যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের লাইভ সাক্ষাৎকার নিলেন ইলন মাস্ক। কিন্তু প্রযুক্তিগত গোলযোগের মুখে পড়তে হলো তাকে।
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন করছেন মাস্ক।। তার সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ মাস্ক ট্রাম্পের লাইভ ইন্টারভিউ নিতে গিয়েছিলেন। সেখানেই অনেকবার প্রযুক্তিগত গোলযোগের পর তা লাইভ করা সম্ভব হলো। কিন্তু অনেকটা দেরি হলো।
মাস্ক এক্স-এ বলেছেন, ''বিশাল ডিডিওএস আ্যাটাক হয়েছে। তাই অনেক এক্স ব্যবহারকারী লাইভ সাক্ষাৎকার শুনতে পাচ্ছেন না।''
তিনি জানান, ''আমরা ঠিক করার চেষ্টা করছি। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে লাইভে কম শ্রোতাকে নিয়ে শুরু করব। তারপর এই কথপোকথন পোস্ট করে দেয়া হবে।''
পরে তিনি জানান, ''আমরা কম শ্রোতাকে নিয়েই লাইভ শুরু করছি, তারপর কোনোরকম সম্পাদনা না করেই তা পোস্ট করা হবে।''
কিন্তু প্রযুক্তিগত গোলযোগ ঠিক করার পরেই তা সব শ্রোতার কাছে পৌঁছায়।
তবে অনেকে বলেছেন, ট্রাম্পের কথা অনেকসময় বিকৃত হয়ে এসেছে, একজন তো বলেছেন, তাকে কার্টুনের মতো শুনিয়েছে, কেউ বলেছেন, শব্দ সংকোচনের জন্য এরকম হয়েছে।
এখনো পর্যন্ত যা জানা গেছে
সাক্ষাৎকার শুরুর নির্ধারিত সময়ে আট লাখ ৮৭ হাজারের মতো মানুষ সংযুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু সাক্ষাৎকার প্রচার করা যায়নি। অনেক শ্রোতাই একটা বার্তা পান, 'বিস্তারিত উপলব্ধ নয়'।
ট্রাম্পের টিম পোস্ট করে দাবি করেন, ''এক্স-এ এই সাক্ষাৎকার শুনতে প্রচুর শ্রোতা লগ ইন করেছেন।"
অ্যামেরিকায় যত প্রেসিডেন্ট হত্যা ও হত্যাচেষ্টা
এখন পর্যন্ত দেশটির ইতিহাসে চার জন প্রেসিডেন্ট এবং এক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী খুন হয়েছেন। এছাড়া, হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে গিয়েছেন আরো কয়েকজন। বিস্তারিত জানুন ছবিঘরে।
ছবি: Aaron Josefczyk/REUTERS
আব্রাহাম লিংকন, ১৮৬৫
১৬তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন ওয়াশিংটন ডিসিতে স্ত্রীর সঙ্গে একটি থিয়েটারে নাটক দেখছিলেন। সেখানে তাকে গুলি করেন জন উইলকেস বুথ নামে এক ব্যক্তি। পরের দিন মারা যান লিংকন। ১২ দিন পর পলাতক বুথকে পাওয়া যায় এবং পুলিশের গুলিতে হত্যাকারীর মৃত্যু হয়।
ছবি: Matt Slocum/AP Photo/picture alliance
জেমস গারফিল্ড, ১৮৮১
জেমস গারফিল্ড ছিলেন দেশটির ২০তম প্রেসিডেন্ট। দায়িত্ব নেয়ার ছয় মাসের মাথায় নিহত হন তিনি। হামলার দিন ওয়াশিংটন ডিসিতে এক ট্রেন স্টেশনে হাঁটছিলেন গারফিল্ড। চার্লস গিটাউ নামের আততায়ী তাকে গুলি করে। কয়েক সপ্তাহ পর মারা যান জেমস গারফিল্ড। বিচার শেষে পরের বছর আততায়ীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
ছবি: Bildagentur-online/picture alliance
উইলিয়াম ম্যাককিনলে, ১৯০১
নিউইয়র্কে এক বক্তৃতা দেয়ার সময় ২৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট ম্যাককিনলেকে খুব কাছ থেকে গুলি করে আততায়ী। ধারণা করা হচ্ছিলো তিনি সেরে উঠবেন, কিন্তু আঘাতের স্থানে গ্যাংগ্রিন ছড়িয়ে পড়ায় আট দিন পর মারা যান তিনি। ডেট্রয়েটের বাসিন্দা ২৮ বছর বয়সি লিওন এফ চোলগোস হামলার দায় স্বীকার করেন। কয়েক সপ্তাহ পর তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
ছবি: Bildagentur-online/picture alliance
থিওডোর রুজভেল্ট, ১৯১২
২৬তম প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট পরবর্তী নির্বাচনের প্রার্থী হিসাবে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। তখনই তার ওপর গুলি চালায় আততায়ী। প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলি তার শরীর থেকে বের করা যায়নি। বাকি জীবন বুকে গুলি নিয়েই কাটাতে হয়েছে তাকে।
ছবি: akg-images/picture alliance
ফ্রাংকলিন রুজভেল্ট, ১৯৩৩
মিয়ামিতে এক অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার সময় ৩২তম প্রেসিডেন্ট ফ্রাংকলিন রুজভেল্টের ওপর হামলা চালান জিউসেপ্পে জাঙ্গারা নামের এক ইটালিয়ান অভিবাসী। রুজভেল্ট তাতে আহত না হলেও মারা যায় তার সঙ্গে থাকা শিকাগোর মেয়র অ্যান্টন কেরমাক।
ছবি: AP Photo/picture alliance
জন এফ কেনেডি, ১৯৬৩
৩৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ডালাসে এক মোটর শোভাযাত্রায় অংশ নিচ্ছিলেন। উচ্চ ক্ষমতার রাইফেল দিয়ে দূর থেকে তাকে গুলি করা হয়। কয়েক ঘণ্টা পর হাসপাতালে মারা যান কেনেডি। হামলাকারী সন্দেহে লি হার্ভে অসওয়াল্ড নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। দুদিন পর তাদেক কারাগারে নেয়ার সময় ডালাসের এক নাইটক্লাবের মালিক জ্যাক রুবির গুলিতে মারা যান অসওয়াল্ড।
ছবি: Photoshot/picture alliance
রবার্ট এফ কেনেডি, ১৯৬৮
জন এফ কেনেডির ছোট ভাই রবার্ট এফ কেনেডিও নিহত হয়েছেন আততায়ীর গুলিতে। ১৯৮৬ সালে ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী হওয়ার লড়াইয়ে সামনের দিকেই ছিলেন তিনি। ক্যালিফোর্নিয়ার প্রাইমারিতে বিজয়ীর ভাষণ দেয়ার পরপরই তাকে গুলি করে হত্যা করে আততায়ী সিরহান সিরহান। সিরহানকে শুরুতে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলেও পরবর্তীতে তা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। ২০২৩ সালে তার মুক্তির আবেদন খারিজ করেছে আদালত।
ছবি: Harvey Griffin/AP Photo/picture alliance
জর্জ ওয়ালেস, ১৯৭২
ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার লড়াইয়ে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন জর্জ ওয়ালেস। ম্যারিল্যান্ডে প্রচারণা চালানোর সময় তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। চারটি গুলির একটি তার মেরুদণ্ডে লাগে। প্রাণে বেঁচে গেলেও বাকি জীবন তাকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়েই কাটাতে হয়েছে। হামলাকারী আর্থার ব্রেমারকে যাবজ্জীবন দেয়া হয়। ২০০৭ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন ব্রেমার।
ছবি: Offenberg/Zoonar/dpa/picture alliance
জেরাল্ড ফোর্ড, ১৯৭৫
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৮তম প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের ওপর ১৯৭৫ সালে ১৭ দিনের মধ্যে দুটি হত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটে। দুই ঘটনাই ঘটে ক্যালিফোর্নিয়াতে, প্রথমটি সাক্রামেন্টো এবং পরেরটি সান ফ্রান্সিসকোতে। দুই হামলাতেই হামলাকারী ছিলেন নারী। প্রথম হামলাকারীর নাম লিনেটে ফ্রোমে এবং পরের হামলাকারী সারাহ, জেন মুর। দুজনকেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।
ছবি: Bildagentur-online/picture alliance
রোনাল্ড রিগ্যান, ১৯৮১
৪০তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি ভাষণ দেয়ার পর মঞ্চ ছেড়ে নামছিলেন। তখনই তার ওপর গুলি চালায় আততায়ী জন হিংকলে জুনিয়র। গুলি অল্পের জন্য হার্টের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায় এবং গিয়ে লাগে ফুসফুসে। চিকিৎসার পর রিগ্যান প্রাণে বেঁচে যান। হিংকলেকে গ্রেপ্তার করা হলেও মানসিক সমস্যা বিবেচনায় তাকে খালাস দেয়া হয়। পরবর্তীতে তাকে মানসিক ব্যাধির চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ছবি: dpa/picture-alliance
বিল ক্লিনটন, ১৯৯৪
৪২তম প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের ওপরও হামলা হয়েছে। তবে তার ক্ষেত্রে সরাসরি তাকে লক্ষ্য করে হামলার ঘটনা ঘটেনি। ক্লিনটন যখন হোয়াইট হাউসে অবস্থান করছিলেন, তখন বাইরে থেকে ভবনটিতে সেমি অটোমেটিক রাইফেল দিয়ে গুলি চালায় ফ্রান্সিসকো মার্টিন ডুরান নামের এক ব্যক্তি। বিচারে প্রেসিডেন্টকে হত্যাচেষ্টার দায়ে ডুরানকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। তাকে ৪০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
ছবি: J. Scott Applewhite/AP Photo/picture alliance
জর্জ ডাব্লিউ বুশ, ২০০৫
৪৩তম প্রেসিডেন্ট বুশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছিল যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে। জর্জিয়ার রাজধানী তিবলিসিতে দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মিখাইল সাকাশভিলির সঙ্গে এক সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জর্জ ডাব্লিউ বুশ। তখন ভ্লাদিমির আরুতিউনিয়ান নামে এক ব্যক্তি মঞ্চের দিকে একটি গ্রেনেড ছুঁড়ে মারে। তবে গ্রেনেডটি বিস্ফোরিত হয়নি এবং কোনো হতাহতের ঘটনাও ঘটেনি। আরুতিউনিয়ানতে পরবর্তীতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।
ছবি: Shawn Thew/dpa/dpaweb/epa/picture-alliance
ডনাল্ড ট্রাম্প, ২০২৪
ডনাল্ড ট্রাম্প ছিলেন দেশটির ৪৫তম প্রেসিডেন্ট। ২০২৪ সালের নির্বাচনের জন্য পেনসিলভেনিয়ায় প্রচারণা চালাচ্ছিলেন তিনি। ভাষণ দেয়ার সময় এক পর্যায়ে একাধিক গুলির শব্দ শোনা যায়। কান কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়া ট্রাম্পের বড় কোনো শারীরিক ক্ষতি হয়নি। কিন্তু সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অন্তত একজন মারা যান, কয়েকজন গুরুতর আহত হন। হামলাকারী থমাস ম্যাথিউ সি নিরাপত্তাকর্মীদের গুলিতে প্রাণ হারান।
ছবি: Brendan McDermid/REUTERS
13 ছবি1 | 13
মাস্ক জানান, ''আমরা ৮০ লাখ শ্রোতাকে নিয়ে সকালে পরীক্ষা করেছি। কিন্তু যখন আমি লাইভে গেলাম, তখন ১০ লাখের কিছু বেশি মানুষ ঢুকতে পেরেছিলেন।'' তবে ট্রাম্প একসময় মাস্ককে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, তিনি ছয় কোটি মানুষকে আকর্ষিত করতে পেরেছেন। .কিন্তু মাস্ক এরপর কিছুক্ষণ নীরব ছিলেন।
বাইডেনকে আক্রমণ ট্রাম্পের
সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে তীব্র আক্রমণ করেছেন, অভিবাসন নিয়ে তার মত জানিয়েছেন, নতুন মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম তৈরির কথা বলেছেন এবং তিনি জলবায়ুর পরিবর্তনের আশংকা নাচক করে বলেছেন, সমুদ্রের জলস্তর বেড়ে গেলে আরো রিয়েল এস্টেটের সুযোগ বাড়বে।
ট্রাম্প বলেছেন, ''বিশ্বে উষ্ণায়ন সবচেয়ে বড় বিপদের কারণ নয়, আগামী চারশ বছরে সমুদ্রের জলস্তর এক ইঞ্চির এক অষ্টমাংশ বাড়বে।''
ট্রাম্প জানিয়েছেন, ''সমুদ্রমুখি সম্পত্তির পরিমাণ বেড়ে যাবে। সবচেয়ে বড় বিপদের কারণ সেটা নয়। সবচেয়ে বড় বিপদের কারণ হলো নিউক্লিয়ার ওয়ার্মিং। কারণ, এখন পাঁচটি দেশের হাতে প্রচুর পরিমাণে পরমাণু অস্ত্র আছে। আর বাইডেনের মতো মানুষকে রেখে আমরা এই বিপদের মুখে বিশ্বকে ফেলে দিতে পারি না।''
মাস্কের লক্ষ্য
মাস্ক জানিয়েছেন, তিনি আগে ডেমোক্র্যাটদের ভোট দিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্পের হত্যা-প্রচেষ্টার পর তিনি পুরোপুরি সাবেক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আছেন।
২০২১ সালের জানুয়ারিতে ক্যাপিটলে হামলার পর ট্রাম্পকে টুইটারে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু টুইটার কিনে তার নতুন নামকরণ করার পর ২০২২ সালের নভেম্বরে সাবেক প্রেসিডেন্টকে এক্স-এ ফিরিয়ে আনেন মাস্ক।
সাক্ষাৎকারের শুরুতেই মাস্ক ট্রাম্পকে হত্যা-প্রচেষ্টা নিয়ে বলতে বলেন। ট্রাম্প বলেন, তিনি অক্টোবরে আবার ওই জায়গায় যেতে চান, যেখানে তাকে একটি সভায় ভাষণ দেয়ার সময় গুলি করা হয়েছিল।