1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মাসিক পাঁচ হাজার টাকা ভাতা চান প্রতিবন্ধীরা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৪ জুন ২০২৩

মাসিক পাঁচ হাজার টাকা ভাতার দাবিতে "সংক্ষুব্ধ প্রতিবন্ধী নাগরিক সমাজের” ব্যানারে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিরা রোববার সকাল থেকে ঢাকার শাহবাগে অবস্থান নিয়েছেন।

দেশে এখন সরকারের নিবন্ধিত প্রতিবন্ধী অর্থাৎ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তির সংখ্যা ৩০ লাখ
দেশে এখন সরকারের নিবন্ধিত প্রতিবন্ধী অর্থাৎ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তির সংখ্যা ৩০ লাখছবি: Harun Ur Rashid/DW

তাদের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করার কর্মসূচি ছিলো। তবে পুলিশ  বাধা দিলে তারা সেখানেই অবস্থান নেন। বিকেল পর্যন্ত তারা সেখানে ছিলেন। পরে ওই জায়গায়ই সংবাদ সম্মেলন করে তাদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

অবস্থানকারীদের একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পার্থপ্রতিম মিস্ত্রিঅভিযোগ করেন, "পুলিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দিকে যেতে তো দেয়ই নাই। উল্টো হুইলচেয়ারে বসা কয়েকজনকে চেয়ার থেকে রাস্তায় ফেলে দিয়েছে।'' পুলিশের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি এবং হাতাহাতি হয়েছে।পুলিশ তাদের লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে বলে জানান তিনি।

পুলিশ তাদের বাধা দেয়ার কথা স্বীকার করলেও হেনস্তা করার অভিযোগ অস্বীকার করে।

এবারের(২০২৩-২৪) প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতিবন্ধিতা খাতে মোট বরাদ্দ তিন  হাজার ৭১০  কোটি টাকা, যা সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ২.৯৪ শতাংশ। মোট বাজেটের ০.৪১ শতাংশ।

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের মাসিক ভাতা ৮৫০ টাকা অপরিবর্তিত আছে। গত পাঁচ বছর ধরে উপবৃত্তির জন্য বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের সংখ্যা এক লাখ অপরিবর্তিত  রয়েছে।

অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেয়া বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এক নারী নিজেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী হিসাবে উল্লেখ করেন। সালমা মাহবুব নামে ওই নারী বলেন," আমাদের ১১ দফা দাবির মধ্যে মূল দাবি হলো মাসিক প্রতিবন্ধী ভাতা পাঁচ হাজার টাকা করা এবং শিক্ষার্থীদের এর সঙ্গে আরো দুই হাজার টাকা শিক্ষা উপবৃত্তি দেয়া। মাসিক মাত্র ৮৫০ টাকা ভাতা প্রহসন ছাড়া আর কিছুই না।”

'দেশের প্রতিবন্ধী সরকারি হিসাবের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি'

This browser does not support the audio element.

তাদের ১১ দফা দাবির মধ্যে আরো আছে- সরকারি চাকরিতে নিয়োগে বিশেষ কোটা দেয়া। ২০১৮ সাল থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা তুলে দেয়া হয়েছে।

তাদের দাবি,

১. এক হাজার কোটি টাকায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের উদ্যোক্তা তহবিল গঠন।

২. প্রতিবন্ধী উন্নয়ন অধিদপ্তরকে কার্যকর করা।

৩. ইশারা ভাষা ইনস্টিটিউট গঠন এবং সরকারি সব প্রতিষ্ঠানে ইশারা ভাষা সেবা নিশ্চিত করা।

৪. শিক্ষা ও চাকরির পরীক্ষায় অভিন্ন শ্রুতিলেখক নীতিমালা প্রণয়ন করা।

৫. একটি বাড়ি , একটি খামার আশ্রয়ন প্রকল্পের সুবিধা দেয়া। 

৬. বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য (গুরুতর প্রতিবন্ধী) স্বাস্থ্য ও কেয়ারগিভার ভাতা চালু করা।

৭. সংসদ থেতে শুরু করে স্থানীয় পরিষদে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের প্রতিনিধিত্ব রাখা।

৮. বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য মন্ত্রণালয় ভিত্তিক বাজেট করা।

দেশে এখন সরকারের নিবন্ধিত প্রতিবন্ধী অর্থাৎ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তির সংখ্যা ৩০ লাখ। বর্তমানে তাদের মধ্যে ২৩ লাখ ৮৫০ টাকা করে ভাতা পান।  নতুন বাজেটে ভাতা বাড়ানো হয়নি। তবে উপকারভোগী বাড়িয়ে ২৯ লাখকে ভাতা দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। তবে "সংক্ষুব্ধ প্রতিবন্ধী নাগরিক সমাজের” সদস্য সচিব ইফতেখার মাহমুদ বলেন," একটি দেশের শতকরা ১০ ভাগ মানুষ প্রতিবন্ধী। এটা আন্তর্জাতিক হিসাব। বাস্তবে দেশে প্রতিবন্ধী সরকারি হিসাবের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। ” তার কথায়," সব কিছুর দাম অনেক বেড়েছে, কিন্তু আমাদের ভাতা ৮৫০ টাকাই আছে। তাই আমরা ভাতার পরিমাণ এবং পরিসর দুইটিই বাড়ানো দাবি করেছি।”

বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের মধ্যে গ্রাজুয়েট পরিষদের সদস্যরাও এই কর্মসূচিতে যোগ দেন। গ্রাজুয়েট পরিষদের সদস্য প্রায় ৩০০। পরিষদের সদস্য পার্থপ্রতিম মিস্ত্রি বলেন," আমরা গ্রাজুয়েট হলেও চাকরি পাচ্ছিনা। সরকারি অনেক আইনের কথা শুনি। কিন্তু বাস্তবে আমরা সেই সুবিধা পাইনা। কিছুদিন আগে প্রাইমারি স্কুলে ৩৭ হাজার ৫৭৪ জনের নিয়োগ হলো। আমরা লিখিত পরীক্ষায় পাস করলাম, কিন্তু মৌখিক পরীক্ষায় আমাদের বাদ দেয়া হলো। আমাদের সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় আমারে পাশে দাঁড়ালোনা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলল আমাদের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে ১০ ভাগ কোটা আছে। আমরা রিট করতে গেলাম আমাদের হুমকি দেয়া হলো।” তার কথা," কোটা অনুয়ায়ী আমরা নিয়োগ পেলে আমাদের সবার চাকরি হতো।”

কর্মসূচিতে অংশ নেয়া গুরুতর প্রতিবন্ধীদের একজন সাবরিনা সুলতানা বলেন," প্রতিবন্ধকতার যে কী কষ্ট তা আমি জানি। আমি ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়েছি। এরপর আর আমাকে শিক্ষকরা আর স্কুলে গ্রহণ করেননি, গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে। আসি ২৬ বছর বয়স পর্যন্ত ঘরের ফার্নিচারের মতো বড়  হয়েছি। প্রতিবন্ধীর বঞ্চনা কী জিনিস আমি জানি।”

'৮৫০ টাকার ভাতা নামের প্রহসন আর চলতে পারে না'

This browser does not support the audio element.

তার কথায়," ৮৫০ টাকার এই ভাতা নামের প্রহসন আর চলতে পারেনা। এত বড় বিশাল সাড়ে সাত লাখ কোটি টাকার বাজেট, কিন্তু প্রতিবন্ধীদের জন্য তেমন কিছুই নেই।”

তিনি বলেন," আমি নিজের জন্য আর ভাবিনা। ১৪ বছর আগে ঘর থেকে বেরিয়েছি। প্রতিবন্ধীদের জন্য আন্দোলন করছি। তাদের অধিকারের জন্য কাজ করছি। ২০১১ সালে আমি ডয়চে ভেলের প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করি। আমার আন্দোলন থামবেনা। ”

তাদের দাবির ব্যাপারে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু বলেন," ভাতা যা আছে তাই থাকবে। তবে আমরা এবার সুবিধাভোগীর সংখা বাড়িয়েছি। যারা নিবন্ধিত এবং আবেদন করছেন তারা সবাই ভাতা পাবেন।  আর শিক্ষা উপবৃত্তি ১৫০ টাকা করে বাড়ানো হচ্ছে।”

তিনি বলেন," আগে তোপ্রতিবন্ধীরা কোনো ভাতাই পেতেন না।শেখ হাসিনা সরকার আসার পর এই ভাতা চালু করা হয়। এখ চাইলেই সেটা ৮৫০ টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা করা সম্ভব নয়। আমরা  ধাপে ধাপে বাড়াবো। এবার তো শিক্ষা উপবৃত্তিতে বাড়ানো হলো।”

বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের চাকরিসহ নানা ক্ষেত্রে বঞ্চনার অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন," না, তার বঞ্চিত হচ্ছেন না। তাদের যা পাওয়ার কথা তারা তা পাচ্ছেন। এখন যারা লিখতেই পারেন না তারা চাকরি পাবেন কীভাবে?”

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ