উলরিশ ভেস্টরুপের মোবাইলে বারাবার রিং বাজার কারণ আসলে একটি প্রযুক্তি পণ্য৷ নিরিহ পশুগুলো জানেই না যে, এই বিশ্বস্ত মালিকটি আসলে তাদের উপর গোয়েন্দাগিরি করছেন৷ খামারে কি ঘটছে মুহূর্তের মধ্যেই সেটা জেনে যাচ্ছেন মালিক৷
অনেকে পছন্দ না করলেও, ভেস্টরুপ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গবাদি পশুর খবরাখবর রাখার পক্ষে৷ তিনি বলেন, ‘‘যন্ত্রটি গরুর বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি, তাদের গতিবিধিও পরিমাপ করতে পারে৷''
তবে গাভির অনেক আচরণের মধ্যে একটি বিশেষ দিকেই ভেস্টরুপের আগ্রহ বেশি৷ মাসে মাত্র একবার গর্ভধারণের উপযুক্ত ঋতুকাল পার করে তারা৷ ভেস্টরুপ বলেন, ‘‘পশুগুলি কোনো অস্বাভাবিক আচরণ করলে সেন্সর তা রেকর্ড করে৷ একটি পশু অপর একটি পশুর উপরে মাথা এলিয়ে দিলে বা অন্যের উপর উঠতে চেষ্টা করলে, বুঝতে হবে যে সে উত্তেজিত৷ কম্পিউটার তখন একে গর্ভধারণের ইঙ্গিত মনে করে৷ সঙ্গে সঙ্গে সেই তথ্য পৌঁছে যায় আমার মোবাইলে৷''
প্রতি বছর জুলাই থেকে অক্টোবরের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন গ্রামে গরুর দৌড় হয়৷ সম্প্রতি ভারতের সুপ্রিম কোর্ট গরুর দৌড় নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে৷ কিন্তু লোকজন যেভাবে গরুর দৌড় নিয়ে উৎসাহিত তাতে কি এটা আদৌ বন্ধ করা যাবে?
ছবি: DW/S. Bandopadhyayপ্রতি বছর জুলাই থেকে অক্টোবরের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন গ্রামে গরুর দৌড় হয়৷ বর্ষার আগমন উদযাপন করতে চালু হয়েছিল এই প্রথা, যেহেতু বর্ষা কৃষিকাজের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayযদিও গ্রামের বয়স্করা বলেন, প্রখর গ্রীষ্মে শুকিয়ে যাওয়া জমির উপরিভাগ একটু ভেঙে নিলে বৃষ্টির জল ভিতরে ঢুকতে পারবে এবং পরে লাঙল দিতে সুবিধে হবে - সেই তাগিদ থেকেই শুরু হয়েছিল গরুর দৌড়৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayকিন্তু এখন চাষের কাজে যন্ত্রচালিত লাঙলই ব্যবহার হয়৷ গরুর দৌড় তাই থেকে গিয়েছে একটা ক্রীড়া এবং বিনোদন হিসেবে৷ আর গবাদি পশুর মালিকদের কাছে এটা এখন একটা সম্মানের লড়াই৷ অন্যদিকে দৌড়বাজ গরুর উপর বাজি ধরেন সাধারণ দর্শক৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayকাজেই কিছু দর্শকের নিবিষ্ট চাহনি দেখেই বোঝা যায়, দৌড়ের কোনও অংশ তাদের নজর এড়িয়ে যায় না৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayগ্রামের কিশোর, তরুণরাও সকাল থেকে ভিড় জমায় রেসের মাঠে৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayগ্রামের কিশোরী, তরুণী এবং মহিলারা আর প্রবীণরা একটু নিরাপদ দূরত্বে থেকেই মজা দেখেন৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayএই নিরাপদ দূরত্ব রাখাটা জরুরি, কারণ গরুগুলো দিগবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছোটে৷ সম্ভবত ওরা কোনও মাদকের প্রভাবে উত্তেজিত থাকে৷ মাদকের মধ্যে সবথেকে সহজলভ্য কোল্ড ড্রিঙ্ক আর ব্যথা কমানোর ওষুধের মিশ্রন৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayযে কারণে একেকটা দৌড় যেই শেষ হয়, রাখালেরা গিয়ে একেকজন একেকটা গরুকে সামলাবার দায়িত্ব নিয়ে নেয়৷ জোর করে ওদের নিয়ে যায় সামান্য গভীর জলে, যাতে গরুগুলো একটু ঠান্ডা হয়৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayতবে পশু অধিকার সুরক্ষা সংগঠনগুলোর অভিযোগ পেয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট গরুর দৌড় নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে কারণ গরু দৌড়োবার উপযুক্ত প্রাণি নয় এবং তাদের নিয়ে প্রতিযোগিতার কারণে নানাভাবে তাদের কষ্ট দেওয়া হয়৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyayকিন্তু লোকে যেভাবে গরুর দৌড় নিয়ে উৎসাহিত, অদূর ভবিষ্যতে এই দৌড় বন্ধ হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই, সে আদালত বা পশুপ্রেমীরা যা-ই বলুন না কেন!
ছবি: DW/S. Bandopadhyay মাঝে অবশ্য আরেকটি পর্যায় রয়েছে৷ গরুর গলায় থাকা সেন্সর থেকে তথ্য প্রথমে চলে যায় ফ্রান্সের পর্যবেক্ষণ সংস্থা মেদ্রিয়া-য়৷ এরপর জার্মান টেলিকমের মাধ্যমে এসএমএস আকারে তা পৌঁছায় ভেস্টরুপের মতো কৃষকের কাছে৷
ভেস্টরুপের কাছে ষাড়ের হিমায়িত শুক্রাণু রয়েছে৷ এগুলো বেশ দামি৷ কোনো গরু গর্ভধারণের জন্য তৈরি হলে একটি নলের সাহায্যে গরুর দেহে শুক্রাণু প্রবেশ করিয়ে দেন তিনি৷
গবাদি পশুর উপর নজর রাখার এই প্রযুক্তি সস্তা নয়৷ একমাত্র যাঁদের একশো'র বেশি পশু রয়েছে, তাঁরা এটি ব্যবহারের সক্ষমতা রাখেন৷ ভেস্টরুপের পশুর সংখ্যা প্রায় ছয়শো৷ তিনি তাঁদের গর্ভকাল পর্যবেক্ষণে সেন্সরের সহায়তা নিতে এক বছরে খরচ করেছেন বিশ হাজার ইউরোর মতো৷ তবে এই বিনিয়োগের সুফলও আসতে শুরু করেছে৷