মায়েদের পেনশন বাড়ানোর পরিকল্পনা জার্মানির
৬ আগস্ট ২০২৫
বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে জোর চর্চা৷বাভারিয়ার দল সিএসইউ এ দেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নের অন্যতম সহযোগী৷ মূলত যে সমস্ত মায়েরা ১৯৯২ সালের আগে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, তাদের প্রতি সন্তানপিছু ২০ ইউরো করে পেনশন বৃদ্ধি পাবে৷
আগামী ২০২৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চালু হচ্ছে এই বিষয়টি৷ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের ফলে জার্মান সরকারের বার্ষিক মোট পাঁচ বিলিয়ন ইউরো বাড়তি খরচ হবে৷ এ দিকে দেশের ফেডারেল বাজেটের একাধিক খাতে খরচ কমাতে বাধ্য হয়েছে ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎশের সরকার৷ জার্মান সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ২০২৭ থেকে ২০২৯ সালের অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় সরকারের এখনো প্রায় ১৭২ বিলিয়ন ইউরো ( ১৯৮ বিলিয়ন ডলার) ঘাটতি রয়েছে৷
সিএসইউ-এর সাধারণ সম্পাদক মার্টিন হুবার মনে করেন, এই বৃদ্ধি বহু নারী পেনশনগ্রহণকারীর জীবনযাপন অনেকটাই সুবিধাজনক করে তুলবে৷
কারা পান মুটারেন্টে, কী সুবিধা তাতে
প্রশাসনের দাবি, এই পরিবর্তন বয়স্ক ও তরুণ প্রজন্মের পেনশনগ্রহীতাদের মধ্যে বৈষম্য অনেকাংশেই কমিয়ে আনবে৷ তবে বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করেন, নারী ও পুরুষের আয়ের বৈষম্য কমাতে এই পদক্ষেপ উপযুক্ত নয়৷ প্রসঙ্গত, নাম মাদার্স পেনশন হলেও পিতা বা মাতা যে কেউই এই পেনশন পাওয়ার যোগ্য৷ এমনকি পালক পিতা-মাতা বা দাদু-দিদা বা ঠাকুর্দা-ঠাকুমাও এই পেনশন পেতে পারেন, যদি শিশু তাদের তত্ত্বাবধানে বড় হয়৷
এই বিষয়েই উল্লেখযোগ্য প্রশ্ন তুলেছেন জার্মান ইনস্টিটিউট অব ইকোনমিক রিসার্চের গবেষক ও জার্মান অর্থনৈতিক নীতির বিশেষজ্ঞ পিটার হান৷ তিনি ডিডাবলিউকে বলেন, "১৯৯২ সালের আগে যারা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, সেই সমস্ত মায়েদের জন্য এই তথাকথিত বৃদ্ধি খুব কার্যকরী নয়৷ সেই প্রজন্মের পেনশন তরুণ প্রজন্মের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ছিল৷ ” তিনি আরও বলেন, "এই প্রকল্প বয়স্কদের দারিদ্র্র কমাতে বিশেষ কোনও পদক্ষেপ করে না৷”
বাভারিয়ায় মুটারেন্টের জনপ্রিয়তা-
২০১৩ সালে তৈরি হয় মাদার্স পেনশন প্রকল্পটি৷ তখন দেশের চ্যান্সেলর ছিলেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ এই প্রকল্প চালু করার মূল উদ্দেশ্য ছিল, সন্তানকে বড় করার জন্য যে সমস্ত মায়েরা চাকরি ছেড়েছিলেন, বা বহু দিন স্যাবাটিকাল নিয়েছিলেন তাদের অর্থনৈতিক ভাবে সাহায্য করা৷ তার কারণ, চাকরি ছাড়া বা স্যাবাটিকালের কারণে তাদের পেনশনের পরিমাণ ছিল বেশ কম৷ তার পর থেকেই সিএসইউ এই পরিকল্পনাটিকে তাদের মূল নীতির অন্যতম করে তুলেছে৷ তাদের বাভারিয়ান ভোটারদের মধ্যে এই নীতি অত্যন্ত জনপ্রিয়৷ পরে সিডিইউ ও এসপিডির সময়েও রাজনৈতিক আলোচনায় বার বার এই বিষয়টি তুলে ধরেছে সিডিইউ৷
রাজনৈতিক গবেষক উরসুলা মিউঞ্চ মনে করেন, সিএসইউ কখনওই এই নীতি থেকে সরে আসতে চাইবে না৷ ডিডাবলিউকে তিনি বলেন, "যদি অন্য দলগুলি এই নীতি মানতে না চায়, তাহলে সিএসইউ বয়স্কদের জনমত সামনে এনে অন্য দলের যে কোনও প্রস্তাব মানতে অস্বীকার করবে৷"
তবে অনেকের কাছেই বিষয়টা জনপ্রিয় নয়-
তবে জার্মানির অনেকের কাছেই এই বিষয়টি জনপ্রিয় নয়, বিশেষ করে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলির কাছে৷ তাদের দাবি, বর্তমান প্রশাসনের পেনশন না বৃদ্ধি করে চাকরির সুযোগ আরও বাড়ানো প্রয়োজন৷ ফেডারেল অ্যাসোসিয়েশন অব হোলসেল ও ফরেন ট্রেড অ্যান্ড সার্ভিসেস-এর জুডিথ রোডার মনে করেন, জনকল্যাণমূলক ব্যয় অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেলে সমস্যাজনক, যা কিনা ইঙ্গিত করে কম কর্মসংস্থানেরও৷ আর মায়েদের পেনশন হলো এই দুটোরই প্রতিচ্ছবি৷
ডিডাবলিউকে জুডিথ জানান, "এই পেনশন বাড়ার অন্যতম ইঙ্গিত যে তরুণ প্রজন্মের থেকে কর নিয়ে বয়স্ক প্রজন্মকে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে৷" তার মতে, ভবিষ্যত প্রজন্মকে অতিরিক্ত ঋণী করে রাখা হচ্ছে এর ফলে৷
হান মনে করেন, বয়স্কদের দারিদ্র্য দূর করতে আরও নিবিড় পদক্ষেপের প্রয়োজন৷ প্রথমেই সম্পদ ও আয়ের পর্যালোচনা করা দরকার, যাতে পেনশন তাদের হাতেই পৌঁছয় যাদের প্রকৃত প্রয়োজন৷ ডিডাবলিউকে তিনি বলেন, "আয়ে যদি সত্যিই লিঙ্গ বৈষম্য কমাতে হয়, তাহলে মহিলাদের কাজে যোগ দিতে আরও উৎসাহিত করতে হবে৷" হানের দাবি, উন্নত "চাইল্ডকেয়ার পলিসি” মহিলাদের কর্মক্ষেত্রে যোগ দিতে সাহায্য করবে অনেকাংশেই৷
বেন নাইট/এসটি