ইউরোপীয় ইউনিয়নের বুকে যথেচ্ছ পাখিশিকার? সেও কি সম্ভব? সম্ভব বৈকি, যদি ব্রাসেলসের অনুমতি থাকে৷ অনুমতির সঙ্গে থাকে শর্ত: বছরের কোন তারিখ থেকে কোন তারিখ পর্যন্ত পাখিশিকার করা চলবে৷
বিজ্ঞাপন
আবার পাখি শিকারের দিন এসেছে! লুকাস মিকালেফ যখন প্রথমবার বন্দুক হাতে ধরেন, তখন তাঁর বয়স ছিল দশ বছর৷ আজ তাঁর বয়স ছাব্বিশ৷ কিন্তু প্রতি বছর বসন্তে পাখিশিকার তাঁর কাছে আজও একটা বিশেষ অনুভূতি৷ কেননা এটা হল ঘুঘু আর তিতিরপাখি শিকারের মরসুম৷
লুকাস-কে অতি দ্রুত তাক করে গুলি চালাতে হয়৷ লক্ষ্য হলো, যে সব মরসুমি পাখি আফ্রিকা থেকে মাল্টা হয়ে ইউরোপের দিকে যাচ্ছে – স্থানীয় পাখিরা নয়৷ লুকাস বলেন: ‘‘পঁচিশ থেকে ত্রিশ মিটার দূরত্ব থেকে গুলি করলে, তাক ভালো হয়৷'' তারপর চালাও গুলি! সর্বত্র ঘাপটি মেরে বসে রয়েছেন শিকারিরা৷ ঘুঘুপাখি শিকারের আদর্শ দিন৷ তবে লুকাস কিছুটা হতাশ: ‘‘গুলি লাগানো শক্ত, ওরা অত্যন্ত তাড়াতাড়ি ওড়ে বলে৷ মুহূর্তের মধ্যে সরে যায়! কাজেই একবার মিস করলে, সেটাই শেষ সুযোগ৷''
হুমকির মুখে যেসব প্রাণী
হুমকির মুখে থাকা কিছু প্রজাতির প্রাণী লাল তালিকাভুক্ত করা হয়েছে৷ এদের মধ্যে আফ্রিকার ওকাপিসহ আরো ২০০ পাখি রয়েছে৷ তবে অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে৷
ছবি: Reuters
ওকাপি’র সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে
জিরাফের মতো দেখতে এই ওকাপি’র বাস কঙ্গোতে৷ আফ্রিকার ঐ অঞ্চলে কত প্রাণীর বাস তার হিসাব রাখে ওয়ার্ল্ড কনজারভেশন ইউনিয়ন (আইইউসিএন)৷ সংস্থাটি সম্প্রতি হুমকির তালিকায় থাকা প্রাণীদের নাম প্রকাশ করেছে৷ সেখানে দেখা যাচ্ছে, কঙ্গোর উত্তর-পূর্বাঞ্চলে থাকা এই ওকাপির সংখ্যা নব্বইয়ের দশকে ছিল ৪,৪০০৷ দশ বছর পর এই সংখ্যা দাঁড়ায় ২,৫০০ তে৷ কঙ্গোর সহিংসতা এবং খনি ব্যবসাকে এ জন্য দায়ী করা হচ্ছে৷
ছবি: cc-by-sa-3.0/Raul654
বিলুপ্তির পথে
আইইউসিএন জানিয়েছে, ওকাপি এখন হুমকির মুখে৷ তাদের তৈরি তালিকার একেবারে তলানিতে আছে ওকাপির নাম৷ অর্থাৎ এরাই সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে রয়েছে৷ এমন অনেক প্রাণী আছে, আজ থেকে ২০০ বছর আগেও যাদের অস্তিত্ব ছিল, কিন্তু এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে, যেমন বালি টাইগার৷ বাঘের প্রায় সব প্রজাতিই আজ হুমকির মুখে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দুইশ প্রজাতির পাখি হুমকির মুখে
নতুন রেড লিস্টে দুইশ প্রজাতির পাখিও রয়েছে৷ এদের মধ্যে অনেক শকুন আছে, যাদের বাস ভারত ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায়৷ আইইউসিএন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছে, চীন ও মালয়েশিয়ার অনেক শকুন এরই মধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে৷ ইথিওপিয়া, জিম্বাবুয়ে এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকা অনেক শকুন এখন হুমকির মুখে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এশিয়ার হাতি দ্রুত কমছে
বিশ্বে এখনও এশিয়ান এলিফেন্টের সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ হাজার৷ কিন্তু এরাও হুমকির মুখে রয়েছে৷ গত তিন প্রজন্ম ধরে এই প্রজাতির হাতির সংখ্যা কমছে৷ আইইউসিএন বলছে, তিন প্রজন্মে হাতির সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে৷ বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, চীন ও ইন্দোনেশিয়ায় এশিয়ান হাতি দেখতে পাওয়া যায়৷
ছবি: picture-alliance/Horst Galuschka
পাচার ও দাঁত বিক্রির কারণে বিপদ
কেবল এশিয়া নয়, আফ্রিকার হাতিরাও হুমকির মুখে৷ বন উজাড় এবং দাঁতের জন্য শিকারীদের উৎপাতও হাতিদের সংখ্যা কমানোর জন্য দায়ী৷ সেইসাথে অবৈধভাবে শিকার এবং চুরি করে পাচার করাও দিন দিন বাড়ছে৷ হাতি পাচার রোধে এ মাসের ২ থেকে ৪ ডিসেম্বর বতসোয়ানায় ‘আফ্রিকান এলিফেন্ট সম্মেলন’-এর আয়োজন করে আইইউসিএন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিলুপ্তির পথে মাছ
ডলফিনের মত দেখতে এই পরপয়েসদের সচরাচর দেখা যায় ক্যালিফোর্নিয়ায়৷ মাছ ধরার জালে আটকে প্রায়ই মারা যায় এরা৷ কখনো কখনো জেলেরা এদের ধরে নিয়ে যায়৷ ফলে হুমকির মুখে রয়েছে এই প্রজাতিটি৷ বিশ্বে এখন মাত্র ৫০০ থেকে ৬০০ পরপয়েস রয়েছে৷
ছবি: WDC
কিছু প্রাণীর ক্ষেত্রে আশার আলো
কিছু কিছু প্রজাতির ক্ষেত্রে অবশ্য উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যেমন লেদারব্যাক কচ্ছপ৷ অথচ এক দশক আগে এই প্রজাতির কচ্ছপটি ছিল রেড লিস্টে, অর্থাৎ হুমকির মুখে৷ দুই মিটার লম্বা এবং আধা টন ওজনের এই কচ্ছপগুলো আকারে সবচেয়ে বড় হয়৷ এদের হুমকির মুখে পড়ার কারণ সাগরের দূষণ৷
ছবি: gemeinfrei
প্রাণী কল্যাণ সংস্থার অবস্থা
এছাড়া ব্ল্যাকব্রোও অ্যালবাট্রসের সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে৷ নতুন লাল তালিকায় এই প্রজাতির পাখির আশানুরূপ উন্নতি হয়েছে৷ আইইউসিএন এর পরিচালক ইয়ান স্মার্ট জানান, অনেক প্রজাতির উন্নতি হলেও এখনও ২১,০০০ প্রাণী হুমকির মুখে রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শেষবার দেখার সুযোগ: পান্ডা, গন্ডার, লিঙ্কস
হুমকির মুখে থাকা প্রাণীগুলোর মধ্যে অন্যতম জায়ান্ট পান্ডা৷ বিশ্বে এদের সংখ্যা মাত্র ১০০০ থেকে ২০০০৷ আর আছে সুমাত্রার গন্ডার, যাদের মোট সংখ্যা মাত্র ২২০৷ এছাড়া লাইবেরিয়ার লিঙ্কসও আছে এই তালিকায়৷ এদের সংখ্যা মাত্র ৮০ থেকে ১৫০টি৷ ১৯৬৩ সাল থেকে এই রেড লিস্ট প্রকাশ করে আসছে আইইউসিএন৷
ছবি: Reuters
9 ছবি1 | 9
মাল্টার বহু মানুষের কাছে পাখিশিকার একটি সুপ্রাচীন পারিবারিক ট্র্যাডিশন৷ অন্যান্য শিকারিদের মতো লুকাস-ও পাখিশিকার শিখেছেন তাঁর বাপ-পিতামহর কাছে৷ প্রতি বছর মাল্টার শিকারিরা এগারো হাজার ঘুঘু আর পাঁচ হাজার তিতির মারতে পারেন – সেটাই তাঁদের বরাদ্দ৷ মাল্টার শিকারিরা ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকে আবার একটা বিশেষ অনুমতির ব্যবস্থা করেছেন – পরিবেশ সংরক্ষণকারীরা যা নিয়ে চিন্তিত৷
টিলার উপর
লুকাস আমাদের সাগরপারের টিলায় নিয়ে গেলেন৷ মরসুমি পাখিরা সাগর পার হয়ে এসে এখানেই বিশ্রাম নেয়৷ কাজেই জায়গাটা পাখিশিকারিদের স্বর্গ৷ প্রত্যেক পঞ্চাশ মিটার অন্তর বন্দুক হাতে একজন শিকারি৷ লুকাস মাইকেল-এর কাছে এসে দাঁড়ালেন৷ মাইকেল বন্দুক, গুলিবারুদ আমদানি করে থাকেন৷ আজ তিনি এক দঙ্গল পাখিশিকারিকে নির্দেশ দিচ্ছেন, পরিচালনা করছেন৷ দ্বিপ্রহর অবধি শিকার চলবে৷ ঠিক দুপুর একটায় শিকারিদের বন্দুক খাপে ভরতে হবে৷
পাখি বাঁচানোর নেশা
পশুপ্রেমীরা শিকারিদের ওপর নজর রেখেছেন; খেয়াল রাখছেন, যাতে তারা নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে গুলি না চালায়৷ আক্সেল হিয়র্শফেল্ড প্রতি বছর জার্মানি থেকে মাল্টা আসেন পাখিশিকারিদের হাত থেকে মরসুমি পাখিদের বাঁচানোর জন্য – অন্তত যতোটা পারা যায়৷ ‘পাখিহত্যা প্রতিরোধ কমিটি'-র পশুপ্রেমী আক্সেল হিয়রশফেল্ড বলেন, ‘‘মাল্টা সারা বিশ্বে একটা ব্যতিক্রম৷ দ্বীপটির আয়তন ও জনসংখ্যার কথা ভাবলে, পৃথিবীর আর কোনো জায়গায় একসঙ্গে এতোজন মানুষ শিকার করেন না৷ এর ফলে যে সব পাখি শিকার করা চলে অথবা চলে না, সকলেরই এই দ্বীপে এলে আর বাঁচার উপায় থাকে না৷''
২০১৫ সালের বাছাই প্রাণীরা
জার্মানিতে যে সব প্রাণীর বিশেষ সুরক্ষা প্রয়োজন, প্রতিবছর বিভিন্ন সংগঠন তাদের মধ্যে কয়েকটিকে নির্বাচন করে ‘‘২০১৫ সালের জীবজন্তু’’ হিসেবে তাদের নাম প্রকাশ করেছে৷ দেখা যাক কারা এবার এই সম্মান পেল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Schmitt
হলুদরঙা গঙ্গাফড়িং
ইংরিজিতে বলে ‘ইয়েলো উয়িংড ডার্টার’, যাকে ‘‘২০১৫ সালের ফড়িং’’ হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে৷ জীবটি আজ সর্বাধিক বিপন্ন প্রজাতিগুলির রেড লিস্টে অন্তর্ভুক্ত৷ এর কারণ হল, জার্মানি থেকে জলাভূমি প্রায় লোপ পেয়েছে৷ ফড়িংটিকে চেনা যায় তার পাখার ডগায় হলদে দাগ দেখে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. J. Los
বুনো খরগোশ
‘জার্মান বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সমিতি’ বুনো বাদামি খরগোশকে ‘২০১৫ সালের বন্যপ্রাণী’ বলে ঘোষণা করেছে৷ কৃষিকাজ বাড়ায় বুনো খরগোশের বাসস্থান ক্রমেই সঙ্কুচিত হয়ে আসছে৷ চাষের জমির পাশে আলের জমি কিংবা ঝোপঝাড় কমে এসেছে৷ কাজেই জার্মানদের চিরপরিচিত বুনো খরগোশ আজ এ দেশে বিপন্ন প্রজাতির লাল তালিকায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Stratenschulte
ড্যানিউব নদীর স্যালমন মাছ
জার্মানিতে এই সুস্বাদু মাছটি শুধু ড্যানিউব নদীর অববাহিকাতেই সীমাবদ্ধ৷ কিন্তু ড্যানিউব নদীতে বহু স্লুইস গেট বা জলকপাট বসানোর ফলে স্যালমন মাছগুলোর চলাফেরা ও ডিম পাড়ায় বাধা পড়েছে৷ নদীর বহু অংশ থেকে ড্যানিউব স্যালমন উধাও হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel/A. Hartl
প্রজাপতিও পতঙ্গ
তাই জার্মানির ‘স্পেকট্যাকল পি’ব্লু’ বা রুপোলি-সবুজ নীলরঙা প্রজাপতি ২০১৫ সালের পতঙ্গ নির্বাচিত হয়েছে৷ ছবিতে যাকে দেখা যাচ্ছে, সে হল পুরুষ; এ জাতের স্ত্রী প্রজাপতি সাদামাটা, কিছুটা বাদামি, ওপরে ফুটকি৷ এই জাতের প্রজাপতি পিঁপড়েদের সঙ্গে ‘সিমবায়োসিস’, মানে পারস্পরিক সুবিধা দিয়ে এবং নিয়ে বাঁচে৷ প্রজাপতির শূককীট থেকে যে মিষ্ট রস নির্গত হয়, তা পিপীলিকাদের প্রিয়; তাই পিঁপড়েরা শূককীটদের রক্ষা করে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Schmitt
বর্ম থাকলেও বিপন্ন
ইউরোপিয়ান পন্ড টার্টল বা পুকুরের কচ্ছপ ‘‘২০১৫ সালের সরীসৃপ’’ নির্বাচিত হয়েছে৷ হলদে ফুটকি দেওয়া কাছিমটি আজ শুধুমাত্র ব্রান্ডেনবুর্গে পাওয়া যায়৷ কচ্ছপ ধরা ও কেনাবেচা ছাড়াও, মধ্য ইউরোপের বেশ কয়েক প্রজাতির কচ্ছপের জন্য যেমন সূর্যকিরণ, তেমনই জলাভূমি আবশ্যক৷ কেননা জলের নীচেই কাছিমরা তাদের খাদ্য খুঁজে পায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Robert Schlesinger
যে প্রজাপতি গাছ ভালোবাসে
‘রেড আন্ডারউয়িং’ হল ২০১৫ সালের প্রজাপতি৷ পিছনের লালরঙা পাখাগুলো আসলে শত্রুকে ভয় দেখানোর জন্য: এগুলো অন্য রংয়ের নীচে লুকনো থাকে; একমাত্র বিপদ দেখলেই প্রজাপতি তার পাখা মেলে ধরে শত্রুকে ভয় দেখায়৷ তবে এই জাতের প্রজাপতির শূককীট পপলার আর উইলো গাছের পাতা খেতে ভালোবাসে - এবং সে ধরনের গাছ কমে আসার ফলে ‘রেড আন্ডারউয়িং’ শীঘ্রই লাল তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/BUND
লাজুক বিজয়ী
২০১৫ সালের পাখি হল ‘গস’হক’ নামের একটি শিকরে বাজ৷ পাখিটিকে স্বল্পই দেখা যায়: হয় সে শিকার করছে কিংবা আকাশে চক্কর কাটছে৷ তাকে ২০১৫’র পাখি হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে কেননা তার মতো বহু শিকারী পাখি আজও মানুষের গুলিতে প্রাণ হারায় - যদিও গসহক শিকার সত্তরের দশক থেকেই নিষিদ্ধ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jens Wolf
ভাঁড়ারের শামুক
ইংরিজি নাম ‘কেলার স্নেল’৷ এমনিতে খুব বেশি চোখে পড়ে না৷ দেখতে পাওয়া যাবে পাহাড়ের গুহায়, খনিগর্ভের সুড়ঙ্গে, মাটির তলার ভাঁড়ারঘরে৷ ঠাণ্ডা আর বরফের হাত থেকে বাঁচার জন্য যে সব জীব মাটির তলায় আশ্রয় খোঁজে, তাদেরই প্রতিনিধি এই ভাঁড়ারের শামুক৷ তাই সে যে ২০১৫ সালের ‘গুহাবাসী প্রাণী’ নির্বাচিত হয়েছে, তাতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই৷
ছবি: K. Bogon
8 ছবি1 | 8
সেই সঙ্গে রয়েছে বেআইনি পাখিশিকার৷ পশুপ্রেমীরা সেদিকেও নজর রাখেন৷ এখানে যেমন তারা একটি মরা কোকিল খুঁজে পেয়েছেন৷ কোকিল মারা আসলে নিষিদ্ধ৷ কিন্তু কিছু শিকারি পয়সার জন্য সব কিছু করতে পারেন৷ হিয়রশফেল্ড বলেন, ‘‘একটা ব্ল্যাক স্টর্ক বা সারসপাখি, কিংবা কোনো জাতের ঈগল পাখি মারতে পারলে, তা থেকে অনেক টাকা রোজগার করা যায়৷ কালোবাজারে ঐ ধরনের একটি খড়-পোরা, পালকসহ বাজপাখির দাম বেশ কয়েক হাজার ইউরো৷''
পাখিশিকার একটা ট্র্যাডিশন
অপরদিকে পাখিশিকারি লুকাস মিকালেফ-এর মতে: ‘‘ওরা বেআইনি পাখিশিকারে আইনসম্মত পাখিশিকারের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে৷ যারা বেআইনিভাবে পাখি মারে, তারা শিকারি নয়, তারা অপরাধী৷''
শিকারিদের এখন পোয়াবারো৷ গত এপ্রিল মাসের একটি গণভোটে মাল্টার অধিবাসীদের একটি সব মিলিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ পাখিশিকারের সপক্ষে ভোট দিয়েছে৷ কাজেই মাল্টা এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের একমাত্র সদস্য দেশ, যেখানে বসন্তকালে পাখি মারা চলে৷
পাখিশিকারি আল্দো আৎসোপারদি বলেন, ‘‘আমাদের শিকারের শতকরা ৯৫ ভাগই হলো অলীক আশা! দু'টো পাখি মারলেই কোটা ফুরিয়ে বন্দুক কাঁধে করে বাড়ি যাওয়ার সময় – কেননা সেটাই আইন৷''
লুকাস এ যাবৎ একটিও পাখি মারতে পারেননি৷ কিন্তু তিনি আর অন্যান্য শিকারিদের কাছে ঐতিহ্যের মূল্য প্রাণী সংরক্ষণের চেয়ে অনেক বেশি৷ লুকাস বলেন, ‘‘আশা করব, আমার ছেলে কিংবা নাতিরাও পূর্বপুরুষের এই ঐতিহ্য বজায় রাখতে পারবে৷''
তবে পাখি শিকারের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা থেকে যাচ্ছে৷ নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি পাখি মারা হলে সরকার পাখিশিকার নিষিদ্ধ করতে চায়৷ একটি পাখি ইউরোপ অভিমুখে তার যাত্রা অব্যাহত রাখতে পারবে বলে আশা করা যেতে পারে – যদি না অন্য কোনো শিকারি ঘোড়া টিপে দেন!
‘পবিত্র’ যত গাছপালা ও প্রাণী
বিশ্বের একেক স্থানে, একেক ধর্মে একেকটা প্রাণী বা গাছপালা পবিত্র৷ মানুষ সেভাবেই খুব মর্যাদার আসনে রাখে সেই গাছপালা ও প্রাণীগুলোকে৷ চলু্ন জেনে নিই সেরকম কিছু প্রাণী ও গাছপালার কথা৷
ছবি: picture-alliance.de
বেবুন
ভয়ংকর আক্রমণাত্মক মেজাজের এই বেবুনটা দেখলে কারো পক্ষে বিশ্বাস করা কঠিন যে এমন একটা প্রাণীকেই একসময় মিশরের মানুষ ‘স্বর্গীয়’ মনে করতো৷ প্রাচীন মিশরে বেবুনকে বিজ্ঞান এবং চাঁদের অবতার মানা হতো৷
ছবি: Sonja Pauen / CC BY 2.0
খেজুর
খেজুরেরও একসময় ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় কদর ছিল৷ খ্রিস্টান এবং ইহুদিরা দীর্ঘকাল এই খেজুর গাছকে পুনরুত্থানের প্রতীক হিসেবে ভক্তিভরে শ্রদ্ধা করেছে৷
ছবি: Jan Smith / CC BY 2.0
গুবরে পোকা
মিশরে আবার পুনরুত্থানের প্রতীক ভাবা হতো গুবরে পোকাকে৷ গুবরে পোকাকে পুনরুত্থানের প্রতীক ভেবে একরকম পূজাই করত প্রাচীন মিশরের মানুষ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘বানরের রুটির গাছ’
ছবির এই গাছটিকে আফ্রিকার মানুষ চেনে বাওবাব গাছ নামে৷ অতিকায় এই গাছে বিশেষ কিছু চোখে পড়েছে? হ্যাঁ, গাছগুলোর ওপর থেকে নীচ পর্যন্তই যেন শেকড়৷ আফ্রিকায় এই বাওবাব গাছের আদুরে নামও অনেক৷ কেউ বলে ‘জীবনের গাছ’, কেউবা ডাকে ‘বানরের রুটির গাছ’ নামে৷ অনেক রোগের চিকিৎসার কাজেও ব্যবহার করা হয় বাওবাব গাছের পাতা৷
ছবি: SAM PANTHAKY/AFP/Getty Images
‘ঈশ্বরের সেক্রেটারি’!
বেবুনের মতো এই সারস পাখিকেও খুব ভক্তি করতো প্রাচীন মিশরের মানুষ৷ এর সঙ্গেও ঈশ্বরের একটা যোগসূত্র খোঁজা হতো৷ কেউ কেউ তো সারসকে ‘ঈশ্বরের সেক্রেটারি’ ধরে নিয়ে তার মন জয় করারও চেষ্টা করতো!
ছবি: hyper7pro / CC BY 2.0
দেবী আফ্রোদিতির প্রিয়...
ডালিমের বিশেষ কদর অনেক ধর্মেই ছিল৷ উর্বরতা, ভালোবাসা এবং জীবনের প্রতীকও ভাবা হতো লাল টুকটুকে এই ফলকে৷ গ্রিসের মানুষ একসময় মনে করতো, দেবী আফ্রোদিতির খুব পছন্দের ফল ডালিম৷ তাই প্রতিটি বাড়ির সামনে লাগানো হতো একটা করে ডালিম গাছ৷
ছবি: AFP/Getty Images
গরু শুধু গরু নয়...
গরু নিছক একটা প্রাণী নয়৷ এর চামড়া, মাংস এবং দুধের কদর তো সারা বিশ্বে৷ ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও অন্যরকম গুরুত্ব দেয়া হয় গরুকে৷ অনেক ধর্মপ্রাণ হিন্দু গরুকে তুলনা করেন মায়ের সঙ্গে, গরু পায় ‘গো-মাতা’-র মর্যাদা৷ অন্যদিকে বিশ্বের অনেক দেশে মুসলমানরা তাঁদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসবে গরু কোরবানি দেন৷
ছবি: Getty Images
পদ্মফুল
পদ্মফুলও হিন্দুদের কাছে খুব পবিত্র৷ বিষ্ণু দেব এবং দেবী লক্ষ্মীর পূজা পদ্ম ফুল ছাড়া ভাবাই যায়না৷
ছবি: Takashi .M / CC BY 2.0
ইঁদুর
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে ইঁদুরেরও খুব কদর৷ গণেশের বাহন হিসেবে অনেক পূজামণ্ডপেও দেখা যায় ইঁদুরের প্রতিমূর্তি৷