শরীরের নানা জায়গায় ইনজুরি৷ বছরের পর বছর ধরে অপারেশন৷ কিন্তু বীরের বেশে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে ঠিকই বারবার মাঠে ফিরে এসেছেন টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা৷ ঘটাচ্ছেন অসাধারণ সব কাণ্ড৷
বিজ্ঞাপন
জীবনের মায়া কার নেই? উত্তরটা হওয়া উচিত, সবারই আছে৷ কিন্তু সে উত্তরটা বারবার কঠিন করে দিচ্ছেন মাশরাফি৷
এমনকি ডাক্তারও তাঁকে সাবধান করে দিয়েছেন বারবার৷ সামান্য অসতর্কতায় চিরতরে পঙ্গু হয়ে যেতে পারেন৷ কিন্তু কে শোনে কার কথা!
একাধিক ইনজুরি নিয়েও সবার সামনে থেকে বছরের পর বছর টাইগার টিমকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন মাশরাফি৷ শুধু তাই নয়, প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই পূর্ণ করছেন পুরো ১০ ওভারের কোটা৷
ফাইনালের পথে টাইগারদের কিছু স্মরণীয় মুহূর্ত
পাকিস্তানকে ৩৭ রানে হারিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ৷ এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো এশিয়ার সেরা হওয়ার ফাইনালে উঠল বাংলাদেশ৷ ছবিঘরে থাকছে ম্যাচের স্মরণীয় কিছু মুহূর্ত৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. S. Kodikara
মুশফিকের এক রানের দুঃখ
তামিম, সাকিব নেই৷ তার ওপর মাত্র ১২ রানে তিন উইকেট হারিয়ে ভয়াবহ চাপে বাংলাদেশ৷ কিন্তু পুরো দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে মোহাম্মদ মিঠুনের সাথে ১৪৪ রানের পার্টনারশিপ গড়ে তোলেন মুশফিকুর রহিম৷ তবে ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরি করতে পারেননি মুশফিক, আউট হয়ে যান ৯৯ রানে৷ ওয়ানডেতে ৯৯ রানে আউট হওয়া প্রথম বাংলাদেশি তিনি৷ এশিয়া কাপেও এর আগে কেউ কখনো ৯৯ রানে আউট হয়নি৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. S. Kodikara
মিরাজের অগ্নিপরীক্ষা
সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে ব্যাটসম্যানদের ঘূর্ণিজাদুতে পরাস্ত করার মূল দায়িত্ব নিতে হয় মিরাজকেই৷ বেশ ঝুঁকি নিয়েই অধিনায়ক মাশরাফি প্রথম ওভারের দায়িত্ব দেন তাঁকে৷ সে ভরসার দারুণ প্রতিদান দিয়েছেন তিনি৷ প্রথম ওভারেই ফিরিয়ে দেন ওপেনার ফখর জামানকে৷ পরবর্তীতে ভয়ঙ্কর হতে থাকা আসিফ আলীকেও ফেলেন স্ট্যাম্পিং-এর ফাঁদে৷ পুরো ১০ ওভার বোলিং করে দিয়েছেন মাত্র ২৮ রান৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. S. Kodikara
মুস্তাফিজ, দ্য কাটার মাস্টার
ভাগ্যের সহায়তা না থাকায় পাঁচ উইকেট পাওয়া হয়নি মুস্তাফিজের৷ অলআউট হওয়ার হাত থেকে বেঁচে গেছে পাকিস্তানও৷ তবে পুরো ম্যাচেই মুস্তাফিজ ভুগিয়েছেন পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের৷ বল বুঝতে ও খেলতে না পারার অস্বস্তি নিয়েই তাঁর বলে আউট হয়েছেন বাবর আজম, সরফরাজ আহমেদ, মোহাম্মদ নওয়াজ এবং হাসান আলী৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. S. Kodikara
ভরসার নাম মাহমুদুল্লাহ
ব্যাট হাতে এদিন বেশি কিছু করতে পারেননি মাহমুদুল্লাহ৷ ৩১ বলে করেছেন ২৫ রান৷ কিন্তু বল হাতে পেয়েছেন দারুণ সাফল্য৷ ৩ দশমিক ৮০ ইকোনমি রেটে ১০ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ৩৮ রান, ঘুরতে দেননি রানের চাকা৷ ইমাম-উল-হক যখন জয়ের আশা দেখাচ্ছিলেন পাকিস্তানি শিবিরকে, তখনই ৮৩ রানে তাঁকে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলে আউট করে ম্যাচের গতি ঘোরান বাংলাদেশের পক্ষে৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. S. Kodikara
মাশরাফি দ্য গ্রেট
নড়াইল এক্সপ্রেসের বোলিং নিয়ে নতুন কী-ই বা বলা যেতে পারে৷ শরীরের বিভিন্ন জায়াগায় ভয়াবহ ইনজুরি নিয়েও যেভাবে বাম দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে এক হাতে শোয়েব মালিকের দেয়া ক্যাচ লুফে নিলেন, তাতে হয়তো সর্বকালের সেরা ফিল্ডার হিসেবে পরিচিত জন্টি রোডসও ঈর্ষান্বিত হবেন৷ ব্যাটিং ক্রিজ থেকে মাত্র দুই মিটার দূরে দাঁড়িয়ে দ্রুত গতির এ ক্যাচ ধরতে মাশরাফি সময় পেয়েচেন মাত্র ০.৮৫ সেকেন্ড!
ছবি: Getty Images/AFP/I. S. Kodikara
5 ছবি1 | 5
কিন্তু বুধবার যা করলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে, তা সত্যিই বিশ্ববাসী মনে রাখবে অনেকদিন৷
পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান শোয়েব মালিক তখন ক্রিজে৷ আভাস দিচ্ছেন ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার৷ মাত্র ২৩৯ রানের পুঁজি নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ৷
ব্যাটসম্যানের লেগ সাইডে ক্রিজ থেকে মাত্র দুই মিটার দূরে দাঁড়িয়ে আছেন টাইগার অধিনায়ক৷ রুবেল হোসেনের করা একটি বল ব্যাটে লেগে মাশরাফির প্রায় দুই হাত দূর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল৷
কিন্তু মাশরাফি জানেন, পাকিস্তানের কফিনে পেরেক ঠুকতে যেভাবে হোক আউট করতেই হবে শোয়েব মালিককে৷ আর মানুষটা যখন মাশরাফি, তখন শরীরের কথা কি আর চিন্তায় থাকে৷
ঠিকই পুরো শরীর শূন্যে মেলে দিয়ে বাম দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে এক হাতে ধরলেন অসাধারণ এক ক্যাচ৷ তারপরই বল হাতে দাঁড়িয়ে হাত উঁচিয়ে জানান দিলেন, তিনি থাকতে হারার আগে কখনোই হারবে না বাংলাদেশ, লড়াই চলবে শেষ পর্যন্ত৷
ধারাভাষ্যকার তো বটেই, অবাক গ্যালারিভর্তি দর্শকও৷ হবেন না-ই বা কেন? এই ক্যাচ ধরতে মাশরাফির রিঅ্যাকশন টাইম ছিল কেবল ০ দশমিক ৮৪ সেকেন্ড৷
এই ক্যাচ নেয়ায় মাশরাফির বাম হাতের কড়ে আঙুলে চিড় ধরেছে৷ আশঙ্কা জেগেছিল, ফাইনালে খেলতে পারবেন কিনা৷ উত্তর দিয়েছেন মাশরাফিই, ‘‘সাকিব ভাঙা হাত নিয়ে একের পর এক ম্যাচ খেলতে পারলে, আমি একটা ফাইনাল খেলতে পারবো না?''
পাকিস্তানের গণমাধ্যমও এই ক্যাচের প্রশংসায় পঞ্চমুখ না হয়ে পারেনি৷ পিটিভির ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা ভিডিওটি এরই মধ্যে দেখেছেন সোয়া এক লাখেরও বেশি মানুষ৷
এডিকে/এসিবি
গতবছরের এপ্রিলের ছবিঘরটি দেখুন...
টি-টোয়েন্টিতে মাশরাফির কিছু স্মরণীয় মুহূর্ত
গতবছর ঘোষণাটি দিয়ে দিলেন তিনি, ফেসবুকে৷ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আর থাকছেন না তিনি৷ বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার কিছু স্মরণীয় টি-টোয়েন্টি মুহূর্ত থাকছে এখানে৷
ছবি: Getty Images/AFP/I.S. Kodikara
অভিষেকেই জয়
২০০৬ সালে খুলনায় জিম্বাবোয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিকে মাশরাফির অভিষেক হয়৷ ক্রিকেটের ছোট সংস্করণে বাংলাদেশেরও অভিষেক হয় সেই ম্যাচের মাধ্যমে৷ ব্যাট হাতে ৩৬ রান আর বল হাতে ২৯ রান খরচায় এক উইকেট নেন তিনি৷ বাংলাদেশ সে ম্যাচ জেতে ৪৩ রানে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
এক ম্যাচে চার উইকেট
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১৯ রান খরচায় চার উইকেট তুলে নেন মাশরাফি বিন মুর্তজা৷ টি-টোয়েন্টিতে এটাই তাঁর সবচেয়ে ভালো বোলিং রেকর্ড৷ ২০১২ সালের ২১ জুলাই সে ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছিল দুই উইকেটে৷
ছবি: Getty Images/AFP/F.K. Godhuly
নেতৃত্বে মাশরাফি
টি-টোয়েন্টিতে শুরুর দিকে শাহরিয়ার নাফিসের নেতৃত্বে পেসার হিসেবে দলে ছিলেন মাশরাফি৷ দলকে নেতৃত্ব দেয়ার দায়িত্ব তিনি পান ২০০৯ সালে৷ অধিনায়ক হিসেবে ২৭টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ খ্যাত এই তারকা ক্রিকেটার৷ এর মধ্যে নয়টি ম্যাচে জিতেছে বাংলাদেশ৷
ছবি: Getty Images/AFP/I.S. Kodikara
ব্যাটসম্যান মাশরাফি
মূলত পেসার হিসেবে পরিচিতি পেলেও টি-টোয়েন্টিতে শেষের দিকে ব্যাটিংয়ে নেমে মাঝে মাঝে দলকে অনেকটা এগিয়ে নিয়েছেন তিনি৷ ১৩ দশমিক ৯৬ গড়ে মোট ৩৭৭ রান করেছেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/I.S. Kodikara
ইনজুরির ধকল
হাঁটুর ইনজুরি মাশরাফিকে ভালোই ভুগিয়েছে৷ ক্রিকেটের অন্যান্য পরিসরের মতো টি-টোয়েন্টিতেও তাঁর ছাপ দেখা গেছে৷ ২০০৯ সাল থেকে বেশ কয়েকবার হাঁটুতে অস্ত্রোপচার হয়েছে তাঁর৷ শ্রীলঙ্কায় হাঁটুতে বিশেষ ধরনের ব্যান্ডেজ লাগিয়ে তাঁর খেলার ছবি ফেসবুক, টুইটারে অনেকে শেয়ার করেছেন৷
ছবি: AP
অবশেষে বিদায়
টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা মাশরাফি নিজেই দিয়েছেন, ফেসবুকে৷ কানাঘুষা অবশ্য আগে থেকেই চলছিল৷ বিশেষ করে বিসিবি সভাপতি এবং কোচের ‘স্বপ্নের তরুণ দলে’ মাশরাফির মতো অভিজ্ঞ এবং প্রবীণদের আর জায়গা হবে না, তা শোনা যাচ্ছিল৷ ম্যাশ অবশ্য বিতর্ক চান না৷ বরং নিজেই সরে দাঁড়িয়েছেন পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে৷ প্রশ্ন হচ্ছে, তাঁর মতো নেতৃত্বদানের ক্ষমতাধারী উত্তরসূরী কি পাওয়া যাবে? লিখুন মন্তব্যে৷