ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনসহ নানা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করলেন জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়রা৷ কিন্তু সেখানে দলের অন্যতম কাণ্ডারি মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা কোথায়?
বিজ্ঞাপন
সোমবার দুপুরে মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমসহ জাতীয় ক্রিকেটারদের অনেকেই উপস্থিত হয়ে সংবাদ সম্মেলন করলেন৷ তারা ডাক দিলেন ধর্মঘটের৷ বললেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত দলের হয়ে মাঠে নামবেন না তারা৷ কোনো ক্রিকেট কার্যক্রমে অংশ নেবেন না৷
সার্বিকভাবে দাবিগুলোকে যৌক্তিকই মনে হয়েছে৷ যেমন, ঘরোয়া ক্রিকেটের মান উন্নয়ন৷ এ নিয়ে জোর গলায় কথা হচ্ছে গত কয়েক দশক ধরে৷ কিছুটা উন্নতি হয়েছে সময়ের পরিক্রমায়৷ কিন্তু আরো অনেক উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷ সেখানে সিরিজ সংখ্যা বাড়নোসহ এসব দাবি করা তাই ক্রিকেটারদের মানায়৷
বেতন ভাতার বিষয়গুলো নিয়ে আগেও কথা হয়েছে৷ এবার জাতীয় লীগে যে পারিশ্রমিক বাড়ানো হয়েছে, তাতে সন্তুষ্ট নন ক্রিকেটাররা৷ তারা চান এগুলো বাড়ুক৷ সেটাতেও অসুবিধা কিছু নেই৷ জাতীয় দলে চু্ক্তিভিত্তিক খেলোয়াড়দের সংখ্যা বাড়ানোর দাবিও করেছেন তারা৷ কোচ, গ্রাউন্ডসম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের বেতন বাড়ানো, ক্রিকেটারদের প্রিমিয়ার লীগের বকেয়া পরিশোধসহ অনেক দাবি আছে৷ এগুলো সবই যৌক্তিক৷
সেগুলোর জন্য তারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন৷ সেটিও যৌক্তিক৷ কিন্তু তার জন্য ধর্মঘট ডাকার প্রয়োজন ছিল কি না, তা বুঝতে পারছি না৷ আরো বুঝতে পারছি না, মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা, যিনি দলের অন্যতম কাণ্ডারি, তিনি কেন এখানে নেই? এসব দাবি নিয়ে তাঁর কোনো সমস্যা থাকার কোনো কারণও দেখছি না৷ তাহলে কোথায় তিনি? তিনি তো এখনো অবসর নেননি৷ তাহলে দলের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের সময়ে সেখানে কেন তিনি নেই? স্বভাবতই এই প্রশ্ন আসবে এবং আসছে৷
তিনি না থাকার একাধিক কারণ থাকতে পারে৷ প্রথমত, তিনি এসব দাবি দাওয়ার সঙ্গে একমত নন৷ যেটা আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে না৷ হতে পারে তাঁর আরো দাবিদাওয়া ছিল, যেগুলো মানা হয়নি৷ দ্বিতীয়ত, হতে পারে দাবি আদায়ের পদ্ধতি তাঁর পছন্দ হয়নি৷ তৃতীয়ত, তিনি সংসদ সদস্য৷ তাই অন্যান্য কাজে ব্যস্ত৷ অথবা হয়তো এর কোনোটিই নয়৷ ভিন্ন কোনো কারণ৷ সে যাই হোক, দলের এমন কঠোর অবস্থানের সময় তাঁর কোনো বক্তব্য থাকবে না, সেটা মানা কষ্টকর৷
সে যাই হোক, ক্রিকেটে স্বস্তি ফিরে আসুক৷ সবাই এর উন্নয়নের জন্য কাজ করুক৷ সেটাই প্রত্যাশা৷
এক নজরে মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা
নিঃসন্দেহে মাশরাফী ক্রিকেটের এক কিংবদন্তীর নাম৷ কিংবা বলা যেতে পারে একটি মিথ৷ কারণ, মাশরাফি মাঠে থাকলেই নাকি সতীর্থরা উজ্বীবিত বোধ করেন৷ চলুন এক নজর দেখে নিই তাঁর ক্যারিয়ারকে৷
ছবি: DW/N. Mohammad
নড়াইল এক্সপ্রেস
নড়াইলের সন্তান মাশরাফী৷ জন্ম ১৯৮৩ সালের ৫ অক্টোবর৷ পেস বোলার হিসেবে ক্যারিয়ারের শুরুতেই সাড়া ফেলেন৷ তাই অনূর্ধ-১৯ দলে থাকতেই বাংলাদেশের তৎকালীন অস্থায়ী ক্যারিবিয়ান বোলিং কোচ অ্যান্ডি রবার্টসের নজর কাড়েন৷ ডাক পড়ে ‘এ’ দলে৷ সেখানে খেলেন মাত্র এক ম্যাচ৷ তারপর? পরেরটা ইতিহাস৷
ছবি: Getty Images/AFP/F.K. Godhuly
টেস্ট অভিষেক
জীবনের প্রথম যে প্রথম শ্রেণির ম্যাচটি ‘ম্যাশ’ খেলেছেন, সেটি হলো টেস্ট ম্যাচ৷ ৮ নভেম্বর, ২০০১-এ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জিম্বাবোয়ের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর অভিষেক৷ বৃষ্টির কারণে ম্যাচটি অমীমাংসিত থাকলেও ওই সুযোগেই ১০৬ রানে ৪ উইকেট নিয়ে নিজের জাত চেনান মাশরাফি৷ স্টুয়ার্ট কার্লাইল তাঁর প্রথম শিকার৷
ছবি: AP
টেস্ট ক্যারিয়ার
৩৬ টেস্টে ৭৮ উইকেট নিয়েছেন মাশরাফী৷ এক ইনিংসে পাঁচ উইকেট পাননি কখনো৷ তবে ৪ উইকেট নিয়েছেন চারবার৷ বোলিং গড় ৪১.৫২৷ ইকোনমি ৩.২৪৷ রান করেছেন ৭৯৭৷ সর্বোচ্চ ৭৯৷
ছবি: AP
ওয়ানডে অভিষেক
সেই সিরিজেই ওয়ানডেতেও অভিষেক হয় মাশরাফীর৷ চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে ২০০১ সালের ২৩ নভেম্বর৷ সেখানেও তৃতীয় ওভারেই গ্রান্ট ফ্লাওয়ারের স্টাম্প উড়িয়ে দেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’৷ এরপর অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের উইকেটও তুলে নেন৷ ম্যাচটি বাংলাদেশ হারলেও মাশরাফি ৮.২ ওভারে ২৬ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Melville
ওয়ানডে ক্যারিয়ার
ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এখনো ইতি টানেননি৷ ছয় মার্চ জিম্বাবোয়ের বিপক্ষে ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের ২২০-তম ম্যাচ৷ ওয়ানডেতে মোট উইকেট ২৭০টি৷ ইকোনমি ৪.৮৮৷ ৫ উইকেট নিয়েছেন একবার৷ ৪ উইকেট সাতবার৷ ব্যাট হাতে করেছেন ১৭৮৭ রান৷ সর্বোচ্চ অপরাজিত ৫১৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. S. Kodikara
টি-টোয়েন্টি
৫৪টি টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ম্যাশ৷ উইকেট নিয়েছেন ৪২টি৷ রান করেছেন ৩৭৭৷ ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়েছেন একবার৷
ছবি: Getty Images/AFP/F.K. Godhuly
অধিনায়ক মাশরাফী
বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফী৷ ২০০৯ সালে তিনি অধিনায়কের দায়িত্ব পান৷ ৮৮টি ম্যাচ বাংলাদেশ খেলেছে তাঁর অধিনায়কত্বে৷ এর মধ্যে ৫০টি জিতেছে এবং ৩৬টি হেরেছে৷ ২টির কোনো ফলাফল হয়নি৷ তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশে জয়ের হার ৫৮ ভাগ৷ সফলতায় তার পরে আছেন সাকিব আল হাসান৷ তাঁর অধিনায়কত্বে জয়ের হার প্রায় ৪৭ ভাগ৷