1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মায়েদের জন্য নকল পেট

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৪ জুন ২০১৭

মা হওয়া নয় মুখের কথা— দশ মাস দশ দিনের সময়টা কম নয়৷ সভ্যতার বিবর্তনে যতই নানা নিয়ম আলগা হোক না কেন, মা হওয়ার নিয়ম নিয়ে এখনও কড়াকড়ি৷ তাই লোকলজ্জার হাত থেকে বাঁচতে পশ্চিমবঙ্গেও রমরমিয়ে চলছে সিলিকন পেট বা নকল পেটের ব্যবসা৷

ছবি: DW/P. Samanta

সারোগেসি বা গর্ভভাড়ার বিষয়টি ভারতীয় চলচ্চিত্রের তারকা আমির খান, শাহরুখ খান, করণ জোহর, তুষার কাপুর প্রমুখদের সৌজন্যে এখন আর অজানা নয়৷ তাঁরা প্রত্যেকেই গর্ভ ভাড়া করে সন্তান নিয়েছেন৷ কিন্তু তাতে সমাজে সারোগেসি এখনো গ্রহণযোগ্যতা পায়নি৷ তাই এখনো রাখঢাক করে সারোগেট মায়েদের সাহায্যে মা হওয়ার বিজ্ঞানকে লুকিয়ে রাখতে চাইছেন নারীরা৷ সিলিকনের তৈরি কৃত্রিম অঙ্গের ধারণাকে কাজে লাগিয়ে তৈরি হয়েছে নকল পেট৷

সমাজ নিয়ে বিশেষ করে মধ্যবিত্তদের সমস্যা যেন সবসময়ই একটু বেশি৷ তাঁরা যে সমাজে বাস করেন, তা বহিরঙ্গে আধুনিক হলেও তার অন্দরে সংস্কারের শিকড় এখনও ছড়িয়ে৷ তাই জৈবিকভাবে সন্তানের মা হয়েও স্রেফ সমাজের কাছে মাতৃত্ব দেখানোর জন্য মহিলারা নকল পেটের আশ্রয় নিচ্ছেন৷ বাড়ির সদস্যরা হাত দিয়ে পেট ছুঁয়ে শিশুর উপস্থিতি নিয়ে যাতে সংশয় দেখাতে না পারেন, সে জন্যও রয়েছে ব্যবস্থা৷

কলকাতার নাগেরবাজারের বাসিন্দা ৩৮ বছরের পৃথা সরকারের (নাম পরিবর্তিত) ১৩ বছর আগে বিয়ে হয়েছে৷ কিন্তু, এখনও মা হতে পারেননি৷ ডাক্তারি পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, তাঁর স্বামী সন্তানের জন্ম দিতে অক্ষম৷ তাই একজন পুরুষ দাতার শুক্রাণু নিয়ে পৃথার ডিম্বাণুকে কাজে লাগিয়ে সেই ভ্রূণ সারোগেট মায়ের শরীরে প্রতিস্থাপিত করা হয়৷ অর্থাৎ, সারোগেসির মাধ্যমে দশ মাস পর পৃথা মা হবেন, অথচ তাঁর বহিরঙ্গে কোনও পরিবর্তন হবে না৷ এটা কীভাবে সমাজ মেনে নেবে? কেন বিশ্বাস করবে সারোগেট মায়ের গর্ভে বেড়ে ওঠা শিশুটি পৃথারই উত্তরসূরি? কেনই বা তাঁকে গর্ভধারিণী মা বলে স্বীকৃতি দেবে? এই সব প্রশ্নের সমাধান করার লক্ষ্যেই এসেছে সিলিকন বেলি বা নকল পেটের ভাবনা৷

SUMITRA AG - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

হাওড়া জেলার লিলুয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই কৃত্রিম অঙ্গ নিয়ে কাজ করছেন প্রস্থেটিস্ট সুমিত্রা আগরওয়াল৷ তাঁর ক্লিনিকে ক্রমশ ভিড় বেড়েই চলেছে৷ বহু মা তাঁর কাছে আসছেন, যারা নকল পেট লাগিয়ে পরিবার বা সমাজের কাছে অভিনয় করতে চান৷ সুমিত্রা বলেন, ‘‘সবাই দেখাতে চায় যে, আমি শিশুটিকে গর্ভে ধারণ করেছি৷ তাই আমাদের কাছে সিলিকন বেলি নিতে আসে৷ আমরা মহিলার কোমরের সাইজ অনুযায়ী নকল পেট তৈরি করে দিই৷ সেটিকে মহিলার পেটের উপর লাগিয়ে দেওয়া হয়৷ অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের ক্ষেত্রে পেটের সঙ্গে কোমরও চওড়া দেখায়৷ সিলিকন বেলি সেইভাবেই তৈরি৷ বাইরে থেকে কেউ বুঝতে পারবেন না যে, পোশাকের নীচে কী আছে৷''

কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই পরিবারের আপনজনেরা গর্ভবতীর পেটে হাত দিয়ে তার ভেতরের শিশুটির উপস্থিতি আঁচ করতে চান৷ সিলিকন বেলি পরলে সেটা কি বোঝা যাবে? সুমি্ত্রার জবাব, ‘‘নিশ্চয়ই বোঝা যাবে৷ যাঁদের এ ধরনের প্রয়োজন থাকে, তাঁদের আমরা নকল শিশুর ব্যবস্থাও করে দিই৷ নকল পেটের ভেতরে সেটাকে এমনভাবে রাখা হয় যাতে বাইরে থেকে হাত দিলে বোঝা যায়, ভেতরে বাড়তে থাকা শিশুটির অস্তিস্ব বা উপস্থিতি৷ সেক্ষেত্রে নকল পেটের ওজনও বেশি হয়৷''

নকল পেটের খরচ কেমন? সুমি্ত্রা জানান, ‘‘বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে পেটের দাম কেমন হবে৷ ৩, ৬ ও ৯ মাসের গর্ভাবস্থার জন্য আলাদা আলাদা আকারের সিলিকন বেলি পাওয়া যায়৷ সেই নকল পেট তৈরি করা হয় প্রত্যেক মহিলার আলাদা শারীরিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী৷ কৃত্রিম শিশু জুড়লে দাম কিছুটা বাড়ে৷ এই দামটা ১০ হাজার ৮০০ থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করে৷''

S M RAHMAN - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

কলকাতার বিশিষ্ট প্রসূতি বিশেষজ্ঞ এবং আইভিএফ ক্লিনিকের কর্তা চিকিৎসক এস এম রহমান দীর্ঘদিন ধরেই সারোগেসির তত্ত্বাবধান করেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘অনেক মা-বাবাই আমাদের ক্লিনিকে আসেন, যাঁরা সমাজকে দেখাতে চান, তাঁরাই শিশুর জন্মদাতা বা জন্মদাত্রী৷ আমরা তাঁদের কাউন্সেলিং করাই৷ আমির খান, শাহরুখ খান, তুষার কাপুরদের উদাহরণ তুলে ধরে বলি, ওঁদের তো নকল পেট নিয়ে অভিনয় করার দরকার হয়নি৷ তাহলে আপনারা কেন প্রস্থেটিক বেলি নিয়ে ভাবছেন?''

ডাক্তার রহমানের অভিজ্ঞতাই বলে দিচ্ছে, ভারত মঙ্গলগ্রহে মানুষ পাঠানোর কথা ভাবতে পারে, কিন্তু সেই দেশের সমাজ সিঙ্গল মাদারের কথা চিন্তা করতে পারে না! চিকিৎসক আরো জানান, ‘‘আমাকে অনেক দম্পতি পাল্টা জবাব দিয়েছেন, আমির খান বা তুষার কাপুর তাঁদের মতো সাধারণ মানুষ নন৷ ওঁরা এসব সমালোচনার ঊর্দ্ধে৷ তাই আমাদের নকল পেট নিয়ে অভিনয় করা ছাড়া পথ নেই৷ সত্যিই কোনও ভুল নেই এই উপলব্ধিতে৷''

সারোগেসি এখন মাতৃত্বলাভের প্রচলিত উপায়৷ এ ক্ষেত্রে সরকারি প্রচার কি এই ধরনের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে পারে? ডা. রহমানের মতে, ‘‘আমাদের দেশে জনসংখ্যা এত বেশি যে, সরকার কোনও দম্পতির সন্তানধারণ নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নয়৷ বরং তারা জন্ম নিয়ন্ত্রণের পক্ষে প্রচার করে৷ তাই সরকারি স্তরে কোনও উদ্যোগ দেখতে পাওয়া মুশকিল৷''

মহাভারতের কুন্তী ও মাদ্রীর স্বামী রাজা পাণ্ডু সন্তানের জন্ম দিতে অক্ষম ছিলেন৷ তাই নিয়োগ প্রথায় তাঁরা পঞ্চপাণ্ডবের মা হন বলে মনে করা হয়৷ অথচ কাহিনিকার বেদব্যাস তাঁদের সন্তান ধারণকে দুর্বাসা মুনির মন্ত্রের গুণ বলে দাবি করেছেন৷ এ যুগে অন্তত মন্ত্রের কথা বলে মা হওয়ার জো নেই৷ তাই সিলিকন বেলির জয়জয়কার৷ সেটাই হাসি ফোটাচ্ছে আজকের পৃথাদের মুখে৷ 

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ