এ বছর দেশের পর্যটন শিল্পকে আরো প্রসারিত করতে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছিল মালয়েশিয়া৷ চার মাসের মধ্যে দু-দুটি বিমান ‘দুর্ঘটনা’ সে লক্ষ্য অর্জন প্রায় অসম্ভব করে তুলেছে৷ এখন মালয়েশিয়া যেতে ভয় পাচ্ছেন অনেকে৷
বিজ্ঞাপন
কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিংয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরুর কিছুক্ষণ পরই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয় মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের এমএইচ৩৭০ ফ্লাইট৷ ২৩৯ জন যাত্রী নিয়ে বিমানটি নিখোঁজ হয়েছিল গত ৮ই মার্চ৷ এখনো তার হদিশ পাওয়া যায় নি৷ চার মাস না যেতেই আবার দুঃসংবাদ৷ এবার পূর্ব ইউক্রেনে ২৯৮ জন যাত্রী নিয়ে আরেকটি বিমান ভূপাতিত৷ মাস চারেকের ব্যবধানে দু-দুটি বিমানের এমন পরিণতিতে মালয়েশিয়ার পর্যটন শিল্পে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলেই বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা৷
মালয়েশিয়ার বিমান নিখোঁজের সম্ভাব্য কারণ
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭-এর এমএইচ৩৭০ বিমানটির সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি৷ এটি নিখোঁজের সম্ভাব্য কারণগুলো নিয়ে এখন চলছে ব্যাপক আলোচনা৷ চলুন জানা যাক বিমান নিখোঁজের সম্ভাব্য কারণগুলো৷
ছবি: Reuters
কেন নিখোঁজ?
২০১৪ সালের ৮ই মার্চ নিখোঁজ হওয়া এমএইচ৩৭০ উড়ালের বিমানটি নিয়ে এখন যেসব প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সেগুলো হচ্ছে, পাইলট কি নিকটবর্তী কোনো স্থানে বিমানটি অবতরণ করাতে চয়েছিলেন? বিমানটি কি অন্য একটি বিমানের রাডার সিগন্যালের আড়ালে চলতে চয়েছিল? বা এটি কি সত্যিই মালদ্বীপ পর্যন্ত উড়ে গিয়েছিল?
ছবি: Reuters
দ্রুত অবতরণের চেষ্টা
মালয়েশিয়ার এই বিমানটি নিখোঁজের ১২ দিন পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত কারণগুলোর একটি হচ্ছে, বিমানটির ককপিটে কোনো কারণে আগুন লেগে থাকতে পারে এবং সেকারণে পাইলট এটির যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দ্রুত কাছাকাছি কোনো বিমানক্ষেত্রে অবতরণের চেষ্টা করেছিলেন৷ এ জন্যই হয়ত বিমানটি গতিপথ বদলে ছিল৷
ছবি: Reuters
ছিনতাই চেষ্টা
বিমান নিখোঁজের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ছিনতাইকে এখনো উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে না৷ অনেকে সন্দেহ করছেন, বিমানের পাইলট বা ছিনতাইকারীরা ইচ্ছাকৃতভাবে বিমানের কমিউনিকেশন সিস্টেমে ভিন্ন একটি ঠিকানা প্রবেশ করিয়েছিলেন৷ ফলে উড়ালের এক পর্যায়ের বিমানটি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়৷ অনেকের সঙ্গে মিডিয়া মুঘল রুপার্ট মারডকও এমন ধারণা করছেন৷
ছবি: Reuters
অন্য বিমানের আড়ালে চলার চেষ্টা
এ ধারণাটি অবশ্য হলিউড ছবির জন্য চমৎকার প্লট হতে পারে৷ কেউ কেউ মনে করছেন, এমএইচ৩৭০ উড়ালের বিমানটি সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি বিমানের বেশ কাছাকাছি থেকে কিছুক্ষণ উড়েছিল, যাতে করে সিংগাপুর এয়ারলাইন্সের রাডার সিস্টেমের ছায়াতলে অবস্থান করে নিজেদের পরিচয় কিছু সময়ের জন্য লুকিয়ে রাখা যায়৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: AP
উল্কার আঘাতে বাষ্পীভূত
মালয়েশিয়ার এই বিমানটিতে থাকা ২৩৯ জন আরোহীর দুই তৃতীয়াংশই চীনা নাগরিক৷ চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিমান দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে যে, উল্কার আঘাতে বিমানটি ধ্বংস এবং বাষ্পীভূত হয়েছে৷
ছবি: Reuters
মালদ্বীপ থেকে দেখা গেছে বিমানটি
দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের একটি ছোট্ট দ্বীপের বাসিন্দারা ৮ই মার্চ সকালে খুব নীচু থেকে উড়ে যাওয়া একটি বিমান দেখেছেন বলে দাবি করেছেন৷ বিমানটি সাদা রংয়ের এবং এতে লাল রংয়ের লাইন আঁকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা, যা মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের সঙ্গে মিলে যায়৷ বিষয়টি এখন খতিয়ে দেখছেন মালদ্বীপ পুলিশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিমান খুঁজছেন কয়েক লাখ মানুষ
এমএইচ৩৭০ উড়ালের এই বিমানটি ইন্টারনেটে খুঁজছেন কমপক্ষে ৩০ লাখ মানুষ৷ স্যাটেলাইট সংস্থা ‘ডিজিটালগ্লোব’ জানিয়েছে, বিমানের ধ্বংসাবশেষের খোঁজে তাদের অনলাইন ম্যাপ দেখা হয়েছে ২৫৭ মিলিয়ন বার৷
ছবি: NASA/dpa
আসলে কি কেউ কিছু জানে?
বিমানটি খোঁজার অগ্রগতি সম্পর্কে এক মালয়েশীয় কর্মকর্তা জার্মান বার্তাসংস্থা ডিপিএকে বলেছেন, ‘‘আমাদের কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই৷’’ বুধবার (১৯.০৩.১৪) পর্যন্ত এটাই বাস্তবতা৷ ফলে বিমান নিখোঁজ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা ক্রমশই বাড়ছে, যার কোনটি সত্য কেউ জানে না! (ফাইল ফটো)
ছবি: Reuters
8 ছবি1 | 8
বিরূপ প্রভাব ইতিম্যধেই পড়তে শুরু করেছে৷ নিখোঁজ বিমানটির অধিকাংশ যাত্রীই ছিলেন চীনের নাগরিক৷ এমনিতে চীন থেকেই সবচেয়ে বেশি পর্যটক মালয়েশিয়ায় যান৷ কিন্তু এমএইচ৩৭০ নিখোঁজ হবার পর থেকে চীনাদের মনে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক৷ যে দেশে গেলে এত মানুষ নিখোঁজ বা লাশ হয়, সে দেশে না যাওয়াই নিরাপদ মনে করছেন অনেকে৷
এমন ভাবনার সঙ্গে কুসংস্কারের নিশ্চয়ই একটা সম্পর্ক আছে৷ তবে চীনের অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কুসংস্কারের ঊর্ধ্বে উঠতে রাজি নন৷ বেইজিংয়ের অধিবাসী কুয়ান ই বললেন, ‘‘মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা আমি একেবারেই ভাবছিনা৷ আগে আমার কয়েকজন বন্ধু মধুচন্দ্রিমা উদযাপন করতে সেখানে গিয়েছিল৷ কিন্তু মালয়েশিয়া এখন বিপজ্জনক জায়গা৷ সেখানে যাবার আগে সবাই এখন দুবার ভাবছে৷'' শেষ পর্যন্ত তাঁদের অনেকে যে মালয়েশিয়া না যাওয়ার সিদ্ধান্তই নিচ্ছেন তা বলা বাহুল্য৷
ন্যাশনাল তাইওয়ান ইউনিভার্সিটির গবেষক ব্রিজিট ওয়েলস মনে করেন, দু-দুটি বিমান বিপর্যয়ের ফলে মালয়েশিয়ার পর্যটন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ক্ষতিটা হবে সাময়িক৷ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে মালয়েশিয়া এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারবে বলেই তাঁর ধারণা৷
২০১৩ সালে ২৫ মিলিয়ন পর্যটক যাওয়ায় পর্যটন শিল্প থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল মালয়েশিয়া৷ এ বছর ২৮ মিলিয়ন পর্যটক পেতে বিশেষ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল সরকার৷ ‘মালয়েশিয়া সফরের বছর' স্লোগানের আওতায় নেয়া সব পদক্ষেপকেই হুমকির মুখে ঠেলেছে দুটি বিমান বিপর্যয়৷