২০১৩ সালের এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের শতকরা ৮৬ ভাগ নারী মাসিকের সময় স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার না করে পুরনো কাপড় বা ন্যাকড়া ব্যবহার করেন৷ এতে কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছেন ডা: মাহমুদা আক্তার৷
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং ওয়াটার এইড সংস্থার সহায়তায় আইসিডিডিআরবি জরিপটি পরিচালনা করে৷ ডা. আক্তার বলেন, পিরিয়ডের সময় অপরিষ্কার পুরনো কাপড় ব্যবহার করলে জ্বর, তলপেটে ব্যথা ও মূত্রনালীতে সংক্রমণ হতে পারে৷ এছাড়া জরায়ুতে ইনফেকশন হতে পারে৷ ইনফেকশন দীর্ঘদিন থাকলে পরবর্তিতে সেটি জরায়ুর ক্যানসারে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা থাকে৷ পুরনো, অপরিষ্কার কাপড় ব্যবহারে পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত রক্তপাতের সম্ভাবনাও থাকে বলে জানান এই চিকিৎসক৷ বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এন্ডোগাইনোকলজি বিভাগে অনারারি মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন৷
Dr Mahmuda Akhter - MP3-Stereo
তবে দামের কারণে যারা স্যানেটারি প্যাড ব্যবহার করতে পারেন না তারা পুরনো কাপড় ব্যবহার করতে পারেন৷ সেক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন ডা. আক্তার৷ তিনি বলেন, ব্যবহারের জন্য নেয়া কাপড়টি অবশ্যই পরিষ্কার হতে হবে৷ তারপর ব্যবহারের পর সেটি সাবান ও গরম পানি দিয়ে খুব ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে৷ এরপর ইস্ত্রি করে কাপড়টি জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে৷ এছাড়া কয়েকবার ব্যবহারের পর কাপড়টি ফেলে দিতে হবে৷ নইলে ইনফেকশনের আশঙ্কা থাকবে৷
পুরনো কাপড়ের সমস্যার কথা বলতে গিয়ে ডা. আক্তার বলেন, বাজারে যে প্যাড পাওয়া যায় সেগুলোর শোষণ ক্ষমতা পুরনো কাপড়ের চেয়ে ভালো৷ ‘‘একদিনে যেমন দুই-তিনটি প্যাড ব্যবহার করলেই হয়ত চলে যেতে পারে, সেখানে হয়ত আরও বেশি কাপড়ের প্রয়োজন হতে পারে,'' বলেন তিনি৷
ঋতুস্রাব বা মাসিক নিয়ে কয়েকটি ভুল ধারণা
কোনো নতুন খবর আছে নাকি? বিয়ের পর নতুন বউকে এ কথা জিজ্ঞেস করে থাকেন অনেকেই৷ এতে কোনো লজ্জাবোধ না থাকলেও, ঋতুস্রাব নিয়ে কথা বলতে লজ্জার যেন শেষ নেই৷ তাছাড়া এ মাসিক নিয়ে আমাদের সমাজে রয়েছে নানা কুসংস্কারও৷
ছবি: Fotolia/Alliance
চুল ধোয়া
ঋতুস্রাব হলে বলা হয়, মেয়েদের দু’দিন চুল ধোয়া উচিত নয়৷ এটার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই৷ বরং চিকিৎসকরা বলে থাকেন মাথায় পানি দিলে মাসিকের ব্যথা অনেকটা কমে এবং এতে আরাম পাওয়া যায়৷
ছবি: Colourbox/Frédéric Cirou/ AltoPress/MAXPPP
মাসিকের দিনে সাঁতার
আগেরকার দিনে পুকুরে গোসল করতো অনেকেই৷ তাই হয়ত পানি নোংরা হওয়ার ভয়ে এ নিয়ম চালু হয়েছিল যে, মাসিক হলে গোসল করা যাবে না৷ কিন্তু এখনকার গোসলখানায় সে ধরনের কোনো অসুবিধা নেই৷ এমনকি ট্যাম্পন পরে অনেকে সাঁতারও কাটে এ সময়ে৷
ছবি: Colourbox/L. Zahner
অচ্ছুৎ ও অভিশপ্ত
মাসিকের চারদিন মেয়েদের সাথে এমন ব্যবহার করা হয়, যেন তারা অচ্ছুৎ এবং অভিশপ্ত৷ তাদের গাছে পানিও দিতে দেয়া হয় না৷ আমাদের সমাজে প্রচলিত ধারণা, তাদের দেয়া পানিতে গাছ নাকি মরে যাবে৷
ছবি: Colourbox
মসলাযুক্ত খাবার
মাসিকের সময় হরমোন বেশি সক্রিয় থাকে৷ মসলাযুক্ত খাবার তাই না খাওয়া ভালো৷ কিন্তু অনেক বাড়িতে আচার ছুঁতে দেয়া হয় না মেয়েদের, এতে নাকি আচারও নষ্ট হয়ে যাবে৷ এমনকি আচার খেতেও দেয়া হয় না তাদের৷
ছবি: donatas1205/Fotolia
যৌন সম্পর্ক নয়
মাসিক চলাকালীন মেয়েদের শরীর কিছুটা দুর্বল থাকে৷ অনেকের খুব ব্যথা হয়৷ তাই এ সময়ে মেয়েদের বিশ্রাম করা দরকার৷ মনে করা হয়, এ সময় যৌন সম্পর্কে লিপ্ত না হওয়াই ভালো৷ স্বামীর উচিত স্ত্রীকে এ সময় বিশ্রাম দেয়া ও যত্ন নেয়া, যাতে তার কাজের চাপ বেশি না হয়৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel
রান্নাঘরে ঢুকতে মানা
অনেক হিন্দু পরিবারে মাসিক চলাকালীন মেয়েদের রান্না ঘরে ঢুকতে দেয়া হয় না৷ বিশেষ করে বড় পরিবারে এ ধরনের কুসংস্কার লক্ষ্য করা যায়, তারা মনে করে এতে খাবার দূষিত হয়৷ এই ধারণা একেবারেই ভুল৷
ছবি: picture-alliance/Wildlife/M. Harvey
বিছানায় শুতে না দেয়া
অনেক পরিবারে মাসিক চলাকালীন মেয়েদের বিছানায় শুতে দেয়া হয় না৷ মাটিতে শুতে বলা হয়৷ কোনো কোনো পরিবারে তো ঘরে নয়, বরং বাইরে,অর্থাৎ বারান্দায় শুতে দেয়া হয় তাদের৷ অথচ এতে যে ঐ মেয়েটির কষ্ট আরো বেড়ে যায়, তা কেউই লক্ষ্য করে না৷
ছবি: FEMNETe.V.
নাপাক রক্ত!
অনেকেই বলে থাকেন, মাসিকের রক্ত নাপাক, মানে অপবিত্র৷ তাদের ধারণা এই রক্ত দিয়ে জাদু, ঝাড়ফুকও করা যায়৷ আশ্চর্যের বিষয়, শুধুমাত্র অশিক্ষিত পরিবারে নয়, অনেক শিক্ষিত পরিবারেও এ ধারণা প্রচলিত আছে৷