প্রায় একই দিনে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের দু'দুটি অভিশপ্ত বিমানকে ঘিরে নতুন খবর! ভারত মহাসাগরে পাওয়া ধ্বংসাবশেষ নিখোঁজ এমএইচ-৩৭০'এর হতে পারে৷ ওদিকে ইউক্রেনের আকাশে ধ্বংস হওয়া বিমানের তদন্ত বানচাল করলো রাশিয়া৷
বিজ্ঞাপন
ভারত মহাসাগরে লা রেউনিয়ঁ দ্বীপে ভেসে এসেছে বিমানের একটি অংশ, যা প্রায় ৫০০ দিন আগে নিরুদ্দেশ হওয়া এমএইচ-৩৭০ বিমানের বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ এখনো চূড়ান্ত প্রমাণ পাওয়া না গেলেও বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে মোটামুটি নিশ্চিত৷ কারণ বিষুবরেখার দক্ষিণে অন্য কোনো বোয়িং ৭৭৭ মডেলের বিমান কখনো ধ্বংস হয়নি৷ ফ্রান্সের বিইএ বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত সংস্থা বিমানের অংশটি পরীক্ষার কাজ শুরু করে দিয়েছে৷
মালয়েশিয়ার উপ-পরিবহণ মন্ত্রী বলেছেন, তাঁর প্রশাসন প্রায় নিশ্চিত যে, বিমানের অংশটি এমএইচ-৩৭০ বিমানেরই৷ সেটি শনাক্ত করতে দিন দুয়েক লাগতে পারে বলে মালয়েশিয়ার তদন্তকারীদের ধারণা৷ অস্ট্রেলিয়ার পরিবহণ মন্ত্রী ওয়ারেন ট্রাস বলেন, লা রেউনিয়ঁ দ্বীপে পাওয়া বিমানের ‘ফ্ল্যাপেরন' অংশটির উপর যে সংখ্যা লেখা রয়েছে, তার সাহায্যে সেটিকে দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হবে৷ সে দেশের সমুদ্রবিজ্ঞান সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ ডেভিড গ্রিফিন এমএইচ-৩৭০ উদ্ধার অভিযানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন৷ তাঁর মতে, বাতাস ও সমুদ্রের স্রোত বিমানের ধ্বংসাবশেষ ভারত মহাসাগরের দক্ষিণে ঘটনাস্থল থেকে অনায়াসে উত্তরে নিয়ে যেতে পারে৷ উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ার নিখোঁজ বিমানের খোঁজে এই মুহূর্তেও একাধিক অভিযান চালু রয়েছে৷
কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনা ও তার কারণ
আজকের এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুগেও কীভাবে একটি বিমান হারিয়ে যেতে পারে সেটা অনেকেই ভেবে পাচ্ছেন না৷ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ক্ষেত্রে হয়েছে সেটি৷ ছবিঘরে থাকছে কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনার কথা ও তার কারণ৷
ছবি: AP
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স
৮ই মার্চ, ২০১৪৷ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ২৩৯ জন যাত্রী নিয়ে কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে হারিয়ে যায়৷ এখনো সেই বিমানের হদিশ মেলেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এয়ার ফ্রান্স
বিমান হারানোর ঘটনা ঘটেছিল ২০০৯ সালের ১ জুনেও৷ সে সময় ব্রাজিল থেকে ফ্রান্স যাওয়ার পথে অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে হঠাৎ করে হারিয়ে যায় এয়ার ফ্রান্সের একটি বিমান৷ প্রায় দু বছর পর সাগরের নীচে ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় এর খোঁজ পাওয়া যায়৷ এতে ২২৮ যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ বিমান চালানোর অত্যাধুনিক ব্যবস্থা কাজ না করায় বিমানটি দ্রুতগতিতে নীচে নেমে অ্যাটলান্টিকের পানিতে তলিয়ে যায় বলে পরবর্তীতে তদন্ত রিপোর্টে জানা গেছে৷
ছবি: dapd
ভোজা এয়ার
২০১২ সালের ২০শে এপ্রিল পাকিস্তানের বেসরকারি ‘ভোজা এয়ার’-এর একটি বিমান ল্যান্ডিং-এর সময় নামতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়লে ১২৭ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যে ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে নামার চেষ্টাই দুর্ঘটনার কারণ বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে৷ বোয়িং ৭৩৭-২০০ বিমানটি করাচি থেকে ইসলামাবাদ যাচ্ছিল৷
ছবি: Reuters
ইরান এয়ার
২০১১ সালের ৯ জানুয়ারি ইরান এয়ারের একটি বোয়িং ৭২৭-২০০ বিমান তেহরান থেকে অরুমিয়ে যাওয়ার পথে নামতে গিয়ে খারাপ আবহাওয়ার কারণে দুর্ঘটনায় পড়লে ১০৫ জন যাত্রীর মধ্যে ৭৭ জন নিহত হন৷ বেঁচে যায় ২৮ জন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস
দুবাই থেকে ভারতের ম্যাঙ্গালোর বিমানবন্দরের রানওয়েতে নামার পর এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের একটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমান রানওয়ে থেকে ছিটকে দূরের পাহাড়ে গিয়ে আঘাত করলে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়৷ এতে ১৫৮ জন নিহত হন৷ আর বেঁচে যান আটজন৷ পাইলটের গাফিলতি দুর্ঘটনার কারণ বলে তদন্তে জানা যায়৷ ঘটনাটি ঘটে ২০১০ সালের ২২শে মে তারিখে৷
ছবি: AP
আফ্রিকিয়া এয়ারওয়েজ
পাইলটের ভুলের কারণে ২০১০ সালের ১২ মে আফ্রিকিয়া এয়ারওয়েজের একটি বিমান লিবিয়ার ত্রিপোলিতে ল্যান্ডিং-এর আগে দুর্ঘটনায় পড়লে ১০৩ জন যাত্রী নিহত হন৷ তবে অবিশ্বাস্যভাবে বেঁচে যায় হল্যান্ডের নয় বছরের এক ছেলে!
ছবি: AP
প্রেসিডেন্টের মৃত্যু
২০১০ সালের ১০ই এপ্রিল পোল্যান্ডের বিমানবাহিনীর একটি বিমান দুর্ঘটনায় পড়লে দেশটির সে সময়কার প্রেসিডেন্ট সহ ৯৬ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ পোল্যান্ডের সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার জন্য পাইলটকে দায়ী করা হয়৷ বলা হয়, খারাপ আবহাওয়ায় ল্যান্ডিং এর পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছিল না পাইলটের৷
ছবি: AP
ইয়েমেনিয়া
ল্যান্ডিং এর আগে ইয়েমেনের এয়ারলাইন্স ‘ইয়েমেনিয়া’-র একটি বিমান সাগরে ভেঙে পড়লে ১৫৩ জন যাত্রীর ১৫২ জনই মারা যান৷ শুধু বেঁচে যায় ১২ বছরের একটি মেয়ে৷ দুর্ঘটনার কারণ পাইলটের ‘ঝুঁকিপূর্ণ ম্যানুভার’৷
ছবি: AP
8 ছবি1 | 8
গত বছরের মার্চ মাসে বিমানটি কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাবার পথে ২৩৯ জন যাত্রী ও কর্মী সহ নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল৷ বিমানটির খোঁজে বিশাল মাপের উদ্ধার অভিযান চালানো সত্ত্বেও সাফল্য আসেনি৷
এদিকে ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে ইউক্রেনের আকাশে এমএইচ-১৭ বিমান ধ্বংসের কারণ তদন্ত করতে জাতিসংঘের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের উদ্যোগ বিফল হয়েছে৷ এই লক্ষ্যে নিরাপত্তা পরিষদে আনা এক প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভেটো প্রয়োগ করেছে রাশিয়া৷ ১৫টি সদস্য দেশের মধ্যে ১১টি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় এবং ৩টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে৷ রুশপন্থি বিদ্রোহীরা ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিমানটি ধ্বংস করেছিল বলে অভিযোগ উঠেছে৷ রাশিয়া এই ঘটনায় জড়িত নয় বলে দাবি করে আসছে৷ তাদের অভিযোগ, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীই এই ঘটনার জন্য দায়ী৷ জাতিসংঘে রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, ঘটনাস্থলে রুশ তদন্তকারীদের কাজ করতে দেওয়া হয়নি৷ ফলে এখন জাতিসংঘের উদ্যোগে তদন্ত হলেও কোনো পক্ষপাত হবে না, এমন কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে না বলে তিনি মনে করেন৷ অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই অবস্থানের জন্য রাশিয়ার তীব্র সমালোচনা করেন৷ উল্লেখ্য, এই ঘটনায় ৩৯ জন অস্ট্রেলীয় নাগরিক নিহত হয়েছেন৷