বাংলাদেশে করোনায় মৃতের সংখ্য্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে, সংক্রমিতের সংখ্যা এখন তিন লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি৷ অথচ অনেকেই আর মাস্ক পরেন না, সামাজিক দূরত্ব মানেন না৷ এমন ৫০ জনকে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানায়, সোমবার চট্টগ্রামের কোতয়ালি মোড় এলাকায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত মাস্ক না পরে ঘুরে বেড়ানো ৫০ জনকে মোট চার হাজার টাকা জরিমানা করে৷
উমর ফারুক বলেন, ‘‘করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে মাস্ক পরার ক্ষেত্রে সরকারের কঠোর নির্দেশনা থাকলেও অধিকাংশ মানুষ তা মানছেন না৷ রাস্তা, বিপণিবিতানসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় মানুষ মাস্ক না পরে ঘুরছেন৷ এতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণে প্রভাব ফেলছে৷ এজন্য অভিযান চালিয়ে মাস্ক ছাড়া চলাফেরা করা ৫০ জনকে অর্থদণ্ড করা হয়৷’’
তিনি আরো জানান, মাস্ক না পরার কারণ জানতে চাইলে ভ্রাম্যমাণ আদালতকে অনেকেই বলেছেন, ‘‘করোনা ভাইরাস নেই’’, আবার কেউ কেউ বলেছেন ‘‘ভুলে মাস্ক বাড়িতে ফেলে চলে এসেছি৷’’
এমন অজুহাত দেখিয়েও অবশ্য বাঁচতে পারেননি তারা৷ জরিমানা দিতে হয়েছে সবাইকে৷
এসিবি/জেডএইচ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
ঢাকায় করোনা ফলোআপ ক্লিনিক
করোনা থেকে মুক্তির পরেও অনেকেই শ্বাসকষ্ট, নিদ্রাহীনতা ও অবসাদগ্রস্ততার মতো নানা সমস্যায় ভুগছেন৷ সমস্যার সমাধানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং বিএসএমএমইউ (সাবেক পিজি) চালু করেছে কোভিড-১৯ ফলোআপ ক্লিনিক৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Mortuza Rashed
সীমিত পরিসরে
২৯ আগস্ট থেকে রোগীদের সেবা দিতে শুরু করেছে ক্লিনিক দুটি৷ তবে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা৷ শীঘ্রই বড় পরিসরে রোগী দেখা শুরু হবে৷ বিএসএমএমইউ-তে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এবং ঢামেকে রবিবার ও বৃহস্পতিবার এ সেবা পাওয়া যাবে৷
ছবি: Mortuza Rashed
সেবা নিচ্ছেন অনেকেই
শিপিং কোম্পানিতে চাকরি করা নাজমুল হায়দার ২ জুলাই করোনায় আক্রান্ত হন৷ তিন সপ্তাহ পর সেরে ওঠেন তিনি৷ তবে এখনো শারীরিকভাবে দূর্বল নাজমুল৷ সারারাত ঘুমাতে পারেন না৷ গণমাধ্যমে জানতে পেরে পোস্ট কোভিড ক্লিনিকে এসেছেন চিকিৎসা করাতে৷ বিএসএমএমইউ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানান, এখন তাদের ক্লিনিকে ৪০ জনের মতো রোগী আছে৷
ছবি: Mortuza Rashed
সুদূর লাকসাম থেকে
শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরে থেকেও আসছেন রোগীরা৷ লাকসামে থেকে আসা শফিকুল ইসলাম গত ২৩ আগস্ট করোনা নেগেটিভ হন৷ ১৩ সেপ্টেম্বর তিনি ঢাকা মেডিকেলে এসেছেন করোনা পরবর্তী শারীরিক জটিলতা নিয়ে৷
ছবি: Mortuza Rashed
চিকিৎসায় আন্তরিকতা
ক্লিনিকগুলোতে সময় নিয়েই রোগের ইতিহাস শুনতে এবং রোগীদের চিকিৎসা দিতে দেখা গেল ডাক্তারদের৷ প্রয়োজনে সহকর্মীর সাথে আলোচনা করে রোগীদের অধিকতর সেবা দেওয়ার বিষয়েও গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা৷
ছবি: Mortuza Rashed
সপরিবারে আক্রান্ত
একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউ-তে তার স্ত্রী এবং শ্যালিকাসহ এসেছেন৷ তারা তিনজনই কোভিড পজিটিভ ছিলেন৷ এখনো শহিদুলের স্মৃতিভ্রম হয় এবং বেশিক্ষণ কোন কাজে মনোযোগ থাকে না৷
ছবি: Mortuza Rashed
চিকিৎসকেরা যা বলছেন
বিএসএমএমইউ-র পোস্ট কোভিড ক্লিনিকের চিকিৎসক ডা. শ্রীনিবাস পাল বলেন, ‘‘৯০ শতাংশ রোগী আসছেন ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে৷ প্রায় সবারই কাশি দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে, বুকে ব্যথা হচ্ছে অথবা দেখা দিচ্ছে শ্বাসকষ্ট৷ এ রোগীদের যেন দীর্ঘস্থায়ী রোগ ফিব্রোসিস না হয়, সেজন্য যথাসম্ভব চিকিৎসা দিচ্ছেন ডাক্তাররা৷’’
ছবি: Mortuza Rashed
ওজন কমে যাওয়ার সমস্যা
বেসরকারি ব্যাংকের কর্মী শহিদুল ইসলাম করোনা আক্রান্ত হয়ে ৮ কেজি ওজন হারিয়েছেন৷ কোভিড ফলোআপ ক্লিনিকে যেসব রোগী আসছেন, তাদের অনেকেই এ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন৷ পাশাপাশি কাজে মনোযোগের ঘাটতি, অনিদ্রা ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকার মতো মানসিক সমস্যাও দেখা দিচ্ছে অনেকের৷
ছবি: Mortuza Rashed
আশার বাণী
ফলোআপ ক্লিনিকের চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সারা বিশ্বেই করোনা পরবর্তী বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন মানুষ৷ তবে এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী অধিকাংশেরই এই সমস্যা সাময়িক৷ তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে রোগীর শারীরিক সমস্যা অনেকাংশে চলে যাবে বলে আশা করছেন তারা৷ নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া এবং ওষুধ সেবন এই সমস্যাকে নিরাময় করতে পারে, বলছেন তারা৷
ছবি: Mortuza Rashed
নিয়মিত ফলোআপে সুফল
আগস্টের ৫ তারিখে করোনা পজিটিভ হন ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন৷ বুক ও শরীর ব্যথা এবং শারীরিক দূর্বলতার সমস্যা নিয়ে তিনি ইতোমধ্যে কোভিড ফলোআপ ক্লিনিকে এসেছেন তিন বার৷ চিকিৎসকেরা রোগের অবস্থা জানতে প্রতিবারই নানা রকম পরীক্ষা করতে বলেছেন৷ এতে কিছুটা বিরক্ত হলেও তিনি চিকিৎসকদের আন্তরিকতায় সন্তুষ্ট৷ তিনি মনে করেন, ডাক্তারের পরামর্শ যথাযথভাবে মেনে চললে কোভিড পরবর্তী সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব৷
ছবি: Mortuza Rashed
প্রয়োজন প্রচারের
ঢামেকের করোনা ফলোআপ ক্লিনিকের মেডিসিন কনসালটেন্ট ডা. খায়রুল ইসলাম মনে করেন, ‘‘তাদের কাছে এখন যে হারে রোগী আসছেন, প্রকৃত রোগীর সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি৷ এই ক্লিনিকের কথা মানুষ না জানার কারণে বাকিরা এখানে আসছেন না৷ পোস্ট কোভিড ক্লিনিকের তথ্য বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করতে পারলে এর সুফল পাবে মানুষ৷’’