জলবায়ু সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মুখে মাস্ক নেই কেন? সামাজিক দূরত্ব না মেনে কেন তিনি আলিঙ্গন করছেন বিশ্ব নেতাদের? উঠছে প্রশ্ন।
বিজ্ঞাপন
বিষয়টি আন্তর্জাতিক মিডিয়ার নজর এড়ায়নি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম জলবায়ু সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
কী করেছেন মোদী? ভিডিও-তে দেখা যাচ্ছে, জলবায়ু সম্মেলনের মঞ্চে প্রথমে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে কথা বলছেন তিনি। মোদীর মুখে মাস্ক নেই। বরিস তার দিকে কনুই এগিয়ে দেন। দুইজনে কনুই লাগিয়ে একে অপরকে সম্ভাষণ করেন। খানিক দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস। দুই রাষ্ট্রপ্রধানের দিকে তিনি এগিয়ে আসতেই মোদী গুতেরেসের একেবারে সামনে চলে যান। তাকে জড়িয়ে ধরেন। কিন্তু গুতেরেস অস্বস্তিতে পড়ে যান।
বিশ্ব কোলাকুলি দিবস: কিছু তথ্য
২১ জানুয়ারি বিশ্ব কোলাকুলি দিবস৷ একে অপরকে জড়িয়ে ধরার গুরুত্ব ও উপকারিতা সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতে প্রতিবছর এই দিবস পালিত হয়ে আসছে৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
বিশ্ব কোলাকুলি দিবস
মার্কিন নাগরিক কেভিন জবোর্নির উদ্যোগে ১৯৮৬ সালে মিশিগানে প্রথম কোলাকুলি দিবস পালিত হয়েছিল৷ জবোর্নি মনে করতেন ‘মার্কিন সমাজ প্রকাশ্যে আবেগ দেখাতে অস্বস্তিতে ভোগে’৷ এই পরিস্থিতি থেকে মার্কিনিদের বের করে আনতে তিনি এমন দিবসের সূচনা করেছিলেন৷ পরে এটিই বিশ্ব কোলাকুলি দিবস হয়ে ওঠে৷
ছবি: Imago/Westend61
ট্রাম্পের ভুল
বিশ্ব কোলাকুলি দিবসের উদ্দেশ্য মানুষের প্রতি আবেগ, অনুভূতি দেখানো; কোনো বস্তুর প্রতি নয়৷ কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প মনে হয় এটি বুঝতে পারেননি, কিংবা বুঝতে চাননি৷ তাইতো দেশপ্রেম দেখাতে পতাকাকে জড়িয়ে ধরেছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/Katopodis
স্বাস্থ্যকর বিষয়
অস্ট্রিয়ার ভিয়েনার মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ব্রেন রিসার্চ ২০১৩ সালে জানায়, কোলাকুলি, আলিঙ্গন ও চুমু খাওয়া- এগুলো স্বাস্থ্যকর অভ্যাস৷ এবং এগুলো মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা কমায়৷ এছাড়া রক্তচাপ কমায় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় আলিঙ্গন৷
কোলাকুলি কিংবা কাউকে জড়িয়ে ধরার সময় মানুষের শরীরে অক্সিটোসিন হরমোন উৎপাদিত হয়৷ ফলে একে ‘আলিঙ্গন হরমোন’ও বলা হয়৷ সন্তান জন্ম দেয়া ও তাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় মায়ের শরীরে অক্সিটোসিন হরমোন উৎপাদন হয়, যা মা ও শিশুর বন্ধনকে মজবুত করে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Nissen
দুজনেরই মত থাকতে হবে
কোলাকুলি করলে দুই ব্যক্তিরই মানসিক চাপ কমে৷ কিন্তু জড়িয়ে ধরার সময় যদি দুই পক্ষেরই মত না থাকে, তাহলে একজনের ক্ষেত্রে ফল উলটো হতে পারে৷ কারণ সেক্ষেত্রে যাঁর সম্মতি নেই, তাঁর শরীরে কোর্টিসল হরমোন উৎপাদিত হয়ে এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি হতে পারে৷ অর্থাৎ পরস্পরের সম্মতি থাকলেই কেবল আলিঙ্গন করা উচিত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Grubitzsch
ঐতিহাসিক চুমু
ছবিতে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা মিখাইল গর্বাচেভকে (বামে) সাবেক পূর্ব জার্মানির রাষ্ট্রপ্রধান এরিখ হনেকারকে চুমু খেতে দেখা যাচ্ছে৷ এই সময় হনেকারের শরীরে কি স্ট্রেস হরমোন কোর্টিসল বয়ে যাচ্ছিল? এর উত্তর হয়ত কখনও জানা যাবে না৷ তবে বার্লিন প্রাচীর পতনের আগের এই ছবিটি ঐতিহাসিক হয়ে রয়েছে৷
ছবি: picture alliance/dpa
রাজনৈতিক গুরুত্ব
বিশ্ব নেতাদের অনেকে সম্পর্কের গভীরতা বোঝাতে একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন, কোলাকুলি করেন৷ এক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ যে বিশ্ব নেতার সঙ্গেই তাঁর দেখা হয় প্রায় সবার সঙ্গেই তিনি কোলাকুলি করেন৷ অন্যরা তা পছন্দ করছেন কিনা, অনেক সময় তা বিবেচনায় নেন না তিনি৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
প্রাণীদের ভালোবাসা
শুধু মানুষ নয়, পশুপাখিরাও ভালোবাসা প্রকাশের সময় একে অপরকে জড়িয়ে ধরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Zinken
8 ছবি1 | 8
জলবায়ু সম্মেলনের মঞ্চে এই দৃশ্যই বিতর্ক তৈরি করেছে। প্রশ্ন উঠছে, করোনাবিধি ভেঙে কেন মাস্কহীন মোদী গুতেরেসকে আলিঙ্গন করলেন? তিনি কি সামাজিক দূরত্বের কথা ভুলে গেছেন?
ভারতীয় কূটনীতিক এবং রাজনীতি বিশ্লেষকদের একাংশ বলেন, নরেন্দ্র মোদীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র আলিঙ্গন কূটনীতি। ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিভিন্ন সময় তিনি বিশ্ব নেতাদের আলিঙ্গন করেছেন। দুই দেশের কূটনৈতিক দূরত্ব কমানোর চেষ্টা করেছেন প্রথম সম্ভাষণেই। করোনাকালের আগে পর্যন্ত মোদীর এই কূটনীতি বেশ জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু করোনাকালেও তিনি সেই একই কাজ করে যাচ্ছেন। এর আগে রোমে জি২০ সম্মেলনে গিয়েও তিনি একাধিক বিশ্বনেতাকে জড়িয়ে ধরেছেন। এমনকী পোপকেও। মোদী জানিয়েছেন, পোপকে ভারতে আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছেন তিনি। গ্লাসগোয় এসেও সেই একই কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। তবে গুতেরেসের ক্ষেত্রে বড়সড় ছন্দপতন হয়েছে। গুতেরাস যে তার আলিঙ্গন ভালো চোখে দেখেননি, তা শরীরীভাষাতেই স্পষ্ট।
চোখ এড়ায়নি সংবাদমাধ্যমেরও। যুক্তরাজ্যের একটি খবরের কাগজের হেডলাইন-- ‘উষ্ণতা বাড়ছে! অস্বস্তিকর মুহূর্তে তৈরি হল যখন প্রধানমন্ত্রী মোদী নিবিড় ভাবে গুতেরেসকে আলিঙ্গন করতে গেলেন'। প্রশ্ন তোলা হয়েছে, গোটা বিশ্বে, বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে ফের যখন করোনা বাড়ছে, তখন প্রধানমন্ত্রী মোদী কেন সামাজিক দূরত্ব মানছেন না।
প্রশ্ন উঠেছে ভারতেও। বিরোধী দল কংগ্রেসের প্রশ্ন, বারংবার টেলিভিশনের পর্দায় আবির্ভূত হন মোদী। করোনা নিয়ে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। মাস্ক পরার নির্দেশ দেন। সামাজিক দূরত্ব পালনের বিধান দেন। শুধু তা-ই নয়, এখনো দেশের বিভিন্ন শহরে মাস্ক না পরার জন্য পুলিশ জরিমানা করছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী নিজে সেই বিধি পালন করছেন না!
বিজেপির এক শীর্ষ নেতৃত্ব অবশ্য ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, বিশ্ব নেতারা বায়ো বলয়ের মধ্যে আছেন। তাই তারা মাস্ক না পরলেও কোনো ক্ষতি নেই। বিজ্ঞানীরা অবশ্য এই যুক্তির সঙ্গে সহমত নন।