‘আচ্ছা তোমরা বাংলাদেশিরা বলো তো ঘটনাটা কী?' দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে কিংসমিড প্রেসবক্সে বসে থাকা কয়েকজন সাংবাদিকের তখন ঘটনা ব্যাখ্যা করার অবস্থা নেই৷ মুখ লুকানোর অবস্থা৷ কিন্তু প্রশ্নকর্তা ইকবাল খান নাছোড়বান্দা৷
বিজ্ঞাপন
তিনি আমাদের কাছ থেকে উত্তর শুনেই ছাড়বেন৷ চোখাচোখি হলো৷ ফ্যাকাশে হাসি হাসলাম৷ আয়নায় না দেখেও বোঝা যায় যে, এই হাসিটাকে ক্যাবলা হাসি বলে৷
দক্ষিণ আফ্রিকান সাংবাদিক ইকবাল আবার জিজ্ঞেস করেন, ‘‘তোমাদের দলের এই অবস্থা কেন? তোমরা না এই এক মাস পর টেস্ট খেলবে৷ ওয়ানডেতেই যদি এই অবস্থা হয় তাহলে টেস্টে...?''
সত্যিই এক মাস পর অভিষেক টেস্ট খেলতে নামবে বাংলাদেশ৷ ঢাকায় হবে খেলা, প্রতিপক্ষেও তুখোড় পেসার নেই কোনো, তবু ভয়ে বুকটা কেঁপে ওঠে৷
শিরোপা না জিতলেও রেকর্ডে এগিয়ে বাংলাদেশ
ভারতে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূলপর্বের সবগুলো ম্যাচে হেরেছে বাংলাদেশ৷ পরাজয়ের এই হিসেব হতাশ করলেও প্রাপ্তি কিন্তু একেবারে কম নয়৷ কিভাবে? দেখুন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
সবচেয়ে বেশি রান করেছেন তামিম
ভারতে সদ্য সমাপ্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন বাংলাদেশের ওপেনার তামিম ইকবাল৷ ছয় ম্যাচে ছয় ইনিংস খেলে তাঁর সংগ্রহ ২৯৫ রান৷ বলাবাহুল্য, ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচটি খেলেননি তিনি৷ সেটা খেললে রান হয়ত আরো অনেক বাড়ত৷ টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি ছয়ও মেরেছেন তামিম, মোট ১৪টি৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
হিসেবে দ্বিতীয়, বিবেচনায় সেরা কোহলি
ভারতের ক্রিকেট তারকা বিরাট কোহলি রানের হিসেবে আইসিসি-র ‘মোস্ট রানস’ তালিকায় আছেন তামিমের পর দ্বিতীয় অবস্থানে৷ পাঁচটি ম্যাচ খেলে মোট ২৭৩ রান করেছেন তিনি৷ তবে তাঁকেই ‘প্লেয়ার অফ দ্য টুর্নামেন্ট’ ঘোষণা করেছে আইসিসি৷ এক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের জো রুট এবং বাংলাদেশে তামিম ইকবালের নামও প্রাথমিক বিবেচনায় রাখা হয়েছিল৷ টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি চারও মেরেছেন কোহলি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
জো রুট করেছেন তৃতীয় সর্বোচ্চ রান
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে বিজিত দল ইংল্যান্ডের জো রুটের মোট সংগ্রহ ২৪৯ রান, খেলেছেন ছয়টি ম্যাচ৷
ছবি: GettyImages/AFP/M. Sharma
মুস্তাফিজের রেকর্ড
বাংলাদেশের তরুণ বোলার মুস্তাফিজুর রহমান ইনজুরির কারণে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কয়েকটি ম্যাচ খেলতে পারেননি৷ তবে দলের জন্য তিনি যে এক বড় সম্পদ, সেটা বোঝাতে তাঁর খুব একটা সময় লাগেনি৷ ভারতের সমাপ্ত বিশ্বকাপে এক ইনিংসে সবচেয়ে সফল বোলার তিনি৷ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২২ রানে পাঁচ উইকেট নেন মুস্তাফিজুর৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
তবে বোলিংয়ে শীর্ষে মোহাম্মদ নবী
আইসিসি-র বোলিং রেকর্ড অনুযায়ী, সদ্যসমাপ্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকারি আফগানিস্তানের মোহাম্মদ নবী৷ সাতটি ম্যাচ খেলে মোট বারোটি উইকেট নিয়েছেন এই অলরাউন্ডার, ১৬৪ রানের বিনিময়ে৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Bhoot
দ্বিতীয় রশিদ খান
আফগানিস্তানের আরেক বোলার রশিদ খান রয়েছেন তালিকার দ্বিতীয় স্থানে৷ তিনি নিয়েছেন ১১ উইকেট, খেলেছেন সাতটি ম্যাচ আর দিয়েছেন ১৮৩ রান৷ আফগানরা যে ক্রিকেটে শীঘ্রই উপরের দিকে পৌঁছাবেন তার ইঙ্গিতই দিচ্ছে এ সব রেকর্ড৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Bhoot
আছেন সাকিব আল হাসানও
আইসিসি-র ‘মোস্ট উইকেট’ শিকারিদের তালিকায় পাঁচ নম্বরে আছেন বাংলাদেশের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান৷ ১৬৬ রান দিয়ে দশটি উইকেট নেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
জয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ
এ কথা জানে না, এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না৷ তবুও জানাচ্ছি, ভারতে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ২০১৬ সালের আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ৷ এই দলই কিন্তু প্রথম পর্বের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে হেরেছিল!
ছবি: Getty Images/D. Sarkar
8 ছবি1 | 8
পঞ্চাশ ওভারের রক্ষণাত্মক ধরনের বোলিং সামলাতে গিয়ে যখন ৫১ রানে অলআউট হতে হয়, তখন টেস্টের বোলিংটা খেলব কী করে! তিন স্নিপ, গালি, সিলি পয়েন্ট, ফরোয়ার্ড শর্টলেগ মিলিয়ে ব্যাটসম্যানকে চেপে ধরা একটা ছবি চোখে ভাসে আর ক্রমেই সেটা হরর ছবির দৃশ্যের মতো ভীতিকর হয়ে ওঠে৷
ঢাকায় সেই টেস্টের পর আবার উল্টো দৃশ্য৷ ধারাভাষ্য দিতে আসা বিখ্যাত ক্রিকেটাররা প্রশংসার শব্দ খুঁজে বেড়াচ্ছেন৷ বিদেশি সাংবাদিকরা দেখা হলেই পিঠ চাপড়াচ্ছেন৷ কিন্তু পরের কয়েক বছরের ঘটনাপ্রবাহে বোঝা গেল অভিষেক টেস্ট এবং সেখানে করা ৪০০ রান কিংবা আরও কিছু বলার মতো পারফরম্যান্স আসলে আলোকিত দিনের আলো ছিল না, ছিল ঝড়ের ভেতরের বিজলীর আলো৷ কারণ আগে-পরে ঝড়ে উড়ে যাওয়ার গল্পই শুধু৷ আজ সেই ঝড় জয় করে ফেলার পর মাঝেমধ্যে মনে হয় সেগুলো কী সব অন্য জন্মের গল্প আসলে? একদিকে বর্তমান বিধ্বস্ত, বিদীর্ণ, বিভ্রান্ত৷ ভবিষ্যত্ দূরদর্শিতা এবং দিক নির্দেশনাহীন৷
সেখানে দাঁড়িয়ে একদিন বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাফল্য কীভাবে এলো – সেই নিয়ে লেখার ফরমায়েশ পাবো ভাবিনি৷ এই বছর দেড়েক আগেও তো ঘটনা হতো উল্টো৷ লেখার অনুরোধের সঙ্গে সঙ্গে শিরোনামও ঠিক করে দেয়া হতো, বাংলাদেশের ক্রিকেট কেন পেছনের দিকে ছুটছে কিংবা ক্রিকেটের গোল্লায় যেতে আর কত বাকি৷
তাসকিনের ‘শাস্তি’ আর তাঁদের বেলায় ‘শান্তি’?
বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন তুলেই সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাসকিন আহমেদ ও আরাফাত সানিকে৷ কিন্তু অনেকের বেলায় এমনটি করেনি আইসিসি৷ দেখুন অভিযোগ ওঠার পরও কারা দিব্যি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন৷
ছবি: Getty Images/Q. Rooney
কুমার ধর্মসেনা
এখন তিনি আম্পায়ার৷ সুতরাং সুযোগ পেলে হয়ত তিনিই কারো বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন তুলে অভিযোগ করবেন৷ অথচ শ্রীলঙ্কার এই সাবেক ডান হাতি অফব্রেক বোলারের অ্যাকশন নিয়েই প্রশ্ন ছিল৷ ২০০০ সালে তাঁর বিরুদ্ধে বল ‘চাক’ করা বা ছোঁড়ার অভিযোগ তদন্তও করেছিল আইসিসি৷ কিন্তু খেলার সময় কোনো আম্পায়ার অভিযোগ না করায় ২০০৬ সাল পর্যন্ত নির্বিঘ্নে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে অবসর নেন ধর্মসেনা৷
ছবি: Reuters/D. Gray
ব্রেট লি ও জার্মেইন লসন
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ফাস্ট বোলার ব্রেট লি (ওপরের ছবিতে, ডানে) এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফাস্ট মিডিয়াম পেসার জার্মেইন লসনের বোলিং অ্যাকশন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল৷ আইসিসি তদন্তও করেছে৷ লসনকে সংশোধনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে দু’বার৷ কিন্তু আম্পায়ার অভিযোগ না করায় এই দু’জনেরও ‘নিষিদ্ধ’ হতে হয়নি৷
ছবি: Getty Images
হরভজন সিং
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরুর দিকেই ভারতের স্পিনার হরভজন সিংয়ের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে৷ সরাসরি ‘নিষিদ্ধ’ না করে তাঁর বোলিং অ্যাকশনের বৈধতাও খতিয়ে দেখেছিল আইসিসি৷ ‘সবুজ সংকেত’ পেয়ে খেলা চালিয়ে যেতে হরভজনেরও কোনো অসুবিধা হয়নি৷
ছবি: AP
শোয়েব মালিক
পাকিস্তানের শোয়েব মালিকও হাতে গোনা কয়েকজন সৌভাগ্যবানের একজন বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও যাঁকে ‘নিষিদ্ধ’ হতে হয়নি৷ এখনো তিনি পাকিস্তান দলের একজন নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়৷
ছবি: Reuters/Action Images/J. O'Brien
তাসকিনকে সরাসরি ‘নিষিদ্ধ’?
বাংলাদেশের তাসকিন এবং আরাফাত সানিকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাময়িকভাবে ‘নিষিদ্ধ’ করা হয়েছে৷ তাসকিনের নিষেধাজ্ঞা তুমুল বিতর্কের জন্ম দিয়েছে৷ তাঁর শুধু ‘বাউন্সার’ নিয়ে সন্দেহ৷ নিয়ম অনুযায়ী বাউন্সার নিয়ে সন্দেহ থাকলে প্রথমে সতর্ক করার কথা, কিন্তু তা না করে সরাসরি নিষিদ্ধ করা হয় তাঁকে৷ আইসিসির রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড৷ কিন্তু রিভিউয়েও বহাল রয়েছে নিষেধাজ্ঞা৷
ছবি: Getty Images/Q. Rooney
5 ছবি1 | 5
আজকাল আড্ডায় আলোচনায় প্রায়ই একটা প্রশ্নের মুখোমুখি হই৷ বাংলাদেশের এই বদলে যাওয়ার রহস্যটা কী! প্রথম যে উত্তরটা দেই সেটা হলো, ‘‘বাংলাদেশের উন্নতির কারণ ক্রিকেটে উন্নতি করাটা খুব সোজা৷'' সত্যিই সোজা৷ পৃথিবীতে মনযোগ দিয়ে ক্রিকেট খেলে খুব বেশি হলে ১৫টি দেশ, বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাসের সূত্রে প্রথম দশের মধ্যেই আছে৷ এখন এর মধ্যে থেকে একটা-দু'টো দেশকে হারালেই ব়্যাংকিয়ে ৭ বা ৮-এ উঠে যাওয়া যায় সাময়িকভাবে৷ আর অন্যান্য ক্ষেত্রে সাফল্যহীন দেশের মানুষের কাছে সেটাই এত বড় ব্যাপার যে, জাতীয় উত্সব শুরু হয়ে যায়৷ ঠিক, কিন্তু তাহলেও তো নিজেদের চেয়ে বড় দলগুলোকে হারাতে হয়৷ আর গত দেড়-দু'বছর বাংলাদেশ সেটা করছে খুব নিয়মিত৷ ভারত-পাকিস্তান-ইংল্যান্ড-শ্রীলঙ্কা সবাই-ই তো হারছে৷ তাই এক কথায় উন্নতিটাকে উড়িয়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই৷
এখানে ঘটনা যেটা, ভারতকেও পেছনে ফেলে এখন ক্রিকেট আগ্রহের দিক থেকে বাংলাদেশ বিপুল ব্যবধানে পৃথিবীতে এক নম্বর৷ অন্যান্য ক্রিকেট খেলা দেশগুলো আমাদের চেয়ে ঐতিহ্য-অর্থ এসবে এগিয়ে থাকলেও তাদের বেশিরভাগের কাছে ক্রিকেট এক নম্বর খেলা নয়৷ দেশের সব কিশোর ক্রিকেটার হতে চায় না৷ বাংলাদেশে প্রায় সবাই সেটা হতে চায় বলে আমাদের সহজাত প্রতিভার সংখ্যাটা অনেক বেশি৷ এভাবেই মুস্তাফিজ-তাসকিন-সৌম্যরা বেরিয়ে যাচ্ছে একের পর এক৷ তাঁদের ছোঁয়াতেই সঞ্চার হচ্ছে নতুন শক্তির৷ বদলে গেছে বাংলাদেশ৷
সাকিব ও সালমা: বাংলাদেশের দুই ক্রিকেটতারকা
বাংলাদেশের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে কে না চেনেন? বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার এখনো আছেন ওয়ানডে ব়্যাংকিংয়ের শীর্ষে৷ বাংলাদেশের মেয়েদের ক্রিকেট দলে সালমা খাতুনের ভূমিকা এবং গুরুত্বও সাকিবের মতো৷
ছবি: Getty Images/S. Abdullah
ওয়ানডের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব
আইসিসি-র সর্বশেষ ওয়ানডে ব়্যাংকিং অনুযায়ী এখনো বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান৷ ৪১৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছেন বাংলাদেশের এই সাবেক অধিনায়ক৷ দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছেন যথাক্রমে পাকিস্তানের মোহাম্মদ হাফিজ (৩৬৩) এবং শ্রীলঙ্কার তিলকরত্নে দিলশান (৩৪৯)৷আইসিসি ব়্যাংকিং সম্পর্কে আরো জানতে ওপরের প্লাস (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
ক্রিকেটে বাংলাদেশের আরেক ‘অহংকার’ সালমা
বাংলাদেশের ক্রিকেটের কথা উঠলেই একে একে আসে সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাশরাফি, মুস্তাফিজ, সৌম্যদের কথা৷ অথচ প্রয়োজনের চেয়ে অনেক কম সুযোগ-সুবিধা পেয়েও বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটাররাও কিন্তু কম করছেন না৷ বড় কোনো দলীয় সাফল্য আসেনি ঠিকই, তবে কেউ কেউ একক নৈপুণ্যে বিশ্বসেরাদেরও চমকে দিচ্ছেন৷ খুলনার মেয়ে সালমা আক্তার তেমনই একজন৷ প্রায় নিয়মিতই বাংলাদেশের হয়ে কথা বলে তাঁর বল-ব্যাট৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Tabassum
টেস্টে এখনো দ্বিতীয় সেরা সাকিব
ওয়ানডের মতো একসময় আইসিসি ব়্যাংকিংয়ে টেস্ট ক্রিকেটেরও সেরা অলরাউন্ডার ছিলেন সাকিব৷ হালে ভারতের রবিচন্দ্রণ অশ্বিনের কাছে শীর্ষস্থানটা হারিয়েছেন৷ হারানো স্থানটি অচিরেই হয়ত ফিরে পাবেন বাংলাদেশ দলে ‘নির্ভরতার প্রতীক’ সাকিব৷ অশ্বিনের (৪০৬) চেয়ে তো মাত্র ২২ পয়েন্ট পিছিয়ে তিনি! ওপরের ছবিতে সস্ত্রীক সাকিব৷
ছবি: Getty Images/AFP
অলরাউন্ডার সালমাই বা কম কিসে!
এবার মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ৷ তবে সালমা ঠিকই নিজের জাত চিনিয়েছেন৷ মেয়েদের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সালমা তাই বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন৷ এ মুহূর্তে ব়্যাংকিংয়ে চতুর্থ স্থানে আছেন তিনি৷ ওপরের ছবিতে পাকিস্তানের সানা মীরের সঙ্গে সালমা খাতুন (ডানে)
ছবি: Getty Images/AFP/A. Hassan
সেরা অলরাউন্ডার সাকিব
টি-টোয়েন্টি ব়্যাংকিংয়ে অলরাউন্ডারদের মাঝে সাকিব এখন দ্বিতীয়৷ শীর্ষে রয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানো অস্ট্রেলীয় অলরাউন্ডার শেন ওয়াটসন৷ সুতরাং শিগগিরই শীর্ষে ফিরতেই পারেন সাকিব৷ অবশ্য টি-টোয়েন্টির শীর্ষে না উঠলেও সাকিব এমনিতেই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার, কারণ, টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির অলরাউন্ডারদের ব়্যাংকিংয়ের শীর্ষ তিনে তো শুধু সাবিকই আছেন৷ সব ধরণের ক্রিকেট মিলিয়ে তাই সাকিবই সেরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
বোলার সালমা
বাংলাদেশের মেয়েরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনো নতুন৷ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলার সুযোগও কম৷ তাই এ পর্যন্ত মাত্র ১৮টি ওয়ানডে আর ৩০টি টি-টোয়েন্টি খেলতে পেরেছেন বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে নিয়মিত পারফর্মার সালমা৷ এই সুযোগেই ওয়ানডেতে পেয়েছেন ১৯টি উইকেট আর টি-টোয়েন্টিতে ৩০টি৷ টি-টোয়েন্টি ব়্যাংকিংয়ে বিশ্বের একাদশতম সেরা বোলারও বাংলাদেশের সালমা খাতুন৷ ওপরের ছবিতে ব্যাটিংয়ের প্রস্তুুতি নিচ্ছেন সালমা৷
ছবি: Getty Images/S. Abdullah
6 ছবি1 | 6
কেউ কেউ প্রশ্ন তুলবেন, এই ব্যাপারটা তো পাঁচ-সাত বছর আগেও সত্য ছিল৷ তখনও ক্রিকেটের জোয়ার ছিল এবং মাশরাফি-আশরাফুলের মতো সহজাত প্রতিভার দেখা মিলছিল৷ তবু তখন হলো না কেন? তখন মাশরাফিক-আশরাফুলরা প্রতিভা নিয়ে জাতীয় দলে ঢুকতেন, কিন্তু ঢুকে যাদের পেতেন সেই সিনিয়র ক্রিকেটাররা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পরাজয়ের ধাক্কায় ‘দ্বিতীয় শ্রেণির' নাগরিক বলে গণ্য৷ তাদের কাছ থেকে যতটা অনুপ্রেরণা মিলত তার চেয়ে বেশি মিলত ভীতি৷ জাতীয় দলের হাওয়া উঠে আসা প্রতিভাগুলোকে উড়িয়ে দেয়ার কাজটাই করত বেশি৷ এখন যারা আসছে, তারা পাচ্ছে সাকিব-মুশফিক-তামিমদের, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও প্রতিষ্ঠিত পারফর্মার৷ এরা প্রেরণা হচ্ছে, পথ দেখাচ্ছে৷ প্রতিভার অকালমৃত্যুর ঘটনা তাই কমছে৷ ডানা মেলছে কীর্তির নতুন নতুন রং৷
সেদিন এক টিভি অনুষ্ঠানে সাবেক একজন টেস্ট ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা হচ্ছিল৷ অল্প কিছু টেস্ট খেলেছেন, কয়েকটা মাত্র ফিফটি৷ এমন উল্লেখ করার মতো কোনো পারফরম্যান্স নয়, তবু বারবার নিজের কৃতিত্বের গল্প করছিলেন৷ অমুককে কীভাবে চার মারলেন! তমুককে খেলার আগে কী কী ভেবেছিলেন৷ কথাগুলোকে কেউ খুব পাত্তা দিচ্ছে না দেখে শেষে বললেন, ‘‘আপনারা দাম দেন না জানি৷ কিন্তু মনে রাখবেন, সেই সময় আমরা যা করেছিলাম একেবারে নিজে নিজে করেছিলাম৷ কেউ শেখায়নি, কেউ তৈরি করে দেয়নি৷''
শুনতে শুনতে একবার মনে হলো, আরে তাই তো! এরা তো টেস্ট খেলবে এই স্বপ্নই দেখেনি৷ ক্রিকেটার হয়েছিল ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ, আবাহনী-মোহামেডান-বিমান পর্যন্ত খেলবে এই স্বপ্ন নিয়ে৷ সেখান থেকে তাদের নিয়ে ফেলা দেয়া হলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মহাসাগরে৷ ডুবে যে মরেনি এই তো যথেষ্ট৷
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আমাদের যা শেখাচ্ছে
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্যায়ের অনেকটা শেষ হয়েছে৷ আর এই সময়ের মধ্যে ঘটেছে অনেক ঘটনা৷ চলুন দেখে নেই, সেখান থেকে শিক্ষা নেয়ার মতো কী কী ঘটেছে...৷
ছবি: Reuters
অস্ট্রেলিয়ার এখনো শিখতে হবে
একদিনের ক্রিকেটে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান আর টেস্টে নম্বর ওয়ান অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি পারফর্মেন্স এখনো সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছায়নি৷ চলতি আসরে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরেছে সেদল৷ আর বাংলাদেশের সঙ্গে জিতলেও সেটা অনেক কষ্টে৷ অসি অধিনায়কও স্বীকার করেছেন, টি-টোয়েন্টিতে ভালো করার জন্য তাঁর দলের আরো খাটতে হবে৷
ছবি: Cameron Spencer/Getty Images
নিউজিল্যান্ড পেতে পারে চূড়ান্ত সাফল্য
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এখন অবধি সবচেয়ে বড় সাফল্য দেখিয়েছে নিউজল্যান্ড৷ স্বাগতিক ভারতকে হারিয়েছে তারা, হারিয়েছে প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়াকে৷ এমন সাফল্য অব্যাহত থাকলে সেদল তাদের প্রথম বিশ্বকাপ এবারই জয় করে নিতে পারে৷
ছবি: Reuters/D. Siddiqui
ইংল্যান্ডের রেকর্ড
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি রান চেজ করে জেতার রেকর্ডটা এখন ইংল্যান্ডের৷ আট উইকেটে ২৩০ রান তাদের দলের জন্যও এক রেকর্ড৷ বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় চমকও এটাই৷ বোঝাই যাচ্ছে, ক্রিকেটের ছোট সংস্করণের জন্য ইংল্যান্ড নিজেদের ভালোভাবেই প্রস্তুত করেছে৷
ছবি: Getty Images/G. Copley
শ্রীলঙ্কার কঠিন সময়
কুমার সাঙ্কাকারা আর মহেলা জয়বর্ধনের অবসরের পর শ্রীলঙ্কা যে খানিকটা দুর্বল হয়ে পড়বে তা আগেই বোঝা গিয়েছিল৷ কিন্তু দলের বোলিংয়ের মন্দা সেই দুর্বলতাকে বাড়িয়ে দিয়েছে শুধু৷ চলতি আসরে সেদলের বড় কিছু করার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
স্পিনই সেরা
ভারতের ক্রিকেট মাঠ বরাবরই স্পিনারদের জন্য আদর্শ জায়গা৷ চলতি বিশ্বকাপেও সেকথার প্রমাণ মিলেছে৷ এমনকি নিউজিল্যান্ডও স্পিন দিয়েই কাবু করেছে ভারতকে৷ সেদলের মিচেল স্যান্টনার চার উইকেট নেন ১১ রান খরচায়৷ টুর্নামেন্টের সেরা বোলারদের তালিকায় স্পিনাররাই রয়েছেন উপরের দিকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Stringer
নিষিদ্ধ দুই বোলার!
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ক্রমাগত সাফল্য দেখানো বাংলাদেশের জন্য বড় দুঃসংবাদ দুই বোলারের উপর নিষেধাজ্ঞা৷ আইসিসি হঠাৎ করে এবং খুব দ্রুত বাংলাদেশের স্পিনার আরাফাত সানি ও মূল বোলার তাসকিন আহমেদকে ‘অবৈধ বোলিংয়ের’ অভিযোগে সাময়িক নিষিদ্ধ করেছে৷ আইসিসির এই সিদ্ধান্ত ব্যাপক নিন্দা কুড়িয়েছে, বিশেষ করে তাসকিনকে নিষিদ্ধের বিষয়টি অনেকেই মেনে নেয়নি৷ বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নিষিধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আপিল করেছে৷
ছবি: Reuters/D. Gray
6 ছবি1 | 6
এবং একভাবে দেখলে এখনকার সাফল্যের এটাও একটা কারণ যে, আগের প্রজন্মের মতো বর্তমানদের অপ্রস্তুত অবস্থায় গিয়ে নেমে খাবি খেতে হচ্ছে না৷ যারা এখন জাতীয় দলে আসছে, এই ২২-২৩ বয়সিদের ক্রিকেট শিক্ষার শুরু ২০০০ সালের পর৷ তখন ক্রিকেট মানেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট, জানত সেখানে গিয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটারদের মোকাবেলা করার জন্যই তৈরি হতে হবে তাকে৷
সেই মানসিক প্রস্তুতিটুকু এদের আছে বলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে এসে ভয়ে সিঁটিয়ে যাওয়ার ব্যাপার ঘটছে না৷ তাছাড়া ঐ সময় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ঢুকে পড়ায় আন্তর্জাতিক মাপের কোচিং, ট্যাকটিকস এ সবের মধ্য দিয়েই এদের বেড়ে ওঠা৷ সঙ্গে সুবিধা আরেকটা৷ এখন অন্য প্রতিপক্ষ টেস্ট দলে যারা খেলছে তাদের সঙ্গে যুব পর্যায়ে কোনো না কোনো ক্ষেত্রে খেলেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা৷ সমান্তরালে দুই পক্ষই যখন দু'দেশের জাতীয় দলে ঢুকছে, তখন ঐ ক্রিকেটারদের আর দূরের তারা মনে হয় না এই প্রজন্মের বাংলাদেশের তরুণদের৷ মনে হয় শুধুই বিপক্ষের ক্রিকেটার, যাদের সঙ্গে আমরা খেলেছি, কখনও কখনও হারিয়েওছি৷ শক্তিগত ব্যবধানটা এভাবে অনেকখানি ঘুচে গিয়ে প্রায় সমতায়৷
কিন্তু যত তত্ত্ব-থিওরি-মানসিক শক্তি থাক শেষ পর্যন্ত পেছনে মানুষ লাগে৷ তার ছোঁয়া লাগে৷ কয়েক বছর আগেও তো বাংলাদেশে যথেষ্ট প্রতিভা ছিল, কিন্তু এক ম্যাচ জিতে ছয় ম্যাচ হারত কেন? কারণ, তখন প্রতিভা ছিল কিন্তু প্রতিভাদের জন্য অভিভাবকত্ব নিয়ে একজন মাশরাফি ছিলেন না৷ ছিলেন না একজন হাতুরাসিংহে, যার ক্রিকেট অঙ্কের কাছে লুটোপুটি খায় প্রতিপক্ষদের রণসজ্জা৷ ভুল চিন্তা আর চর্চায় দলের মধ্যে গড়ে উঠেছিল একটা তারকারাজত্ব৷ কোচ বা টিম ম্যানেজমেন্ট অনভিজ্ঞতায় সেটা সামাল দিতে পারেনি৷ মাশরাফি অধিনায়ক হলেন আর সব বদলাতে শুরু করল৷ যে সূতার অভাবে ফুলগুলো মালা না হয়ে আলাদাই রয়ে যাচ্ছিল মাশরাফি হয়ে এলেন ঐক্যের সেই সুতা৷ বিচ্ছিন্নতা দূর করে বাজালেন ঐক্যের গান৷
মাশরাফির মাথাটা ছাতা হয়ে এক সারিতে দাঁড় করাল সবাইকে৷ হাতুরাসিংহের হাত তৈরি করে দিল ভীতের মাটিটা যার উপর দাঁড়ালে পা আর পিছলে যায় না৷ ঠিক ধরেছেন৷ শেষ বিচারে মূল্যায়ন পত্রে সবার উপরে ঐ দু'টো৷ মাশরাফির মাথা আর হাতুরাসিংহের হাত৷
আপনি কি মোস্তফা মামুনের সঙ্গে একমত? জানান নীচে, মন্তব্যের ঘরে৷