মালয়েশিয়ায় বিধিভঙ্গ করে ঈদ নামাজ, গ্রেপ্তার ৪৮ বাংলাদেশি
২১ জুলাই ২০২১বাংলাদেশিদের এরই মধ্যে চারদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে৷ অন্যদিকে একই কারণে গ্রেপ্তার হওয়া স্থানীয় ব্যক্তিকে তিনদিনের রিমান্ড দিয়েছে আদালত৷ মালয়েশিয়ার সংবাদ মাধ্যম দ্য স্টার এই তথ্য জানিয়েছে৷
মঙ্গলবার তাদের গ্রেপ্তার করার তথ্য নিশ্চিত করেন পেনাং পুলিশ প্রধান দাতুক মোহাম্মদ শুহাইলি৷ তিনি জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা সকালে নামাজ পড়তে গেলে ১০০ জনের সীমা পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় তাদেরকে মসজিদে ঢুকতে দেওয়া হয়নি৷ এরপর তারা রাস্তায় নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করেন৷ এ সময় সেখানে প্রায় ২০০ জন জামাতে যোগ দেন৷ এতে দেশটির করোনাবিধি লঙ্ঘন হয়েছে৷
লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে সাধারণ মানুষের ভাবনা
বাংলাদেশে কড়া লকডাউন চলছে৷ বৃহস্পতিবার থেকে অবশ্য ঈদ উপলক্ষ্যে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন শিথিল করা হবে৷ তার আগে করোনা, লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে ঢাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছেন আলোকচিত্রী মর্তূজা রাশেদ৷
ভ্রাম্যমাণ আদালত
মঙ্গলবার ঢাকার কলেজগেটে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বিআরটিএ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানো হয়েছে৷ কর্তব্যরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে কথা বলে জানা যায়, মূলত সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে, সচেতন করতে এবং কিছুক্ষেত্রে জরিমানা করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷
তরুণদের মধ্যে উদাসীনতা বেশি
করোনার প্রাদুর্ভাবের শুরুর দিকে বয়স্করা বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছেন, এমন ধারণা ছড়িয়ে পড়েছিল৷ সে কারণে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে প্রবল অনীহা আছে বলে মন্তব্য করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তরুণ৷ কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতীয় যে ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে সব বয়সের মানুষই সমানভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন৷
‘সবসময় মাস্ক পরে থাকা যায় না’
পেশায় মৌসুমী ব্যবসায়ী মো. রিপন মিয়া বলেন, ‘‘মানুষ যেমনে মরতাসে, মাস্ক তো আসলে সবার পরা উচিত৷ কিন্তু আমরা যারা কর্ম কইরা খাই, এই গরমে সবসময় মাস্ক পরা সম্ভব হয় না৷ একটু না খুললে হাঁসফাঁস লাগে৷ তাই কিছুক্ষণ পরপর মাস্ক একটু খুইলা রাখি৷’’
‘আমাদের মাস্ক লাগে না’
ঢাকার পীরেরবাগ এলাকায় গিয়ে দেখা গেল সেখানে কয়েকজন আড্ডা দিচ্ছেন৷ কাছে গিয়ে সামাজিক দূরত্ব এবং মাস্কের ব্যাপারে জানতে চাইলে একজন মন্তব্য করেন, ‘‘আমরা সবাই সুস্থ, আমাদের মধ্যে করোনার কোনো লক্ষণ নাই৷ তাই এইসব আমাদের লাগে না, ভাই৷’’
‘গতবছরের মতো এখন কেউ ভয় পায় না’
ঢাকার মতিঝিল মোড়ে একটি দৈনিক পত্রিকার দোকানে গিয়ে দেখা গেল, দুইজন বিক্রেতার কারো মুখে মাস্ক নেই৷ ছবি তুলতে দেখে একজন তড়িঘড়ি করে মাস্ক মুখে দিলেও আরেকজন ছিলেন নির্বিকার৷ কেন মাস্ক পরেননি জানতে চাইলে জিসান হোসেন বলেন, ‘‘করোনাকে আর কত ভয় পাবো? গতবছর মানুষ যা ভয় পাওয়ার পাইসে, এখন আর কেউ অত ভয় পায় না৷’’
ঘোর অবিশ্বাস
ঢাকার মতিঝিলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ফল ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘করোনা শনাক্ত আর মৃত্যু নিয়া সরকার যে এত বক্তব্য দেয়, এদের সবাই কি করোনাতেই মারা গেসে? অন্য রোগে মারা যাইতেসে এরকম নাই? শ্বাসকষ্ট হইলেও করোনা হইসে? এগুলি আসলে মানুষরে ভয় দেখানোর জন্য বাড়াইয়া বলে৷’’
মনে থাকে না, গরমও লাগে...
এই প্রতিবেদক একাধিকবার সরেজমিনে কাজ করতে গিয়ে দেখেছেন, রাস্তার অর্ধেক মানুষই ছবি তুলতে দেখলে অথবা পুলিশ আসতে দেখলেই দ্রুত মাস্কটা পরে নেন৷ এমন আচরণের কারণ জানতে চাইলে একজন বলেন, ‘‘কী করুম কন, মাস্ক পরতে মনেও থাকে না, গরমও লাগে৷’’
‘করোনায় গরিবও মরে, কিন্তু খোঁজ হয় না’
ঢাকার মতিঝিল মোড়ের ভাংতি টাকার ব্যবসায়ী আসমা বেগম করোনার চলমান অবস্থা সম্পর্কে বলেন, ‘‘করোনায় সবাই মরতাসে৷ ধনী-গরিব কোনো বাছবিচার নাই৷ কিন্তু আমরা গরিবরা মরলে খবর হয় না৷ তাই জন্য আমাগোর সবার ধারণা যে, করোনায় গরিব মরে না৷ কিন্তু এইটা ভুল৷’’
‘মানুষ খাইতে না পারলে লকডাউন ধুইয়া কি পানি খাইবো?’
ঢাকার কমলাপুরের হকার আব্দুল আজিজ সাধারণ মানুষের মাঝে করোনার ব্যাপারে উদাসীনতার বিষয়ে বলেন, ‘‘মানুষ আর কতদিন ঘরে থাকবে বলেন? সরকার আমাগো খাওয়া খরচ, ঘরভাড়া দেয়? মানুষ খাইতে না পারলে সচেতনতা আর লকডাউন ধুইয়া কি পানি খাইবো?’’
মাস্ক কেনার সামর্থ্যও নেই যাদের...
মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মানা নিয়ে যাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উদাসীনতা দেখা যায়, তাদের বড় একটা অংশ নিম্ন আয়ের মানুষ৷ তাদের অনেকেই বলেন, মাস্ক পরে শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করা সম্ভব না৷ তাছাড়া তারা দিন আনেন দিন খান, নিয়মিত মাস্ক কেনার মতো অতিরিক্ত টাকা নেই বলেও জানান তারা৷
‘সরকারেরও দোষ আছে’
ঢাকার গুলিস্তান মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের হকার জয়নাল ইসলাম বলেন, ‘‘দ্যাশে এই যে এত মানুষ মরতাসে, এর দোষ সরকারেরও আছে৷ মানুষরে টিকা দিতে পারে নাই, হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে পারে না, আয়ের ব্যবস্থা না কইরা খালি লকডাউন দেয়৷ এমনে কি মানুষের জীবন চলে, নাকি দুনিয়া চলে?’’
‘আগে মানলে এরকম দিন আইতো না’
ব্যক্তিগত গাড়িচালক মো. হানিফ শেখ বলেন, ‘‘গত রোজার ঈদে সরকার গণপরিবহন বন্ধ রাখসিলো যেন মানুষ নড়াচড়া করতে না পারে৷ কিন্তু মানুষ মানে নাই, একজনের গায়ের উপর আরেকজন উইঠা বাড়ি গেসে৷ এই যে এখন হাজার মানুষ মরতাসে, আমার মনে হয় তখন এমন না করলে এরকম দিন আইতো না আজকে৷’’
গ্রেপ্তারকৃত ৪৮ বাংলাদেশির বয়স ২০ থেকে ৪৩ বছর৷ আর স্থানীয় ব্যক্তি ৬৪ বছর বয়সি৷ বুধবার আদালত তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করে৷ তাদের সঙ্গে নামাজ আদায় করা বাকিদের খোঁজ জানতে অনুসন্ধান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ৷
সৌদি আরবে বিশ্ববাসীর করোনামুক্তি ও টিকার জন্য প্রার্থনা
দ্বিতীয়বারের মতো বিশেষ ব্যবস্থায় সৌদি আরবে বসবাসরত সীমিত সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসলিম পেলেন হজ পালনের সুযোগ৷ আরাফাতের ময়দানে প্রার্থনায় অংশ নিয়ে তারা বিশ্ববাসীর জন্য মহামারি ও সংকটমুক্তির প্রার্থনা জানান৷
আরাফাতের ময়দানে
মাস্ক পরিহিত হাজারো মুসলিম সোমবার আরাফাতের ময়দানে হাজির হন৷ মহামারি থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানান তারা৷
৬০ হাজার
এবার হজের অনুমতি পেয়েছেন ৬০ হাজার সৌদি নাগরিক ও বাসিন্দা৷ ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সি টিকাপ্রাপ্তরাই শুধু হজ পালনের অনুমতি পেয়েছেন৷
সৌভাগ্যবানদের একজন
ফিলিস্তিনের নাগরিক উম আহমেদ সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে বসবাস করেন৷ তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘‘হজ পালনের সুযোগ পেয়ে নিজেকে আমি সৌভাগ্যবান মনে করছি৷ করোনার কারণে বিশ্ব যে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তার থেকে মুক্তির জন্য আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি৷’’
দূরত্ব
হাজিরা দুই মিটার দূরত্ব বজায় রেখে প্রার্থনায় অংশ নেন৷ ভারত থেকে আগত কামির উল্লাহ শেখ বলেন, তার দেশ করোনায় যে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সে কারণে প্রার্থনা করেছেন৷ আল্লাহর কাছে নিবেদন করেছেন যাতে সবাই দ্রুত টিকা পায়৷
বর্ণবাদমুক্তি
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হাফিজ কাদিকুও বসবাস করেন সৌদি আরবে৷ তিনি সবার জন্য সৌহার্দ্যপূর্ণ এক পৃথিবী কামনা করেছেন৷ বলেন, ‘‘চারদিকে প্রবল বর্ণবাদ...আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি যাতে প্রত্যেকে প্রত্যককে ভালোবাসে৷’’ ছবিতে আরাফাতের ময়দানে এক হাজিকে দোয়া করতে দেখা যাচ্ছে৷
ভিন্ন আরাফাত
করোনার আগের বছরগুলোতে আরাফাতের ময়দানে জড়ো হতেন ২০ লাখ মানুষ৷ প্রচণ্ড গরমে তাদের প্রত্যেককে গাদাগাদি করে অবস্থান করতে হতো সেখানে৷ তবে এবার চিত্রটা ভিন্ন৷
খুতবা
হজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ খুতবা৷ আরাফাতের ময়দানের হাজিদের উদ্দেশে খুতবা পাঠ করেন শেখ বান্দার বালিলাল৷ এ সময় তিনি হজের নিরাপত্তা ও করোনার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ায় সৌদি সরকারের প্রশংসা করেন৷
আগামীর প্রত্যাশা
হজে অংশ নেয়া সিরিয়ার নাগরিক মাহের বারুদি বলেন, ‘‘প্রথম প্রার্থনা আল্লাহ যেন মহামারি তুলে নেন, সমস্ত মানুষ ও মুসলিমদের এই অভিশাপ ও কষ্ট থেকে রেহাই দেন, যাতে পরবর্তী বছরে সবাই হজে অংশ নিতে পারেন এবং লাখো মানুষ এই পবিত্র স্থানে জড়ো হতে পারেন৷’’ ছবিতে এক হাজিকে আরাফাত ময়দানের ছবি তুলতে দেখা যাচ্ছে৷
এফএস/এসিবি (দ্য স্টার)