মালদ্বীপের এক তরুণী রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের মহিলা হোস্টেলে ‘আত্মহত্যা' করেছেন বলে জানা গেছে৷ কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং রাজশাহী পুলিশ ডয়চে ভেলেকে নিশ্চিত করেছে এই তথ্য৷
বিজ্ঞাপন
রাউধা আতিফের মরদেহ বুধবার দুপুরে রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের মহিলা হোস্টেলে তাঁর রুম থেকে উদ্ধার করা হয়৷ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আসা রাজশাহী পুলিশের উপকমিশনার আহমেদ জাফর ডয়চে ভেলেকে জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে যে তিনি ‘আত্মহত্যা’ করেছেন৷
২১ বছর বয়সি রাউধা আতিফ মালদ্বীপের একজন উঠতি মডেল৷ তাঁর ছবি ইতোমধ্যে ‘ভোগ’ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে প্রকাশিত হয়েছে৷ আহমেদ জাফর অবশ্য এই বিষয়টি অবগত নন বলে জানালেও আতিফের মৃত্যুর পেছনে আত্মহত্যার বাইরে আর কোনো আলামত পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ময়নাতদন্তের পর তাঁর মৃত্যুর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কিনা জানা যাবে৷ তবে আপাতত দেখে মনে হচ্ছে এটা আত্মহত্যা৷’’
রাউধা আতিফ বিষন্নতায় ভুগছিলেন বলে তাঁর সহপাঠীরা পুলিশকে জানিয়েছেন বলেও ডয়চে ভেলেকে বলেন আহমেদ জাফর৷ মেডিকেল কলেজের এইচআর কর্মকর্তা জাহিদ হাসানও ডয়চে ভেলের কাছে একই দাবি করেন৷ তিনি জানান, রাউধা আতিফ মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন৷ গত বছর থেকে রাজশাহীতে অবস্থান করছেন তিনি৷
এদিকে, আতিফের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছে মালদ্বীপের ‘সান’ পত্রিকা৷ তাঁর পরিবারের সদস্যরা ইতোমধ্যে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে বলে জানিয়েছে পত্রিকাটি৷ এতে আতিফের এক সহপাঠীর ফেসবুক পোস্টের বরাত দিয়ে লেখা হয়েছে যে, প্রাথমিকভাবে বিষয়টিকে আত্মহত্যা মনে করা হচ্ছে৷
ভোগ ইন্ডিয়া ম্যাগাজিনের ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসের প্রচ্ছদে রাউধা আতিফের ছবি প্রকাশ হয়েছিল৷ সেই সময় মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মেদ নাশীদ তাঁকে টুইটারে অভিনন্দন জানান৷
সমুদ্রের পানির মতো নীল চোখের অধিকারী হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন আতিফ৷ ইন্সটাগ্রামে তাঁর অনুসারীর সংখ্যা ত্রিশ হাজারের মতো৷ একদিন আগেও সেখানে দু'টি ছবি পোস্ট করেছেন তিনি৷ এছাড়া ফেসবুকেই দু'দিন আগে একটি ছবি শেয়ার করেছেন তিনি৷ তবে তাঁর কোনো প্রোফাইলের সাম্প্রতিক কোনো পোস্টে আত্মহত্যার ইঙ্গিতপূর্ণ কোনো কিছু দেখা যায়নি৷
আত্মহত্যা নয়, বেঁচে থাকাই সঠিক সিদ্ধান্ত
চরম অবসাদ, অপমান, গ্লানি, অবহেলা – একাধিক কারণে বেঁচে থাকার ইচ্ছা লোপ পেতে পারে৷ কিন্তু দুর্বল মুহূর্তের সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করে ফেললে ফিরে আসার আর কোনো উপায় থাকে না৷
ছবি: Fotolia/ lassedesignen
জীবন-মৃত্যুর প্রান্তে
সামনে শূন্যতা৷ ঝাঁপ দিলেই সব শেষ৷ মত বদলের কোনো অবকাশ নেই৷ কিন্তু মনের কোণে সামান্য সংশয় তো থেকেই যায়৷ বেঁচে না থাকলে সেই সংশয় যাচাই করার কোনো উপায় আছে কি?
ছবি: picture-alliance/dpa
আবেগ নয়, চাই যুক্তি
পৃথিবী থেকে চিরবিদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেও সেটি দ্রুত কার্যকর না করাই বুদ্ধিমানের কাজ৷ নেতিবাচক আবেগের কালো মেঘ কেটে গিয়ে যুক্তির খুঁটি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত মন থেকে দূর করতে পারে৷
ছবি: Fotolia/Chlorophylle
চরম কষ্টের তাড়না
আত্মহত্যার সিদ্ধান্তের পেছনে থাকে চরম বেদনা, হতাশা বা গ্লানি৷ সেই কষ্ট সহ্যের সীমা অতিক্রম করে যায়৷ দিশাহারা অবস্থায় মনে হয়, সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে৷ অথচ সেই কষ্ট কম করা, তা নিয়ে চলতে পারাও কিন্তু সম্ভব৷
ছবি: vkara - Fotolia.com
‘এই জগতে আমাদের ঠাঁই নেই’
একা নয়, প্রিয় মানুষটিকে সঙ্গে নিয়ে পার্থিব জগত ছেড়ে চলে যাবার কঠিন সিদ্ধান্তও নেন কেউ কেউ৷ সমাজ, ধর্ম, সম্প্রদায় বা রাষ্ট্র তাদের সম্পর্ক মেনে না নেওয়ায় কোণঠাসা হয়ে মৃত্যুই একমাত্র পথ বলে মনে হয়৷ অথচ বিকল্প কি একেবারেই থাকে না?
ছবি: Getty Images/AFP
অন্যের প্রতি দায়িত্ববোধ
জগতটা শুধু নিজেকে নিয়ে নয়৷ নিজের দুঃখ, কষ্ট, কঠিন সমস্যার গণ্ডির বাইরেও আছে এক বৃহত্তর পৃথিবী৷ অন্যরাও সেখানে পুরোপুরি সুখি নয়৷ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ, সম্ভব হলে তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে নিজের মনও শান্ত হতে পারে৷ অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নিজের জগত দেখলে নতুন উপলব্ধি জাগতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিঃসঙ্গতা থেকে আত্মহত্যার হাতছানি
নিঃসঙ্গতা, চরম একাকিত্ববোধ থেকেও আত্মহত্যার চিন্তা মনে আসে৷ অথচ নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার বদলে চারিদিকে তাকালে কাউকে না কাউকে ঠিকই পাওয়া যাবে৷ পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী বা অন্য কোনো বৃত্তের মধ্যে এমন কাউকে খুঁজে নেওয়া সম্ভব, যে দুঃখ-বেদনার কথা শুনতে প্রস্তুত৷ মন হালকা হলে আত্মহত্যার হাতছানিও উধাও হয়ে যাবে৷