মাল্টায় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো ব্লগার নিহত
১৭ অক্টোবর ২০১৭
আগেই পুলিশকে জানিয়েছিলেন, তাঁকে হত্যা করা হতে পারে৷ সোমবার বোমায় উড়ে যায় তাঁর গাড়ি৷ ব্লগার কারুয়ানা গালিজিয়ার এমন মৃত্যুতে মাল্টায় নেমেছে শোকের ছায়া৷ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেয়া হবে৷
বিজ্ঞাপন
চার মাস আগেই সাধারণ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতে ক্ষমতার মেয়াদ আরো দীর্ঘ করেছেন প্রধানমন্ত্রী জোসেফ মুসকাট৷ ফলে ২০১৩ সাল থেকে বিরামহীনভাবেই তিনি ক্ষমতাসীন৷ তাঁর বিরুদ্ধেই দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলেছিলেন দেশের সুপরিচিত সাংবাদিক, ব্লগার কারুয়ানা গালিজিয়া৷ গালিজিয়ার অভিযোগ ছিল, প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী, তাঁর চিফ অফ স্টাফ এবং এক মন্ত্রী ব্যাপকভাবে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত৷ প্রধানমন্ত্রী সে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছিলেন, ‘‘মাল্টার রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মিথ্যা এটি৷'' এক ম্যাজিস্ট্রেটকে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের দায়িত্বও দিয়েছিলেন৷ কিন্তু চিফ অফ স্টাফ এবং মন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্তের কোনো উদ্যোগই নেয়া হয়নি৷
প্রধানমন্ত্রী জোসেফ মুসকাটও এক সময় সাংবাদিক ছিলেন৷ মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে তিনি যথেষ্টই সোচ্চার৷ কারুয়ানা গালিজিয়ার মর্মান্তিক মৃত্যুর পর সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ‘‘আজ যা ঘটে গেল তা অনেক কারণেই অগ্রহণযোগ্য৷ আমাদের গণতন্ত্র এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য আজ কলঙ্কের দিন৷'' কারুয়ানা গালিজিয়া যে তাঁর কট্টর সমালোচক ছিলেন সে কথা স্বীকার করে হত্যাকাণ্ডের বিচারের আশ্বাসও দিয়েছেন৷ বলেছেন, ‘‘সবাই জানেন যে, কারুয়ানা গালিজিয়া রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত- দুভাবেই আমার কঠোর সমালোচক ছিলেন৷ তা সত্ত্বেও এমন বর্বরোচিত কাজকে মেনে নেয়া যায় না৷ বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমি থামবো না৷''
কারুয়ানা গালিজিয়ার বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর৷ তিন সন্তানের জননী ছিলেন তিনি৷ সোমবারও একটি ব্লগ পোস্ট দিয়েছিলেন৷ সেখানে লিখেছিলেন, চিফ অফ স্টাফ কিথ শেম্ব্রি নিজের প্রভাববলয় খাটিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েই চলেছেন৷ দুপুরে নিজের গাড়ি চালিয়ে ঘর থেকে বেরিয়েছিলেন৷ কিছু দূর যাওয়ার পরই বোমা বিস্ফোরণে উড়ে যায় গাড়ি৷ রাস্তার ধারের মাঠে পাওয়া গেছে কারুয়ানার ছিন্নভিন্ন দেহের কিছু অংশ৷
প্রতিবাদী, নির্ভিক এক কলমযোদ্ধার মৃত্যুতে মাল্টা এখন শোকের চাদরে ঢাকা৷ সর্বস্তরের মানুষ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ এবং বিচারের দাবিতে নেমে এসেছেন রাস্তায়৷ সোমবার রাতে মোমের আলোয় সারি সারি ফুলের স্তবক থেকে উঁকি দিচ্ছিল কোনো এক প্রতিবাদকারীর লিখে যাওয়া দু'টি বাক্য, ‘‘জনগণ যখন সরকারকে ভয় করে, বুঝতে হবে জুলুমবাজি চলছে, সরকার যখন জনগণকে ভয় পায়, বুঝতে হবে মুক্তি আসন্ন৷ ''
এসিবি/জেডএইচ (এপি, ডিপিএ, এএফপি)
সবচেয়ে কম শরণার্থী নেবে মাল্টা, সবচেয়ে বেশি জার্মানি
১ লাখ ২০ হাজার শরণার্থী নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল৷ তা কেটে গেছে৷ ভোটাভুটির মাধ্যমে ঠিক হয়েছে এই ১ লাখ ২০ হাজার শরণার্থীকে ভাগ করে নেবে ইইউ-র দেশগুলো৷ এ পর্যায়েও সবচেয়ে বেশি শরণার্থী নেবে জার্মানি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Zak
জার্মানির স্বস্তি
অনেক শরণার্থী এসেছে জার্মানিতে৷ অথচ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশির ভাগ দেশ শরণার্থী নিতে নারাজ৷ এ অবস্থায় ইইউ-র সব সদস্য দেশকে কোটা অনুযায়ী শরণার্থী নিতে হবে – এমন দাবি জানিয়েছিল জার্মানি৷ মঙ্গলবারের বৈঠকে দাবি পূরণ হয়েছে৷ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে সিদ্ধান্ত হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার শরণার্থীকে ভাগ করে দেয়া হবে৷ জার্মানি নেবে ৩১ হাজার ৪৪৩ জন৷ বছর শেষে জার্মানিতে আগত মোট শরণার্থী ৮ লাখে হয়ে যেতে পারে৷
ছবি: Reuters/O. Orsal
জার্মানির পরই ফ্রান্স
কোটা অনুযায়ী শরণার্থী বণ্টনের দাবিতে ফ্রান্সও ছিল জার্মানির সঙ্গে৷ মঙ্গলবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শরণার্থীর চাপটা তাদের ওপরও খুব কম পড়বে না৷ এই দফায় ২৪ হাজার ৩১ জন শরণার্থী নেবে ফ্রান্স৷ছবিতে হাঙ্গেরি সীমান্তের এক শরণার্থী শিশু৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Nimani
চারটি দেশের ঘোর আপত্তি
পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো শুরু থেকেই শরণার্থী নেয়ার বিপক্ষে৷ মঙ্গলবার হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র ও স্লোভাকিয়া শরণার্থী নেয়ার বিপক্ষে ভোট দেয়৷ ভোটের পর চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী বহুস্লাভ সবটকা বলেন, ‘‘এটা খুবই খারাপ সিদ্ধান্ত৷’’ সরাসরি আপত্তি জানালেও এখন রোমানিয়া ৪ হাজার ৬৪৬ জন, চেক প্রজাতন্ত্র ২ হাজার ৯৭৮ জন এবং স্লোভাকিয়া ১ হাজার ৫০২ জন শরণার্থী নেবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Dospiva
দায়িত্ব মনে করে শরণার্থী নেবে লুক্সেমবুর্গ
৫ লক্ষ ৬২ হাজার জনসংখ্যার দেশ লুক্সেমবুর্গও শরণার্থী নেবে৷ ছোট দেশ তাই মাত্র ৪৪০ জন নেবে তারা৷ তবে দেশটির সরকার মনে করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঐক্য ধরে রাখতে সব সদস্য দেশের শরণার্থী নেয়াটা এখন কর্তব্যের পর্যায়ে পড়ে৷ এমনিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ছোট দেশটির এখন বড় ভূমিকা পালন করাই স্বাভাবিক, কেননা, এ মুহূর্তে ইইউর সভাপতি দেশও লুক্সেমবুর্গ৷
ছবি: AP
সবচেয়ে কম শরণার্থী নেবে মাল্টা
ইইউ অঞ্চলের আরেক ছোট দেশ মাল্টা৷ আয়তন মাত্র ৩১৬ বর্গ কিলোমিটার আর জনসংখ্যা ৪৪ হাজারের একটু বেশি৷ এমন ছোট দেশটিও ১৩৩ জন শরণার্থী নেবে৷
ছবি: picture alliance /Robert Harding
আর যেসব দেশ শরণার্থী নেবে
ইইউ-র আরো কয়েকটি দেশও শরণার্থী নেবে৷ স্পেন নেবে ১৪ হাজার ৯৩১ জন, পোল্যান্ড ৯ হাজার ২৮৭ জন, নেদারল্যান্ডস ৭ হাজার ২১৪ জন, বেলজিয়াম ৪ হাজার ৫৬৪ জন, সুইডেন ৪ হাজার ৪৬৮ জন, অস্ট্রিয়া ৩ হাজার ৬৪০ জন, পর্তুগাল ৩ হাজার ৭৪ জন, ফিনল্যান্ড ২ হাজার ৩৮৮ জন, বুলগেরিয়া ১৬০০ জন, ক্রোয়েশিয়া ১ হাজার ৬৪ জন, লিথুয়ানিয়া ৭৮০ জন, স্লোভেনিয়া ৬৩১ জন, লাটভিয়া ৫২৬ জন, এস্তোনিয়া ৩৭৩ এবং সাইপ্রাস নেবে ২৭৪ জন শরণার্থী৷