান লাক্সারি সেডানটি সত্তর আর আশির দশকে পোপ থেকে শুরু করে জন লেনন অবধি সেলিব্রিটিদের খুব প্রিয় ছিল৷ এমনকি ১৯৫৫ সালে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ যখন রাষ্ট্রীয় সফরে জার্মানিতে আসেন, তখন জার্মান সরকার মাননীয় অতিথির জন্য একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ ৬০০ ভাড়া করেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ট্রাবান্ট ৬০১ (১৯৬৪)
ফল্কসভাগেন বিটল পশ্চিম জার্মানিতে যা ছিল, পূর্ব জার্মানিতে ট্রাবান্ট ৬০১ ছিল ঠিক তাই৷ প্লাস্টিকের বডি আর টু-স্ট্রোক ইঞ্জিন সংযুক্ত এই ‘ট্রাবি’ ছিল এক হিসেবে পূর্ব জার্মানির প্রতীক৷ আজও প্রায় ৩৩,০০০ ‘ট্রাবি’ জার্মানির পথেঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷
ছবি: Imago/Sven Simon
ভার্টবুর্গ ৩৫৩ (১৯৬৬)
আইসেনাখ শহরের কাছে ভার্টবুর্গ দুর্গ, তারই নামে নাম রাখা হয়েছিল পূর্ব জার্মানির এই দ্বিতীয় আইকনিক গাড়িটির৷ তৈরি হতো প্রধানত রপ্তানির জন্য, যেমন হাঙ্গেরি অথবা ব্রিটেনে৷ তবে পশ্চিম জার্মানিতে ভার্টবুর্গ গাড়ির বিশেষ চাহিদা ছিল না৷
ছবি: picture-alliance/ZB/J. Wolf
ওপেল মান্টা (১৯৭০)
সৃষ্টি হয়েছিল মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য একটি স্পোর্টস মডেল হিসেবে – পরে সেটাই জার্মানির ‘ইয়ং ম্যান’-দের কাছে অভীপ্স বস্তু হয়ে দাঁড়ায়৷ মান্টা চালকদের নিয়ে জার্মানিতে অসংখ্য রসিকতা আছে: বিশেষ করে মান্টা চালকদের বুদ্ধি – অথবা তার অভাব নিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফল্কসভাগেন গল্ফ (১৯৭৪)
১৯৭৪ সালে ফল্কসভাগেন কোম্পানি তাদের প্রথম গল্ফ মডেল বার করে – সুবিখ্যাত বিটল গাড়ির উত্তরসূরি হিসেবে৷ কমপ্যাক্ট হলেও, গল্ফ ছিল বেশ ‘স্পোর্টি’ আর তেলও খেতো কম – যা সত্তরের দশকের ‘অয়েল ক্রাইসিসে’ খুবই কাজে লেগেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
11 ছবি1 | 11
সমস্যা অনুধাবন করে মার্সিডিজ দ্রুত তাদের পোস্ট ডিলিট করে দেয়৷ কিন্তু ততক্ষণে যা ঘটার ঘটে গিয়েছে৷ সমস্যার গভীরতা বুঝে মার্সেডিজ দুঃখপ্রকাশও করে৷ বলা হয়, চীনের মানুষের ভাবাবেগে আঘাত দেওয়া তাদের লক্ষ্য নয়৷ উল্লেখ্য, চীনে বছরে প্রায় ৬ লক্ষ গাড়ি বিক্রি করে জার্মান সংস্থাটি৷ সেই বাজার হারানোর কোনো ইচ্ছা তাদের নেই৷ কিন্তু মার্সিডিজের দুঃখপ্রকাশ গুরুত্ব পায়নি চীনে৷ চীন সরকারের মুখপত্র ‘‘পিপলস ডেইলি'তে লেখা হয়, ‘মার্সিডিজ নিজেকে চীনা মানুষের শত্রুতে পরিণত করল৷''
এর আগেও অবশ্য চীনে এমন ঘটনা ঘটেছে৷ স্পেনের বিমান সংস্থা ‘ডেলটা', পোশাক নির্মাতা সংস্থা ‘জারা', হোটেল চেন ‘ম্যারিয়ট' বিভিন্ন সময় তিব্বত নিয়ে বিজ্ঞাপন করে চীনের বিরাগভাজন হয়েছে৷ কোনো কোনো সময় চীন ওই সংস্থাগুলিকে বয়কট করেছে৷ সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, ওই বিজ্ঞাপনগুলিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ ‘লাইক' করলেও চাকরি যেতে পারে৷
চীনের গণতন্ত্র নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে৷ বস্তুত, তিব্বতে বৌদ্ধদের ওপর অগণতান্ত্রিক অত্যাচার নিয়ে বারবার সরব হয়েছেন দলাই লামা৷ অন্য দেশ সেই প্রতিবাদকে মর্যাদা দিলেও চীন কখনোই এসব সমালোচনাকে আমল দেয়নি৷ নতুন করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চীনের গণতন্ত্র নিয়ে আবার প্রশ্ন তৈরি হয়েছে বিশ্ব রাজনীতিতে৷
এসজি/রয়টার্স/ডিডব্লিউ
চালকহীন মার্সিডিজ বাস
আগামীতে ইউরোপের রাস্তায় এ ধরনের বাস দেখা যাবে৷ এমন একটি বাস যা আপনা আপনি চলবে কোনো চালক ছাড়াই৷ ছবিঘরে থাকছে চালকবিহীন বাস ও মিনিবাসের ছবি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/I. Wagner
ভবিষ্যতের গাড়ি
জার্মানির অটোমোবিল কোম্পানি মার্সিডিজ বেঞ্চ চালকবিহীন একটি বাস বানিয়ে রাস্তায় ছেড়েছে৷ নেদারল্যান্ডস-এর রাজধানী আমস্টারডামে এটি পরীক্ষা করা হয়েছে৷
ছবি: Daimler
গাড়ির গতি
এই গাড়ি ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার বেগে চলে৷
ছবি: Daimler
ড্রাইভার বসে আছে
বাসটি কিন্তু আপনা আপনি চলছে৷ ড্রাইভার কেবল বসে আছে দেখার জন্য কখনো কোন গণ্ডগোল বা দুর্ঘটনা হয় কিনা৷ কেননা এখন তো কেবল পরীক্ষা করা হচ্ছে৷
ছবি: Daimler
শত বছর পুরোনো ইঞ্জিন
ভবিষ্যতের বাস বলা হলেও এর ইঞ্জিন কিন্তু একশ’ বছরের পুরোনো৷ বাসে ১০টি ক্যামেরা লাগানো আছে, যা বাসের চোখ হিসেবে কাজ করে৷
ছবি: Daimler
ট্রাফিক আইন মেনে চলা
বাসটির মধ্যে যে ‘সেন্সর’ লাগানো আছে তা থেকে সে ঠিকই বুঝে যায়, কখন তাকে থামতে হবে আর কখন চলতে হবে৷ কোন লেন-এ চলতে হবে সেটাও যেমন বুঝতে পারে, আবার কেউ সামনে এসে পড়লে গতি কমাতেও জানে এটি৷
ছবি: Daimler
মিনি বাস
এটিও এমন একটি বাস যেটায় কোন ড্রাইভার বা চালক নেই৷ ফরাসি কোম্পানি নোভা বানিয়েছে এই মিনিবাসটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/I. Wagner
ট্যাক্সির সুবিধা
এই মিনিবাসে ট্যাক্সির মতো সুবিধা আছে৷ আপনি যেখানে চাইবেন ফোন করে ডেকে নিতে পারেন এটিকে৷ ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার বেগে চলে এটি৷